মনের জানালা
মেহতাব খানম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।
আপনার সঠিক পরিচয় না দিতে চাইলে অন্য কোনো নাম ব্যবহার করুন।—বি. স.
সমস্যা: আমার বয়স ১৫। মাঝেমধ্যে মায়ের ওপর খুব রাগ হয়। প্রতিটা কথায় আমাকে বকাঝকা করেন। কোনো কিছু চাইলেই শুধু বলেন, আগে পড়ালেখা ভালো করো, তারপর সবকিছু। কোনো কাজ করতে চাইলেও বলেন, আগে পড়ালেখা, তারপর কাজ। কোথাও ঘুরতে চাইলে ঘুরতেও নিয়ে যান না। মাঝেমধ্যে মনে হয়, আমার মা আমাকে একটুও ভালোবাসেন না! এখন আমার স্বভাবচরিত্র একটু ভিন্ন রকম হয়ে গেছে। কারও উপদেশ শুনতে ভালো লাগে না। কেউ কোনো কথা বললে রাগ হয়। মা যখন বকাঝকা করেন, তখন খুব বেশি রাগ হয়। আমি এখন কী করতে পারি?
পিংকী, ময়মনসিংহ
পরামর্শ: তোমার আর ভাইবোন আছে কি না এবং বাবার সঙ্গে তোমার সম্পর্ক কেমন, তা জানালে ভালো হতো। তুমি কী ধরনের জিনিস চাইছ, তা-ও বুঝতে পারছি না। তবে তোমার মা তোমাকে যে ভালোবাসেন, তাতে সন্দেহ নেই। সন্তানদের বড় করতে গিয়ে মা-বাবারা বেশ কিছু ভুলভ্রান্তি করে ফেলেন। তোমাকে যে কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার শর্ত হিসেবে পরীক্ষার ফলাফলকে সব সময় জুড়ে দেওয়া হচ্ছে, সেটি একেবারেই ঠিক হচ্ছে না। যে জিনিসগুলো তুমি চাইবে, সেগুলো দেওয়া যদি মায়ের সামর্থ্যের বাইরে হয়, তাহলে তোমাকে তা স্পষ্ট করে বুঝিয়ে বলা। আর যদি সেটি সাধ্যের মধ্যে থাকে, তাহলে সব সময় না হলেও কোনো কোনো সময় সেটি পূরণ করা তাঁর উচিত ছিল। আমি বুঝতে পারছি, ক্রমাগত হতাশায় ভুগতে থাকার ফলে তোমার আবেগগুলো বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে, হতাশার ফলেই আমাদের ভেতর প্রচণ্ড ক্ষোভ তৈরি হয়। এই বয়সটায় যেহেতু মানুষ খুব স্পর্শকাতর থাকে, সে কারণেই তোমার প্রতিক্রিয়াগুলোও বেশি হচ্ছে।
মা যখন শান্ত অবস্থায় থাকেন, তখন তাঁকে বলবে যে তিনি যেন রাগ না করে তোমাকে একটু সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলেন, কী কারণে তাঁর পক্ষে তোমার আবদারগুলো একেবারেই রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। লেখাপড়ার সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া এবং অন্য শখগুলো পূরণ করাকে মিলিয়ে না ফেলে তিনি যেন তোমাকে উৎসাহ দেন এবং ভালো কিছু করলে তার প্রশংসাও করেন।
শুভকামনা।
