বারডেমের কর্মবীর by মোহাম্মদ আবদুুল মজিদ
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা
এবং এ দেশে ডায়াবেটিক চিকিৎসাসেবার প্রাণপুরুষ জাতীয় অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ
ইব্রাহিমের (১৯১১-১৯৮৯) অন্যতম বিশ্বস্ত সহযোগী একেএম শাহজাহান গত ৭
জানুয়ারি ৮৪ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। বরিশালের
আগৈলঝাড়া উপজেলার চেংগুটিয়া গ্রামের একেএম শাহজাহান তালুকদার বাংলাদেশে এমন
একজন বিরল ব্যক্তিত্ব, যিনি আমৃত্যু কর্মরত ছিলেন তার প্রিয় প্রতিষ্ঠান
বারডেম তথা বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতিতে। এ সমিতি প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই
একেএম শাহজাহান প্রফেসর ইব্রাহিমের সহকারী হিসেবে স্নেহধন্য ছিলেন। ১৯৫৬
সালে সমিতি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর অধিকর্তা হিসেবে সমিতির চাকরিতে যোগ দিয়ে
তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণর্ পদে আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করেন একটানা ৫৮ বছর।
বিশ্বস্ত সহকর্মী ও অত্যন্ত পরিশ্রমী, সদালাপী, কর্মঠ এবং সজ্জন ব্যক্তি
হিসেবে প্রফেসর ইব্রাহিমের আপনজন হতে পেরেছিলেন। সে সুবাদে ডায়াবেটিক
রোগীরা বিশেষ করে বারডেমে চিকিৎসাসেবা গ্রহণকারীদের কাছে একেএম শাহজাহান
ছিলেন অতি পরিচিত সুহৃদ এবং সমাজসেবক। মৃত্যুর প্রদোষকালে ৮৪ বছর বয়সেও
তাকে একই মমতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে অফিস করতে দেখেছি। তিনি ছিলেন
ডায়াবেটিক সমিতির জীবন্ত ইতিহাস এবং এদেশের ডায়াবেটিক চিকিৎসা আন্দোলনের
অন্যতম কর্মী পুরুষ।
১৯৬৪ সালে অধ্যাপক ইব্রাহিম পাকিস্তানের করাচির জিন্নাহ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে বদলি হলে শাহজাহানও তার অনুগামী হন এবং করাচিতেও গড়ে তোলেন ডায়াবেটিক সমিতি। তিনি ১৯৭২ সাল অবধি পাকিস্তান ডায়াবেটিক সমিতি পরিচালনার সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন। কাবুল হয়ে অনেক প্রতিকূল পথ পাড়ি দিয়ে স্বাধীন দেশে সপরিবারে ফিরে বাংলাদেশে ডায়াবেটিক সমিতি পুনর্গঠন ও বিকাশকালে (১৯৭২-৭৭) এর সাংগঠনিক ব্যবস্থাদি ও ভৌত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে একেএম শাহজাহান আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৭৫-৭৭ সময়ে প্রফেসর ইব্রাহিম তৎকালীন রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা পরিষদে দায়িত্ব পালনকালে একেএম শাহজাহান বারডেম তথা সমিতির সার্বক্ষণিক দাফতরিক প্রযত্ন প্রদান করেন। আশির দশকে শাহবাগে বারডেমের বহুতল ভবন নির্মাণসহ সম্প্রসারিত চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকারসহ বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃৃক্তকরণে তার দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও আন্তরিক প্রয়াস এবং সরকারি দফতরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রক্ষার প্রধান দ্যোতক ছিলেন তিনি। আশির দশক থেকে ডায়াবেটিক সমিতির প্রতি আমার আগ্রহ উদ্বোধনে একেএম শাহজাহান ছিলেন প্রেরণা। তার মতো নিবেদিতপ্রাণ সু-সমন্বয় সাধকের স্বতঃপ্রণোদিত দায়িত্ব পালনের দ্বারা আজ বারডেম ও ডায়াবেটিক সমিতি এমন পর্যায়ে উন্নীত হতে পেরেছে। এমন একজন কিংবদন্তিতুল্য ব্যক্তিত্বের আকর্ষণে আমার ডায়াবেটিক সমিতিতে যোগদান। বড় আশা নিয়ে 'বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির ইতিহাস' রচনার কাজে হাত দিয়েছিলাম শাহজাহানের অধীর আগ্রহে। তিনি নিজে ছিলেন সমিতির আর্কাইভ। