‘ভিক্ষা করে খাইয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাদের’
মাহামুদা খাতুন। বয়সের ভারে অনেকটা নুইয়ে পড়েছেন। তার ওপর চলে একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের নির্যাতন। সবকিছু মিলে মাজার ব্যথায় ছটফট করেন প্রায় সময়। ওষুধ কেনার সামর্থ্য নেই। ঘরে নেই দু’বেলা দুমুঠো অন্নের সংস্থান। নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই। নেই প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র। তাই অনেক দিন খড়কুটোর আগুন পোহায়ে পার করে দেন রাত। স্বামী বীরযোদ্ধা খোরশেদ মোল্যা মারা গেছেন মাস দু’য়েক আগে। অনেকটা বিনা চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। পরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় নিজের বসতভিটার এক কোণে এ যোদ্ধাকে সমাহিত করেন তার সারা জীবনের সঙ্গী গেরিলা যোদ্ধা মাহামুদা। যে দেশের জন্য খোরশেদ আর তার সহধর্মিণী মরণপণ লড়াই করেছিলেন, সে দেশে তাদের কবর দেয়ার মতো একখ- ভূমি নেই। তাই অগত্যা লাশের সৎকারে নিজের একখ- বসতভিটার এক কোণকে বেছে নেন মাহামুদা। যশোর শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার উত্তরে মধুগ্রামের অবস্থান। সদর উপজেলার এ গ্রামটি বর্তমানে লিচুর জন্য বিখ্যাত। এ গ্রামের শতকরা ৮০ শতাংশ মানুষ কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। শহরতলিতে গ্রামটির অবস্থান হলেও এখনও যোগাযোগ ব্যবস্থা সেকেলে। গ্রামের অর্ধেকেই এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। ঝোঁপ-জঙ্গল আর বাঁশবাগানে ভরা এ গ্রামের উত্তরপাড়ায় মাহামুদা খাতুনের বাড়ি। বাড়ি বলতে যা বোঝাই তেমনটি আসলে নয়। কাঁচা রাস্তার পাশে বড় বড় বাঁশঝাড়ের আড়ালে ছোট্ট দুটি খুপড়ি ঘর। এর একটি মাহামুদা খাতুন নাতিপুতিদের নিয়ে থাকেন। আর অপরটিতে বাস করেন নয়া ছেলে শহিদুল আর তার ৪ সন্তান। বাকি ৩ ছেলে অভাব-অনটনে গ্রাম ছেড়েছেন। ছোট ছেলে রংমিস্ত্রির কাজ করে মাকে খাওয়ায়। মাহামুদা খাতুনের ৫ মেয়েই সংসারী। তবে অভাব তাদের কুরে কুরে খাচ্ছে। অভাবের কারণে ২ মেয়ের ৪ ছেলেমেয়েকে কাছে রেখে মানুষ করছেন বিধবা মাহামুদা। একাত্তরের গেরিলা যোদ্ধা মাহামুদা খাতুনের এখন আর ভিক্ষার বয়স বা সামর্থ্য নেই। একাত্তরে গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধের পাশাপাশি ১০ গ্রামে ভিক্ষা করে বীরযোদ্ধাদের খাইয়েছেন মাহামুদা। নিজের ছেঁড়াছোটা শাড়ি পরিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘরের বাইরে নিয়ে গেছেন। অন্ধকারে টর্চ লাইট জ্বেলে মুক্তিযোদ্ধাদের পথ চিনিয়ে নিয়ে গেছেন এ বীরযোদ্ধা। সরাসরি সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন। শত্রুর ফেলে যাওয়া অস্ত্র কুড়িয়ে জমা রেখেছেন। পরে