দুস্তর পথে যাত্রা শুরু by শাহেদ চৌধুরী/শরীফুল ইসলাম
রোববার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর শপথ নেন শেখ হাসিনা বাসস |
আওয়ামী
লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৪৯ সদস্যের নতুন সরকার দুস্তর পথে যাত্রা
শুরু করল। প্রধানমন্ত্রীসহ ৩০ জন পূর্ণ মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী ও
দু'জন উপমন্ত্রী শপথ নিলেন গতকাল রোববার। বিকেল সাড়ে ৩টায় বঙ্গভবনের
জনাকীর্ণ দরবার হলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ
মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের শপথবাক্য পাঠ করান। শেখ হাসিনা এবার
তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন। নতুন মন্ত্রিসভা মোটামুটি
ঝকঝকে-তকতকে চেহারার। অনেক বিতর্কিত ডাকসাইটে সাবেক মন্ত্রী নতুন সরকারে
ঠাঁই পাননি। তাদের সংখ্যা ৩৫। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি। একাধিক স্বচ্ছ ইমেজের
মন্ত্রী অজ্ঞাত কারণে বাদ পড়েছেন। 'ঐকমত্যে'র সরকারে ঠাঁই পেয়েছেন জাতীয়
পার্টির তিনজন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের
দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করলেন শেখ হাসিনা। তাকে তিনি মন্ত্রীর পদমর্যাদায়
বিশেষ দূত বানিয়েছেন। সঙ্গত কারণেই বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট শপথ
অনুষ্ঠানে যায়নি। বিএনপি নতুন সরকারের শপথ গ্রহণের দিনটিকে 'কালো দিন' বলে
চিহ্নিত করেছে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ জন সাংসদ নির্বাচন, প্রশ্নবিদ্ধ
ভোট, উন্নয়ন অংশীদার বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সুস্পষ্ট নেতিবাচক মনোভাব, সবার
অংশগ্রহণে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জোরালো তাগিদ ও বিরোধী দলের নির্মম
সহিংসতার আন্দোলনে যে শঙ্কা জাতিকে গ্রাস করেছে, তা নতুন সরকারের সামনের পথ
'দুস্তর' করে তুলবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল মনে করেন।
বিএনপি অবরোধ স্থগিত করলেও বড় ধরনের সহিংস কর্মসূচি আবার ফিরে আসবে না, এমন নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না কেউ। অনেকেই মনে করেন, অপশক্তি জামায়াত-শিবিরের ভূত এখনও বিএনপির ঘাড় থেকে নামেনি। তাই সামনের পথ হবে বন্ধুর, দুস্তর। একই সঙ্গে রয়েছে গত কয়েক মাসের ধ্বংসযজ্ঞে হুমকির মুখে পড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জ। সংখ্যালঘুসহ সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়টিও সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
'ঐকমত্যে'র সরকারের পথচলার শুরুতেই নানা প্রশ্ন উঠেছে। জাতীয় পার্টির একই সঙ্গে সরকার ও বিরোধী দলে থাকা জগাখিচুড়ির মতো ঘটনা বলে অনেকেই মনে করছেন। নির্বাচিত এমপিদের গেজেট প্রকাশ ও মন্ত্রিসভা গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে দুটি রিট করা হয়েছে গতকাল। এ অবস্থায় শক্ত হাতে যে কোনো পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি রোববার শপথ গ্রহণের পর বেশ দৃঢ়তার সঙ্গেই সাংবাদিকদের বলেছেন, সমঝোতা হলে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে যে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর আগে তিনি জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে, তা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, কোনো চাপের কাছে তিনি নতি স্বীকার করবেন না। নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডবি্লউ মজীনা। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, 'আমরা আশা করি, খুব শিগগির নির্বাচন নিয়ে সংলাপ হবে। এর মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও অর্থবহ একটি নির্বাচন হবে।' দশম সংসদ নির্বাচন জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়নি বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীসহ ২৫ জন ছাড়া বাকি ২৪ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রী হিসেবে এবারই প্রথম শপথ নিলেন। এর মধ্যে ৯ জন মন্ত্রী, ১৩ জন প্রতিমন্ত্রী ও দু'জন উপমন্ত্রী রয়েছেন। দু'জন রয়েছেন টেকনোক্র্যাট কোটায়। আওয়ামী লীগের সমমনা শরিক দলগুলো থেকে আপাতত ছয়জনকে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। বঙ্গভবনে শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা। নতুন মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণের পর ২৯ সদস্যের নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের দায়িত্ব শেষ হয়েছে। যারা মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ছিলেন, নতুন মন্ত্রিসভার শপথের আগেই তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। মন্ত্রিসভা গঠনের পর নতুন চার উপদেষ্টা নিয়োগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
