ঋণ পরিশোধে ২০২৬ পর্যন্ত সময় পেলো বেক্সিমকো
এবার দীর্ঘমেয়াদে ঋণ পুনঃতফসিলসহ আরও বেশ কিছু ব্যাংকিং সুবিধা পাচ্ছেন ওয়ান-ইলেভেনের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হওয়া ব্যবসায়ীরা। এরই অংশ হিসেবে সমপ্রতি সোনালী ও জনতা ব্যাংকের এমন সুবিধা পেয়েছে দেশের অন্যতম শিল্প উদ্যোক্তা বেক্সিমকো গ্রুপ। এই প্রতিষ্ঠানটিকে যথাক্রমে ২০২৫ ও ২০২৬ সাল পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের সময় দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সমপ্রতি দেশের বেশ কিছু বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তাদের আর্থিক চিত্র তুলে ধরে ঋণ পুনঃতফসিলসহ সুদ কমানোর দাবি জানিয়ে চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে। রাজনৈতিক বা যৌক্তিক কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে তাতে ইতিবাচক সাড়া দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি ব্যাংকগুলো দীর্ঘমেয়াদে ঋণ পুনঃতফসিলসহ কিছু সুবিধা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হন ব্যবসায়ীরা। জরিমানার অজুহাতে নামে-বেনামে অনেক শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী সে সময়ে আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। তখন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের মামলার পাশাপাশি বিভিন্ন ভাবে জুলুম- নির্যাতন করা হয়েছে। ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনেক কর্তা সে সময় ব্যবসায়ীদের হয়রানি ও নির্যাতন করে শ শ কোটি টাকাও হাতিয়ে নিয়েছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অতীতে রাজনৈতিক কারণে যে সব ব্যবসায়ী ও তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের সহায়তা করতে ব্যাংক ও গ্রাহকের লেনদেন সম্পর্কের ভিত্তিতে সুবিধা দিতে চায় সরকার। এক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী আর অর্থনীতিবিদরা।
এমন প্রেক্ষাপটে চলতি বছরের ৫ই আগস্ট ঋণ পুনর্গঠন ও সুদের হার কমানোর এক প্রস্তাব বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানকে দেন বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমান। তিনি বেক্সিমকোর টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট বিভাগের ঋণের পাওনা ৫০০০ কোটি টাকা পরিশোধে ১২ বছর সময় ও সুদের হার ১০ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দেন।
বেক্সিমকো গ্রুপের এই প্রস্তাব পেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৯শে আগস্ট সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর মতামত চায়। প্রস্তাবের সঙ্গে একটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতামত ও সংশ্লিষ্ট নথি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিয়েছে বেক্সিমকো। নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটি গত ৩০শে জুন পর্যন্ত বেক্সিমকোর টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস ডিভিশনের ঋণের স্থিতি একীভূত করে ২০২৬ সাল পর্যন্ত পরিশোধের জন্য পুনঃতফসিলীকরণ, কিস্তি পরিশোধের বাধ্যবাধকতা আড়াই বছরের জন্য স্থগিত এবং সুদের হার ১০ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব দিয়েছে।
বেক্সিমকো গ্রুপের এই প্রস্তাব প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান সমপ্রতি এক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, রাজনৈতিক বা যৌক্তিক কোন কারণে কিছু প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খারাপ হতেই পারে। আমাদের সবার জানা আছে, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অনেক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সে ক্ষেত্রে ব্যাংক ভাল ভাবে যাচাই করে ব্যাংক কোম্পানি আইনের মধ্যেই যা করার তা করবে। আইনের বাইরে কাউকে কোন ছাড় দিলে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে কোন প্রতিষ্ঠান বিপদে পড়লে অবশ্যই ব্যাংক তাকে উদ্ধার করবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক অর্থমন্ত্রী এম. সাইদুজ্জামান বলেন, বেক্সিমকো গ্রুপ যদি ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা চায়, তা বাস্তবতার আলোকে বিবেচনা করতে হবে।
এই কোম্পানিটি দেশে কর্পোরেট ব্যবসা ও প্রশাসন পদ্ধতি সর্বপ্রথম চালু করেছে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি আরও বলেন, একটি বড় গ্রুপ বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে বেক্সিমকো গ্রুপের ব্যালেন্স সিট দেখেই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং তা চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদনের আগে এই বিবেচনাটি সর্বাগ্রে রাখতে হবে। একই ভাবে অন্যান্য ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদেরকেও তাদের ঋণ পুনঃতফসিলীকরণের প্রস্তাব বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককেই।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ বলেন, বিগত বিএনপি-জামায়াতের চার দলীয় জোট সরকার ও পরবর্তীতে ১/১১’র সরকারের নির্যাতনমূলক আচরণের কারণে অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিরই অংশ। আমাদের মনে রাখতে হবে, অর্থনীতিকে বিকশিত করতে তারাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নির্যাতিত ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা দেয়ার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।
