এভাবে আর কত দিন
হাসপাতালে গতকাল শুক্রবার ৩৫তম দিন পার
করলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। তাঁর অবস্থা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে। গত
বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা ম্যান্ডেলাকে দেখে এসে জানিয়েছেন,
মাদিবা (ম্যান্ডেলার গোত্রীয় নাম) চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে যাচ্ছেন।
তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন হলেও স্থিতিশীল। কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রেসিডেন্টের
কার্যালয় থেকে প্রায় প্রতিদিনই 'ম্যান্ডেলার অবস্থা সংকটাপন্ন হলেও
স্থিতিশীল'- এ বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে। ম্যান্ডেলাকে জীবনদায়ী সরঞ্জাম (লাইফ
সাপোর্ট) দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। এখন সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটি ঘুরপাক
খাচ্ছে, তা হলো 'এভাবে আর কত দিন চলবে?।' দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার ও
ম্যান্ডেলার বহুধাবিভক্ত পরিবার তাঁকে শেষ বিদায় জানানোর জন্য কবে একমত হতে
পারবে, দিন দিনি তা-ই চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় পরিবারের প্রবীণ ও অসুস্থ কোনো সদস্যকে লাইফ সাপোর্টে বাঁচিয়ে রাখা নিয়ে পারিবারিক কলহ অস্বাভাবিক বা বিরল কোনো বিষয় নয়। এসব ক্ষেত্রে মুরবি্বরা পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে বসে পরবর্তী করণীয় ঠিক করেন। তবে ম্যান্ডেলার বিষয়টি এ ক্ষেত্রে একটু বেশিই জটিল। বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার জনতা তাঁকে নিয়ে চিন্তিত। অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছেও সমান সমাদৃত হওয়ায় তাঁর ব্যাপারে বাড়তি মনোযোগ বিশ্বজুড়ে। তাই ম্যান্ডেলাকে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার বা তাঁর পরিবারের যেকোনো সিদ্ধান্তই চুলচেরা বিশ্লেষণের শিকার হবে।
ম্যান্ডেলার অবর্তমানে তাঁর পরিবারের প্রধান কে হবেন, সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা, তাঁকে কোথায় কবর দেওয়া হবে- এসব নিয়ে ইতিমধ্যেই বিবাদে জড়িয়েছে পরিবারের সদস্যরা। পারিবারিক বিরোধ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। সম্প্রতি আদালতে দাখিল করা দলিলপত্রে ম্যান্ডেলার পরিবার জানায়, তিনি (ম্যান্ডেলা) অচেতন অবস্থায় চলে গেছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ অবস্থায় ম্যান্ডেলার ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের অবস্থান কী হবে, সে ব্যাপারে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ম্যান্ডেলার লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলার ক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রীয় আইন, গোত্রীয় রীতিনীতি ও তাঁর পরিবারের মতামত বিবেচনায় আনতে হবে। রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তির লাইফ সাপোর্ট খোলা-সংক্রান্ত জটিলতা খুব বেশি নেই। দক্ষিণ আফ্রিকায় যেকোনো ব্যক্তি 'লিভিং উইল' করতে পারে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কখনো অসুস্থ বা দুর্ঘটনার শিকার হলে তার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ কী ধরনের চিকিৎসাব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে সে বিষয়ে লিখিত আইনি দলিল হলো 'লিভিং উইল'। লিভিং উইলের পরিবর্তে নিজের একজন প্রতিনিধিও মনোনীত করা যায়, যিনি প্রয়োজনে ওই ব্যক্তির চিকিৎসার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে লিভিং উইল না থাকলে, এমনকি মনোনীত কেউ না থাকলে বা মনোনীত ব্যক্তির সংখ্যা একাধিক হলে জটিলতা বাধে। অসুস্থতার আগে ম্যান্ডেলা কোনো লিভিং উইল রেখে যাননি, তাঁর কোনো মনোনীত প্রতিনিধিও নেই।
