সাম্প্রদায়িক সহিংসতা দমন করতেই হবে

৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুরা সহিংসতার শিকার হয়েছেন। তাদের বাড়িঘর-দোকানপাটে হামলা হয়েছে। এমনকি ধর্ষণের শিকারও হয়েছেন তারা। সহিংসতা মোকাবেলার কথা বলেছেন পাঠকরা।
গ্রন্থনা : একরামুল হক শামীম ও মাহফুজুর রহমান মানিক
মুজিবুর রহমান
চাকরিজীবী, তেরশ্রী, ঘিওর, মানিকগঞ্জ সাম্প্রদায়িক সহিংসতা মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। এই চেতনার পক্ষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের মাধ্যমে প্রতিটি শহর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন এবং গ্রামে শক্তিশালী প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে হবে। যারা সহিংসতার সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা জরুরি।
তাপস হাওলাদার
শিক্ষার্থী, কালুখালী, রাজবাড়ী
সাম্প্রদায়িক সহিংসতা মোকাবেলার জন্য সরকারকে কঠোর হতে হবে। যারা অপরাধী তাদের গ্রেফতার করে শাস্তি দিতে হবে। সংখ্যালঘুরা কি শুধু নৌকাতেই ভোট দেয়?
শিব সরকার
ব্যবসায়ী, খুলনা
সংখ্যালঘুদের ওপর যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হচ্ছে, সেটা আসলে ১৯৭১ সালের পর থেকেই শুরু। সহিংসতা বন্ধে সরকার এবং বিরোধী দলের মধ্যে আলোচনা হলে আমার মনে হয় এভাবে আর সহিংসতা হতো না।
হেলাল উদ্দিন
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ভোট দেওয়ার অপরাধে আমাদের দেশের হিন্দু ভাইদের ওপর যে আক্রমণ হচ্ছে তা দুঃখজনক। আমরা একে ধিক্কার জানাই। জামায়াত-শিবির তাদের ওপর আক্রমণ করে। এই সহিংসতা মোকাবেলায় সরকারের উচিত দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তাদের শাস্তি দেওয়া হোক। অপরাধী যেই হোক তাদের উপযুক্ত শাস্তি হোক।
আলী রিয়াল সউদ
শিক্ষার্থী, রংপুর
সাম্প্রদায়িক এই সহিংসতায় সরকার তেমন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। যে ঘটনাগুলো ঘটছে এগুলো পূর্বপরিকল্পিত। ঘটনা যা ঘটছে সবই স্থানীয় প্রশাসন জানে অথচ তারা কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
মো. মাসুম বিল্লাহ
শিক্ষার্থী, কুমিল্লা
সংখ্যালঘু এই হামলা কেবল সরকারই পারে মোকাবেলা করতে। এর সঙ্গে যারা দায়ী, প্রশাসনের উচিত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
মোহাম্মদ আলী
চাকরিজীবী, হাজারীবাগ, ঢাকা
সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কারণে হত্যা, লুটপাট, অগি্নসংযোগ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের মতো ঘটনা ঘটছে। এটা এখন যেন নিত্যদিনের সহিংস রুটিন হয়ে গেছে। তাই আমরা বলব, সরকার যেন এসব সহিংসতার বিরুদ্ধে এখন দ্রুত পদক্ষেপ নেয়।
নাজিম উদ্দিন শোভা
মুক্তিযোদ্ধা, টাঙ্গাইল
ইসলাম সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে না। ইসলাম শান্তির ধর্ম, প্রতিটি ধর্মকে সম্মান দেয়। এখানে সহিংসতার কোনে স্থান নেই। যারা এসব কাজ করছে তারা অন্তত ইসলাম ধর্মানুসারী হতে পারে না। যারা এসব করছে তাদের প্রশাসনের তরফ হতে কঠোর বিচারের অনুরোধ করছি। যাতে সম্প্রদায়ের বিষ সমূলে ধ্বংস হয়।
কুমারেশ চন্দ্র
বাস শ্রমিক, ঝিনাইদহ টার্মিনাল
বাংলাদেশে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হচ্ছে তা এই স্বাধীন দেশে কাম্য নয়। যেসব বীর সেনা জীবনবাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করেছে, এ ঘটনায় তাদের আত্মা কষ্ট পেয়েছে। অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি, মানবতার জয়যাত্রা ও শোষণহীন সমাজ বিনির্মাণই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এ চেতনার উন্মেষ সাধনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বাত্মক ভূমিকা পালন করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।