এই উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে এই উদ্যোগে আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতিই লাভবান হবে।
বেক্সিমকো গ্রুপের ওই প্রস্তাব সংক্রান্ত চিঠিতে সালমান এফ রহমান বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ গ্রহণে বাধা দেয়াসহ ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল (প্রথমে বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোট ও পরে মইন উদ্দিন-ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল) পর্যন্ত নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। এতে প্রায়ই বেক্সিমকো গ্রুপকে চলতি মূলধন সঙ্কটে পড়তে হচ্ছে। আর ২০০৯ সাল থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির ঋণ শোধ করা হয়েছে। মূলত এটা আমরা করেছি ঋণ খেলাপি হওয়া এড়ানোর জন্য। এটা অস্থায়ী একটা সমাধান ছিল।
বেক্সিমকো গ্রুপের মধ্যে বেক্সিমকো (টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট) হলো দেশের বেসরকারি খাতের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ ও পুরনো একটি প্রতিষ্ঠান। টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট ছাড়াও সিরামিক, ওষুধ, পাটসহ অন্যান্য খাতে এ প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ রয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ৪০ হাজার কর্মী কর্মরত আছেন। অপ্রত্যক্ষভাবে জড়িত আরও প্রায় দুই লাখ মানুষ।
গত ১০ বছরে বেক্সিমকো গ্রুপ দেড় বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে বলে চিঠিতে দাবি করেন সালমান এফ রহমান। এর আগে এ রকম ঋণ পরিশোধের সুযোগ পেয়েছিল দেশের আরেকটি বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ইসলাম গ্রুপ। চলতি মূলধন সঙ্কটে পড়া কোম্পানিকে বিদেশেও এ ধরনের সুযোগ দেয়া হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন একাধিক ব্যবসায়ী ও ব্যাংকার। এছাড়াও মুন্নু গ্রুপকেও সোনালী ব্যাংক ১০০ কোটি টাকা মওকুফ করেছে বলে জানা গেছে।
এদিকে বেক্সিমকোর প্রস্তাব নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগের আলোকে মতামত দিয়েছে জনতা ব্যাংক লিমিটেড। রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকটিও বেক্সিমকো গ্রুপের চারটি প্রতিষ্ঠানের ১৭৮৫ কোটি টাকা পরিশোধে ১১ বছর মেয়াদি সুবিধা দিয়েছে। গত ৮ই ডিসেম্বর ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের বোর্ড সভায় নেয়া সিদ্ধান্তের ফলে আগামী ২০২৫ সাল পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের সময় পেয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপ।
এর আগে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড। রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ সভায় গত ৩রা নভেম্বর বেক্সিমকো গ্রুপকে তাদের ঋণ পরিশোধে ২০২৬ সাল পর্যন্ত সময় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক নজিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগের আলোকে সোন?ালী ব্যাংকের পর্ষদ বোর্ড সভায় বিষয়টি অনুমোদন করেছে। এই গ্রুপটি দীর্ঘ ৮ বছর রাজনৈতিক কারণে ভালভাবে ব্যবসা করতে পারেনি। তাই আমরা মনে করছি, বড় এ গ্রুপটিকে সুযোগ দিলে তারা টিকে থাকবে।
অর্থপ্রবাহ ঠিক রেখে প্রতিষ্ঠানগুলো চালু রাখতেই এ সুযোগ দেয়া হয়েছে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদন দিলেই তা কার্যকর হবে। অতীতে রাজনৈতিক কারণে এমন হয়রানির শিকার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ঋণ সংক্রান্ত বিষয়ে আবেদন করলে, তা-ও একই ভাবে মূল্যায়ন করা হবে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পাঠানো সোনালী ব্যাংকের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, বেক্সিমকো গ্রুপের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এনে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতিসাপেক্ষে এবং কোম্পানির অর্থপ্রবাহ বিবেচনায় নিয়ে বৃহদায়ক ঋণ বিশ্রেণীকরণ করে পরিশোধের সুযোগ দেয়ার জন্য পুনঃতফসিল করা যেতে পারে। এ জন্য সুদের হার হবে ১০ শতাংশ।