দক্ষিণ আফ্রিকার ২০০৩ সালের স্বাস্থ্য আইন অনুযায়ী, কারো মস্তিষ্কের সক্রিয়তা বন্ধ হয়ে গেলে ও লিভিং উইল থাকলে পরিবারের লোকদের না জানিয়েই লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলার অধিকার দেওয়া হয়েছে চিকিৎসকদের। তবে ম্যান্ডেলা অচেতন অবস্থায় আছেন- এমন দাবি পরে প্রত্যাখ্যান করেছেন ম্যান্ডেলার চিকিৎসকরা। পরিবারের লোকজনও কয়েক দিন ধরে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলার চেষ্টা করছেন, ম্যান্ডেলা এখন অনেক ভালো আছেন। ইশারা-ইঙ্গিতে অনুভূতি জানানোর চেষ্টা করছেন।
গোত্রীয় রীতিনীতি ম্যান্ডেলার ক্ষেত্রে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াবে না বলে দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। জোহানেসবার্গের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিশেষজ্ঞ নম্বোনিসো গাসা বলেন, 'এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। গোত্রীয় নেতারা একসঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমেই সাধারণত তাঁদের সদস্যের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন। সবার মত বিবেচনায় নিয়েই সিদ্ধান্ত নিতে হয়।'
কাজেই ম্যান্ডেলার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে- সে ব্যাপারে এখন পরিবার ও দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের অবস্থানই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ম্যান্ডেলাকে সমাহিত করার জায়গা নিয়ে আদালত পর্যন্ত গিয়ে পরিবারের সদস্যরা ইতিমধ্যেই নিজেদের মধ্যে বিবাদের প্রমাণ দিয়েছে। সরকারের অবস্থান নিয়েও সন্দেহ তৈরি হয়েছে। ম্যান্ডেলার খবর প্রকাশে কড়াকড়ি দেখে সাধারণ মানুষের মধ্যে আগেই শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কেপ টাউনের আইনজীবী শেরিল ওয়েব বলেন, 'আমার মনে হয়, ম্যান্ডেলার ব্যাপারে সরকারের সততার ঘাটতি আছে। মনে হচ্ছে, আমাদের সত্য জানানো হচ্ছে না। আগামী বছর সাধারণ নির্বাচন। ম্যান্ডেলা না থাকলে দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। তাঁকে বাঁচিয়ে রাখার পেছনে হয়তো এ রকম আরো অনেক বিষয় আছে।' বিখ্যাত ব্যক্তিদের বাঁচিয়ে রাখা নিয়ে টানাহেঁচড়ার নজীর আরো আছে।
২০০৬ সালে ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল শেরন কোমায় চলে যান। কিন্তু মস্তিষ্ক সচল থাকায় তাঁকে এখনো লাইফ সাপোর্টে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। ম্যান্ডেলার ক্ষেত্রেও এমন পরিণতি অপেক্ষা করছে কি না, সে ব্যাপারেও সন্দেহ আছে। সূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস।
দক্ষিণ আফ্রিকায় পরিবারের প্রবীণ ও অসুস্থ কোনো সদস্যকে লাইফ সাপোর্টে বাঁচিয়ে রাখা নিয়ে পারিবারিক কলহ অস্বাভাবিক বা বিরল কোনো বিষয় নয়। এসব ক্ষেত্রে মুরবি্বরা পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে বসে পরবর্তী করণীয় ঠিক করেন। তবে ম্যান্ডেলার বিষয়টি এ ক্ষেত্রে একটু বেশিই জটিল। বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার জনতা তাঁকে নিয়ে চিন্তিত। অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছেও সমান সমাদৃত হওয়ায় তাঁর ব্যাপারে বাড়তি মনোযোগ বিশ্বজুড়ে। তাই ম্যান্ডেলাকে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার বা তাঁর পরিবারের যেকোনো সিদ্ধান্তই চুলচেরা বিশ্লেষণের শিকার হবে।
