ধূমপানের পথ ধরে...
((বাঁ থেকে) আহমেদ হেলাল, আখতারুজ্জামান সেলিম, ব্রাদার রোনাল্ড ড্রাহোজাল, ফারজানা রাবিন ও জিল্লুর রহমান খান) প্রথম
আলো ট্রাস্ট মাদকবিরোধী আন্দোলনের উদ্যোগে ২০ ডিসেম্বর বিকেল চারটায়
পরামর্শ সহায়তা-৫৫-এর আসরটি অনুষ্ঠিত হয় ধানমন্ডির ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে। এ
আয়োজনে মাদকাসক্ত রোগী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মনোরোগ চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা মাদকাসক্তি নিরাময়ের জন্য তাঁদের বিভিন্ন
পরামর্শ দেন। পরামর্শ সহায়তা অনুষ্ঠানের আলোচিত বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো
আহমেদ হেলাল সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, মাদকের চিকিৎসার জন্য
অভিভাবকদেরও পরামর্শ সহায়তার প্রয়োজন হয়। কারণ, মাদকের চিকিৎসা অন্য
অসুখের মতো না। রোগীর সঙ্গে কীভাবে আচার-আচরণ করতে হবে, কীভাবে চিকিৎসা
পদ্ধতি মেনে চলতে হবে এসব বিষয় অভিভাবকদের জানতে হয়। তা না হলে তারা
রোগীকে সঠিক চিকিৎসা দিতে পারবেন না। প্রতিমাসে প্রথম আলো ট্রাস্ট
মাদকবিরোধী আন্দোলনের উদ্যোগে পরামর্শ সহায়তা হয়। এতে মাদকাসক্ত রোগী ও
তাঁদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত থাকেন। মনোরোগ চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা
মাদকাসক্তি নিরাময়ের জন্য তাঁদের বিভিন্ন পরামর্শ দেন। এখানে নাম পরিচয়
প্রকাশ করা হয় না। সবার জন্য উন্মুক্ত।
প্রশ্ন: আমার সন্তান দুই বছর ধরে ইয়াবা খায়। ইয়াবা খেলে কী ক্ষতি হতে পারে?
সমাধান: ইয়াবার আনন্দ-উত্তেজনা সাময়িকভাবে জীবনের যন্ত্রণা ভুলিয়ে দেয়। তারা বাস করে এক স্বপ্নের জগতে। ইয়াবা ক্ষুধা কমিয়ে দেয়। খাবারের ইচ্ছা থাকে না। শরীরের মাংসপেশি শুকাতে থাকে। এ জন্য অনেকে মনে করে এটা খেলে স্লিম হওয়া যায়। ইয়াবা নিলে ঘুম থাকে না। অনেকে ক্লান্তিহীন আনন্দ উপভোগ করতে চায়। তবে এই আনন্দ খুব সাময়িক। ট্যাবলেটটি ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। কিন্তু ইয়াবাসেবীরা এটা বুঝতে পারে না। কারণ, ইয়াবা গ্রহণের সময় সাময়িক উত্তেজনা পাওয়া যায়। প্রথমে কম ডোজেই আনন্দ পাওয়া যায়। ধীরে ধীরে ডোজের মাত্রা বাড়াতে থাকে। কিছু সময় আনন্দের পর বাড়তে থাকে ক্ষতিকর বিভিন্ন উপসর্গ। রাত কাটে নির্ঘুম। এর ভয়াবহ প্রতিক্রিয়ায় কখনো কখনো একটানা সাত থেকে ১০ দিনও জেগে থাকতে বাধ্য হয় অনেকে। শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে। মেজাজ খিটখিটে হয়। অনবরত গলা-মুখ শুকিয়ে আসে। প্রচণ্ড ঘাম আর অসহ্য গরম অনুভব হয়। ভীষণভাবে বাড়তে থাকে দেহের তাপমাত্রা, রক্তচাপ, নাড়ি ও শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি। অনেকেই উচ্চ রক্তচাপের রোগী হয়ে পড়েন। মস্তিষ্কের ভেতরের ছোট রক্তনালিগুলো ক্ষয় হতে থাকে। এগুলো ছিঁড়ে অনেকের রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এ জন্য অনেকে মৃত্যুঝঁুকিতে পড়ে যায়। স্মৃতিশক্তি কমে যায়। মানসিক নানা রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। অহেতুক রাগারাগি, ভাঙচুরের প্রবণতা বাড়ে। পড়াশোনা, কর্মক্ষেত্র বা পারিবারিক জীবনে বিরূপ প্রভাব পড়ে।