গত ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেক্সিমকো গ্রুপের টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস বিভাগের ৫২৬৯ কোটি টাকা ঋণ পুনর্গঠনের জন্য আবেদন করেছেন সালমান এফ রহমান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অতীতে রাজনৈতিক কারণে যে সব ব্যবসায়ী ও তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের সহায়তা করতে ব্যাংক ও গ্রাহকের লেনদেন সম্পর্কের ভিত্তিতে সুবিধা দিতে চায় সরকার। এক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী আর অর্থনীতিবিদরা।
এমন প্রেক্ষাপটে চলতি বছরের ৫ই আগস্ট ঋণ পুনর্গঠন ও সুদের হার কমানোর এক প্রস্তাব বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানকে দেন বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমান। তিনি বেক্সিমকোর টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট বিভাগের ঋণের পাওনা ৫০০০ কোটি টাকা পরিশোধে ১২ বছর সময় ও সুদের হার ১০ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দেন।
বেক্সিমকো গ্রুপের এই প্রস্তাব পেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৯শে আগস্ট সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর মতামত চায়। প্রস্তাবের সঙ্গে একটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতামত ও সংশ্লিষ্ট নথি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিয়েছে বেক্সিমকো। নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটি গত ৩০শে জুন পর্যন্ত বেক্সিমকোর টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস ডিভিশনের ঋণের স্থিতি একীভূত করে ২০২৬ সাল পর্যন্ত পরিশোধের জন্য পুনঃতফসিলীকরণ, কিস্তি পরিশোধের বাধ্যবাধকতা আড়াই বছরের জন্য স্থগিত এবং সুদের হার ১০ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব দিয়েছে।
বেক্সিমকো গ্রুপের এই প্রস্তাব প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান সমপ্রতি এক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, রাজনৈতিক বা যৌক্তিক কোন কারণে কিছু প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খারাপ হতেই পারে। আমাদের সবার জানা আছে, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অনেক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সে ক্ষেত্রে ব্যাংক ভাল ভাবে যাচাই করে ব্যাংক কোম্পানি আইনের মধ্যেই যা করার তা করবে। আইনের বাইরে কাউকে কোন ছাড় দিলে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে কোন প্রতিষ্ঠান বিপদে পড়লে অবশ্যই ব্যাংক তাকে উদ্ধার করবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক অর্থমন্ত্রী এম. সাইদুজ্জামান বলেন, বেক্সিমকো গ্রুপ যদি ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা চায়, তা বাস্তবতার আলোকে বিবেচনা করতে হবে।
এই কোম্পানিটি দেশে কর্পোরেট ব্যবসা ও প্রশাসন পদ্ধতি সর্বপ্রথম চালু করেছে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি আরও বলেন, একটি বড় গ্রুপ বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে বেক্সিমকো গ্রুপের ব্যালেন্স সিট দেখেই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং তা চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদনের আগে এই বিবেচনাটি সর্বাগ্রে রাখতে হবে। একই ভাবে অন্যান্য ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদেরকেও তাদের ঋণ পুনঃতফসিলীকরণের প্রস্তাব বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককেই।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ বলেন, বিগত বিএনপি-জামায়াতের চার দলীয় জোট সরকার ও পরবর্তীতে ১/১১’র সরকারের নির্যাতনমূলক আচরণের কারণে অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিরই অংশ। আমাদের মনে রাখতে হবে, অর্থনীতিকে বিকশিত করতে তারাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নির্যাতিত ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা দেয়ার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।
এই উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে এই উদ্যোগে আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতিই লাভবান হবে।
বেক্সিমকো গ্রুপের ওই প্রস্তাব সংক্রান্ত চিঠিতে সালমান এফ রহমান বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ গ্রহণে বাধা দেয়াসহ ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল (প্রথমে বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোট ও পরে মইন উদ্দিন-ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল) পর্যন্ত নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। এতে প্রায়ই বেক্সিমকো গ্রুপকে চলতি মূলধন সঙ্কটে পড়তে হচ্ছে। আর ২০০৯ সাল থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির ঋণ শোধ করা হয়েছে। মূলত এটা আমরা করেছি ঋণ খেলাপি হওয়া এড়ানোর জন্য। এটা অস্থায়ী একটা সমাধান ছিল।
