ভারত জনগণের সন্দেহের চোখে রাজনৈতিক দলগুলো by কুলদীপ নায়ার
ভারতের মনমোহন সরকারের বিগত ১০ বছরে
রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের ওপর থেকে মানুষের আস্থা চলে
যাওয়াটাকেই আমার সবচেয়ে বড় বিপর্যয় বলে মনে হয়।
আসলে
জনগণ এত ক্ষুব্ধ যে, তারা এখন অসততা আর রাজনৈতিক দলকে সমার্থক বলে মনে
করছে। তারা মনে করে, যাঁরা রাজনীতি করেন, টাকা কামানোই তাঁদের উদ্দেশ্য।
আমি অবাক হয়ে দেখেছি, অবস্থাসম্পন্ন বহু মানুষই উত্তর প্রদেশে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য সরকারি তহবিলে টাকা দেননি। কারণ আর কিছু নয়। তাঁরা মনে করেন, এ তহবিলে টাকা দিলে তা আসলে দুর্গত মানুষের সাহায্যার্থে নয়, ব্যয় হবে কংগ্রেসের নির্বাচনের পেছনে। আমি অবশ্য এ ক্ষেত্রে হতাশ এসব মানুষকে বোঝাতে পারি, সরকারের ত্রাণব্যবস্থায় অব্যবস্থাপনার জন্য আসলে দুর্গত ব্যক্তিদের কাছে সেভাবে সাহায্য পৌঁছানো যায়নি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর তহবিল সম্পর্কে মানুষের এই সন্দেহ থেকে ক্ষমতাসীনদের হুঁশিয়ার হতে হবে। তাদের বুঝতে হবে, মানুষ তাদের ওপর থেকে আস্থা হারাচ্ছে। এটা স্বীকার করতেই হবে, এ সরকারের শাসনামলে টুজি স্পেকট্রাম ও কয়লাখনি বণ্টনব্যবস্থা নিয়ে যে কেলেঙ্কারি হয়েছে, তা কংগ্রেস সরকারের গ্রহণযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
কংগ্রেসের এ অবস্থাটা একটা রেফারেন্স হিসেবে নিলে ক্ষমতায় থাকা যেকোনো দলের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের জন্যই জনগণের আস্থা হারানোটা দুঃখজনক।
সেই সঙ্গে সরকারের বিরুদ্ধে যেকোনো প্রতিবেদন বা অব্যবস্থাপনা নিয়েই জনমনে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। এমনকি বিচারব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এমন নয় যে, এটা জনগণের সমস্যা, এটা হলো সেই সত্তরের দশক থেকে যে প্রক্রিয়ায় শাসকেরা দেশ চালাচ্ছেন, তার সমস্যা।
ইশরাত জাহান নামের মেয়েটিকে হত্যার ঘটনাটিই ধরা যাক। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং রাজ্য সরকারের দাবি, বন্দুকযুদ্ধে নিহত ইশরাত ও তার তিন সঙ্গী ছিল জঙ্গি। তারা গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছিল। এদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (সিবিআই) বলছে, এটা ছিল একেবারেই ঠান্ডা মাথার খুন। গোয়েন্দা সংস্থা (আইবি) এই দলের সঙ্গে পাকিস্তান ও জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবার যোগসূত্র পেলেও সিবিআই এর কোনো প্রমাণ পায়নি।
জনগণ তাহলে কাকে বিশ্বাস করবে? সিবিআই, আইবি দুটিই সরকারের সংস্থা! জনগণ আরেক দিক দিয়েও দ্বিধান্বিত। কারণ, সিবিআই দাবি করেছে, ইশরাত ও তার সঙ্গীদের প্রত্যেককে ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে পুলিশ তুলে নিয়ে গুলি করেছে। তাদের কাছে যে অগ্নেয়াস্ত্র ছিল, তা-ও পুলিশের এবং বেশ কিছুদিন যাবৎ সেগুলো ব্যবহূতই হয়নি।
ধরে নিলাম, ইশরাত ও তার সঙ্গীরা জঙ্গিই ছিল। কিন্তু তার পরও কি আদালতে তা প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ তাদের হত্যা করতে পারে? এই যদি আইন হয়, তবে ইন্দিরা ও রাজীব গান্ধীর হত্যাকারীদেরও সুপ্রিম কোর্টে বিচারের বদলে বন্দুকযুদ্ধে মেরে ফেলাই উচিত। মুম্বাই হামলায় জড়িত মোহাম্মদ কাসাবের বিচারের নামে আমাদের কোটি কোটি রুপি ব্যয় করা উচিত হয়নি!
সরকারের খাদ্যনিরাপত্তা বিলটি নিয়েও জনমনে সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে। এই বিলে ৬৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে খাদ্যে ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সরকার চলতি পার্লামেন্টের অধিবেশন শেষ হওয়ার মাত্র তিন সপ্তাহ আগে অধ্যাদেশ আকারে প্রস্তাবটি তুলতে পারে (চলতি অধিবেশন আগস্টের মাঝামাঝিতেই শেষ হবে)। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বিলটির পক্ষে থাকলেও ওই সময়ের মধ্যে তারা এটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ পাবে না। ফলে কেন সরকার এর আগেই বিস্তারিত আলোচনার স্বার্থে বিলটি অধ্যাদেশ আকারে পার্লামেন্টে তুলছে না?