সব ক্ষেত্রে ব্যর্থতা বা পিছিয়ে পড়তে থাকায় আসক্তরা বিষণ্নতায় ভোগে। কারও কারও মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়। দৃষ্টিবিভ্রম, স্মৃতিবিভ্রম আর অস্বাভাবিক সন্দেহ প্রবণতা তৈরি হয়। এসব উপসর্গ থেকে একসময় সিজোফ্রেনিয়ার মতো জটিল মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়। কখনো কখনো শারীরিক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে ভীষণ মৃত্যুঝঁুকি দেখা দেয়। অনেকে সিরিঞ্জের মাধ্যমে ইয়াবা নেয়। এরা হেপাটাইটিস (বি, সি)ও এইডসের মতো গুরুতর রক্তবাহিত রোগের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। ইয়াবা আসক্ত ব্যক্তিরা শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
প্রশ্ন: আমার সন্তানকে একটি নিরাময় কেন্দ্রে রেখেছি। এখানে কোনো চিকিৎসা হয় বলে মনে হয় না। এ বিষয়ে কী করতে পারি?
সমাধান: দেশে সরকারি ও বেসরকারি দুই ধরনের রিহ্যাব (নিরাময় কেন্দ্র) আছে। অনেক রোগী ও অভিভাবক রিহ্যাব সম্পর্কে অভিযোগ করেন। তবে এটা ঠিক, সব ক্ষেত্রে অভিযোগ অমূলক নয়। হঠাৎ করে উত্তেজনার বশে যেখানে সেখানে রোগীকে ভর্তি করা ঠিক হবে না। কোনো রিহ্যাবে ভর্তি করার আগে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করতে হবে। খোঁজ নিতে হবে রিহ্যাবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন কি না। মাদকাসক্তের সঙ্গে প্রায় অধিকাংশ রোগীর মানসিক সমস্যা থাকে। সে ক্ষেত্রে রিহ্যাবে মানসিক চিকিৎসক আছেন কি না, সেটাও দেখতে হবে। রিহ্যাবের পরিবেশ, থাকা-খাওয়া, চিকিৎসাপদ্ধতি সব বিষয়ে খোঁজ নিতে হবে। অনেক নিরাময় কেন্দ্রে সঠিক চিকিৎসা হয় না। মাদক চিকিৎসার একটা ধারাবাহিক পদ্ধতি আছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া এ পদ্ধতি সবার পক্ষে অনুসরণ করা সম্ভব নয়। কোনো কোনো রিহ্যাবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব থাকে। মানসিক রোগের চিকিৎসক থাকেন না। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কম। অনেকে রিহ্যাবের ব্যবসায়িক মনোভাব বেশি থাকে। তাই অনেক দিন নিরাময় কেন্দ্রে থাকার পরও রোগীরা ভালো হয় না। আপনার সন্তানকে কোথায় ভর্তি করবেন—এ বিষয়টি খুব জরুরি। আবেগের বশে যেখানে-সেখানে হঠাৎ করে ভর্তি করবেন না। রিহ্যাব সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে যাচাই-বাছাই করুন। তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনার সন্তানকে কোথায় ভর্তি করবেন।
প্রশ্ন: মাদক গ্রহণের প্রধান কারণ কি সিগারেট?
