মুক্তাব্দ : একটি ঐতিহাসিক প্রস্তাবনা ও প্রাসঙ্গিক কথা by মুহম্মদ মাহবুবু-উল ইসলাম
আমরা ধরে নিই সময়ের ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র অংশ হলো ‘সেকেন্ড’। ৬০ সেকেন্ডে মিনিট, ৬০ মিনিটে ঘণ্টা, ২৪ ঘণ্টায় দিন, ৩৬৫ দিনে বছর। মানুষ স্মৃতি মন্থন করতে ভালবাসে এবং সেজন্যই বুঝি এসব হিসাব। মহাকাল চলছে- শুরু আছে, শেষ আছে, হয়তোবা আছে- হয়তোবা নেই- তার মধ্যে কিছু চিহ্ন, হিসাব নিকেশ। প্রাচীন আরবে কাঁচা ক্ষুদ্র ছিদ্রযুক্ত মাটির পাত্রে পানি ভরে ২৪ ঘণ্টার হিসাবটিকে মানুষ আয়ত্তে আনতে থাকে। বলা হয়ে থাকে অতি প্রাচীনকালেও সময়ের হিসাবের জন্য বর্ষপঞ্জির অভ্যাস প্রচলিত হয়ে থাকে। ‘মায়া’ পঞ্জিতে এমনকি পৃথিবীর মহাপ্রলয়ের কথাও বলে ফেলা হয়। গত ১৪৩৫-এর ৭ই মহরম শুক্রবার সে হিসাবে মহাপ্রলয়ের তারিখটি পড়ে ছিল। ভাগ্যিস, পৃথিবী ধ্বংস হয়নি। মুসলমান সমাজে বলাবলি আছে, মহরম মাসের ১০ তারিখ কেয়ামত হবে আর বারটি থাকবে শুক্রবার।
উল্লেখ করা যায়, আমরা প্রতিদিন দিন গণনা করি- বার, বছর গণনা করি। নামছাড়া তা’ চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। নাম ফারসি শব্দ যার অর্থ চিহ্ন। বলা হয় অষ্ট প্রহর। সংগীতজ্ঞরা সুরের খেলায় প্রহরের নির্দেশনা পেয়ে থাকেন। সপ্তাহে ৭টি দিন, এদেরও নাম নাছে। বাংলায় শনি, রবি ইত্যাদি। ইংরেজিতে স্যাটারডে, সানডে। ফারসিতে শনিচার, এতোয়ার। আরবিতে এয়মুস্-সাবতে, এয়মুল আহাদ। মাস আছে ১২টি। বাংলায় বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ- ইংরেজিতে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি- আরবিতে মহরম, সফর। শত কোটি মানুষের শত কোটি নাম। কারওবা এক নামে পোষায় না। পৃথিবীর নামের খেলা- নাম ছাড়া কে কাকে চিনে!
যে প্রশ্নের অবতারণা করতে চাই, সেটা হলো বর্ষপঞ্জি- ‘ক্যালেন্ডার’। ইড়ড়শ ড়ভ এবহবংরং- অহহড় সঁহফর পৃথিবীর বয়স- সংগীত পূজারিদের ইরম ইধহফ ঊৎধ ঈশ্বর কণা ইত্যাকার নিকাশ বিকাশ- ইহুদিদের হিব্রু পঞ্জিকার হিসাব- বৌদ্ধের মহাপ্রয়াণ ধরে ‘বৌদ্ধ পঞ্জিকা’- রুমান হিরুদের নগর জয় ও পত্তনের গণনার হিসাব- চীনাদের চৈনিক পঞ্জিকার হিসাবের নামচা কার বা অজানা। শোনা যায় বাদশাহ আকবর তার খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে পরবর্তীতে ১লা বৈশাখকে বাংলা নববর্ষ হিসেবে গণনার প্রচলন করেন, যার ভিত্তি ছিল হিজরি সন। বাংলা ১২ মাসের নাম কে কিভাবে কখন নির্ধারণ করেন আমার জানা নেই- অর্থহীন কোন কিছুই বিবেকী মানুষের ওপর বিস্তার লাভ করতে পারে না। হয়তোবা ইহাদের অর্থ আছে। ইংরেজি মাসের নামগুলো বিভিন্ন শুভ অশুভ দেব-দেবীর নামে।
সর্বোপরি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এসব নাম চিহ্নায়নের পশ্চাতে কোন না কোন ধর্মীয়, সাম্প্রদায়িক, আঞ্চলিক প্রভাব ক্রিয়াধীন হয়েছে। ধর্মীয়, সাম্প্রদায়িক, ঐতিহাসিক তথা অর্থনৈতিক বিশেষ কারণ ইত্যাকার বিষয়াদিকে স্মরণীয় করতেই বুঝি সময়ের হিসাব। এসব নামকরণ। পৃথিবীর ইতিহাসে একটি বিষয় চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলা যায়, কোন নির্দিষ্ট দেশ বা জাতি তাদের কোন গৌরবোজ্জ্বল অসাম্প্রদায়িক জাতীয় ঘটনাকে স্মরণীয় ও বরণীয় তথা অমর করে রাখতে কোন বর্ষপঞ্জির প্রচলন করেনি।