তা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে দিয়েছেন শত্রু দমনের জন্য। মাহামুদা খাতুন এসবই করেছেন দেশের জন্য। মুক্তিযুদ্ধের জন্য। নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রামে দেশ স্বাধীন হয়েছে। দেশের মাটিতে উড়ছে জাতীয় পতাকা। কিন্তু মাহামুদার পরনে কাপড় জোটেনি। পেটে জোটেনি ভাত। অর্থাভাবে সন্তানদের লেখাপড়া শেখাতে পারেননি। যুদ্ধের পর স্বামী খোরশেদ ফিরে যান নিজের পেশা ইটভাটায় শ্রম দিতে। অর্থাভাবে লেখাপড়া করতে না পারা মাহামুদার ৫ ছেলে সবাই দিন মজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বড় তিন ছেলে অভাবের কারণে গ্রাম ছেড়েছেন। নয়া ছেলে রিকশা চালায় যশোর শহরে। আর ছোট ছেলে রংমিস্ত্রির কাজ করে বৃদ্ধ মা আর ৩ ভাগ্নে-ভাগ্নিকে খাওয়াচ্ছেন। গত ৫ই ডিসেম্বর সকালে খুঁজতে খুঁজতে এই প্রতিবেদক হাজির হন মাহামুদা খাতুনের বাড়িতে। একটি কুঁড়ে ঘর দেখিয়ে একজন বললেন, এই হচ্ছে মাহামুদা খাতুনের বাড়ি। সামনের অংশে কলার পাতার বেড়া। ভেতরে প্রবেশ করতেই বোঝা গেল দেশের কোটি কোটি ছিন্নমূল মানুষের মতোই মাহামুদা খাতুনের জীবন।
১৯৭১ সালে মাহামুদা খাতুন ছিলেন ৩ সন্তানের মা। স্বামী খোরশেদ ইটের ভাটায় জোন খাটে। দেশে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। মাস খানেক পরে একদিন রাতে গুলি, বন্দুক নিয়ে ৭-৮ জন যুবক ছেলে মধু গ্রামের বাঁশতলায় এসে হাজির। চারদিকে ঘুট ঘুটে অন্ধকার। হঠাৎ টর্চ লাইটের আলো মারতে মারতে তারা ঢুকে পড়ে খোরশেদের বাড়িতে। সে সময় খোরশেদ ভাটায়। প্রথমে কিছুটা ভয় পেয়ে যান মাহামুদা। পরক্ষণেই সাহস করে ঘর থেকে বের হয়ে জানতে চানা, আপনারা কারা? পাল্টা উত্তর, আমরা মুক্তিফৌজ। প্রাণে পানি ফিরে পেলো মাহামুদা। এর পরের গল্প আরও গা ছমছমে। একটু পরে আরও ৫-৬ জন বাড়িতে ঢোকে। সবার হাতে অস্ত্র। সবাই মাহামুদার কুঁড়ে ঘরের বারান্দায় অস্ত্র রেখে হাত-মুখ ধুয়ে বারান্দায় বসে থাকেন। তাদের চেহারা দেখে মাহামুদা বুঝতে পারেন তাদের খাওয়া হয়নি। কিন্তু তার ঘরে খাবার নেই। ঘরে ছোট্ট ছোট্ট তিনটি শিশুপুত্র। লজ্জায় পড়েন তিনি। কিছু বলতেও পারছেন না। অনেকটা নিরুপায় হয়ে মাহামুদা মুক্তিযোদ্ধাদের ঘরের বারান্দায় বসিয়ে রেখে সেই রাতে বের হয়ে যান। প্রতিবেশীদের বাড়ি থেকে ভাত আর তরকারি চেয়ে এনে ওই রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের খাওয়ান। খাওয়া শেষে সেই কুঁড়ে ঘরের বারান্দা আর খড়ের গাদার মাচায় শুয়ে পড়েন ক্লান্ত যোদ্ধারা। বোঝা গেল বেশ কয়েক রাত তাদের ঘুম হয়নি। একদিকে ভয়, অন্যদিকে এক অজানা আতঙ্কে সারা রাত কাটে মাহামুদার। এভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কেটে যায় প্রথম রাত। পর দিন সকাল ১০টায় মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গ্রুপ চলে যায় কনেজপুরে। মুজিব বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার শেখ রবিউল আলমের নেতৃত্বে রাজেক আহম্মেদ, গাজী আবদুল হাই, কামাল আহম্মেদ, আলী হোসেন মনি, ইউসুফ, ইব্রাহিম, নজরুল, বাবর, কেরামত, জহুর, খায়রুলসহ কয়েকজন থেকে যান মধু গ্রামে। তারা সারা রাত অপারেশন করতেন। ভোর রাতে ফিরে এসে মাহামুদার সেই কুঁড়ে ঘরে ঘুমাতেন। নিজের ঘরে মুক্তিসেনাদের রেখে মাহামুদা বের হতেন ভিক্ষা করতে। আশপাশের ১০ গ্রাম ঘুরে ভিক্ষা করার পাশাপাশি তিনি পাকিস্তানি সেনাদের খবর এনে মুক্তিসেনাদের দিতেন। পর দিন সেভাবে তারা অভিযান চালাতেন। এভাবে দীর্ঘ ৯ মাস মাহামুদা মুক্তিযুদ্ধে গেরিলার ভূমিকা পালন করেছেন। ভিক্ষে করে মুক্তিযোদ্ধাদের খাইয়েছেন। তাদের রক্তমাখা জামাকাপড় পরিষ্কার করেছেন। অস্ত্র হাতে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে গেছেন। প্রথম প্রথম খোরশেদ অস্ত্র দেখে কেঁপে উঠলেও পরে স্ত্রী মাহামুদার সাহসে তিনিও সাহসী হয়ে ওঠেন। ডেপুটি কমান্ডারের কাছে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নেন। নাম লেখান মুক্তিযুদ্ধে। স্ত্রী মাহামুদার সঙ্গে তিনিও যশোরসহ আশপাশের বহু যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। মাহামুদা স্মৃতি হাতড়ে বলেন, পাঁচবাড়িয়া, কনেজপুর, চুড়ামনকাটি, বাহাদুরপুর, মনোহরপুরসহ কয়েকটি যুদ্ধে তিনি অংশ নেন। মধুগ্রামে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের একটি শক্ত প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। মাহামুদা বুকের শিশুদের নিয়ে ওই ক্যাম্পে যোগ দেন। স্বামী খোরশেদ প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধে চলে যান। মাহামুদা থেকে যান ক্যাম্পে। রাত-দিন তিনি কাজ করেছেন। রাতের বেলা অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছেন। দিনের বেলায় শাড়ি কাপড় পরিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ঘুরেছেন। তাদের অস্ত্র মাটির নিচে, পল গাদার নিচে লুকিয়ে রেখেছেন। ২০শে অক্টোবর এ ক্যাম্পের খবর পৌঁছে যায় পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে। তারা ক্যাম্পে হামলা চালায়। মাহামুদা আগে থেকে খবর পেয়ে ক্যাম্পের সব অস্ত্র ভৈরব নদের কচুরিপনার মধ্যে লুকিয়ে রাখেন। পরে পাশের বাহাদুরপুরে পাকিস্তানি সেনারা ২৭ গ্রামবাসীকে গুলি করে মারে। প্রাণে রক্ষা পান মুক্তিযোদ্ধারা। ২৭শে অক্টোবর সালতাযুদ্ধে মান্নান আর আসাদ নামে ২ মুক্তি সেনা শহীদ হন। ওই যুদ্ধে বেশ কিছু পাকিস্তানি সেনা মারা যায়। পরে ৫ই ডিসেম্বর মধু গ্রামে মুক্তিসেনাদের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের একটি বড় লড়াই হয়। সে লড়াইয়ে মুক্তি সেনারা অস্ত্রশস্ত্রসহ ১০ জন পাকিস্তানি সেনাকে পাকড়াও করেন। পরে জনতার গণপিটুনিতে তারা মারা যায়। সেই