সমাধান: অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশই ধূমপানের পথ ধরে নেশায় জড়িয়েছে। একজন ধূমপায়ীর সাধারণত একাধিক ধূমপায়ী বন্ধু থাকে। তাদের মধ্যে দু-একজন মাদকাসক্ত থাকতে পারে। এই দু-একজনের প্রভাবে অন্য ধূমপায়ী বন্ধুরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। এভাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধূমপান থেকে নেশায় আসক্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। ধূমপান না করলে তার হয়তো ধূমপায়ী বন্ধু হতো না বা খুব কম হতো। মাদক গ্রহণের আশঙ্কাও প্রায় থাকত না। একবার যখন কেউ কোনো মাদক গ্রহণ করে, তখন সে একটার পর একটা বিভিন্ন ধরনের মাদক গ্রহণ করতে থাকে। মাদক গ্রহণের প্রবণতা দিন দিন বেড়ে যায়। আর মাদক গ্রহণ করতে করতে একসময় নিজেকে ধ্বংসের পথে নিয়ে আসে। তাই দেখা যায়, ধূমপান থেকেই মাদকের শুরু এবং তারপর একটার পর একটা মাদক গ্রহণ ও জীবনের বিপর্যয়। একসময় মৃত্যুই হয়ে ওঠে জীবনের অবশ্যম্ভাবী নিয়তি।
প্রশ্ন: আমার সন্তান মাদক ছেড়েছে। কিন্তু ধূমপান করে। এটা তার জন্য কতটা ক্ষতিকর?
সমাধান: ধূমপানের অনেক ক্ষতিকর দিক আছে। ধূমপান করলে বিভিন্ন সমস্যাসহ যক্ষ্মা, ক্যানসারের মতো জটিল রোগ হতে পারে। তা ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধূমপান থেকে মানুষ নেশায় আসক্ত হয়। আপনার সন্তান মাদক ছেড়েছে। মাদক ছাড়লেই সে আর মাদক নেবে না এটা একেবারেই বলা যায় ন। একজন মাদকাসক্ত রোগী মাদক ছাড়ার পর বারবার মাদক গ্রহণ করতে পারে। আপনার সন্তানের মাদক গ্রহণ করার দুই দিক থেকে ঝঁুকি রয়েছে। এক. সে মাদক নিয়ে ভালো হয়েছে। এখন যদি ঠিকমতো ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখে নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন না করে তাহলে যেকোনো সময় মাদকাসক্ত হতে পারে। দুই. সিগারেটের কারণে তার মাদক গ্রহণের প্রবণতা দ্রুত হতে পারে। যারা সিগারেট খায় সাধারণত তাদের মাদকাসক্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। আপনার সন্তানকে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করতে হবে। এখনই ধূমপান ছাড়তে হবে।
প্রশ্ন: বিদেশ থেকে ইয়াবা আসছে। মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী?
সমাধান: আমরা প্রায় শুনি বা জানি বিদেশ থেকে প্রচুর ইয়াবা আসছে। দেশের যুবসমাজের একটা অংশ ইয়াবা খেয়ে ধ্বংস হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। আমাদের সন্তানদের মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে হবে। পরিবারে ছোটবেলা থেকে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষা দিলে সন্তানেরা এসব খারাপ কাজে যুক্ত হবে না। আমাদের সবাইকে একযোগে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। বিভিন্ন সময়ে এসবের সঙ্গে এমন মানুষের সম্পৃক্ততা দেখি যা বিস্মিত করে। যে-ই হোক না কেন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকলেই তাকে ধরতে হবে। আইনের আওতায় আনতে হবে। সাজা দিতে হবে। তাহলে এ অভিশাপ থেকে দেশের তরুণ সমাজসহ সবাই মুক্তি পাবে।
প্রশ্ন: আমরা রিহ্যাবে থেকে ভালো হয়ে বাইরে এলে আমাদের সামনে কেউ ধূমপান করলে বা মাদক নিলে আমাদের ইচ্ছা করে ধূমপান করতে বা মাদক নিতে। এ অবস্থায় কী করতে পারি?