প্রদীপ কুমার কর
শিক্ষক, বোয়ালমারী, ফরিদপুর
সাম্প্রদায়িক সহিংসতা মোকাবেলার জন্য হিন্দুদের জন্য আলাদা আইন দরকার।
ওয়াহিদ মুরাদ
কবি, স্বরূপকাঠি, পিরোজপুর
'কাণ্ডারি বলো ডুবিয়াছে মানুষ সন্তান মোর মার'_ কবি নজরুলের এই বাণীকে সামনে রেখে দেশবাসীর কাছে আকুল আবেদন, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প থেকে বাঁচার জন্য সবাইকে মানুষ হিসেবে বিবেচনার অনুরোধ রাখি। প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে স্বামী ও শাশুড়িকে বের করে ধর্ষণকারীর কোনো অপরাধীই বাঁচতে পারে না। স্থানীয় প্রশাসন থেকে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে এই জঘন্য অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো প্রয়োজন। আমরা মনে করি, সব মানুষ সমান, এখানে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরুর কোনো পার্থক্য নেই।
আবু সাঈদ বাবু
শিক্ষার্থী, কয়রা, চট্টগ্রাম
সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক হামলার জন্য জামায়াত-শিবির ও বিএনপি দায়ী। এ জন্য সরকারকে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের শাস্তি প্রদান করতে হবে।
মোহাম্মদ আলী মানিক
ব্যবসায়ী, নোয়াখালী
সাম্প্রদায়িক সহিংসতা মোকাবেলা সশস্ত্র শক্তি দিয়ে হবে না, এটা মোকাবেলা করতে হবে বুদ্ধি দিয়ে। বুঝতে হবে কোন কোন সময় এ সহিংসতা হয়, কেন হয়, কখন কখন হয় না, কেন হয় না তা গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। সংখ্যালঘু বলে এক পক্ষের লোককে ছোট করে দেখা হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা সবাই মানুষ, এটাই সত্য কথা। বিশিষ্ট লোকেরা একপক্ষকে এভাবে ছোট করে দেখবে, দেখলে তাদের মনের অবস্থা কেমন হবে তাও ভেবে দেখা দরকার।
মনোজিৎ কুমার চৌধুরী
সরকারি চাকরিজীবী, মাগুরা
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এক অনন্য দৃষ্টান্ত হলেও এ দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা মোকাবেলা কখনও সম্ভব নয়। বাংলাদেশটা যাদের হাতে জিম্মি সেই রাজনীতিবিদরাই সাম্প্রদায়িক হামলার জন্য দায়ী। উপরে ভালো ভালো কথা বললেও এই সাম্প্রদায়িকতাকেই পুঁজি করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নেতারা ফায়দা লুটে চলছে। একে অন্যের ওপর দোষ চাপালেও সাম্প্রদায়িক নাশকতা রাজনৈতিক নেতারাই পর্দার আড়াল থেকে সমর্থন জোগাচ্ছে। রাজনীতিবিদরাই কৌশলে শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষকে এ হীন কাজে উদ্বুদ্ধ করছে। এ দেশে প্রতিটা সাধারণ নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুরা যে বারবার নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তার একটি ঘটনারও উপযুক্ত বিচার হয়নি, আর হবেও না। কেননা বিচার করতে গেলেই দেখা যায় কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসে। সংখ্যালঘুদের নির্যাতনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যে বিক্ষোভ, মানববন্ধন পালন করছে তা সংখ্যালঘুদের সঙ্গে তামাশা ছাড়া আর কিছু নয়।
শেখ আবদুল কাদের
সংস্কৃতিকর্মী, ডেমরা
যে কোনো অবস্থায় এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধ করতে হবে। এ জন্য আমরা সংস্কৃতিকর্মীরা কাজ করছি। আমার মনে হয়, আক্রান্ত স্থানগুলোর অনেকেই দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। দেশের জনগণ কোনো অবস্থাতেই ছাড় দিতে রাজি নয়। তারাও আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছে, তারা আমাদের আত্মার আত্মীয়। তারা এ মাটিরই মানুষ। আজকে একটি রাজনৈতিক আরেকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সখ্য রেখে দেশে যে অরাজকতা তৈরি করছে, তাতে বিএনপির একুল ওকুল দুকুলই গেল।