আমরা বাঙালি জাতি। আমাদের জাতীয় জীবনে অনেক ঘটনাই তাবৎ পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দেয়ার মতো ঘটে থাকে। ’৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি- লক্ষ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে হাজার বছরের শত গ্লানি কাটিয়ে একটি নতুন পতাকা পেয়েছি। পৃথিবীর অন্যতম সুশিক্ষিত নিয়মিত সেনাবাহিনীকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করিয়েছি। এই স্বাধীনতা গোলটেবিলের আলোচনার স্বাধীনতা নয়। প্রতিটি বাঙালির শরীরে সে দিন স্বাধীনতার শানিত স্পন্দন, যা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম করেছে। ‘এবারের সংগ্রাম... মুক্তির সংগ্রাম’ শুধু বাঙালি নয়- সারা বিশ্বকে অনুরণিত করেছে।
জাতির এই মহান যাত্রার শুভ লগ্নটিকে আমরা কি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গণনায় ক্রিয়াশীল করে রাখতে পারি না? ১৬ই ডিসেম্বরকে আমরা বিজয় দিবস হিসেবে পালন করি। বাংলাদেশ সেদিন মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে মুক্ত হয়, স্বাধীন হয়। সে হিসেবে বাংলাদেশের মুক্তির বয়সের ঐতিহাসিক শুভযাত্রা ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর। আর সেই ‘৭১ই হতে পারে ১ম গণনা ‘মুক্তাব্দ’র। এতে করে আন্তর্জাতিক বা স্থানীয় কোন গণনাতেই কোন বিরূপ প্রভাব পড়ার কিছু নেই। বর্ষ গণনায় বঙ্গাব্দ, খ্রিষ্টাব্দ, হিজরি সন ইত্যাকার মত শুধু যুক্ত হবে ‘মুক্তাব্দ’ সনটি। যেমন বর্তমানে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দটিতে আমাদের শত্রুমুক্ত হওয়ার বয়স হবে ৪৩ বছর, অর্থাৎ ইংরেজি মাসের তারিখের পর লেখা হবে ‘মুক্তাব্দ’। যেমন ১৬ই ডিসেম্বর, ৪৩ মুক্তাব্দ; ১১ ভাদ্র, ৪৩ মুক্তাব্দ; ১লা মহরম, ৪৩ মুক্তাব্দ...। বাংলার স্বাধীন নবাবের পতন পলাশী যুদ্ধ ১৯৫৭ খ্রি. অর্থাৎ ২১৪ মুক্ত পূর্বাব্দ, সিপাহী বিদ্রোহী ১১৪ মুক্ত পূর্বাব্দ, তিতুমীরের আত্মদান.... মুক্ত পূর্বাব্দ, ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন ১৯ মুক্ত পূর্বাব্দ ইত্যাদি।
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে ‘মুক্তি’ শব্দটিই প্রাধান্য পেয়েছে। সেই থেকে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ ‘মুক্তিবাহিনী’। বাঙালিরা ‘মুক্তিযোদ্ধা’। ১৬ই ডিসেম্বর মুক্তির দিবস- ‘মুক্ত দিবস’। বিজয়ের সঙ্গে আধুনিক ধারণায় শুধু ভৌগোলিক, রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বৈশ্বিক অবস্থান, প্রতিযোগিতা ইত্যকার বিষয়াদিও জড়িয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর সার্বিক সেই স্বপ্ন বাঙালি হৃদয়ে যুগ যুগ প্রতিপালনে বাস্তবায়নের একটি চলমান ব্রত। আমাদের গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষ ৭১’-এর যুদ্ধের বছরটাকে সংগ্রামের বছর হিসেবেও বলে থাকে, যা বঙ্গবন্ধুর সেই ‘এবারের ‘সংগ্রাম’-এরই প্রতিধ্বনি-সাধারণ মানুষের মনে ও কণ্ঠে। গ্রামের অনেকেই বয়স আন্দাজ করতে গিয়ে সংগ্রামের বছরে-যুদ্ধের বছরে কম বয়স- এভাবে গণনা করে মিলাতে চেষ্টা করে। তাই একথা স্বতঃসিদ্ধভাবে প্রমাণ হয়ে আছে যে, বাঙালির হিসাবের মানদ- তার মনন ও চলনে প্রোথিত আছে, সেটা তার মুক্তিযুদ্ধ।
আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্ত দিবসের ঐতিহাসিক সময় গণনায় নিয়ে আসলে প্রতিনিয়ত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেবে আমরা কবে স্বাধীন হয়েছি, আমাদের বয়স কত? এতদিনে কতটুকু অর্জন করলাম, আগামী বছর বা ভবিষ্যতে কতটুকু অর্জন করা উচিত। এসব জাতাভিমানী ধ্যান ধারণায় বাঙালি প্রতিনিয়ত স্বকীয় জাতীয়তায় স্নাত হবে, হবে উজ্জীবিত, এটাই হোক বাঙালির এমন ইতিহাস সৃষ্টিকারী যাত্রার অঙ্গিকার।
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা, জেলা ও দায়রা জজ, হবিগঞ্জ।
উল্লেখ করা যায়, আমরা প্রতিদিন দিন গণনা করি- বার, বছর গণনা করি। নামছাড়া তা’ চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। নাম ফারসি শব্দ যার অর্থ চিহ্ন। বলা হয় অষ্ট প্রহর। সংগীতজ্ঞরা সুরের খেলায় প্রহরের নির্দেশনা পেয়ে থাকেন। সপ্তাহে ৭টি দিন, এদেরও নাম নাছে। বাংলায় শনি, রবি ইত্যাদি। ইংরেজিতে স্যাটারডে, সানডে। ফারসিতে শনিচার, এতোয়ার। আরবিতে এয়মুস্-সাবতে, এয়মুল আহাদ। মাস আছে ১২টি। বাংলায় বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ- ইংরেজিতে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি- আরবিতে মহরম, সফর। শত কোটি মানুষের শত কোটি নাম। কারওবা এক নামে পোষায় না। পৃথিবীর নামের খেলা- নাম ছাড়া কে কাকে চিনে!
যে প্রশ্নের অবতারণা করতে চাই, সেটা হলো বর্ষপঞ্জি- ‘ক্যালেন্ডার’। ইড়ড়শ ড়ভ এবহবংরং- অহহড় সঁহফর পৃথিবীর বয়স- সংগীত পূজারিদের ইরম ইধহফ ঊৎধ ঈশ্বর কণা ইত্যাকার নিকাশ বিকাশ- ইহুদিদের হিব্রু পঞ্জিকার হিসাব- বৌদ্ধের মহাপ্রয়াণ ধরে ‘বৌদ্ধ পঞ্জিকা’- রুমান হিরুদের নগর জয় ও পত্তনের গণনার হিসাব- চীনাদের চৈনিক পঞ্জিকার হিসাবের নামচা কার বা অজানা। শোনা যায় বাদশাহ আকবর তার খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে পরবর্তীতে ১লা বৈশাখকে বাংলা নববর্ষ হিসেবে গণনার প্রচলন করেন, যার ভিত্তি ছিল হিজরি সন। বাংলা ১২ মাসের নাম কে কিভাবে কখন নির্ধারণ করেন আমার জানা নেই- অর্থহীন কোন কিছুই বিবেকী মানুষের ওপর বিস্তার লাভ করতে পারে না। হয়তোবা ইহাদের অর্থ আছে। ইংরেজি মাসের নামগুলো বিভিন্ন শুভ অশুভ দেব-দেবীর নামে।
সর্বোপরি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এসব নাম চিহ্নায়নের পশ্চাতে কোন না কোন ধর্মীয়, সাম্প্রদায়িক, আঞ্চলিক প্রভাব ক্রিয়াধীন হয়েছে। ধর্মীয়, সাম্প্রদায়িক, ঐতিহাসিক তথা অর্থনৈতিক বিশেষ কারণ ইত্যাকার বিষয়াদিকে স্মরণীয় করতেই বুঝি সময়ের হিসাব। এসব নামকরণ। পৃথিবীর ইতিহাসে একটি বিষয় চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলা যায়, কোন নির্দিষ্ট দেশ বা জাতি তাদের কোন গৌরবোজ্জ্বল অসাম্প্রদায়িক জাতীয় ঘটনাকে স্মরণীয় ও বরণীয় তথা অমর করে রাখতে কোন বর্ষপঞ্জির প্রচলন করেনি।
আমরা বাঙালি জাতি। আমাদের জাতীয় জীবনে অনেক ঘটনাই তাবৎ পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দেয়ার মতো ঘটে থাকে। ’৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি- লক্ষ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে হাজার বছরের শত গ্লানি কাটিয়ে একটি নতুন পতাকা পেয়েছি। পৃথিবীর অন্যতম সুশিক্ষিত নিয়মিত সেনাবাহিনীকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করিয়েছি। এই স্বাধীনতা গোলটেবিলের আলোচনার স্বাধীনতা নয়। প্রতিটি বাঙালির শরীরে সে দিন স্বাধীনতার শানিত স্পন্দন, যা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম করেছে। ‘এবারের সংগ্রাম... মুক্তির সংগ্রাম’ শুধু বাঙালি নয়- সারা বিশ্বকে অনুরণিত করেছে।