সমাধান: রিহ্যাবে চিকিৎসা করে মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা ভালো হয়। একসময় তারা বাড়িতে চলে আসে। রিহ্যাব থেকে চলে আসার সময় কতগুলো নির্দেশ দেওয়া হয়। যেমন, নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে। ডাক্তারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে। মাদকাসক্ত বন্ধুদের সঙ্গে মেশা যাবে না। মাদক পাওয়া যায় এমন জায়গায় যাওয়া যাবে না। মোবাইল ব্যবহার করা যাবে না। নিজের কাছে টাকাপয়সা রাখা যাবে না। সৃষ্টিশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে। কখনো মাদক নিতে ইচ্ছা করলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। আপনি যদি রিহ্যাব থেকে ভালো হয়ে বাইরে আসেন, তাহলে আপনি যারা ধূমপান করে তাদের কাছ থেকে সরে যাবেন। যারা মাদক নেয় তাদের কাছে থাকবেন না। নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করলে এবং ফলোআপে থাকলে আপনার এসব সমস্যা হওয়ার কথা নয়। রিহ্যাবের নির্দেশ মেনে চলুন বা রিহ্যাবের নির্দেশের বিষয় যা লেখা হলো সেগুলো মেনে চলুন। তাহলে আপনার সমস্যা হবে না।
প্রশ্ন: আমার সন্তান ভয় পায়। তার মনে হয় পেছন থেকে তাকে কেউ তাড়া করছে। তাকে ধরতে আসছে। কী করণীয়?
সমাধান: আপনার সন্তানের সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন। তার আর কী কী সমস্যা আছে। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন। তবে আপনার কথায় মনে হচ্ছে তার মানসিক সমস্যা আছে। তাকে দ্রুত একজন মানসিক চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনলে ১০ টাকায় টিকিট করে দেখাতে পারবেন।
এ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন মাদকমুক্ত কয়েকজন তরুণ। তাঁরা এখন ভালো আছেন। ভালো থাকাকে সব সময় ধরে রাখার জন্য তাঁরা সেলফ হেল্প করেন। তাঁরা তাঁদের সেলফ হেল্প পদ্ধতির অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন:
সেলফ হেল্প পদ্ধতির অভিজ্ঞতা: আমাদের দেশের মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা সেলফ হেল্প গ্রুপ নারকোটিকস অ্যানোনিমাস সংক্ষেপে এনএ। এর মাধ্যমে সেবা নেয়। এখানে সাধারণত দুই ধরনের সভা হয়। একটি উন্মুক্ত। অন্যটি শুধু মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের জন্য। নারকোটিকস অ্যানোনিমাসে মূলত কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করা হয়। কোনো অসুস্থ ব্যক্তি নিজেকে সুস্থ করার জন্য এ ধাপগুলো মেনে চলে। ধাপগুলোর মধ্যে রয়েছে আসক্তিজনিত সমস্যাকে স্বীকার করা। সাহায্য প্রার্থনা করা। নিজেকে মূল্যায়ন করা। প্রতিটি সদস্যের ব্যক্তিগত তথ্যসহ সব বিষয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করা। মাদক গ্রহণকালীন যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। অন্য মাদকাসক্ত, যারা সুস্থ হতে চায়, তাদের সহযোগিতা করার মাধ্যমে নিজে সুস্থ থাকা। যারা এ কাজে সম্পৃক্ত হতে চায়, তাদের সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার প্রতি আস্থা থাকতে হয়। এ জন্য এনএ কে অনেকে আধ্যাত্মিক কাজ বলে থাকে।
এখানে তিনটি বিষয় খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। এগুলো হলো সততা, স্বচ্ছতা ও সদিচ্ছা। তা ছাড়া এ পদ্ধতির মূলে কাজ করে একে অপরের প্রতি সহযোগিতার মনোভাব। এ পদ্ধতিতে কোনো পেশাজীবী, চিকিৎসক, আবাসিক বন্দোবস্ত বা ক্লিনিকের ব্যবস্থা নেই। যারা দীর্ঘদিন ধরে মাদক থেকে সুস্থ আছে, তারা নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে অসুস্থ মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করেন। কোনো কোনো গ্রুপ বা দল আছে বর্ষপূর্তিসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান করে থাকে।
মাদকাসক্তি একটি অসুস্থতা। অপ্রত্যাশিতভাবে বিভিন্ন কারণে যে কেউ মাদকাসক্ত হতে পারেন। চিকিৎসার ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যসহ সবাইকে এ অসুস্থতার বিশেষ বৈশিষ্ট্য গুরুত্বের সঙ্গে বুঝতে হবে। মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের একার পক্ষে এ অসুস্থতা থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন। সঠিক চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তিকে পুনরায় সুস্থ জীবনধারায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তাই পারিবারিক ও সামাজিকভাবে ঘৃণা বা অবহেলা না করে, এদের সুস্থ হওয়ার সুযোগ দিতে হবে।
পরামর্শ দিয়েছেন যাঁরা:
আখতারুজ্জামান সেলিম, আবাসিক চিকিৎসক, কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্র, ঢাকা
ব্রাদার রোনাল্ড ড্রাহোজাল: নির্বাহী পরিচালক, আপন
আহমেদ হেলাল, সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা
ফারজানা রাবিন, সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট হাসপাতাল, ঢাকা
জিল্লুর রহমান খান, সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা
সঞ্চালনায়: ফেরদৌস ফয়সাল, গ্রন্থনা: আশফাকুজ্জামান
প্রশ্ন: আমার সন্তান দুই বছর ধরে ইয়াবা খায়। ইয়াবা খেলে কী ক্ষতি হতে পারে?