লড়াইয়ে মাহামুদা খাতুনও ছিলেন। তিনি পুরো যুদ্ধে গেরিলা সৈনিকের দায়িত্ব পালন করেন। এসব স্মৃতিচারণ করতে করতে মাহামুদা খাতুন আবেগে-আপ্লুত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে মাহামুদা খাতুন বলেন, মুর্খ আর গরিব বলে ২৯ বছর তিনি সামনে আসতে পারেননি। পরে তিনি মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি পেয়েছেন। পেয়েছেন সার্টিফিকেট। তার স্বামী খোরশেদও জীবদ্দশায় মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি পেয়েছেন।
১৯৭১ সালে মাহামুদা খাতুন ছিলেন ৩ সন্তানের মা। স্বামী খোরশেদ ইটের ভাটায় জোন খাটে। দেশে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। মাস খানেক পরে একদিন রাতে গুলি, বন্দুক নিয়ে ৭-৮ জন যুবক ছেলে মধু গ্রামের বাঁশতলায় এসে হাজির। চারদিকে ঘুট ঘুটে অন্ধকার। হঠাৎ টর্চ লাইটের আলো মারতে মারতে তারা ঢুকে পড়ে খোরশেদের বাড়িতে। সে সময় খোরশেদ ভাটায়। প্রথমে কিছুটা ভয় পেয়ে যান মাহামুদা। পরক্ষণেই সাহস করে ঘর থেকে বের হয়ে জানতে চানা, আপনারা কারা? পাল্টা উত্তর, আমরা মুক্তিফৌজ। প্রাণে পানি ফিরে পেলো মাহামুদা। এর পরের গল্প আরও গা ছমছমে। একটু পরে আরও ৫-৬ জন বাড়িতে ঢোকে। সবার হাতে অস্ত্র। সবাই মাহামুদার কুঁড়ে ঘরের বারান্দায় অস্ত্র রেখে হাত-মুখ ধুয়ে বারান্দায় বসে থাকেন। তাদের চেহারা দেখে মাহামুদা বুঝতে পারেন তাদের খাওয়া হয়নি। কিন্তু তার ঘরে খাবার নেই। ঘরে ছোট্ট ছোট্ট তিনটি শিশুপুত্র। লজ্জায় পড়েন তিনি। কিছু বলতেও পারছেন না। অনেকটা নিরুপায় হয়ে মাহামুদা মুক্তিযোদ্ধাদের ঘরের বারান্দায় বসিয়ে রেখে সেই রাতে বের হয়ে যান। প্রতিবেশীদের বাড়ি থেকে ভাত আর তরকারি চেয়ে এনে ওই রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের খাওয়ান। খাওয়া শেষে সেই কুঁড়ে ঘরের বারান্দা আর খড়ের গাদার মাচায় শুয়ে পড়েন ক্লান্ত যোদ্ধারা। বোঝা গেল বেশ কয়েক রাত তাদের ঘুম হয়নি। একদিকে ভয়, অন্যদিকে এক অজানা আতঙ্কে সারা রাত কাটে মাহামুদার। এভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কেটে যায় প্রথম রাত। পর দিন সকাল ১০টায় মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গ্রুপ চলে যায় কনেজপুরে। মুজিব বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার শেখ রবিউল আলমের নেতৃত্বে রাজেক আহম্মেদ, গাজী আবদুল হাই, কামাল আহম্মেদ, আলী হোসেন মনি, ইউসুফ, ইব্রাহিম, নজরুল, বাবর, কেরামত, জহুর, খায়রুলসহ কয়েকজন থেকে যান মধু গ্রামে। তারা সারা রাত অপারেশন করতেন। ভোর রাতে ফিরে এসে মাহামুদার সেই কুঁড়ে ঘরে ঘুমাতেন। নিজের ঘরে মুক্তিসেনাদের রেখে মাহামুদা বের হতেন ভিক্ষা করতে। আশপাশের ১০ গ্রাম ঘুরে ভিক্ষা করার পাশাপাশি তিনি পাকিস্তানি সেনাদের খবর এনে মুক্তিসেনাদের দিতেন। পর