নির্বাচন নিয়ে সাত দফা প্রস্তাব খালেদার
বিএনপির
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সরকারের প্রতি নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে সাত
দফা প্রস্তাব দিয়েছেন। আজ বুধবার সন্ধ্যা সাতটায় গুলশান কার্যালয়ে এক
সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সাত দফা উপস্থাপন করেন। লিখিত বক্তব্য পড়া শেষে
তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও উত্তর দেন। খালেদা জিয়া সাত
দফায় বলেন, জাতীয় সংসদের নির্বাচন অবশ্যই একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ
সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে হবে। গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ, দক্ষ, যোগ্য ও সৎ
ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। খালেদা জিয়া বলেন,
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত
হবে। আর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পরপরই বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায়
ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সারা দেশে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন
করতে হবে। নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরুর আগেই চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের
গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে।
সব রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তির দাবি জানিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। এ ছাড়া সাত দফায় বর্তমান সরকারের আমলে বন্ধ করে দেওয়া সব সংবাদপত্র ও স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল খুলে দেওয়ারও দাবি জানান তিনি। খালেদা জিয়া মাহমুদুর রহমানসহ আটক সব সাংবাদিকের মুক্তির দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমরা সরকারকে প্রস্তাবসমূহ মেনে নিয়ে জাতীয় সংকট নিরসনের আহ্বান জানাচ্ছি। জনমত গঠনের মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ঘোষণা করছি।’ তিনি ঐক্যবদ্ধভাবে একটি জাতীয় আন্দোলন গড়ে তুলতে গণতান্ত্রিক দলসহ সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
প্রশ্নোত্তর পর্বে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মন্তব্যের প্রসঙ্গ উঠে আসে। এ সম্পর্কে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সে যে কথা বলেছে তা বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেই বলেছে।’
সরকারকে আর সময় দেওয়া যাবে না, উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘একটি বছর তো দিলাম। দেশের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের জন্য সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছি। এখন সরকারই ঠিক করবে, তারা কী করবে।’
আন্দোলনের ডাক দিয়ে নেতা-কর্মীরা মাঠে থাকেন না—এমন অভিযোগ অস্বীকার করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘নেতারা মাঠে না থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে সরকার মামলা দিচ্ছে কী করে। তার মানে সরকার মিথ্যা মামলা দিচ্ছে।’ তিনি দাবি করেন, কিছু এজেন্সি নেতা-কর্মীরা মাঠে থাকেন না বলে প্রচার করে। গণমাধ্যম সেসব খবর ছাপতে অনেকটা বাধ্য হয়। যখন প্রয়োজন তখনই রাজপথে তাঁকে পাওয়া যাবে বলেও উল্লেখ করেন খালেদা জিয়া।
আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে ৫ জানুয়ারিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ওই দিন সারা দেশে সভা-সমাবেশ ও কালো পতাকা বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, ‘এ উপলক্ষে ঢাকায় আমরা একটি কেন্দ্রীয় সমাবেশ করতে চেয়েছি। আশা করি আমাদের শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের কর্মসূচিকে অগ্রসর করে নিতে চাই। পর্যায়ক্রমে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি আসবে। বাধা দিয়ে, আক্রমণ করে জনগণের আন্দোলনকে কেউ কখনো দমাতে পারেনি, এবারও পারবে না।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের মালিকানা এখন আর জনগণের হাতে নেই। আওয়ামী লীগ বহুল বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী পাস এবং জাতীয় নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার-ব্যবস্থা বাতিল করেছে। এর মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের খেয়ালখুশি ও সুবিধামতো একতরফাভাবে সংবিধান পরিবর্তন করে দেশে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করেছে। ধূর্ত অপকৌশলের মাধ্যমে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে গিয়ে তারা জনমতের কোনো তোয়াক্কা করেনি। এতে জনগণের ওপর স্বৈরশাসন চেপে বসেছে।’
খালেদা জিয়া মনে করেন সরকার, সংসদ, মন্ত্রিসভা, স্পিকার ও বিরোধী দলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের প্রতিনিধিত্বহীন হয়ে পড়েছে। দেশের জনগণের কাছে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এই ব্যবস্থা গ্রহণযোগ্য হয়নি। এর মাধ্যমে জনগণ তাঁদের ভোটাধিকার হারিয়েছেন।
