চার বীরকন্যা by এস এম জাকির হোসেন
১৯৭১
সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকহানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের নিষ্ঠুর
নির্যাতনের শিকার হন দিনাজপুরের ফুলবাড়ির দেবীপুর গ্রামের চার বীরকন্যা।
স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর তাদের ভাগ্যে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি
মিলেনি। এখনও তাদের কোন গেজেট প্রকাশ হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ চালাকালে ১৯৭১
সালের ৫ই অক্টোবর হানাদার বাহিনী স্থানীয় রাজাকার কেনান সরকারের নেতৃত্বে
দেবীপুর গ্রাম ঘেরাও করে। মুক্তিবাহিনী রাখার ও সাহায্য করার অপরাধে
দেবীপুরের সর্দারপাড়ার বাড়িগুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে ধ্বংস করে। পুরুষদের না
পেয়ে নারীদের হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন চালায়। সেদিনের নিষ্ঠুর বর্বর
নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে আঁতকে ওঠেন দেবীপুরের মহিরন বিবি, জুলেখা খাতুন,
আমিনা খাতুন ও ফারজন খাতুন। তারা সবাই একই গ্রামের। মহিরন বিবি, স্বামী
মহির উদ্দিন সর্দার, গ্রাম দেবীপুর, ফুলবাড়ী, দিনাজপুর। যুদ্ধের সময়
পাকহানাদার বাহিনী ও রাজাকার কেনান সরকারের নেতৃত্বে দেবীপুর গ্রাম ঘোরাও
করে আবুল কাশেমের (বানিয়া) বাড়িতে আক্রমণ করে সেখানে মুক্তিযোদ্ধাকে না
পেয়ে তার মেয়ে রেহানা বানুকে (১৭) ধরে নিয়ে যায়। এ ঘটনা রেহানার বাবা
প্রতিরোধ করতে গেলে তাকে ও তার মেয়ে রেহানাকে নির্যাতন করে পার্শ্ববর্তী
নদীর ধারে বেয়নট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। এরপর মহিরন বিবি এসব ঘটনা
প্রতিরোধ করতে গেলে তাকেও পাকবাহিনী নির্যাতন করে। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে
তাকে ছেড়ে দিলে সে স্বামীর ভিটায় ফিরে আসে। জুলেখা খাতুন, স্বামী মজিবর
রহমান, গ্রাম দেবীপুর, ফুলবাড়ী, দিনাজপুর। তিনি একই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে
বলেন, হানাদার বাহিনী যখন রেহানা ও মহিরন বিবিকে নির্যাতন করে তখন তিনি
প্রতিরোধ করতে গেলে তাকেও একটি স্কুলঘরে নিয়ে নির্যাতন করে। পরে অসুস্থ হলে
তারা তাকে ছেড়ে দেয়। তারপর থেকে তিনি লজ্জায় এসব ঘটনা কাউকে না বলে
স্বামীর সঙ্গে বসবাস করতে থাকেন।
No comments