নারী চালাবেন, নারীই চড়বেন
একটি শি ট্যাক্সির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন চালক। গত শুক্রবার ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় কোচি শহর থেকে তোলা ছবি। রয়টার্স |
ভারতের পরিবহনব্যবস্থা নারীর জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, তার সর্বশেষ উদাহরণ ট্যাক্সিচালকের হাতে এক নারী ধর্ষণ। নারীর জন্য নিরাপদ পরিবহনের ব্যবস্থা করে দিতে এখন পর্যন্ত দেশটি অক্ষমই বলা চলে। তবে এবার একটা সমাধান নিয়ে হাজির হয়েছে কর্তৃপক্ষ: নারীদের জন্য নারীচালিত ট্যাক্সি। খবর রয়টার্সের। ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালা গত বছর চালু করে ‘শি ট্যাক্সি’। এর আওতায় ছিল গোলাপি রঙের ৪০টি ট্যাক্সি, যার সবগুলোর চালকই নারী। পাশাপাশি এসব ট্যাক্সিতে রয়েছে তারহীন গতিবিধি শনাক্তের যন্ত্র ও একটি বিশেষ বাটন, যেটি কল সেন্টারগুলোর সঙ্গে যুক্ত। এর মাধ্যমে ট্যাক্সিতে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। নয়াদিল্লিতে বেসরকারি উবের ট্যাক্সি সার্ভিসের একটি ট্যাক্সিতে ৫ ডিসেম্বর চালকের হাতে এক নারী ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর কেরালার ওই সার্ভিসকেই মডেল হিসেবে গ্রহণ করছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার ওই রকম ট্যাক্সি সার্ভিস সারা দেশেই চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। ‘শি ট্যাক্সি’র প্রধান নির্বাহী পি টি এম সুনিশ এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দিল্লির ঘটনা সারা দেশেই ‘শি ট্যাক্সি’ চালুর প্রয়োজনীয়তা দেখিয়ে দিয়েছে। শি ট্যাক্সি’ ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার ট্রিপে ২৪ হাজারের মতো যাত্রী আনা-নেওয়া করেছে। আর চাহিদা অনুযায়ী ট্যাক্সি নেই। কারণ, এখন পর্যন্ত ট্যাক্সির জন্য যতজন কল করেছে, তাদের প্রায় অর্ধেকই খালি হাতে ফিরেছে। সাত মাস ধরে ‘শি ট্যাক্সি’ ব্যবহার করছেন ২৫ বছর বয়সী অশ্বথী শ্রীকুমার।
কাজ শেষে প্রতিদিনই মধ্যরাতে বাড়ি ফেরা এই প্রযুক্তিকর্মী ‘শি ট্যাক্সি’ ব্যবহারের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বললেন, ‘আমি নিরাপদ বোধ করি। পরিবারও নিশ্চিন্ত থাকে। যখন পাই না, তখন আমার উদ্বিগ্ন বাবা-মা ফোন দিতেই থাকেন।’ ভারতে ক্রমবর্ধমান যৌন অপরাধের কারণেই রাজ্যগুলো ও ক্ষুদ্র ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো নারীচালকদের দিয়ে ট্যাক্সি সার্ভিস চালুর দিকে ঝুঁকছে। বিশেষ করে ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে নয়াদিল্লিতে চলন্ত বাসে শিক্ষার্থী ‘নির্ভয়া’ ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা যাওয়ার পর নারীচালিক ট্যাক্সি সার্ভিসের কদর বাড়ছেই। যৌন-সংশ্লিষ্ট অপরাধ রুখতে ভারত সরকার কঠোর সব আইন পাস এবং অধিকতর পুলিশি তৎপরতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন পর্যন্ত তা অকার্যকরই প্রমাণিত হয়েছে। সাম্প্রতিক এক জরিপ বলছে, ভারতের গণপরিবহন নারীদের জন্য বিশ্বের চতুর্থতম বিপজ্জনক গণপরিবহন। রাতের বেলা যাতায়াতের সময় নিরাপত্তা প্রশ্নে তা দ্বিতীয়। ২০১০ সালে মুম্বাইয়ে প্রিয়দর্শিনী ট্যাক্সি সার্ভিস চালু করা সমাজকর্মী সুশিবেন শাহ বলেন, ‘উবের ট্যাক্সিতে নারী ধর্ষণের ঘটনা এই ধারণাই জোরালো করেছে যে, ট্যাক্সির চালক নারী হলে আপনি নিরাপদ। এ বিষয়ে লোকজন এখন আরও বেশি আগ্রহী হবেন।’ তবে সমালোচকেরা বলছেন, অধিকতর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করাই সঠিক পথ। সেন্টার ফর সোশ্যাল রিসার্চের পরিচালক রঞ্জনা কুমারী বলেন, ‘কেউ না বুঝেশুনে একটা পথ বলে দেয়, আর সরকার সব সময়ই তাতেই নাচে। আইনশৃঙ্খলা বাস্তবায়নে ব্যর্থতার কারণে সৃষ্ট ক্ষতি কোনোমতেই এ ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে পুষিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।’
No comments