সমস্যা: আমার বয়স ১৮, এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রী। আমি মোটামুটি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। ছোটবেলা থেকে বাড়ি ছেড়ে কোথাও কোনো দিন থাকিনি। কলেজে ওঠার পর আমাকে হোস্টেলে দেওয়া হয়েছে। প্রথমে আমারও ইচ্ছা ছিল থাকার। কিন্তু এখন আমি হোস্টেলে থাকতে পারি না। বাড়ির জন্য মন খারাপ হয়, কান্না আসে। তা ছাড়া আমি হোস্টেলে অন্যদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছি না। কলেজের কথা মনে পড়লে কান্না আসে, কারণ কলেজে যেতে পারছি না। সামনে পরীক্ষা, পড়াশোনা একদম হয়নি। যেকোনো ব্যাপার নিয়ে আমি খুবই চিন্তা করি। বাড়িতেও আমার সমস্যা বোঝাতে পারি না ভয়ের কারণে। মনে মনে চিন্তা করছি কিন্তু কোনো সমাধান পাচ্ছি না। একেকবার দুঃখ উঠলে মনে হয়, পৃথিবী ছেড়ে চলে যাই। দয়া করে বলবেন, আমি কীভাবে পড়াশোনা করব এবং না কেঁদে থাকতে পারব।
মারিয়া, পানছড়ি, খাগড়াছড়ি
পরামর্শ: আমার মনে হচ্ছে, তুমি অতিরিক্ত মাত্রায় বিষণ্নতা আর দুশ্চিন্তায় ভুগছ। এ অবস্থা চলতে দেওয়াটা ঠিক হচ্ছে না।
সমস্যা হচ্ছে, আমাদের সমাজের মানুষ এখনো মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বটি একেবারেই অনুধাবন করতে পারছে না। তোমার পরিবার হয়তো ভাবছে, তুমি ইচ্ছা করেই লেখাপড়ায় অবহেলা করছ। তুমি যদি মানসিকভাবে উৎফুল্ল থাকতে, তাহলে পৃথিবীর যেকোনো দেশের মানুষের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলা তোমার জন্য অত্যন্ত সহজ হতো। তুমি ভয় না করে বাড়ির লোকজনকে বলো, তোমার খুব ইচ্ছা ভালোভাবে পড়াশোনা করার। তবে এ মুহূর্তে পরিবারের সদস্যদের সহায়তা তোমার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। সে সঙ্গে একটু ভেবে দেখার চেষ্টা করো, তোমার মধ্যে সামাজিক দক্ষতা, অর্থাৎ মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করার ক্ষমতা আগে থেকেই কম ছিল কি না। যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে সেটির দায়িত্বও পরিবারের ওপরই বর্তায়। তুমি সব ভয় আর অপরাধবোধ ঝেড়ে ফেলে ওদের বলো, তোমাকে যেন তারা কোনো মানসিক স্বাস্থ্যসেবা বা কাউন্সেলিংয়ে নিয়ে যায়।
সমস্যা: আমার বয়স ১৫। মাঝেমধ্যে মায়ের ওপর খুব রাগ হয়। প্রতিটা কথায় আমাকে বকাঝকা করেন। কোনো কিছু চাইলেই শুধু বলেন, আগে পড়ালেখা ভালো করো, তারপর সবকিছু। কোনো কাজ করতে চাইলেও বলেন, আগে পড়ালেখা, তারপর কাজ। কোথাও ঘুরতে চাইলে ঘুরতেও নিয়ে যান না। মাঝেমধ্যে মনে হয়, আমার মা আমাকে একটুও ভালোবাসেন না! এখন আমার স্বভাবচরিত্র একটু ভিন্ন রকম হয়ে গেছে। কারও উপদেশ শুনতে ভালো লাগে না। কেউ কোনো কথা বললে রাগ হয়। মা যখন বকাঝকা করেন, তখন খুব বেশি রাগ হয়। আমি এখন কী করতে পারি?