সমাধান: ইয়াবার আনন্দ-উত্তেজনা সাময়িকভাবে জীবনের যন্ত্রণা ভুলিয়ে দেয়। তারা বাস করে এক স্বপ্নের জগতে। ইয়াবা ক্ষুধা কমিয়ে দেয়। খাবারের ইচ্ছা থাকে না। শরীরের মাংসপেশি শুকাতে থাকে। এ জন্য অনেকে মনে করে এটা খেলে স্লিম হওয়া যায়। ইয়াবা নিলে ঘুম থাকে না। অনেকে ক্লান্তিহীন আনন্দ উপভোগ করতে চায়। তবে এই আনন্দ খুব সাময়িক। ট্যাবলেটটি ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। কিন্তু ইয়াবাসেবীরা এটা বুঝতে পারে না। কারণ, ইয়াবা গ্রহণের সময় সাময়িক উত্তেজনা পাওয়া যায়। প্রথমে কম ডোজেই আনন্দ পাওয়া যায়। ধীরে ধীরে ডোজের মাত্রা বাড়াতে থাকে। কিছু সময় আনন্দের পর বাড়তে থাকে ক্ষতিকর বিভিন্ন উপসর্গ। রাত কাটে নির্ঘুম। এর ভয়াবহ প্রতিক্রিয়ায় কখনো কখনো একটানা সাত থেকে ১০ দিনও জেগে থাকতে বাধ্য হয় অনেকে। শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে। মেজাজ খিটখিটে হয়। অনবরত গলা-মুখ শুকিয়ে আসে। প্রচণ্ড ঘাম আর অসহ্য গরম অনুভব হয়। ভীষণভাবে বাড়তে থাকে দেহের তাপমাত্রা, রক্তচাপ, নাড়ি ও শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি। অনেকেই উচ্চ রক্তচাপের রোগী হয়ে পড়েন। মস্তিষ্কের ভেতরের ছোট রক্তনালিগুলো ক্ষয় হতে থাকে। এগুলো ছিঁড়ে অনেকের রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এ জন্য অনেকে মৃত্যুঝঁুকিতে পড়ে যায়। স্মৃতিশক্তি কমে যায়। মানসিক নানা রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। অহেতুক রাগারাগি, ভাঙচুরের প্রবণতা বাড়ে। পড়াশোনা, কর্মক্ষেত্র বা পারিবারিক জীবনে বিরূপ প্রভাব পড়ে।
সব ক্ষেত্রে ব্যর্থতা বা পিছিয়ে পড়তে থাকায় আসক্তরা বিষণ্নতায় ভোগে। কারও কারও মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়। দৃষ্টিবিভ্রম, স্মৃতিবিভ্রম আর অস্বাভাবিক সন্দেহ প্রবণতা তৈরি হয়। এসব উপসর্গ থেকে একসময় সিজোফ্রেনিয়ার মতো জটিল মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়। কখনো কখনো শারীরিক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে ভীষণ মৃত্যুঝঁুকি দেখা দেয়। অনেকে সিরিঞ্জের মাধ্যমে ইয়াবা নেয়। এরা হেপাটাইটিস (বি, সি)ও এইডসের মতো গুরুতর রক্তবাহিত রোগের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। ইয়াবা আসক্ত ব্যক্তিরা শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
প্রশ্ন: আমার সন্তানকে একটি নিরাময় কেন্দ্রে রেখেছি। এখানে কোনো চিকিৎসা হয় বলে মনে হয় না। এ বিষয়ে কী করতে পারি?
