চিন্তাকে হত্যা করা যায় না by রোবায়েত ফেরদৌস
সভ্যতার
ইতিহাস চিন্তার ইতিহাস, সৃজনশীলতার ইতিহাস। মানুষ তার চিন্তার সমান বড়,
দার্শনিক ডেকার্টের সেই প্রবাদপ্রতিম উক্তি: ‘আই থিংক, দেয়ারফোর আই অ্যাম’
আমি চিন্তা করতে পারি, সে জন্যই আমি আছি, মানুষের অসীমত্বের প্রমাণ যে সে
চিন্তা করতে পারে, মানুষের ইতিহাস তাই ভাব প্রকাশের ইতিহাস, মতপ্রকাশের
ইতিহাস, কিন্তু চিন্তা প্রকাশের জন্য এই একুশ শতকেও লেখক-ব্লগার অভিজিৎ
রায়কে হত্যা করা হলো, অভিজিতের অপরাধ কী ছিল?
অপরাধ, তিনি বই লিখেছিলেন। বইতে কী থাকে? বইতে থাকে কিছু শব্দ, বাক্য আর চিন্তা। তো এই শব্দ, বাক্য আর চিন্তার বিপরীতে হত্যাকারীরা আরও তীব্র শব্দ, আরও শাণিত বাক্য আরও ক্ষুরধার চিন্তা দিয়ে তাঁর জবাব দিতে পারত। একটি বইয়ের জবাবে ১০টি বই লিখতে পারত, কারণ কলমের জবাব কেবল কলম দিয়েই দেওয়া উচিত। কিন্তু তারা এর জবাব দিয়েছে চাপাতি দিয়ে, কুপিয়ে জবাব দিয়েছে মুক্তচিন্তার সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে, অসাম্প্রদায়িক চেতনার মাস ফেব্রুয়ারিতে, লেখক-পাঠকের প্রিয় আয়োজন বইমেলার ভিড়ে। চলে গেছে তারা নির্বিঘ্নে!
অভিজিতকে হত্যার পর তাঁর বাবা পদার্থবিজ্ঞানী অজয় রায়কে জঙ্গিরা হুমকি দিলে তিনি বলেছিলেন, তারা তাঁর ছেলেকে হত্যা করেছে ঠিকই, কিন্তু তাঁর সৃষ্টিকে ধ্বংস করতে পারেনি। কী অসাধারণ সাহসী উক্তি! চিন্তা প্রকাশের ইতিহাস এ রকমই ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ। ভুলে গেলে ভুল হবে যে জ্যামিতি শেখার মতো চিন্তা প্রকাশেরও সহজ কোনো রাস্তা নেই। সক্রেটিস, গ্যালিলিও, ব্রুনো কিংবা কোপারনিকাসকেও হত্যা, নিপীড়ন, কারাগারসহ সীমাহীন যন্ত্রণা সইতে হয়েছে বিপরীত চিন্তা করার ‘অপরাধে’। গ্যালিলিওর প্রতি কৃত অপরাধের জন্য ভ্যাটিকান চার্চ ক্ষমা চেয়েছে গ্যালিলিওর কাছে মহান এই বিজ্ঞানীর মৃত্যুর মাত্র সাড়ে চার শ বছর পরে। ইতিহাসের অনেক বাঁকে অনেক চিন্তকের বই তঁাদের সাহসী চিন্তার জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কিন্তু নিষিদ্ধ বই দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ থাকে না—এটাই ইতিহাসের বক্রাঘাত! চিন্তা আর মতাদর্শকে বেশি দিন কারাগারে পুরে রাখা যায় না! মহান রুশ লেখক বুলগাকভ তাঁর ক্লাসিক্যাল বই মাস্টার অ্যান্ড মার্গেরিটায় বলেছেন, ‘পাণ্ডুলিপি কখনোই পোড়ে না।’