পিংকী, ময়মনসিংহ
পরামর্শ: তোমার আর ভাইবোন আছে কি না এবং বাবার সঙ্গে তোমার সম্পর্ক কেমন, তা জানালে ভালো হতো। তুমি কী ধরনের জিনিস চাইছ, তা-ও বুঝতে পারছি না। তবে তোমার মা তোমাকে যে ভালোবাসেন, তাতে সন্দেহ নেই। সন্তানদের বড় করতে গিয়ে মা-বাবারা বেশ কিছু ভুলভ্রান্তি করে ফেলেন। তোমাকে যে কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার শর্ত হিসেবে পরীক্ষার ফলাফলকে সব সময় জুড়ে দেওয়া হচ্ছে, সেটি একেবারেই ঠিক হচ্ছে না। যে জিনিসগুলো তুমি চাইবে, সেগুলো দেওয়া যদি মায়ের সামর্থ্যের বাইরে হয়, তাহলে তোমাকে তা স্পষ্ট করে বুঝিয়ে বলা। আর যদি সেটি সাধ্যের মধ্যে থাকে, তাহলে সব সময় না হলেও কোনো কোনো সময় সেটি পূরণ করা তাঁর উচিত ছিল। আমি বুঝতে পারছি, ক্রমাগত হতাশায় ভুগতে থাকার ফলে তোমার আবেগগুলো বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে, হতাশার ফলেই আমাদের ভেতর প্রচণ্ড ক্ষোভ তৈরি হয়। এই বয়সটায় যেহেতু মানুষ খুব স্পর্শকাতর থাকে, সে কারণেই তোমার প্রতিক্রিয়াগুলোও বেশি হচ্ছে।
মা যখন শান্ত অবস্থায় থাকেন, তখন তাঁকে বলবে যে তিনি যেন রাগ না করে তোমাকে একটু সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলেন, কী কারণে তাঁর পক্ষে তোমার আবদারগুলো একেবারেই রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। লেখাপড়ার সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া এবং অন্য শখগুলো পূরণ করাকে মিলিয়ে না ফেলে তিনি যেন তোমাকে উৎসাহ দেন এবং ভালো কিছু করলে তার প্রশংসাও করেন।
শুভকামনা।
সমস্যা: আমার বয়স ১৮, এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রী। আমি মোটামুটি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। ছোটবেলা থেকে বাড়ি ছেড়ে কোথাও কোনো দিন থাকিনি। কলেজে ওঠার পর আমাকে হোস্টেলে দেওয়া হয়েছে। প্রথমে আমারও ইচ্ছা ছিল থাকার। কিন্তু এখন আমি হোস্টেলে থাকতে পারি না। বাড়ির জন্য মন খারাপ হয়, কান্না আসে। তা ছাড়া আমি হোস্টেলে অন্যদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছি না। কলেজের কথা মনে পড়লে কান্না আসে, কারণ কলেজে যেতে পারছি না। সামনে পরীক্ষা, পড়াশোনা একদম হয়নি। যেকোনো ব্যাপার নিয়ে আমি খুবই চিন্তা করি। বাড়িতেও আমার সমস্যা বোঝাতে পারি না ভয়ের কারণে। মনে মনে চিন্তা করছি কিন্তু কোনো সমাধান পাচ্ছি না। একেকবার দুঃখ উঠলে মনে হয়, পৃথিবী ছেড়ে চলে যাই। দয়া করে বলবেন, আমি কীভাবে পড়াশোনা করব এবং না কেঁদে থাকতে পারব।
মারিয়া, পানছড়ি, খাগড়াছড়ি
পরামর্শ: আমার মনে হচ্ছে, তুমি অতিরিক্ত মাত্রায় বিষণ্নতা আর দুশ্চিন্তায় ভুগছ। এ অবস্থা চলতে দেওয়াটা ঠিক হচ্ছে না।
সমস্যা হচ্ছে, আমাদের সমাজের মানুষ এখনো মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বটি একেবারেই অনুধাবন করতে পারছে না। তোমার পরিবার হয়তো ভাবছে, তুমি ইচ্ছা করেই লেখাপড়ায় অবহেলা করছ। তুমি যদি মানসিকভাবে উৎফুল্ল থাকতে, তাহলে পৃথিবীর যেকোনো দেশের মানুষের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলা তোমার জন্য অত্যন্ত সহজ হতো। তুমি ভয় না করে বাড়ির লোকজনকে বলো, তোমার খুব ইচ্ছা ভালোভাবে পড়াশোনা করার। তবে এ মুহূর্তে পরিবারের সদস্যদের সহায়তা তোমার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। সে সঙ্গে একটু ভেবে দেখার চেষ্টা করো, তোমার মধ্যে সামাজিক দক্ষতা, অর্থাৎ মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করার ক্ষমতা আগে থেকেই কম ছিল কি না। যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে সেটির দায়িত্বও পরিবারের ওপরই বর্তায়। তুমি সব ভয় আর অপরাধবোধ ঝেড়ে ফেলে ওদের বলো, তোমাকে যেন তারা কোনো মানসিক স্বাস্থ্যসেবা বা কাউন্সেলিংয়ে নিয়ে যায়।
No comments