সমাধান: দেশে সরকারি ও বেসরকারি দুই ধরনের রিহ্যাব (নিরাময় কেন্দ্র) আছে। অনেক রোগী ও অভিভাবক রিহ্যাব সম্পর্কে অভিযোগ করেন। তবে এটা ঠিক, সব ক্ষেত্রে অভিযোগ অমূলক নয়। হঠাৎ করে উত্তেজনার বশে যেখানে সেখানে রোগীকে ভর্তি করা ঠিক হবে না। কোনো রিহ্যাবে ভর্তি করার আগে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করতে হবে। খোঁজ নিতে হবে রিহ্যাবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন কি না। মাদকাসক্তের সঙ্গে প্রায় অধিকাংশ রোগীর মানসিক সমস্যা থাকে। সে ক্ষেত্রে রিহ্যাবে মানসিক চিকিৎসক আছেন কি না, সেটাও দেখতে হবে। রিহ্যাবের পরিবেশ, থাকা-খাওয়া, চিকিৎসাপদ্ধতি সব বিষয়ে খোঁজ নিতে হবে। অনেক নিরাময় কেন্দ্রে সঠিক চিকিৎসা হয় না। মাদক চিকিৎসার একটা ধারাবাহিক পদ্ধতি আছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া এ পদ্ধতি সবার পক্ষে অনুসরণ করা সম্ভব নয়। কোনো কোনো রিহ্যাবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব থাকে। মানসিক রোগের চিকিৎসক থাকেন না। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কম। অনেকে রিহ্যাবের ব্যবসায়িক মনোভাব বেশি থাকে। তাই অনেক দিন নিরাময় কেন্দ্রে থাকার পরও রোগীরা ভালো হয় না। আপনার সন্তানকে কোথায় ভর্তি করবেন—এ বিষয়টি খুব জরুরি। আবেগের বশে যেখানে-সেখানে হঠাৎ করে ভর্তি করবেন না। রিহ্যাব সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে যাচাই-বাছাই করুন। তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনার সন্তানকে কোথায় ভর্তি করবেন।
প্রশ্ন: মাদক গ্রহণের প্রধান কারণ কি সিগারেট?
সমাধান: অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশই ধূমপানের পথ ধরে নেশায় জড়িয়েছে। একজন ধূমপায়ীর সাধারণত একাধিক ধূমপায়ী বন্ধু থাকে। তাদের মধ্যে দু-একজন মাদকাসক্ত থাকতে পারে। এই দু-একজনের প্রভাবে অন্য ধূমপায়ী বন্ধুরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। এভাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধূমপান থেকে নেশায় আসক্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। ধূমপান না করলে তার হয়তো ধূমপায়ী বন্ধু হতো না বা খুব কম হতো। মাদক গ্রহণের আশঙ্কাও প্রায় থাকত না। একবার যখন কেউ কোনো মাদক গ্রহণ করে, তখন সে একটার পর একটা বিভিন্ন ধরনের মাদক গ্রহণ করতে থাকে। মাদক গ্রহণের প্রবণতা দিন দিন বেড়ে যায়। আর মাদক গ্রহণ করতে করতে একসময় নিজেকে ধ্বংসের পথে নিয়ে আসে। তাই দেখা যায়, ধূমপান থেকেই মাদকের শুরু এবং তারপর একটার পর একটা মাদক গ্রহণ ও জীবনের বিপর্যয়। একসময় মৃত্যুই হয়ে ওঠে জীবনের অবশ্যম্ভাবী নিয়তি।
প্রশ্ন: আমার সন্তান মাদক ছেড়েছে। কিন্তু ধূমপান করে। এটা তার জন্য কতটা ক্ষতিকর?