বলা হয়, একটি দেশের গণতন্ত্র মাপার অন্যতম গজকাঠি হচ্ছে সে দেশের ‘চিন্তার স্বাধীনতা’র চর্চা কতটা হয়, তা দিয়ে। আমরা জানি ও মানি যে গণতন্ত্রের সমার্থক শব্দ পরমতসহিষ্ণুতা। যেমনটি ভলতেয়ার বলেছিলেন, ‘আমি তোমার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করতে পারি, কিন্তু তোমার মত প্রকাশ করতে দেওয়ার জন্য আমি আমার জীবন দিতে পারি।’ বিনয়ের সঙ্গে জানতে ইচ্ছা করে, গণতন্ত্রচর্চার এই ভলতেরিয়ান ফিলসফি থেকে বর্তমান বাংলাদেশ কত হাজার মাইল দূরে অবস্থান করছে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকেও জঙ্গিরা হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করেছিল, তাঁকে চাপাতির কোপে ফালি ফালি করে কাটা চাঁদে পরিণত করেছিল। বইমেলা হয় খোলা আকাশের নিচে, এ মেলা খোলা প্রাণের, হৃদয় খুলে কথা কওয়ার জন্য।
অধ্যাপক আজাদও আক্রান্ত হয়েছিলেন একুশের বইমেলায়, যে মেলা আমাদের সীমাহীন গর্বের, যে মেলা মুক্তচিন্তার প্রতীক। দেরিদা বলেছিলেন, বই এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু আমরা দেখলাম, এই বই লেখার কারণেই তসলিমাকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে দেশ থেকে দেশান্তরে। কবি দাউদ হায়দারকে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে দেশের বাইরে কাটাতে হচ্ছে। বই লেখার শাস্তি হত্যা আর নির্বাসন!
রাষ্ট্র কি এর দায় এড়াতে পারে? কারণ, বিচার তো হয়নি। একের পর এক তাই মুক্তচিন্তার মানুষেরা আক্রান্ত হয়ে চলেছেন। স্বাধীন জ্ঞানকে এখানে গৃহের প্রাচীর দিয়ে ঘিরে ফেলা হচ্ছে। চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উচ্চ যেথা শির—তা তো এখানে কল্পরাজ্যের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাষ্ট্র ও সমাজে নিদারুণ এক ভয়ের সংস্কৃতি পলে পলে গ্রাস করছে সবাইকে। এ রকম দমবন্ধ পরিবেশে বুদ্ধির মুক্তি ঘটবে কীভাবে? সার্বভৌম জ্ঞানের চর্চা হবে কীভাবে? এ কেমন রাষ্ট্রে আমরা বাস করি?
ধর্মান্ধ মৌলবাদী শক্তি তাদের সংকীর্ণ স্বার্থ ও বৃত্তাবদ্ধ বুদ্ধির কারণে স্বাধীন মত প্রকাশকে পছন্দ করে না, প্রগতিবিরুদ্ধ এই শক্তি আলো দেখে না, সামনে চলে না, থাকে অন্ধকারে, হঁাটে পেছনে। কিন্তু আমরা চাই চিন্তা ও ভাব প্রকাশের শতভাগ স্বাধীনতা, চাই জ্ঞানের স্বায়ত্তশাসন আর সৃজনশীলতার সার্বভৌমত্ব। তবে ভুলে গেলে ভুল হবে যে চিন্তার এই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব কেউ কাউকে দেয় না, স্বাধীনতা আদায় করে নিতে হয়। এ জন্য কী করতে হবে? লড়তে হবে, মত বা ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে সেই সপ্তদশ শতকে ব্রিটিশরাজের সঙ্গে লড়াইয়ে মেতে উঠেছিলেন ইংরেজ কবি মিল্টন। কবি চেয়েছিলেন বিবেকের স্বাধীনতা, চিন্তার স্বায়ত্তশাসন। অ্যারিওপ্যাজিটিকায়, তাঁর উচ্চারণ ছিল: দাও আমায়, জ্ঞানের স্বাধীনতা দাও, কথা কইবার স্বাধীনতা দাও, মুক্তভাবে বিতর্ক করার স্বাধীনতা দাও। সবার ওপরে আমাকে দাও মুক্তি।
কিন্তু দুঃখজনক যে কবি কাঙ্ক্ষিত বিবেকের মুক্তি এবং শর্তহীন বাক্স্বাধীনতার বিষয়টি আজও আমরা অর্জন করতে পারিনি। মিল্টনের সেই লড়াই দেশে দেশে এখনো চলছে। এ লড়াইয়ে শামিল না হয়ে কোনো উপায় নেই। এ লড়াই কেবল চিন্তার সার্বভৌমত্ব অর্জন বা ভাব প্রকাশের স্বায়ত্তশাসনের জন্য নয়, এ লড়াই গণতন্ত্রের জন্য, এ লড়াই উন্নয়নের জন্য, দেশটাকে আরও সুন্দর করে গড়ে তোলার জন্য। আমরা তাই বদ্ধ সংস্কৃতি চাই না, খোলা আর মুক্ত সংস্কৃতি চাই। আমরা চাই সব কটা জানালা খোলা থাকুক—এতে কিছু ধুলাবালু আসবে ঠিকই, কিন্তু বিশ্বাস করুন, সবচেয়ে বেশি আসবে আলো!
রাষ্ট্রের লক্ষ্য হওয়া উচিত সংস্কৃতি, আর রাজনীতি সেই লক্ষ্য অর্জনের উপায়, কিন্তু আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনায় সংস্কৃতিকে যথাযথভাবে সম্পৃক্ত করা হয়নি। এ দুটিকে দুই ভুবনের বাসিন্দা বলে আলাদা করে রাখা হয়েছে—প্রতীতি বলে রাষ্ট্র ও সংস্কৃতি কোনোটির জন্যই যা শুভ নয়। একটি সাংস্কৃতিক বোধসম্পন্ন রুচিশীল ও মানবিক রাষ্ট্র নির্মাণে আমাদের অনেক দূর অবধি কাজ করতে হবে। অভিজিতের এই আত্মত্যাগ গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, সংস্কারমুক্ত, বিজ্ঞানমনস্ক ও গ্রন্থমুখী সমাজ নির্মাণে আলো ছড়িয়ে যাক, কোনো বন্ধ বা নিষিদ্ধের অর্গলে তা যেন আটকা পড়ে না যায়।
রোবায়েত ফেরদৌস: সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
robaet.ferdous@gmail.com
অপরাধ, তিনি বই লিখেছিলেন। বইতে কী থাকে? বইতে থাকে কিছু শব্দ, বাক্য আর চিন্তা। তো এই শব্দ, বাক্য আর চিন্তার বিপরীতে হত্যাকারীরা আরও তীব্র শব্দ, আরও শাণিত বাক্য আরও ক্ষুরধার চিন্তা দিয়ে তাঁর জবাব দিতে পারত। একটি বইয়ের জবাবে ১০টি বই লিখতে পারত, কারণ কলমের জবাব কেবল কলম দিয়েই দেওয়া উচিত। কিন্তু তারা এর জবাব দিয়েছে চাপাতি দিয়ে, কুপিয়ে জবাব দিয়েছে মুক্তচিন্তার সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে, অসাম্প্রদায়িক চেতনার মাস ফেব্রুয়ারিতে, লেখক-পাঠকের প্রিয় আয়োজন বইমেলার ভিড়ে। চলে গেছে তারা নির্বিঘ্নে!