ম্যান্ডেলার অবর্তমানে তাঁর পরিবারের প্রধান কে হবেন, সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা, তাঁকে কোথায় কবর দেওয়া হবে- এসব নিয়ে ইতিমধ্যেই বিবাদে জড়িয়েছে পরিবারের সদস্যরা। পারিবারিক বিরোধ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। সম্প্রতি আদালতে দাখিল করা দলিলপত্রে ম্যান্ডেলার পরিবার জানায়, তিনি (ম্যান্ডেলা) অচেতন অবস্থায় চলে গেছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ অবস্থায় ম্যান্ডেলার ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের অবস্থান কী হবে, সে ব্যাপারে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ম্যান্ডেলার লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলার ক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রীয় আইন, গোত্রীয় রীতিনীতি ও তাঁর পরিবারের মতামত বিবেচনায় আনতে হবে। রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তির লাইফ সাপোর্ট খোলা-সংক্রান্ত জটিলতা খুব বেশি নেই। দক্ষিণ আফ্রিকায় যেকোনো ব্যক্তি 'লিভিং উইল' করতে পারে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কখনো অসুস্থ বা দুর্ঘটনার শিকার হলে তার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ কী ধরনের চিকিৎসাব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে সে বিষয়ে লিখিত আইনি দলিল হলো 'লিভিং উইল'। লিভিং উইলের পরিবর্তে নিজের একজন প্রতিনিধিও মনোনীত করা যায়, যিনি প্রয়োজনে ওই ব্যক্তির চিকিৎসার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে লিভিং উইল না থাকলে, এমনকি মনোনীত কেউ না থাকলে বা মনোনীত ব্যক্তির সংখ্যা একাধিক হলে জটিলতা বাধে। অসুস্থতার আগে ম্যান্ডেলা কোনো লিভিং উইল রেখে যাননি, তাঁর কোনো মনোনীত প্রতিনিধিও নেই।
দক্ষিণ আফ্রিকার ২০০৩ সালের স্বাস্থ্য আইন অনুযায়ী, কারো মস্তিষ্কের সক্রিয়তা বন্ধ হয়ে গেলে ও লিভিং উইল থাকলে পরিবারের লোকদের না জানিয়েই লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলার অধিকার দেওয়া হয়েছে চিকিৎসকদের। তবে ম্যান্ডেলা অচেতন অবস্থায় আছেন- এমন দাবি পরে প্রত্যাখ্যান করেছেন ম্যান্ডেলার চিকিৎসকরা। পরিবারের লোকজনও কয়েক দিন ধরে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলার চেষ্টা করছেন, ম্যান্ডেলা এখন অনেক ভালো আছেন। ইশারা-ইঙ্গিতে অনুভূতি জানানোর চেষ্টা করছেন।
গোত্রীয় রীতিনীতি ম্যান্ডেলার ক্ষেত্রে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াবে না বলে দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। জোহানেসবার্গের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিশেষজ্ঞ নম্বোনিসো গাসা বলেন, 'এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। গোত্রীয় নেতারা একসঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমেই সাধারণত তাঁদের সদস্যের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন। সবার মত বিবেচনায় নিয়েই সিদ্ধান্ত নিতে হয়।'
কাজেই ম্যান্ডেলার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে- সে ব্যাপারে এখন পরিবার ও দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের অবস্থানই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ম্যান্ডেলাকে সমাহিত করার জায়গা নিয়ে আদালত পর্যন্ত গিয়ে পরিবারের সদস্যরা ইতিমধ্যেই নিজেদের মধ্যে বিবাদের প্রমাণ দিয়েছে। সরকারের অবস্থান নিয়েও সন্দেহ তৈরি হয়েছে। ম্যান্ডেলার খবর প্রকাশে কড়াকড়ি দেখে সাধারণ মানুষের মধ্যে আগেই শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কেপ টাউনের আইনজীবী শেরিল ওয়েব বলেন, 'আমার মনে হয়, ম্যান্ডেলার ব্যাপারে সরকারের সততার ঘাটতি আছে। মনে হচ্ছে, আমাদের সত্য জানানো হচ্ছে না। আগামী বছর সাধারণ নির্বাচন। ম্যান্ডেলা না থাকলে দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। তাঁকে বাঁচিয়ে রাখার পেছনে হয়তো এ রকম আরো অনেক বিষয় আছে।' বিখ্যাত ব্যক্তিদের বাঁচিয়ে রাখা নিয়ে টানাহেঁচড়ার নজীর আরো আছে।
২০০৬ সালে ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল শেরন কোমায় চলে যান। কিন্তু মস্তিষ্ক সচল থাকায় তাঁকে এখনো লাইফ সাপোর্টে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। ম্যান্ডেলার ক্ষেত্রেও এমন পরিণতি অপেক্ষা করছে কি না, সে ব্যাপারেও সন্দেহ আছে। সূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস।
No comments