বর্তমান সরকার প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, ক্ষমতাসীনেরা রাষ্ট্রক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছে। তারা কোনো ধরনের জবাবদিহিতায় বিশ্বাস করে না। সরকার বলেছিল, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার প্রয়োজনে নাকি ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন তথাকথিত নির্বাচন করতে হয়েছে। খুব শিগগিরই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তারা নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু তারপর একটি বছর পেরিয়ে গেছে। এই সময়ে দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজ, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহল একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সমঝোতার আহ্বান জানিয়ে আসছে। কিন্তু নিজেদের দেওয়া অঙ্গীকারও এখন আর আওয়ামী লীগ মানছে না। খালেদা জিয়া বলেন, এ ধরনের একটি সরকারের দেশ পরিচালনার কোনো অধিকার থাকতে পারে না।
সরকার ফ্যাসিবাদী কায়দায় গাজীপুরে সমাবেশ করতে দেয়নি বলে খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাবেশ স্থলে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে একটি পাল্টা সমাবেশের ঘোষণা দেয় তারা। আর প্রশাসন সেই বেআইনি সমাবেশ আহ্বানকারীদের নিরস্ত না করে ১৪৪ ধারা জারি করে। আমাদের সমাবেশ বন্ধ করে দেয়। গাজীপুরে আমাদের নেতা-কর্মীরা মিছিল করতে চাইলে পুলিশ তাঁদের ওপর আক্রমণ করে। অথচ পুলিশি ছত্রছায়ায় ক্ষমতাসীনদের সমর্থক সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে মহড়া দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।’
খালেদা জিয়ার বক্তব্যে আদালতে হাজিরা দেওয়ার প্রসঙ্গ আসে। তিনি বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় অস্থায়ী আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়ার সময় নেতা-কর্মী, সাধারণ মানুষ ও আমার গাড়িবহরের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্রছায়ায় সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটে। সশস্ত্র হামলাকারীদের নাম-পরিচয় ও ছবিসহ সংবাদমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছে। সেই সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার দূরে থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়নি। অথচ আমাদের দলের অসংখ্য নেতা-কর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে।’
বক্তব্যে খালেদা জিয়া দাবি করেন, তাঁর দল শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করছে। এক বছর ধরে বিএনপি সর্বোচ্চ সংযম বজায় রেখে সংঘাত এড়িয়ে চলেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমাকে নাকি তারা মাইনাস করে দেবে। আমি মনে করি, চূড়ান্ত বিচারে মাইনাস করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের। অতীতে যাঁরা মাইনাস করতে চেয়েছেন, তারাই মাইনাস হয়ে গেছেন। আর রাজনীতি থেকে আমাকে মাইনাস করার সিদ্ধান্ত একমাত্র দেশবাসী নিতে পারেন। অন্য কেউ নন।’
খালেদা জিয়া সম্প্রচার নীতিমালা ও বিচারপতিদের অভিশংসন আইনের সমালোচনা করেন। খালেদা জিয়ার মতে, মাঠে-ময়দানে এমনকি হলরুমে পর্যন্ত রাজনৈতিক সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। মানববন্ধনের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও বাধা দিচ্ছে। বিএনপি, ২০ দল ও অন্যান্য বিরোধী মতের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালাতে প্রকাশ্য উসকানি ও নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি বলতে চাই, ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। আগামীতে আরও সরকার আসবে। এখন আপনারা যেসব অপকর্ম করছেন, যেমন আচরণ করছেন, তার প্রতিফল আগামীতে ভয়ঙ্কর হতে পারে। কাজেই বুঝেশুনে কথা বলবেন ও কাজ করবেন।’
ছাত্রলীগ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, ‘ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের সন্ত্রাস ও অত্যাচারে আজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। গত পাঁচ বছরে ছাত্রলীগের দেড় শতাধিক সদস্য নিজ দলীয় সশস্ত্র ক্যাডারদের হাতে নিহত হয়েছে।’
খালেদা জিয়া উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, অপহরণ, সাংবাদিক নির্যাতন, চাঁদাবাজি, সংঘর্ষ, টেন্ডার ডাকাতির ঘটনাসহ মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। এখন আতঙ্কের জনপদের নাম বাংলাদেশ।
র্যাব ও পুলিশের কেউ কেউ আওয়ামী গুন্ডাবাহিনী কিংবা কর্মীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তারা আইন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে না। তাদের একটি অংশ এখন ভাড়াটে খুনি হিসেবে কাজ করছে বলেও মত দেন খালেদা জিয়া। তিনি র্যাবের বিলুপ্তি করার দাবি জানান।
গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ালে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তীব্র লাগাতার আন্দোলন শুরু করারও হুমকি দেন খালেদা জিয়া। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতু, শেয়ার মার্কেট, হল-মার্ক, ডেসটিনি ইত্যাদির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন, অস্ত্র ক্রয় কেলেঙ্কারি ও রেলের কালো বিড়ালসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গ আনেন খালেদা। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননার মেডেলের স্বর্ণ পর্যন্ত তারা চুরি করেছে।
