শাহরি রমজান-আল্লাহর প্রেমে মাতোয়ারা হওয়ার মৌসুম by মাওলানা শোয়াইব ইজহার
মাটির তৈরি মানুষের দেহ থেকে দরদ আর
মায়া-মমতা উথলে ওঠার এবং আসমান থেকে আল্লাহপ্রেমের সুশীতল বারিধারা নেমে
আসার মাস ও মৌসুম রমজানুল মোবারক।
রমজান মাসে আমাদের
কানে ও মনে ঝংকার তোলে আল্লাহপ্রেম ও মানবপ্রেমের মোহনীয় সুরে উদ্বুদ্ধ হয়ে
প্রকৃত মানুষ বা আল্লাহর খাঁটি বান্দা হতে শিক্ষা দেয়। নফস তথা
পাশবিক-দানবিক অপ্রেম, অসুন্দরকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে তাকওয়া, দয়া-মায়া,
ত্যাগ-তিতিক্ষা ও দান-খয়রাতের চাষাবাদ করার এবং রহমান রহিমের রব্বানি গুণে
গুণান্বিত হওয়ার, শাণিত ও আলোকিত হয়ে ইনসানে কামেল বনে যাওয়ার মহীয়ান মাস
রমজান আমাদের দরজার মায়াবী হাতে টোকা দিয়ে যায়, ইনসানিয়াতের প্রেমবাসরে আসর
জমায়াতের। রমজান ভোগ-বিলাসের পশুত্ব ত্যাগ করে মানুষ হওয়ার, সাধারণ মানবিক
দুর্বলতা, রিপুর আধিক্য ও বল্গাহারা কামনা-বাসনা ছেঁটে ফেলে ফেরেশতাদের
চেয়েও বড় ইনসানে কামেল হওয়ার পসরা সাজিয়ে আমাদের আহব্বান জানাচ্ছে।
আসমানি বার্তাবাহী মাস পবিত্র রমজান। এটি বারো মাসের ভেতর বাদশাতুল্য। এ মাস সব মাসের সেরা এমনকি এ মাসের শুধু একটি রাতই হাজার মাসের চেয়েও বড় কল্যাণকর। ভাবলে তাজ্জবই হতে হয়। কেন মাহে রমজানের এত সম্মান, কেন শ্রেষ্ঠত্ব..? অনেক কারণের মাঝে অন্যতম হচ্ছে, এ মাসে পবিত্র রমজান নাজিল হয়েছে। 'শাহরু রামাদান আল্লাজি উনযিলা ফিহিল কোরআন।' হাজার মাসেরও সেরা রাতে নাজিল হয়েছে এ কোরআন। 'ইন্না আনযালনাহু ফি লাইলাতিল কাদর!' আমি মহাসম্মানিত রজনীতে একে নাজিল করেছি। সুতরাং রমজান মাসের শ্রেষ্ঠত্ব মূলত ও প্রধানত আল-কোরআনের কারণে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি মানব জাতিকে পথনির্দেশ, সংবিধান, আলো ও শক্তি হিসেবে ঐশী কিতাব আল-কোরআন পাঠিয়েছেন শ্রেষ্ঠতম মানব আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.)-এর কাছে। রমজান মাসই কোরআন শরিফ নাজিলের মাস। তাই রমজান কোরআনের মাস। রমজান কোরআন নাজিলের বার্ষিকী। এক রাতে কোরআন নাজিল হলেও পুরো মাসই কোরআনের মাস বলে সম্মানীয়, বরণীয়। বলা যায়, রুহানি ও আধ্যাত্মিক পরাশক্তি রমজানের মাথার মুকুট ও হাতের সনদ হচ্ছে আল-কোরআন। আল্লাহ জাল্লাশানহুর পক্ষ থেকে আমাদের সমগ্র জীবন পরিচালনার সংবিধান ও ক্যাটালগ হিসেবে যা তিনি করুণা ও পরবশ হয়ে আমাদের দিয়েছেন।