দীপক
শিক্ষার্থী, রাজবাড়ী
সারাদেশ যখন সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার, তখন আজও আমরা নাটোরে এই হামলা দেখলাম। এসবের বিচার চাই।
সুমন
চাকরিজীবী, চট্টগ্রাম
দেশে দুই দলের যারাই ক্ষমতায় আসে তাদের সময়ই হামলা হয়। আমরা এই দেশে বাস করছি অথচ সরকার নিরাপত্তা দিচ্ছে না। এভাবে আমরা কীভাবে বাস করব। এখন উভয় দলের ঐকমত্যের মাধ্যমেই এর যথাযথ মোকাবেলা সম্ভব।
শামশাদ আহম্মেদ
সরকারি কর্মকর্তা (অব.), উত্তরা, ঢাকা
সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান এখানে নেই। যারা সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করছে তারা দেশদ্রোহী এবং এ দেশের নাগরিক হওয়ার যোগ্য নয়। এ অপশক্তিকে কঠোর হস্তে দমন করা সরকারের একান্ত কর্তব্য।
আলী আফজাল শরীফ
চাকরিজীবী, গোপালগঞ্জ
এ সহিংসতা মোকাবেলার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও প্রশাসনকে একযোগে কাজ করতে হবে। এখানে বিরোধী দলেরও দায়িত্ব রয়েছে। তাদের উচিত প্রশাসনকে সহযোগিতা করা।
খোকন আহমেদ
ব্যবসায়ী, বেলাব, নরসিংদী
সরকার যেন সরকার গঠন করেই এ সহিংসতা মোকাবেলায় কঠোর হয়। বিশেষ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এ ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতার আহ্বান জানাচ্ছি।
ফারুক হোসেন
সাংবাদিক, রাজশাহী
সংখ্যালঘু পরিবারের ঘরবাড়ি-দোকানপাটে হামলা হচ্ছে। তারা নির্যাতিত হচ্ছেন। এর মূলে রয়েছে বিএনপি-জামায়াত। তারা নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য হামলা করছে। এ হামলা মোকাবেলায় সরকারকে কঠোর হতে হবে। এ ছাড়া স্থানীয় মানুষের মধ্যে সচেতনতা প্রয়োজন।
দিলীপ কুমার সরকার
চাকরিজীবী, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ
আওয়ামী লীগ-বিএনপি যে দলই ক্ষমতায় যায় আমাদের ওপর নির্যাতন হয়। আমরা কি চোখের কাঁটা যে সবাই মিলে আমাদের বিতাড়িত করতে চাচ্ছে!
অমিত চৌধুরী
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম
দুই রাজনৈতিক দলের জন্য কেন সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হবে! এর জন্য দুই দলকেই জবাব দিতে হবে। সবকিছু হয়ে গেলে পুলিশ আসে। এখন এর জন্য জনগণের মধ্যে কমিটি গঠন করে দিতে হবে।
উত্তম কুমার
ব্যাংকার, নোয়াখালী
সাম্প্রদায়িক সহিংসতা যেখানেই হয়েছে প্রশাসন বলছে, তারা এলাকায় নেই। তারা এলাকায় না থাকলেও বাংলাদেশে আছে নিশ্চয়ই। তাদের খুঁজে বের বিচারের আওতায় আনতে হবে। তাহলে অন্য সন্ত্রাসীরাও এসব করতে সাহস করবে না।
আবদুল্লাহ আল মামুন
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
এটা একটা রাজনৈতিক খেলা। যখন রাজনৈতিক খেলা বন্ধ হবে, যখন রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য হবে, তখনই হামলা বন্ধ হবে।
শেখ মো. আলী
ব্যবসায়ী, তালতলা বাজার, মুন্সীগঞ্জ
সাম্প্রদায়িক সহিংসতার জন্য সব দলই দায়ী। এ জন্য সবাইকে ঐকমত্য হতে হবে। দোষীদের বিচারের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
শাকের খান
ব্যবসায়ী, মদন, নেত্রকোনা
সরকার যদি এ বিষয়ে কঠোরভাবে নজর দেয়, তাহলেই সহিংসতা মোকাবেলা সম্ভব। সরকার চাইলেই এসব বন্ধ করতে পারে।
মো. ফখরুল ইসলাম টিপু
শিক্ষার্থী, সেনবাগ, নোয়াখালী
সাম্প্রদায়িক সহিংসতা মোকাবেলায় দলমতের ঊধর্ে্ব আইনের যথাযথ ও কঠোর ভূমিকা নিশ্চিত করা উচিত। এ ছাড়াও জাতীয় পর্যায়ে সংলাপের উদ্যোগ নিয়ে বিবদমান সব সমস্যার সমাধানে ঐকমত্য হওয়া দরকার।

No comments

Powered by Blogger.