খালেদা জিয়া বলেন, দেশে আজ যে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সে অবস্থার অবসান ঘটানো না গেলে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। খালেদা জিয়া বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম কেবল বিএনপি বা ২০ দলের নয়। সকল দেশপ্রেমিক ও গণতান্ত্রিক মানুষের। দেশ রক্ষায় জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সবাইকে আজ একমত হতে হবে। এক প্ল্যাটফরমে এসে কিংবা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে বৃহত্তর জাতীয় আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানাচ্ছি।’
সব রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তির দাবি জানিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। এ ছাড়া সাত দফায় বর্তমান সরকারের আমলে বন্ধ করে দেওয়া সব সংবাদপত্র ও স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল খুলে দেওয়ারও দাবি জানান তিনি। খালেদা জিয়া মাহমুদুর রহমানসহ আটক সব সাংবাদিকের মুক্তির দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমরা সরকারকে প্রস্তাবসমূহ মেনে নিয়ে জাতীয় সংকট নিরসনের আহ্বান জানাচ্ছি। জনমত গঠনের মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ঘোষণা করছি।’ তিনি ঐক্যবদ্ধভাবে একটি জাতীয় আন্দোলন গড়ে তুলতে গণতান্ত্রিক দলসহ সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
প্রশ্নোত্তর পর্বে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মন্তব্যের প্রসঙ্গ উঠে আসে। এ সম্পর্কে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সে যে কথা বলেছে তা বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেই বলেছে।’
সরকারকে আর সময় দেওয়া যাবে না, উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘একটি বছর তো দিলাম। দেশের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের জন্য সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছি। এখন সরকারই ঠিক করবে, তারা কী করবে।’
আন্দোলনের ডাক দিয়ে নেতা-কর্মীরা মাঠে থাকেন না—এমন অভিযোগ অস্বীকার করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘নেতারা মাঠে না থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে সরকার মামলা দিচ্ছে কী করে। তার মানে সরকার মিথ্যা মামলা দিচ্ছে।’ তিনি দাবি করেন, কিছু এজেন্সি নেতা-কর্মীরা মাঠে থাকেন না বলে প্রচার করে। গণমাধ্যম সেসব খবর ছাপতে অনেকটা বাধ্য হয়। যখন প্রয়োজন তখনই রাজপথে তাঁকে পাওয়া যাবে বলেও উল্লেখ করেন খালেদা জিয়া।
আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে ৫ জানুয়ারিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ওই দিন সারা দেশে সভা-সমাবেশ ও কালো পতাকা বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, ‘এ উপলক্ষে ঢাকায় আমরা একটি কেন্দ্রীয় সমাবেশ করতে চেয়েছি। আশা করি আমাদের শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের কর্মসূচিকে অগ্রসর করে নিতে চাই। পর্যায়ক্রমে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি আসবে। বাধা দিয়ে, আক্রমণ করে জনগণের আন্দোলনকে কেউ কখনো দমাতে পারেনি, এবারও পারবে না।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের মালিকানা এখন আর জনগণের হাতে নেই। আওয়ামী লীগ বহুল বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী পাস এবং জাতীয় নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার-ব্যবস্থা বাতিল করেছে। এর মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের খেয়ালখুশি ও সুবিধামতো একতরফাভাবে সংবিধান পরিবর্তন করে দেশে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করেছে। ধূর্ত অপকৌশলের মাধ্যমে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে গিয়ে তারা জনমতের কোনো তোয়াক্কা করেনি। এতে জনগণের ওপর স্বৈরশাসন চেপে বসেছে।’
খালেদা জিয়া মনে করেন সরকার, সংসদ, মন্ত্রিসভা, স্পিকার ও বিরোধী দলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের প্রতিনিধিত্বহীন হয়ে পড়েছে। দেশের জনগণের কাছে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এই ব্যবস্থা গ্রহণযোগ্য হয়নি। এর মাধ্যমে জনগণ তাঁদের ভোটাধিকার হারিয়েছেন।
বর্তমান সরকার প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, ক্ষমতাসীনেরা রাষ্ট্রক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছে। তারা কোনো ধরনের জবাবদিহিতায় বিশ্বাস করে না। সরকার বলেছিল, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার প্রয়োজনে নাকি ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন তথাকথিত নির্বাচন করতে হয়েছে। খুব শিগগিরই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তারা নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু তারপর একটি বছর পেরিয়ে গেছে। এই সময়ে দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজ, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহল একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সমঝোতার আহ্বান জানিয়ে আসছে। কিন্তু নিজেদের দেওয়া অঙ্গীকারও এখন আর আওয়ামী লীগ মানছে না। খালেদা জিয়া বলেন, এ ধরনের একটি সরকারের দেশ পরিচালনার কোনো অধিকার থাকতে পারে না।