রমজান শরিফের আরেকটি দিক ও অন্যতম বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব হচ্ছে সিয়াম সাধনা বা রোজা পালন। সিয়াম বা রোজা পালনের ব্যবস্থা কোরআনের আগেও মহান প্রভুর পক্ষ থেকে মানবজাতিগুলোকে দেওয়া হয়েছিল। এখনো বিভিন্ন অমুসলিম ধর্মীয় জাতি-গোষ্ঠীর ভেতর এক ধরনের রোজা বা উপবাস ব্রত পালনের ব্যবস্থা ও রীতি রয়েছে। আল-কোরআন ও ইসলাম এ ব্যবস্থা তথা সিয়াম সাধনাকে সার্বিকতা ও পরিপূর্ণতা দিয়ে সুস্থ-সবল বয়ঃপ্রাপ্ত মুসলমান নরনারীর ওপর ফরজ করেছে। রমজান মাসের রোজা বা সিয়াম কেন সাবালক নর-নারীর ওপর বাধ্যতামূলক করা হলো..? আসমানি গ্রন্থে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, 'লা'আল্লাকুম তাত্তাকুন'। যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো। আল্লাহভীরু ও আল্লাহপ্রেমী হতে পারো! মানুষকে ইনসানে কামেল তথা পূর্ণ মানুষ, গুণধর মানুষ, সুন্দর মনের মানুষ, সত্য ও সৎ মানুষ, বিবেকবান ও ন্যায়পরায়ণ মানুষ এবং স্নেহময়-দরদি মানুষ রূপে গড়ে তোলার জন্যই আল-কোরআন ও সিয়ামের রমজান। এমন মানুষই মুত্তাকি মানুষ। আল-কোরআন ও মাহে রমজানের সব বিধি-ব্যবস্থা এবং আচার-অনুষ্ঠান মূলত মানবতার চিরশত্রু ইবলিসের শয়তানি ও খোদ মানুুষের অভ্যন্তরীণ নফ্সানি কারসাজি, ফাঁদ-খাদ ও ষড়যন্ত্র জাল থেকে মাটির তৈরি এ মানুষকে নাজাত দিয়ে রাব্বুল আলামিনের রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের ঐশী আশীষপুষ্ট রুহানি মানুষে রূপান্তরিত করার জন্যই প্রণীত। এ রুহানি মানুষই তাকওয়াধারী ইনসানে কামেল হতে পারেন, মাটির তৈরি হয়েও নূরের তৈরি ফেরেশতাদের চেয়ে বড় হতে পারেন। তখনই এ মানুষ খলিফাতুল্লাহ বা আল্লাহর প্রতিনিধি। সারোয়ারে দু আলম আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এ রমজান মাসকে বলেছেন রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের মাধ্যমে জান্নাতি জীবন অর্জনের মাস। এগুলো অর্জন করতে পারলেই রোজা ও রমজান স্বার্থক হবে। আল্লাহ আমাদেরকে তওফিক দিন। আমিন।
লেখক : ইমাম ও খতিব, হাতিরঝিল জামে মসজিদ, ঢাকা
আসমানি বার্তাবাহী মাস পবিত্র রমজান। এটি বারো মাসের ভেতর বাদশাতুল্য। এ মাস সব মাসের সেরা এমনকি এ মাসের শুধু একটি রাতই হাজার মাসের চেয়েও বড় কল্যাণকর। ভাবলে তাজ্জবই হতে হয়। কেন মাহে রমজানের এত সম্মান, কেন শ্রেষ্ঠত্ব..? অনেক কারণের মাঝে অন্যতম হচ্ছে, এ মাসে পবিত্র রমজান নাজিল হয়েছে। 'শাহরু রামাদান আল্লাজি উনযিলা ফিহিল কোরআন।' হাজার মাসেরও সেরা রাতে নাজিল হয়েছে এ কোরআন। 'ইন্না আনযালনাহু ফি লাইলাতিল কাদর!' আমি মহাসম্মানিত রজনীতে একে নাজিল করেছি। সুতরাং রমজান মাসের শ্রেষ্ঠত্ব মূলত ও প্রধানত আল-কোরআনের কারণে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি মানব জাতিকে পথনির্দেশ, সংবিধান, আলো ও শক্তি হিসেবে ঐশী কিতাব আল-কোরআন পাঠিয়েছেন শ্রেষ্ঠতম মানব আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.)