গণতন্ত্রের সব স্পেস সংকুচিত হচ্ছে : ফখরুল
নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো দিনটিকে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। এ উপলক্ষে শুক্রবার সকালে নেতাকর্মীদের নিয়ে শেরেবাংলা নগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দিবসটি উপলক্ষে এদিন ভোরে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয় এবং গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্রও প্রকাশ করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবে বিএনপি। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে খালেদা জিয়ার বক্তব্য দেয়ার কথা রয়েছে। সকালে জিয়ার মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশে আজ গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। গণতন্ত্রের সব স্পেস সরকার সংকুচিত করে ফেলেছে। প্রতিটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান তারা ধ্বংস করে ফেলেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একটাই পথ- খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে অবৈধ সরকারকে সরিয়ে সব দলের অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা।’তিনি বলেন, ৭ নভেম্বর দেশপ্রেমিক মানুষের কাছে, বিএনপির কাছে স্মরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছিল। ওই সময়ে জিয়াউর রহমানকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। দেশপ্রেমিক সৈনিক ও জনতা ৭ নভেম্বর তাকে সেনানিবাসের বাসা থেকে মুক্ত করে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে। সেদিন জিয়ার মুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়েই ‘দেশের স্বাধীনতা রক্ষা পায়’ বলেও দাবি করেন তিনি।জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব কেড়ে নিতে ক্ষমতাসীনদের দাবি প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ফখরুল বলেন, এটা ক্ষমতাসীনদের প্রলাপ ছাড়া কিছুই নয়। জিয়া স্বাধীনতার ঘোষক, তিনি একদলীয় শাসন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, এটা চিরন্তন সত্য। তার নেতৃত্বেই ৭ নভেম্বর স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা পেয়েছিল। জিয়া কোনো ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তিনি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন।মাজার জিয়ারতের পর বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন খালেদা জিয়া। জিয়া সাংস্কৃতিক সংস্থা (জিসাস) মাজার প্রাঙ্গণে রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, এমকে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, উপদেষ্টা শাহজাহান ওমর, আবদুল আউয়াল মিন্টু, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, কেন্দ্রীয় নেতা আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, রুহুল কবির রিজভী, ফজলুল হক মিলন, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবদুস সালাম, নাজিম উদ্দিন আলম, খায়রুল কবীর খোকন, শিরিন সুলতানা, হাবিব-উন-নবী খান সোহেলসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।এ ছাড়া বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বে দলটির নেতাকার্মীরা জিয়ার মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।এদিকে বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, বাকশালী কবরাস্থানের ওপর বহুদলীয় গণতন্ত্রের বাগান তৈরি করেছিলেন বলেই জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ অবিরাম কটূক্তি করছে। জিয়াকে এত ভয় ও জ্বালার কারণ- আওয়ামী লীগ যা পারেনি, জিয়া তা পেরেছিলেন বলে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার কথা ছিল তাদেরই। তারা দিতে পারেনি। জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। ড্যাবের উদ্যোগে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ‘শহীদ জিয়া ও গণতন্ত্র’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা হয়। আওয়ামী লীগ নেতাদের নানা বক্তব্যের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘নাসিম সাহেব বলেছেন, জিয়া নাকি ক্ষমতায় বসার পর সৈনিকদের হত্যা করেছেন। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। ১৫ আগস্টের ঘটনাবলীর পর থেকে ৭ নভেম্বরের পর্যন্ত যেসব ঘটনা ঘটেছিল- তখন আওয়ামী লীগ নেতারাই ক্ষমতায় ছিলেন। তাদেরই মন্ত্রিসভা ছিল।’সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক একেএম আজিজুল হকের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ড্যাবের মহাসচিব অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, আবদুল মান্নান মিয়া প্রমুখ বক্তব্য দেন।
No comments