সমাধান: ধূমপানের অনেক ক্ষতিকর দিক আছে। ধূমপান করলে বিভিন্ন সমস্যাসহ যক্ষ্মা, ক্যানসারের মতো জটিল রোগ হতে পারে। তা ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধূমপান থেকে মানুষ নেশায় আসক্ত হয়। আপনার সন্তান মাদক ছেড়েছে। মাদক ছাড়লেই সে আর মাদক নেবে না এটা একেবারেই বলা যায় ন। একজন মাদকাসক্ত রোগী মাদক ছাড়ার পর বারবার মাদক গ্রহণ করতে পারে। আপনার সন্তানের মাদক গ্রহণ করার দুই দিক থেকে ঝঁুকি রয়েছে। এক. সে মাদক নিয়ে ভালো হয়েছে। এখন যদি ঠিকমতো ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখে নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন না করে তাহলে যেকোনো সময় মাদকাসক্ত হতে পারে। দুই. সিগারেটের কারণে তার মাদক গ্রহণের প্রবণতা দ্রুত হতে পারে। যারা সিগারেট খায় সাধারণত তাদের মাদকাসক্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। আপনার সন্তানকে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করতে হবে। এখনই ধূমপান ছাড়তে হবে।
প্রশ্ন: বিদেশ থেকে ইয়াবা আসছে। মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী?
সমাধান: আমরা প্রায় শুনি বা জানি বিদেশ থেকে প্রচুর ইয়াবা আসছে। দেশের যুবসমাজের একটা অংশ ইয়াবা খেয়ে ধ্বংস হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। আমাদের সন্তানদের মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে হবে। পরিবারে ছোটবেলা থেকে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষা দিলে সন্তানেরা এসব খারাপ কাজে যুক্ত হবে না। আমাদের সবাইকে একযোগে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। বিভিন্ন সময়ে এসবের সঙ্গে এমন মানুষের সম্পৃক্ততা দেখি যা বিস্মিত করে। যে-ই হোক না কেন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকলেই তাকে ধরতে হবে। আইনের আওতায় আনতে হবে। সাজা দিতে হবে। তাহলে এ অভিশাপ থেকে দেশের তরুণ সমাজসহ সবাই মুক্তি পাবে।
প্রশ্ন: আমরা রিহ্যাবে থেকে ভালো হয়ে বাইরে এলে আমাদের সামনে কেউ ধূমপান করলে বা মাদক নিলে আমাদের ইচ্ছা করে ধূমপান করতে বা মাদক নিতে। এ অবস্থায় কী করতে পারি?
সমাধান: রিহ্যাবে চিকিৎসা করে মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা ভালো হয়। একসময় তারা বাড়িতে চলে আসে। রিহ্যাব থেকে চলে আসার সময় কতগুলো নির্দেশ দেওয়া হয়। যেমন, নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে। ডাক্তারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে। মাদকাসক্ত বন্ধুদের সঙ্গে মেশা যাবে না। মাদক পাওয়া যায় এমন জায়গায় যাওয়া যাবে না। মোবাইল ব্যবহার করা যাবে না। নিজের কাছে টাকাপয়সা রাখা যাবে না। সৃষ্টিশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে। কখনো মাদক নিতে ইচ্ছা করলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। আপনি যদি রিহ্যাব থেকে ভালো হয়ে বাইরে আসেন, তাহলে আপনি যারা ধূমপান করে তাদের কাছ থেকে সরে যাবেন। যারা মাদক নেয় তাদের কাছে থাকবেন না। নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করলে এবং ফলোআপে থাকলে আপনার এসব সমস্যা হওয়ার কথা নয়। রিহ্যাবের নির্দেশ মেনে চলুন বা রিহ্যাবের নির্দেশের বিষয় যা লেখা হলো সেগুলো মেনে চলুন। তাহলে আপনার সমস্যা হবে না।
প্রশ্ন: আমার সন্তান ভয় পায়। তার মনে হয় পেছন থেকে তাকে কেউ তাড়া করছে। তাকে ধরতে আসছে। কী করণীয়?
