অবশেষে সঠিক সিদ্ধান্ত
(টানা অবরোধ স্থগিত)
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট লাগাতার কর্মসূচি আজ সোমবার থেকে স্থগিত
ঘোষণা করেছে এবং এ সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে বলেই
আমরা মনে করি। ৫ জানুয়ারি নির্ধারিত নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করার জন্য এ
জোট ২৬ নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ৬ দফা অবরোধ পালন করে। নতুন বছরের প্রথম দিন
থেকে ডাকা হয় লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি। ৪ থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত একই
সঙ্গে আহ্বান করা হয় দেশব্যাপী হরতাল। এসব কর্মসূচিতে দশম জাতীয় সংসদ
নির্বাচন কার্যক্রম ঠেকানো যায়নি। তবে জোটের সান্ত্বনা এতটুকুই যে, ভোট
পড়েছে খুব কম এবং দেশে ও বিদেশে তা যথেষ্টই প্রশ্নবিদ্ধ। এ ধরনের একটানা
কর্মসূচি অতীতেও আমাদের দেশে পালিত হয়েছে। রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাসে এমন
নজির অনেক। একটানা কর্মসূচি দিলেই তা সফল হবে, এমন নিশ্চয়তা কোথাও থাকে না।
এটা নির্ভর করে পারিপাশর্ি্বক নানা বিষয়ের ওপর। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে
জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ। নানা কারণেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে
ব্যর্থ করে দেওয়ার আন্দোলনে জনগণের সম্পৃক্ততা যথেষ্ট ছিল না। বিএনপি যখন
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে,
তার প্রতি সমর্থন কম ছিল না; কিন্তু ক্রমে আন্দোলনে সহিংসতা ও নাশকতা
প্রাধান্য পেতে থাকে। একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দলীয় নেতাদের
রক্ষার জন্য জামায়াতে ইসলামী এ আন্দোলন ব্যবহারে সচেষ্ট_ বিভিন্ন মহল থেকেই
এ মনোভাব ব্যক্ত হয়। তদুপরি, একটানা অবরোধ-হরতাল কর্মসূচিতে জনগণের
দুর্ভোগ চরমে ওঠে। হিংসাশ্রয়ী কর্মসূচির কারণে প্রাণ যায় অগণিত মানুষের।
অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এ অবস্থায়
বিশেষভাবে বিএনপির ওপর কর্মসূচি স্থগিতের জন্য চাপ বাড়ছিল। তা ছাড়া রাজধানী
ঢাকাসহ অনেক স্থানে অবরোধ প্রকৃতপক্ষে অকার্যকর হয়ে পড়ে। জীবন-জীবিকার
তাগিদে মানুষ ঘর থেকে বের হতে থাকে এবং জনজীবন ক্রমে স্বাভাবিক হয়ে আসে।
বিএনপি এবং তাদের জোট এ বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে অবরোধ স্থগিত করে সঠিক
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বলেই আমরা মনে করি। এখন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ
জোটভুক্ত দলগুলোর নেতারা নতুন করে আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে ভাবতে বসবেন, এটাই
স্বাভাবিক। আশা করব যে, তারা বিগত দিনগুলোর আন্দোলন কর্মসূচির অভিজ্ঞতা
পর্যালোচনা করেই উপযুক্ত সিদ্ধান্তে আসবেন। দশম সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে
না হলেও বিএনপিকে মনে রাখতে হবে, এখনই সরকার পতনের আন্দোলনে জোরালো সাড়া
মিলবে বলে মনে হয় না। সরকারপক্ষকেও রাজপথের বিরোধীদের কোণঠাসা করার মনোভাব
থেকে সরে আসতে হবে। বিএনপি এখন সংসদে নেই। কিন্তু তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ
রাজনৈতিক শক্তি এবং দেশের স্থিতিশীলতার জন্য অবশ্যই তাদের সঙ্গে সংলাপে
বসতে হবে। সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য
যাদের সঙ্গে সংলাপে বসার জন্য দেশ-বিদেশের তাগিদ তার প্রধান শক্তিও কিন্তু এ
দলটি। বিএনপি অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করে সুবিবেচনার পরিচয় দিয়েছে। এখন
সরকারের তরফে উচিত হবে তাদের স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার
গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করা।
No comments