-এর কাছে। রমজান মাসই কোরআন শরিফ নাজিলের মাস। তাই রমজান কোরআনের মাস। রমজান কোরআন নাজিলের বার্ষিকী। এক রাতে কোরআন নাজিল হলেও পুরো মাসই কোরআনের মাস বলে সম্মানীয়, বরণীয়। বলা যায়, রুহানি ও আধ্যাত্মিক পরাশক্তি রমজানের মাথার মুকুট ও হাতের সনদ হচ্ছে আল-কোরআন। আল্লাহ জাল্লাশানহুর পক্ষ থেকে আমাদের সমগ্র জীবন পরিচালনার সংবিধান ও ক্যাটালগ হিসেবে যা তিনি করুণা ও পরবশ হয়ে আমাদের দিয়েছেন।
রমজান শরিফের আরেকটি দিক ও অন্যতম বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব হচ্ছে সিয়াম সাধনা বা রোজা পালন। সিয়াম বা রোজা পালনের ব্যবস্থা কোরআনের আগেও মহান প্রভুর পক্ষ থেকে মানবজাতিগুলোকে দেওয়া হয়েছিল। এখনো বিভিন্ন অমুসলিম ধর্মীয় জাতি-গোষ্ঠীর ভেতর এক ধরনের রোজা বা উপবাস ব্রত পালনের ব্যবস্থা ও রীতি রয়েছে। আল-কোরআন ও ইসলাম এ ব্যবস্থা তথা সিয়াম সাধনাকে সার্বিকতা ও পরিপূর্ণতা দিয়ে সুস্থ-সবল বয়ঃপ্রাপ্ত মুসলমান নরনারীর ওপর ফরজ করেছে। রমজান মাসের রোজা বা সিয়াম কেন সাবালক নর-নারীর ওপর বাধ্যতামূলক করা হলো..? আসমানি গ্রন্থে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, 'লা'আল্লাকুম তাত্তাকুন'। যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো। আল্লাহভীরু ও আল্লাহপ্রেমী হতে পারো! মানুষকে ইনসানে কামেল তথা পূর্ণ মানুষ, গুণধর মানুষ, সুন্দর মনের মানুষ, সত্য ও সৎ মানুষ, বিবেকবান ও ন্যায়পরায়ণ মানুষ এবং স্নেহময়-দরদি মানুষ রূপে গড়ে তোলার জন্যই আল-কোরআন ও সিয়ামের রমজান। এমন মানুষই মুত্তাকি মানুষ। আল-কোরআন ও মাহে রমজানের সব বিধি-ব্যবস্থা এবং আচার-অনুষ্ঠান মূলত মানবতার চিরশত্রু ইবলিসের শয়তানি ও খোদ মানুুষের অভ্যন্তরীণ নফ্সানি কারসাজি, ফাঁদ-খাদ ও ষড়যন্ত্র জাল থেকে মাটির তৈরি এ মানুষকে নাজাত দিয়ে রাব্বুল আলামিনের রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের ঐশী আশীষপুষ্ট রুহানি মানুষে রূপান্তরিত করার জন্যই প্রণীত। এ রুহানি মানুষই তাকওয়াধারী ইনসানে কামেল হতে পারেন, মাটির তৈরি হয়েও নূরের তৈরি ফেরেশতাদের চেয়ে বড় হতে পারেন। তখনই এ মানুষ খলিফাতুল্লাহ বা আল্লাহর প্রতিনিধি। সারোয়ারে দু আলম আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এ রমজান মাসকে বলেছেন রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের মাধ্যমে জান্নাতি জীবন অর্জনের মাস। এগুলো অর্জন করতে পারলেই রোজা ও রমজান স্বার্থক হবে। আল্লাহ আমাদেরকে তওফিক দিন। আমিন।
লেখক : ইমাম ও খতিব, হাতিরঝিল জামে মসজিদ, ঢাকা
No comments