অভিজিতকে হত্যার পর তাঁর বাবা পদার্থবিজ্ঞানী অজয় রায়কে জঙ্গিরা হুমকি দিলে তিনি বলেছিলেন, তারা তাঁর ছেলেকে হত্যা করেছে ঠিকই, কিন্তু তাঁর সৃষ্টিকে ধ্বংস করতে পারেনি। কী অসাধারণ সাহসী উক্তি! চিন্তা প্রকাশের ইতিহাস এ রকমই ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ। ভুলে গেলে ভুল হবে যে জ্যামিতি শেখার মতো চিন্তা প্রকাশেরও সহজ কোনো রাস্তা নেই। সক্রেটিস, গ্যালিলিও, ব্রুনো কিংবা কোপারনিকাসকেও হত্যা, নিপীড়ন, কারাগারসহ সীমাহীন যন্ত্রণা সইতে হয়েছে বিপরীত চিন্তা করার ‘অপরাধে’। গ্যালিলিওর প্রতি কৃত অপরাধের জন্য ভ্যাটিকান চার্চ ক্ষমা চেয়েছে গ্যালিলিওর কাছে মহান এই বিজ্ঞানীর মৃত্যুর মাত্র সাড়ে চার শ বছর পরে। ইতিহাসের অনেক বাঁকে অনেক চিন্তকের বই তঁাদের সাহসী চিন্তার জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কিন্তু নিষিদ্ধ বই দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ থাকে না—এটাই ইতিহাসের বক্রাঘাত! চিন্তা আর মতাদর্শকে বেশি দিন কারাগারে পুরে রাখা যায় না! মহান রুশ লেখক বুলগাকভ তাঁর ক্লাসিক্যাল বই মাস্টার অ্যান্ড মার্গেরিটায় বলেছেন, ‘পাণ্ডুলিপি কখনোই পোড়ে না।’
বলা হয়, একটি দেশের গণতন্ত্র মাপার অন্যতম গজকাঠি হচ্ছে সে দেশের ‘চিন্তার স্বাধীনতা’র চর্চা কতটা হয়, তা দিয়ে। আমরা জানি ও মানি যে গণতন্ত্রের সমার্থক শব্দ পরমতসহিষ্ণুতা। যেমনটি ভলতেয়ার বলেছিলেন, ‘আমি তোমার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করতে পারি, কিন্তু তোমার মত প্রকাশ করতে দেওয়ার জন্য আমি আমার জীবন দিতে পারি।’ বিনয়ের সঙ্গে জানতে ইচ্ছা করে, গণতন্ত্রচর্চার এই ভলতেরিয়ান ফিলসফি থেকে বর্তমান বাংলাদেশ কত হাজার মাইল দূরে অবস্থান করছে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকেও জঙ্গিরা হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করেছিল, তাঁকে চাপাতির কোপে ফালি ফালি করে কাটা চাঁদে পরিণত করেছিল। বইমেলা হয় খোলা আকাশের নিচে, এ মেলা খোলা প্রাণের, হৃদয় খুলে কথা কওয়ার জন্য।
অধ্যাপক আজাদও আক্রান্ত হয়েছিলেন একুশের বইমেলায়, যে মেলা আমাদের সীমাহীন গর্বের, যে মেলা মুক্তচিন্তার প্রতীক। দেরিদা বলেছিলেন, বই এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু আমরা দেখলাম, এই বই লেখার কারণেই তসলিমাকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে দেশ থেকে দেশান্তরে। কবি দাউদ হায়দারকে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে দেশের বাইরে কাটাতে হচ্ছে। বই লেখার শাস্তি হত্যা আর নির্বাসন!
রাষ্ট্র কি এর দায় এড়াতে পারে? কারণ, বিচার তো হয়নি। একের পর এক তাই মুক্তচিন্তার মানুষেরা আক্রান্ত হয়ে চলেছেন। স্বাধীন জ্ঞানকে এখানে গৃহের প্রাচীর দিয়ে ঘিরে ফেলা হচ্ছে। চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উচ্চ যেথা শির—তা তো এখানে কল্পরাজ্যের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাষ্ট্র ও সমাজে নিদারুণ এক ভয়ের সংস্কৃতি পলে পলে গ্রাস করছে সবাইকে। এ রকম দমবন্ধ পরিবেশে বুদ্ধির মুক্তি ঘটবে কীভাবে? সার্বভৌম জ্ঞানের চর্চা হবে কীভাবে? এ কেমন রাষ্ট্রে আমরা বাস করি?