সরকার ফ্যাসিবাদী কায়দায় গাজীপুরে সমাবেশ করতে দেয়নি বলে খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাবেশ স্থলে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে একটি পাল্টা সমাবেশের ঘোষণা দেয় তারা। আর প্রশাসন সেই বেআইনি সমাবেশ আহ্বানকারীদের নিরস্ত না করে ১৪৪ ধারা জারি করে। আমাদের সমাবেশ বন্ধ করে দেয়। গাজীপুরে আমাদের নেতা-কর্মীরা মিছিল করতে চাইলে পুলিশ তাঁদের ওপর আক্রমণ করে। অথচ পুলিশি ছত্রছায়ায় ক্ষমতাসীনদের সমর্থক সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে মহড়া দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।’
খালেদা জিয়ার বক্তব্যে আদালতে হাজিরা দেওয়ার প্রসঙ্গ আসে। তিনি বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় অস্থায়ী আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়ার সময় নেতা-কর্মী, সাধারণ মানুষ ও আমার গাড়িবহরের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্রছায়ায় সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটে। সশস্ত্র হামলাকারীদের নাম-পরিচয় ও ছবিসহ সংবাদমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছে। সেই সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার দূরে থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়নি। অথচ আমাদের দলের অসংখ্য নেতা-কর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে।’
বক্তব্যে খালেদা জিয়া দাবি করেন, তাঁর দল শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করছে। এক বছর ধরে বিএনপি সর্বোচ্চ সংযম বজায় রেখে সংঘাত এড়িয়ে চলেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমাকে নাকি তারা মাইনাস করে দেবে। আমি মনে করি, চূড়ান্ত বিচারে মাইনাস করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের। অতীতে যাঁরা মাইনাস করতে চেয়েছেন, তারাই মাইনাস হয়ে গেছেন। আর রাজনীতি থেকে আমাকে মাইনাস করার সিদ্ধান্ত একমাত্র দেশবাসী নিতে পারেন। অন্য কেউ নন।’
খালেদা জিয়া সম্প্রচার নীতিমালা ও বিচারপতিদের অভিশংসন আইনের সমালোচনা করেন। খালেদা জিয়ার মতে, মাঠে-ময়দানে এমনকি হলরুমে পর্যন্ত রাজনৈতিক সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। মানববন্ধনের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও বাধা দিচ্ছে। বিএনপি, ২০ দল ও অন্যান্য বিরোধী মতের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালাতে প্রকাশ্য উসকানি ও নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি বলতে চাই, ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। আগামীতে আরও সরকার আসবে। এখন আপনারা যেসব অপকর্ম করছেন, যেমন আচরণ করছেন, তার প্রতিফল আগামীতে ভয়ঙ্কর হতে পারে। কাজেই বুঝেশুনে কথা বলবেন ও কাজ করবেন।’
ছাত্রলীগ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, ‘ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের সন্ত্রাস ও অত্যাচারে আজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। গত পাঁচ বছরে ছাত্রলীগের দেড় শতাধিক সদস্য নিজ দলীয় সশস্ত্র ক্যাডারদের হাতে নিহত হয়েছে।’
খালেদা জিয়া উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, অপহরণ, সাংবাদিক নির্যাতন, চাঁদাবাজি, সংঘর্ষ, টেন্ডার ডাকাতির ঘটনাসহ মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। এখন আতঙ্কের জনপদের নাম বাংলাদেশ।
র্যাব ও পুলিশের কেউ কেউ আওয়ামী গুন্ডাবাহিনী কিংবা কর্মীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তারা আইন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে না। তাদের একটি অংশ এখন ভাড়াটে খুনি হিসেবে কাজ করছে বলেও মত দেন খালেদা জিয়া। তিনি র্যাবের বিলুপ্তি করার দাবি জানান।
গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ালে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তীব্র লাগাতার আন্দোলন শুরু করারও হুমকি দেন খালেদা জিয়া। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতু, শেয়ার মার্কেট, হল-মার্ক, ডেসটিনি ইত্যাদির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন, অস্ত্র ক্রয় কেলেঙ্কারি ও রেলের কালো বিড়ালসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গ আনেন খালেদা। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননার মেডেলের স্বর্ণ পর্যন্ত তারা চুরি করেছে।
খালেদা জিয়া বলেন, দেশে আজ যে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সে অবস্থার অবসান ঘটানো না গেলে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। খালেদা জিয়া বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম কেবল বিএনপি বা ২০ দলের নয়। সকল দেশপ্রেমিক ও গণতান্ত্রিক মানুষের। দেশ রক্ষায় জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সবাইকে আজ একমত হতে হবে। এক প্ল্যাটফরমে এসে কিংবা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে বৃহত্তর জাতীয় আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানাচ্ছি।’
No comments