২৯ পূর্ণ মন্ত্রী :পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে ২৯ নেতা শপথ নিয়েছেন। এর মধ্যে আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থ, আমির হোসেন আমু শিল্প, তোফায়েল আহমেদ বাণিজ্য, মতিয়া চৌধুরী কৃষি, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ডাক ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, মোহাম্মদ নাসিম স্বাস্থ্য, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এলজিআরডি, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রবাসীকল্যাণ, রাশেদ খান মেনন বিমান, অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ধর্ম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন গণপূর্ত, আ ক ম মোজাম্মেল হক মুক্তিযুদ্ধ, ছায়েদুল হক মৎস্য, ইমাজউদ্দিন প্রামাণিক পাট, ওবায়দুল কাদের যোগাযোগ, হাসানুল হক ইনু তথ্য, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ পানিসম্পদ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পরিবেশ, নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষা, শাজাহান খান নৌপরিবহন, অ্যাডভোকেট আনিসুল হক আইন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম ত্রাণ, মুজিবুল হক রেলপথ, আ হ ম মোস্তফা কামাল লোটাস পরিকল্পনা, অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার গণশিক্ষা, আসাদুজ্জামান নূর সংস্কৃতি, সৈয়দ মহসীন আলী সমাজকল্যাণ, শামসুর রহমান শরীফ ডিলু ভূমি ও অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। তাদের অনেককেই আগের মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
১৭ প্রতিমন্ত্রী, ২ উপমন্ত্রী ও ১ টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী :১৭ জন প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে রয়েছেন_ অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু, স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, এমএ মান্নান, মির্জা আজম, অ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন, বীর বাহাদুর উ শৈ সিং, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, বীরেন শিকদার, আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, ইসমাত আরা সাদেক, মেহের আফরোজ চুমকি, মসিউর রহমান রাঙ্গা, শাহরিয়ার আলম, জাহিদ মালেক স্বপন, নসরুল হামিদ বিপু ও অ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলক। দু'জন উপমন্ত্রী হলেন_ আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব ও আরিফ খান জয়। এর আগে ১৯৯৫ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে দু'জন উপমন্ত্রী ছিলেন। টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হয়েছেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ময়মনসিংহ-৪ আসনের সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মতিউর রহমান।
২৪ নতুন মুখ :নতুনদের মধ্যে ২৪ জন মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন। এর মধ্যে ৯ জন মন্ত্রী, ১৩ জন প্রতিমন্ত্রী ও দু'জন উপমন্ত্রী রয়েছেন। তারা হলেন_ অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, আ ক ম মোজাম্মেল হক, ছায়েদুল হক, ইমাজউদ্দিন প্রামাণিক, অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, আ হ ম মোস্তফা কামাল লোটাস, আসাদুজ্জামান নূর, সৈয়দ মহসীন আলী, শামসুর রহমান শরীফ ডিলু, এমএ মান্নান, মির্জা আজম, বীর বাহাদুর উ শৈ সিং, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, বীরেন শিকদার, আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, ইসমাত আরা সাদেক, মসিউর রহমান রাঙ্গা, শাহরিয়ার আলম, জাহিদ মালেক স্বপন, নসরুল হামিদ বিপু, অ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলক, আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব ও আরিফ খান জয়।
ভাগ্য বিপর্যয় :মহাজোট ও সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রীদের ২৩ জন বাদ পড়েছেন। তারা হলেন_ সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার বীরউত্তম, সাবেক শ্রমমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, সাবেক ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ, সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ূয়া, সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, সাবেক বিমানমন্ত্রী জিএম কাদের, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীন, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস, সাবেক দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সাবেক পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে বাদ পড়েছেন ১৫ জন। তারা হচ্ছেন_ সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম, সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মল্পুম্নজান সুফিয়ান, সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার, সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন, সাবেক এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া, সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান, সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির, সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এনামুল হক, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আবদুল হাই, সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী, সাবেক মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম।