ধর্মান্ধ মৌলবাদী শক্তি তাদের সংকীর্ণ স্বার্থ ও বৃত্তাবদ্ধ বুদ্ধির কারণে স্বাধীন মত প্রকাশকে পছন্দ করে না, প্রগতিবিরুদ্ধ এই শক্তি আলো দেখে না, সামনে চলে না, থাকে অন্ধকারে, হঁাটে পেছনে। কিন্তু আমরা চাই চিন্তা ও ভাব প্রকাশের শতভাগ স্বাধীনতা, চাই জ্ঞানের স্বায়ত্তশাসন আর সৃজনশীলতার সার্বভৌমত্ব। তবে ভুলে গেলে ভুল হবে যে চিন্তার এই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব কেউ কাউকে দেয় না, স্বাধীনতা আদায় করে নিতে হয়। এ জন্য কী করতে হবে? লড়তে হবে, মত বা ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে সেই সপ্তদশ শতকে ব্রিটিশরাজের সঙ্গে লড়াইয়ে মেতে উঠেছিলেন ইংরেজ কবি মিল্টন। কবি চেয়েছিলেন বিবেকের স্বাধীনতা, চিন্তার স্বায়ত্তশাসন। অ্যারিওপ্যাজিটিকায়, তাঁর উচ্চারণ ছিল: দাও আমায়, জ্ঞানের স্বাধীনতা দাও, কথা কইবার স্বাধীনতা দাও, মুক্তভাবে বিতর্ক করার স্বাধীনতা দাও। সবার ওপরে আমাকে দাও মুক্তি।
কিন্তু দুঃখজনক যে কবি কাঙ্ক্ষিত বিবেকের মুক্তি এবং শর্তহীন বাক্স্বাধীনতার বিষয়টি আজও আমরা অর্জন করতে পারিনি। মিল্টনের সেই লড়াই দেশে দেশে এখনো চলছে। এ লড়াইয়ে শামিল না হয়ে কোনো উপায় নেই। এ লড়াই কেবল চিন্তার সার্বভৌমত্ব অর্জন বা ভাব প্রকাশের স্বায়ত্তশাসনের জন্য নয়, এ লড়াই গণতন্ত্রের জন্য, এ লড়াই উন্নয়নের জন্য, দেশটাকে আরও সুন্দর করে গড়ে তোলার জন্য। আমরা তাই বদ্ধ সংস্কৃতি চাই না, খোলা আর মুক্ত সংস্কৃতি চাই। আমরা চাই সব কটা জানালা খোলা থাকুক—এতে কিছু ধুলাবালু আসবে ঠিকই, কিন্তু বিশ্বাস করুন, সবচেয়ে বেশি আসবে আলো!
রাষ্ট্রের লক্ষ্য হওয়া উচিত সংস্কৃতি, আর রাজনীতি সেই লক্ষ্য অর্জনের উপায়, কিন্তু আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনায় সংস্কৃতিকে যথাযথভাবে সম্পৃক্ত করা হয়নি। এ দুটিকে দুই ভুবনের বাসিন্দা বলে আলাদা করে রাখা হয়েছে—প্রতীতি বলে রাষ্ট্র ও সংস্কৃতি কোনোটির জন্যই যা শুভ নয়। একটি সাংস্কৃতিক বোধসম্পন্ন রুচিশীল ও মানবিক রাষ্ট্র নির্মাণে আমাদের অনেক দূর অবধি কাজ করতে হবে। অভিজিতের এই আত্মত্যাগ গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, সংস্কারমুক্ত, বিজ্ঞানমনস্ক ও গ্রন্থমুখী সমাজ নির্মাণে আলো ছড়িয়ে যাক, কোনো বন্ধ বা নিষিদ্ধের অর্গলে তা যেন আটকা পড়ে না যায়।
রোবায়েত ফেরদৌস: সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
robaet.ferdous@gmail.com
No comments