দিন সেভাবে তারা অভিযান চালাতেন। এভাবে দীর্ঘ ৯ মাস মাহামুদা মুক্তিযুদ্ধে গেরিলার ভূমিকা পালন করেছেন। ভিক্ষে করে মুক্তিযোদ্ধাদের খাইয়েছেন। তাদের রক্তমাখা জামাকাপড় পরিষ্কার করেছেন। অস্ত্র হাতে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে গেছেন। প্রথম প্রথম খোরশেদ অস্ত্র দেখে কেঁপে উঠলেও পরে স্ত্রী মাহামুদার সাহসে তিনিও সাহসী হয়ে ওঠেন। ডেপুটি কমান্ডারের কাছে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নেন। নাম লেখান মুক্তিযুদ্ধে। স্ত্রী মাহামুদার সঙ্গে তিনিও যশোরসহ আশপাশের বহু যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। মাহামুদা স্মৃতি হাতড়ে বলেন, পাঁচবাড়িয়া, কনেজপুর, চুড়ামনকাটি, বাহাদুরপুর, মনোহরপুরসহ কয়েকটি যুদ্ধে তিনি অংশ নেন। মধুগ্রামে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের একটি শক্ত প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। মাহামুদা বুকের শিশুদের নিয়ে ওই ক্যাম্পে যোগ দেন। স্বামী খোরশেদ প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধে চলে যান। মাহামুদা থেকে যান ক্যাম্পে। রাত-দিন তিনি কাজ করেছেন। রাতের বেলা অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছেন। দিনের বেলায় শাড়ি কাপড় পরিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ঘুরেছেন। তাদের অস্ত্র মাটির নিচে, পল গাদার নিচে লুকিয়ে রেখেছেন। ২০শে অক্টোবর এ ক্যাম্পের খবর পৌঁছে যায় পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে। তারা ক্যাম্পে হামলা চালায়। মাহামুদা আগে থেকে খবর পেয়ে ক্যাম্পের সব অস্ত্র ভৈরব নদের কচুরিপনার মধ্যে লুকিয়ে রাখেন। পরে পাশের বাহাদুরপুরে পাকিস্তানি সেনারা ২৭ গ্রামবাসীকে গুলি করে মারে। প্রাণে রক্ষা পান মুক্তিযোদ্ধারা। ২৭শে অক্টোবর সালতাযুদ্ধে মান্নান আর আসাদ নামে ২ মুক্তি সেনা শহীদ হন। ওই যুদ্ধে বেশ কিছু পাকিস্তানি সেনা মারা যায়। পরে ৫ই ডিসেম্বর মধু গ্রামে মুক্তিসেনাদের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের একটি বড় লড়াই হয়। সে লড়াইয়ে মুক্তি সেনারা অস্ত্রশস্ত্রসহ ১০ জন পাকিস্তানি সেনাকে পাকড়াও করেন। পরে জনতার গণপিটুনিতে তারা মারা যায়। সেই লড়াইয়ে মাহামুদা খাতুনও ছিলেন। তিনি পুরো যুদ্ধে গেরিলা সৈনিকের দায়িত্ব পালন করেন। এসব স্মৃতিচারণ করতে করতে মাহামুদা খাতুন আবেগে-আপ্লুত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে মাহামুদা খাতুন বলেন, মুর্খ আর গরিব বলে ২৯ বছর তিনি সামনে আসতে পারেননি। পরে তিনি মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি পেয়েছেন। পেয়েছেন সার্টিফিকেট। তার স্বামী খোরশেদও জীবদ্দশায় মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি পেয়েছেন।
No comments