বেক্সিমকো গ্রুপের মধ্যে বেক্সিমকো (টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট) হলো দেশের বেসরকারি খাতের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ ও পুরনো একটি প্রতিষ্ঠান। টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট ছাড়াও সিরামিক, ওষুধ, পাটসহ অন্যান্য খাতে এ প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ রয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ৪০ হাজার কর্মী কর্মরত আছেন। অপ্রত্যক্ষভাবে জড়িত আরও প্রায় দুই লাখ মানুষ।
গত ১০ বছরে বেক্সিমকো গ্রুপ দেড় বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে বলে চিঠিতে দাবি করেন সালমান এফ রহমান। এর আগে এ রকম ঋণ পরিশোধের সুযোগ পেয়েছিল দেশের আরেকটি বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ইসলাম গ্রুপ। চলতি মূলধন সঙ্কটে পড়া কোম্পানিকে বিদেশেও এ ধরনের সুযোগ দেয়া হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন একাধিক ব্যবসায়ী ও ব্যাংকার। এছাড়াও মুন্নু গ্রুপকেও সোনালী ব্যাংক ১০০ কোটি টাকা মওকুফ করেছে বলে জানা গেছে।
এদিকে বেক্সিমকোর প্রস্তাব নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগের আলোকে মতামত দিয়েছে জনতা ব্যাংক লিমিটেড। রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকটিও বেক্সিমকো গ্রুপের চারটি প্রতিষ্ঠানের ১৭৮৫ কোটি টাকা পরিশোধে ১১ বছর মেয়াদি সুবিধা দিয়েছে। গত ৮ই ডিসেম্বর ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের বোর্ড সভায় নেয়া সিদ্ধান্তের ফলে আগামী ২০২৫ সাল পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের সময় পেয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপ।
এর আগে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড। রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ সভায় গত ৩রা নভেম্বর বেক্সিমকো গ্রুপকে তাদের ঋণ পরিশোধে ২০২৬ সাল পর্যন্ত সময় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক নজিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগের আলোকে সোন?ালী ব্যাংকের পর্ষদ বোর্ড সভায় বিষয়টি অনুমোদন করেছে। এই গ্রুপটি দীর্ঘ ৮ বছর রাজনৈতিক কারণে ভালভাবে ব্যবসা করতে পারেনি। তাই আমরা মনে করছি, বড় এ গ্রুপটিকে সুযোগ দিলে তারা টিকে থাকবে।
অর্থপ্রবাহ ঠিক রেখে প্রতিষ্ঠানগুলো চালু রাখতেই এ সুযোগ দেয়া হয়েছে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদন দিলেই তা কার্যকর হবে। অতীতে রাজনৈতিক কারণে এমন হয়রানির শিকার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ঋণ সংক্রান্ত বিষয়ে আবেদন করলে, তা-ও একই ভাবে মূল্যায়ন করা হবে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পাঠানো সোনালী ব্যাংকের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, বেক্সিমকো গ্রুপের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এনে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতিসাপেক্ষে এবং কোম্পানির অর্থপ্রবাহ বিবেচনায় নিয়ে বৃহদায়ক ঋণ বিশ্রেণীকরণ করে পরিশোধের সুযোগ দেয়ার জন্য পুনঃতফসিল করা যেতে পারে। এ জন্য সুদের হার হবে ১০ শতাংশ।
গত ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেক্সিমকো গ্রুপের টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস বিভাগের ৫২৬৯ কোটি টাকা ঋণ পুনর্গঠনের জন্য আবেদন করেছেন সালমান এফ রহমান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের মতো অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো গ্রুপের প্রস্তাবে একমত হলেই তা কার্যকর হবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং গ্রুপটির সম্মিলিত সিদ্ধান্তই কার্যকর হবে।
এ প্রসঙ্গে সোনালী ব্যাংকের সদ্য বিদায়ী পরিচালক ও অগ্রণী ব্যাংকের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত বলেন, অর্থনীতিতে বেক্সিমকো গ্রুপের বড় অবদান আছে। সেই অবদান বিবেচনায় নিয়ে ঋণ পুনঃতফসিল ও পরিশোধের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। এ বিষয়ে সব ব্যাংকের মতামত নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে হবে। একই ভাবে আরও অন্য যে সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এই সুবিধা চান, তাদের সক্ষমতাও দেখতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, গ্রাহকদের প্রতি ব্যাংকগুলোর সহনশীল ভূমিকা থাকা দরকার। এক্ষেত্রে বিগত ১/১১ সরকারের আমলে যে সব ব্যবসায়ী নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদের ঋণ পুনঃগঠনের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সহানুভূতি থাকা উচিত।
এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, গ্রাহকদের প্রতি ব্যাংকগুলোর সহনশীল ভূমিকা থাকা দরকার। এক্ষেত্রে বিগত ১/১১ সরকারের আমলে যে সব ব্যবসায়ী নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদের ঋণ পুনঃগঠনের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সহানুভূতি থাকা উচিত।
No comments