উপদেষ্টা :শপথের পর চার উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারা হলেন এইচ টি ইমাম, ড. মসিউর রহমান, ড. গওহর রিজভী ও মেজর জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিকী। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিগণ, ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত রবার্ট গিবসন, ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম হেনা, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, নির্বাচন কমিশনারবৃন্দ, দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সংসদ সদস্য, সম্পাদকসহ সিনিয়র সাংবাদিক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, কূটনীতিক, ঊর্ধ্বতন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, প্রধানমন্ত্রীর পরিবারবর্গ, নারী সমাজের নেতৃবৃন্দ প্রমুখ।
বুধবার মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক :মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা জানান, আগামী বুধবার সকালে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক হবে। এ আগে মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ ৩২ নম্বর ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে সকাল ৯টায় ও ১০টায় সাভার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
বিএনপি অবরোধ স্থগিত করলেও বড় ধরনের সহিংস কর্মসূচি আবার ফিরে আসবে না, এমন নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না কেউ। অনেকেই মনে করেন, অপশক্তি জামায়াত-শিবিরের ভূত এখনও বিএনপির ঘাড় থেকে নামেনি। তাই সামনের পথ হবে বন্ধুর, দুস্তর। একই সঙ্গে রয়েছে গত কয়েক মাসের ধ্বংসযজ্ঞে হুমকির মুখে পড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জ। সংখ্যালঘুসহ সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়টিও সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
'ঐকমত্যে'র সরকারের পথচলার শুরুতেই নানা প্রশ্ন উঠেছে। জাতীয় পার্টির একই সঙ্গে সরকার ও বিরোধী দলে থাকা জগাখিচুড়ির মতো ঘটনা বলে অনেকেই মনে করছেন। নির্বাচিত এমপিদের গেজেট প্রকাশ ও মন্ত্রিসভা গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে দুটি রিট করা হয়েছে গতকাল। এ অবস্থায় শক্ত হাতে যে কোনো পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি রোববার শপথ গ্রহণের পর বেশ দৃঢ়তার সঙ্গেই সাংবাদিকদের বলেছেন, সমঝোতা হলে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে যে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর আগে তিনি জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে, তা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, কোনো চাপের কাছে তিনি নতি স্বীকার করবেন না। নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডবি্লউ মজীনা। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, 'আমরা আশা করি, খুব শিগগির নির্বাচন নিয়ে সংলাপ হবে। এর মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও অর্থবহ একটি নির্বাচন হবে।' দশম সংসদ নির্বাচন জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়নি বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীসহ ২৫ জন ছাড়া বাকি ২৪ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রী হিসেবে এবারই প্রথম শপথ নিলেন। এর মধ্যে ৯ জন মন্ত্রী, ১৩ জন প্রতিমন্ত্রী ও দু'জন উপমন্ত্রী রয়েছেন। দু'জন রয়েছেন টেকনোক্র্যাট কোটায়। আওয়ামী লীগের সমমনা শরিক দলগুলো থেকে আপাতত ছয়জনকে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। বঙ্গভবনে শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা। নতুন মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণের পর ২৯ সদস্যের নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের দায়িত্ব শেষ হয়েছে। যারা মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ছিলেন, নতুন মন্ত্রিসভার শপথের আগেই তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। মন্ত্রিসভা গঠনের পর নতুন চার উপদেষ্টা নিয়োগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
২৯ পূর্ণ মন্ত্রী :পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে ২৯ নেতা শপথ নিয়েছেন। এর মধ্যে আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থ, আমির হোসেন আমু শিল্প, তোফায়েল আহমেদ বাণিজ্য, মতিয়া চৌধুরী কৃষি, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ডাক ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, মোহাম্মদ নাসিম স্বাস্থ্য, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এলজিআরডি, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রবাসীকল্যাণ, রাশেদ খান মেনন বিমান, অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ধর্ম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন গণপূর্ত, আ ক ম মোজাম্মেল হক মুক্তিযুদ্ধ, ছায়েদুল হক মৎস্য, ইমাজউদ্দিন প্রামাণিক পাট, ওবায়দুল কাদের যোগাযোগ, হাসানুল হক ইনু তথ্য, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ পানিসম্পদ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পরিবেশ, নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষা, শাজাহান খান নৌপরিবহন, অ্যাডভোকেট আনিসুল হক আইন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম ত্রাণ, মুজিবুল হক রেলপথ, আ হ ম মোস্তফা কামাল লোটাস পরিকল্পনা, অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার গণশিক্ষা, আসাদুজ্জামান নূর সংস্কৃতি, সৈয়দ মহসীন আলী সমাজকল্যাণ, শামসুর রহমান শরীফ ডিলু ভূমি ও অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। তাদের অনেককেই আগের মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