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবায় মহীরুহরূপী এই চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও বিকাশের সব দুষ্প্রাপ্য তথ্য-উপাত্ত, দলিল-দস্তাবেজ সবই তার কাছে ছিল। স্মৃতি থেকে হাতড়ানো মৌখিক ইতিহাস ছাড়াও তার সংরক্ষিত দলিল-দস্তাবেজ সবই দেখার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু বড় দুঃখ ও পরিতাপের বিষয়, কাজ প্রায়ই শেষ করে আনার মুহূর্তে তিনি প্রকাশনাটি না দেখে চলে গেলেন। প্রফেসর ইব্রাহিমের স্বপ্নে গড়া বারডেম ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে গৃহীত রূপকল্প বাস্তবায়নে নিষ্ঠাবান এই মহৎপ্রাণ কর্মবীরের অবদান দেশ ও জাতি সকৃতজ্ঞতায় স্মরণে রাখবে।
ড. মোহাম্মদ আবদুুল মজিদ : সাবেক সচিব এবং এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির চিফ কো-অর্ডিনেটর
১৯৬৪ সালে অধ্যাপক ইব্রাহিম পাকিস্তানের করাচির জিন্নাহ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে বদলি হলে শাহজাহানও তার অনুগামী হন এবং করাচিতেও গড়ে তোলেন ডায়াবেটিক সমিতি। তিনি ১৯৭২ সাল অবধি পাকিস্তান ডায়াবেটিক সমিতি পরিচালনার সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন। কাবুল হয়ে অনেক প্রতিকূল পথ পাড়ি দিয়ে স্বাধীন দেশে সপরিবারে ফিরে বাংলাদেশে ডায়াবেটিক সমিতি পুনর্গঠন ও বিকাশকালে (১৯৭২-৭৭) এর সাংগঠনিক ব্যবস্থাদি ও ভৌত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে একেএম শাহজাহান আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৭৫-৭৭ সময়ে প্রফেসর ইব্রাহিম তৎকালীন রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা পরিষদে দায়িত্ব পালনকালে একেএম শাহজাহান বারডেম তথা সমিতির সার্বক্ষণিক দাফতরিক প্রযত্ন প্রদান করেন। আশির দশকে শাহবাগে বারডেমের বহুতল ভবন নির্মাণসহ সম্প্রসারিত চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকারসহ বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃৃক্তকরণে তার দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও আন্তরিক প্রয়াস এবং সরকারি দফতরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রক্ষার প্রধান দ্যোতক ছিলেন তিনি। আশির দশক থেকে ডায়াবেটিক সমিতির প্রতি আমার আগ্রহ উদ্বোধনে একেএম শাহজাহান ছিলেন প্রেরণা। তার মতো নিবেদিতপ্রাণ সু-সমন্বয় সাধকের স্বতঃপ্রণোদিত দায়িত্ব পালনের দ্বারা আজ বারডেম ও ডায়াবেটিক সমিতি এমন পর্যায়ে উন্নীত হতে পেরেছে। এমন একজন কিংবদন্তিতুল্য ব্যক্তিত্বের আকর্ষণে আমার ডায়াবেটিক সমিতিতে যোগদান। বড় আশা নিয়ে 'বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির ইতিহাস' রচনার কাজে হাত দিয়েছিলাম শাহজাহানের অধীর আগ্রহে। তিনি নিজে ছিলেন সমিতির আর্কাইভ। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবায় মহীরুহরূপী এই চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও বিকাশের সব দুষ্প্রাপ্য তথ্য-উপাত্ত, দলিল-দস্তাবেজ সবই তার কাছে ছিল। স্মৃতি থেকে হাতড়ানো মৌখিক ইতিহাস ছাড়াও তার সংরক্ষিত দলিল-দস্তাবেজ সবই দেখার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু বড় দুঃখ ও পরিতাপের বিষয়, কাজ প্রায়ই শেষ করে আনার মুহূর্তে তিনি প্রকাশনাটি না দেখে চলে গেলেন। প্রফেসর ইব্রাহিমের স্বপ্নে গড়া বারডেম ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে গৃহীত রূপকল্প বাস্তবায়নে নিষ্ঠাবান এই মহৎপ্রাণ কর্মবীরের অবদান দেশ ও জাতি সকৃতজ্ঞতায় স্মরণে রাখবে।
ড. মোহাম্মদ আবদুুল মজিদ : সাবেক সচিব এবং এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির চিফ কো-অর্ডিনেটর
No comments