সমাধান: আপনার সন্তানের সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন। তার আর কী কী সমস্যা আছে। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন। তবে আপনার কথায় মনে হচ্ছে তার মানসিক সমস্যা আছে। তাকে দ্রুত একজন মানসিক চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনলে ১০ টাকায় টিকিট করে দেখাতে পারবেন।
এ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন মাদকমুক্ত কয়েকজন তরুণ। তাঁরা এখন ভালো আছেন। ভালো থাকাকে সব সময় ধরে রাখার জন্য তাঁরা সেলফ হেল্প করেন। তাঁরা তাঁদের সেলফ হেল্প পদ্ধতির অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন:
সেলফ হেল্প পদ্ধতির অভিজ্ঞতা: আমাদের দেশের মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা সেলফ হেল্প গ্রুপ নারকোটিকস অ্যানোনিমাস সংক্ষেপে এনএ। এর মাধ্যমে সেবা নেয়। এখানে সাধারণত দুই ধরনের সভা হয়। একটি উন্মুক্ত। অন্যটি শুধু মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের জন্য। নারকোটিকস অ্যানোনিমাসে মূলত কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করা হয়। কোনো অসুস্থ ব্যক্তি নিজেকে সুস্থ করার জন্য এ ধাপগুলো মেনে চলে। ধাপগুলোর মধ্যে রয়েছে আসক্তিজনিত সমস্যাকে স্বীকার করা। সাহায্য প্রার্থনা করা। নিজেকে মূল্যায়ন করা। প্রতিটি সদস্যের ব্যক্তিগত তথ্যসহ সব বিষয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করা। মাদক গ্রহণকালীন যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। অন্য মাদকাসক্ত, যারা সুস্থ হতে চায়, তাদের সহযোগিতা করার মাধ্যমে নিজে সুস্থ থাকা। যারা এ কাজে সম্পৃক্ত হতে চায়, তাদের সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার প্রতি আস্থা থাকতে হয়। এ জন্য এনএ কে অনেকে আধ্যাত্মিক কাজ বলে থাকে।
এখানে তিনটি বিষয় খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। এগুলো হলো সততা, স্বচ্ছতা ও সদিচ্ছা। তা ছাড়া এ পদ্ধতির মূলে কাজ করে একে অপরের প্রতি সহযোগিতার মনোভাব। এ পদ্ধতিতে কোনো পেশাজীবী, চিকিৎসক, আবাসিক বন্দোবস্ত বা ক্লিনিকের ব্যবস্থা নেই। যারা দীর্ঘদিন ধরে মাদক থেকে সুস্থ আছে, তারা নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে অসুস্থ মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করেন। কোনো কোনো গ্রুপ বা দল আছে বর্ষপূর্তিসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান করে থাকে।
মাদকাসক্তি একটি অসুস্থতা। অপ্রত্যাশিতভাবে বিভিন্ন কারণে যে কেউ মাদকাসক্ত হতে পারেন। চিকিৎসার ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যসহ সবাইকে এ অসুস্থতার বিশেষ বৈশিষ্ট্য গুরুত্বের সঙ্গে বুঝতে হবে। মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের একার পক্ষে এ অসুস্থতা থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন। সঠিক চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তিকে পুনরায় সুস্থ জীবনধারায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তাই পারিবারিক ও সামাজিকভাবে ঘৃণা বা অবহেলা না করে, এদের সুস্থ হওয়ার সুযোগ দিতে হবে।
পরামর্শ দিয়েছেন যাঁরা:
আখতারুজ্জামান সেলিম, আবাসিক চিকিৎসক, কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্র, ঢাকা
ব্রাদার রোনাল্ড ড্রাহোজাল: নির্বাহী পরিচালক, আপন
আহমেদ হেলাল, সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা
ফারজানা রাবিন, সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট হাসপাতাল, ঢাকা
জিল্লুর রহমান খান, সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা
সঞ্চালনায়: ফেরদৌস ফয়সাল, গ্রন্থনা: আশফাকুজ্জামান
No comments