নরসিংদীতে ছাত্রলীগ নেতাসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নরসিংদীতে সাংবাদিকদের মারধর ও হামলার ঘটনায় পলাশ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির মোল্লাসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে হামলায় আহত চ্যানেল নাইন ও মানব কণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি আইয়ুব খান সরকার বাদী হয়ে নরসিংদী সদর মডেল থানায় এ মামলা করেন। ‘এমপি পোটনের বাসায় আত্মগোপনে পলাশের হামলাকারীরা’ শিরোনামে প্রকাশিত দৈনিক যুগান্তরের প্রতিবেদন ছিল হট অব দ্য ডিসট্রিক্ট। সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও অবৈধ সংযোগের মূল হোতাদের এমপির বাড়িতে আশ্রয় দেয়ায় জেলাজুড়ে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় ওঠে। বেলা ১০টার মধ্যে পত্রিকা বিক্রি শেষ হয়ে যায়। হকারদের কাছে পত্রিকা না পেয়ে পলাশ, পাচদোনা ও নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকার দৈনিক যুগান্তরের ফটোকপি বিক্রি হয়। সাংবাদিকদের করা মামলার অন্য আসামিরা হল- জেলা বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক পলাশ উপজেলার গজারিয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে সজিব হোসেন, একই উপজেলার উত্তর টেঙ্গরপাড়া গ্রামের আবদুল লতিফের ছেলে তুহিন ও তিতাস গ্যাসের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শাহজাহান এন্টারপ্রাইজের মালিক সদর উপজেলার বদরপুর গ্রামের গিয়াস উদ্দিন খানের ছেলে শাহজাহান খানসহ অজ্ঞাত ১৫ জন।মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বুধবার বেলা ১১টায় নরসিংদী সদর উপজেলার ভাটপাড়ায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এই সংবাদ পেয়ে সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিডিও ধারণের সময় আসামিরা লোহার পাইপ ও লাঠিসোটা নিয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। এতে চ্যানেল নাইন ও মানবকণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি আইয়ুব খান সরকার, চ্যানেল ২৪-এর ক্যামেরাম্যান লক্ষ্মণ বর্মণ ও সময় টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যান কাউছার হোসেন আহত হয়। একই সঙ্গে সংবাদকর্মীদের তিনটি ক্যামেরা লুট ও একটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়।এদিকে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিনিধি দল আজ সরেজমিন তদন্ত করতে ভাটপাড়ায় যাবে। প্রতিনিধি দল ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও সাধারণ মানুষের সাক্ষ্য গ্রহণ করবে।মামলার বাদী আহত সাংবাদিক চ্যানেল নাইন ও মানবকণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি আইয়ুব খান সরকার বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ছাত্রলীগের নেতৃত্বে যেভাবে আমাদের ওপর হামলা হল তা নরসিংদীতে নজিরবিহীন ঘটনা। একই সঙ্গে তারা ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশসহ তিতাসের কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্র ও সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীরা কেন এখনও গ্রেফতার হয়নি সেই প্রশ্নই সব শ্রেণী-পেশার মানুষের।নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাসেম বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত ও সাংবাদিকদের হামলার ঘটনায় তিতাস ও সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে।পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে পুলিশের দুটি বিশেষ দল ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে। আশা করছি শিগগিরই অভিযুক্তদের গ্রেফতারের সংবাদ দিতে পারব।বুধবার নরসিংদী সদর উপজেলার ভাটপাড়া এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও সাংবাদিকদের ওপর ছাত্রলীগের নেতৃত্বে হামলা চালিয়েছে গ্রামবাসী। হামলায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সাংবাদিক, পুলিশ, আনসার ও তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তাসহ ২০ জন আহত হয়েছে। এ সময় সংবাদকর্মীদের তিনটি ক্যামেরা লুট ও একটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়। সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ও জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে বৃহস্পতিবার মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও পুলিশ সুপারের কার্যালয় ঘেরাও করেছে সাংবাদিকরা।
No comments