১৭ প্রতিমন্ত্রী, ২ উপমন্ত্রী ও ১ টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী :১৭ জন প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে রয়েছেন_ অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু, স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, এমএ মান্নান, মির্জা আজম, অ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন, বীর বাহাদুর উ শৈ সিং, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, বীরেন শিকদার, আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, ইসমাত আরা সাদেক, মেহের আফরোজ চুমকি, মসিউর রহমান রাঙ্গা, শাহরিয়ার আলম, জাহিদ মালেক স্বপন, নসরুল হামিদ বিপু ও অ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলক। দু'জন উপমন্ত্রী হলেন_ আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব ও আরিফ খান জয়। এর আগে ১৯৯৫ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে দু'জন উপমন্ত্রী ছিলেন। টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হয়েছেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ময়মনসিংহ-৪ আসনের সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মতিউর রহমান।
২৪ নতুন মুখ :নতুনদের মধ্যে ২৪ জন মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন। এর মধ্যে ৯ জন মন্ত্রী, ১৩ জন প্রতিমন্ত্রী ও দু'জন উপমন্ত্রী রয়েছেন। তারা হলেন_ অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, আ ক ম মোজাম্মেল হক, ছায়েদুল হক, ইমাজউদ্দিন প্রামাণিক, অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, আ হ ম মোস্তফা কামাল লোটাস, আসাদুজ্জামান নূর, সৈয়দ মহসীন আলী, শামসুর রহমান শরীফ ডিলু, এমএ মান্নান, মির্জা আজম, বীর বাহাদুর উ শৈ সিং, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, বীরেন শিকদার, আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, ইসমাত আরা সাদেক, মসিউর রহমান রাঙ্গা, শাহরিয়ার আলম, জাহিদ মালেক স্বপন, নসরুল হামিদ বিপু, অ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলক, আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব ও আরিফ খান জয়।
ভাগ্য বিপর্যয় :মহাজোট ও সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রীদের ২৩ জন বাদ পড়েছেন। তারা হলেন_ সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার বীরউত্তম, সাবেক শ্রমমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, সাবেক ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ, সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ূয়া, সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, সাবেক বিমানমন্ত্রী জিএম কাদের, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফছারুল আমীন, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস, সাবেক দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সাবেক পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে বাদ পড়েছেন ১৫ জন। তারা হচ্ছেন_ সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম, সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মল্পুম্নজান সুফিয়ান, সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার, সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন, সাবেক এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া, সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান, সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির, সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এনামুল হক, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আবদুল হাই, সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী, সাবেক মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম।
উপদেষ্টা :শপথের পর চার উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারা হলেন এইচ টি ইমাম, ড. মসিউর রহমান, ড. গওহর রিজভী ও মেজর জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিকী। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিগণ, ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত রবার্ট গিবসন, ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম হেনা, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, নির্বাচন কমিশনারবৃন্দ, দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সংসদ সদস্য, সম্পাদকসহ সিনিয়র সাংবাদিক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, কূটনীতিক, ঊর্ধ্বতন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, প্রধানমন্ত্রীর পরিবারবর্গ, নারী সমাজের নেতৃবৃন্দ প্রমুখ।
বুধবার মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক :মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা জানান, আগামী বুধবার সকালে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক হবে। এ আগে মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ ৩২ নম্বর ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে সকাল ৯টায় ও ১০টায় সাভার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
No comments