জাতির এই মহান যাত্রার শুভ লগ্নটিকে আমরা কি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গণনায় ক্রিয়াশীল করে রাখতে পারি না? ১৬ই ডিসেম্বরকে আমরা বিজয় দিবস হিসেবে পালন করি। বাংলাদেশ সেদিন মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে মুক্ত হয়, স্বাধীন হয়। সে হিসেবে বাংলাদেশের মুক্তির বয়সের ঐতিহাসিক শুভযাত্রা ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর। আর সেই ‘৭১ই হতে পারে ১ম গণনা ‘মুক্তাব্দ’র। এতে করে আন্তর্জাতিক বা স্থানীয় কোন গণনাতেই কোন বিরূপ প্রভাব পড়ার কিছু নেই। বর্ষ গণনায় বঙ্গাব্দ, খ্রিষ্টাব্দ, হিজরি সন ইত্যাকার মত শুধু যুক্ত হবে ‘মুক্তাব্দ’ সনটি। যেমন বর্তমানে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দটিতে আমাদের শত্রুমুক্ত হওয়ার বয়স হবে ৪৩ বছর, অর্থাৎ ইংরেজি মাসের তারিখের পর লেখা হবে ‘মুক্তাব্দ’। যেমন ১৬ই ডিসেম্বর, ৪৩ মুক্তাব্দ; ১১ ভাদ্র, ৪৩ মুক্তাব্দ; ১লা মহরম, ৪৩ মুক্তাব্দ...। বাংলার স্বাধীন নবাবের পতন পলাশী যুদ্ধ ১৯৫৭ খ্রি. অর্থাৎ ২১৪ মুক্ত পূর্বাব্দ, সিপাহী বিদ্রোহী ১১৪ মুক্ত পূর্বাব্দ, তিতুমীরের আত্মদান.... মুক্ত পূর্বাব্দ, ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন ১৯ মুক্ত পূর্বাব্দ ইত্যাদি।
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে ‘মুক্তি’ শব্দটিই প্রাধান্য পেয়েছে। সেই থেকে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ ‘মুক্তিবাহিনী’। বাঙালিরা ‘মুক্তিযোদ্ধা’। ১৬ই ডিসেম্বর মুক্তির দিবস- ‘মুক্ত দিবস’। বিজয়ের সঙ্গে আধুনিক ধারণায় শুধু ভৌগোলিক, রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বৈশ্বিক অবস্থান, প্রতিযোগিতা ইত্যকার বিষয়াদিও জড়িয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর সার্বিক সেই স্বপ্ন বাঙালি হৃদয়ে যুগ যুগ প্রতিপালনে বাস্তবায়নের একটি চলমান ব্রত। আমাদের গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষ ৭১’-এর যুদ্ধের বছরটাকে সংগ্রামের বছর হিসেবেও বলে থাকে, যা বঙ্গবন্ধুর সেই ‘এবারের ‘সংগ্রাম’-এরই প্রতিধ্বনি-সাধারণ মানুষের মনে ও কণ্ঠে। গ্রামের অনেকেই বয়স আন্দাজ করতে গিয়ে সংগ্রামের বছরে-যুদ্ধের বছরে কম বয়স- এভাবে গণনা করে মিলাতে চেষ্টা করে। তাই একথা স্বতঃসিদ্ধভাবে প্রমাণ হয়ে আছে যে, বাঙালির হিসাবের মানদ- তার মনন ও চলনে প্রোথিত আছে, সেটা তার মুক্তিযুদ্ধ।
আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্ত দিবসের ঐতিহাসিক সময় গণনায় নিয়ে আসলে প্রতিনিয়ত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেবে আমরা কবে স্বাধীন হয়েছি, আমাদের বয়স কত? এতদিনে কতটুকু অর্জন করলাম, আগামী বছর বা ভবিষ্যতে কতটুকু অর্জন করা উচিত। এসব জাতাভিমানী ধ্যান ধারণায় বাঙালি প্রতিনিয়ত স্বকীয় জাতীয়তায় স্নাত হবে, হবে উজ্জীবিত, এটাই হোক বাঙালির এমন ইতিহাস সৃষ্টিকারী যাত্রার অঙ্গিকার।
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা, জেলা ও দায়রা জজ, হবিগঞ্জ।
No comments