নিহত জিহাদ ও রাষ্ট্রীয় রশি by রোবায়েত ফেরদৌস
রাষ্ট্রীয় ‘আগুন সেবা’ (ফায়ার সার্ভিস) যখন ব্যর্থ হলো এবং তাদের তথাকথিত উদ্ধার অভিযান গুটিয়ে নিল, ঠিক তার পরই শিশু জিহাদের লাশ পাইপের ভিতর থেকে তুলে আনা হলো। তুলে আনার একশ ভাগ কৃতিত্ব সাধারণ মানুষের, যারা সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রম ও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে শেষতক জিহাদকে বাঁচানোর চেষ্টা করে গেছেন; এবং অন্তত মৃত শিশুর লাশটিকে মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরেছেন। আবারও প্রমাণ মিলল, সাধারণরাই অসাধারণ! রাষ্ট্র যখন ব্যর্থ, সমাজ তখন স্বমহিমায় মহিমান্বিত। রানা প্লাজায় ভবন ট্র্যাজেডি কিংবা সুন্দরবনের তেল ট্র্যাজেডির ক্ষেত্রেও আমরা সাধারণদের অসাধারণ ভূমিকা দেখেছি। জয়তু সাধারণ! তারাই বাংলাদেশের সত্যিকারের নায়ক। রাষ্ট্র যখন হাল ছেড়ে দিয়েছে, কয়েকজন মানুষ তখন হাল ধরেছে এবং শেষ পর্যন্ত তারা চেষ্টারত ছিল। রাষ্ট্র তখন কী করেছে? রাষ্ট্র তখন জিহাদের বাবাকে ১৪ ঘণ্টা থানায় আটকে রেখেছে, হুমকি-ধমকি এমনকি ক্রসফায়ারের ভয়ও দেখিয়েছে, জিহাদকে যারা পাইপে পড়ে যেতে দেখেছে এমন চারজন শিশুকে থানায় নিয়ে ভয়ঙ্কর জেরা করেছে। অরুন্ধতী রায়ের ভাষায় এ এক ‘ব্রোকেন রিপাবলিক’। রাষ্ট্র কতটা নিষ্ঠুর আর অমানবিক হতে পারে- এক লাফে তা যেন হাঁ হয়ে বেরিয়ে এসেছে। অথচ রাষ্ট্রীয় ‘আগুন সেবা’ দাবি করছে জিহাদ উদ্ধারে তাদেরও ভূমিকা রয়েছে; রীতিমতো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তারা বলেছে, যেহেতু ফায়ার সার্ভিসের রশি ও ক্রেন দিয়ে জিহাদকে তুলে আনা হয়েছে, কাজেই তাদের ভূমিকাকে খাটো দেখার উপায় নেই। রাজনীতি-সচেতন প্রিয় পাঠকের কাছে আমার প্রশ্ন- আপনারাই বলুন, এই রশিকে খাটো করে দেখার সাহস কি আমাদের আছে? না থাকা উচিত? বাবাঃ, রাষ্ট্রীয় রশি বলে কথা!
No comments