অভিযোগ আছে, কংগ্রেসের নজর শুধু আগামী ২০১৪ সালে অনুষ্ঠেয় লোকসভা নির্বাচনের দিকে। মে মাসে এ নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু তার আগেই নভেম্বর বা ডিসেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, ওই মধ্যবর্তী নির্বাচনে বিজয়ী হলেই কংগ্রেস খাদ্যনিরাপত্তা বিলটি বাতিল করতে পারে। বিলটি পাস হলে ভারতের প্রায় ৮৫ কোটি মানুষ প্রতি কেজি চাল তিন রুপি আর গম দুই রুপি দামে পেত।
সিবিআইয়ের স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টিও ক্ষমতাসীন সরকার যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে, সেটিও সরকারের প্রতি মানুষের মনোভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। উচ্চ আদালতের অবসরপ্রাপ্ত তিন বিচারক বিষয়টি দেখছেন। কিন্তু জনগণের ধারণা, সরকার আসলে তাদের হাতের মুঠোতে থাকা বিচারকত্রয়কেই এ ক্ষেত্রে নিয়োগ দেবে। ফলে সিবিআই সরকারের আজ্ঞাবহই থেকে যাবে।
আরেক প্রধান রাজনৈতিক দল বিজেপি। হিন্দুবাদের উদ্ভব সম্পর্কে মোদির থিসিস বিক্রি করে চলা দলটির ওপরও জনগণ আর আস্থা রাখতে পারছে না। দলটি এবারও ধ্বংসপ্রাপ্ত বাবরি মসজিদের জায়গায় নতুন করে রামমন্দির গড়ে দেওয়ার ধুয়া তুলছে। কিন্তু তাদের বুঝতে হবে, ধর্মকে তাস হিসেবে ব্যবহার করে বারবার পার পাওয়া যায় না।
এবার আসা যাক বাম দলগুলোর কথায়। সপ্তাহ খানেক আগে দিল্লিতে তাদের যে সম্মেলন হলো, তাতে তারা সামাজিক ন্যায়বিচার ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ (Federalism) সংক্রান্ত তাদের এজেন্ডা তুলে ধরে। পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য সিপিআইএম ৩৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। সাচার কমিটি জানিয়েছে, তখন শিক্ষার ক্ষেত্রে রাজ্যটিতে মুসলিম সম্প্রদায় সবচেয়ে পশ্চাৎপদ ছিল (মাত্র ২ দশমিক ৭ শতাংশ)। জরুরি সময়ে দলটি ইন্দিরা গান্ধীর আমলকার কর্তৃত্ববাদী নীতি গ্রহণ করত। জনতা দল (ইউনাইটেড) তৃতীয় বিকল্প হিসেবে আশা জাগায়। কারণ, এর প্রধান শারদ যাদব বলেছেন, তাঁর দল কমিউনিস্ট বা বিজেপির মতো দলগুলোর ভিন্নমতের প্রতি অসহিষ্ণু মনোভাবের বিরুদ্ধে লড়বে।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার দেখিয়েছেন, একটি সরকার মিথ্যা নজরকাড়ার চেষ্টা না করেও কাজ করতে পারে। তিনি কোনো হস্তক্ষেপ না করে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে বুদ্ধ গয়া বোমা বিস্ফোরণের নিরপেক্ষ তদন্ত করতে দেন। নিজেদের মধ্যে আদর্শ আর আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়াই বর্তমানে ভারতীয় জনগণের মূল সমস্যা।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, কোনো রাজনৈতিক দলই কেন্দ্রীয়ভাবে তো নয়ই, রাজ্য পর্যায়েও জনগণের আস্থা রাখার মতো আদর্শিক উচ্চতায় উঠতে পারছে না। তবে আমার মতো মানুষ এখনো আশাবাদী, ভারত ইংরেজদের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভের পর নিজস্ব মূল্যবোধের যে নজির দেখিয়েছিল, শিগগিরই দেশটি আবার সে পথে ফিরে যাবে।
ইংরেজি থেকে অনূদিত
কুলদীপ নায়ার: ভারতীয় সাংবাদিক।
আমি অবাক হয়ে দেখেছি, অবস্থাসম্পন্ন বহু মানুষই উত্তর প্রদেশে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য সরকারি তহবিলে টাকা দেননি। কারণ আর কিছু নয়। তাঁরা মনে করেন, এ তহবিলে টাকা দিলে তা আসলে দুর্গত মানুষের সাহায্যার্থে নয়, ব্যয় হবে কংগ্রেসের নির্বাচনের পেছনে। আমি অবশ্য এ ক্ষেত্রে হতাশ এসব মানুষকে বোঝাতে পারি, সরকারের ত্রাণব্যবস্থায় অব্যবস্থাপনার জন্য আসলে দুর্গত ব্যক্তিদের কাছে সেভাবে সাহায্য পৌঁছানো যায়নি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর তহবিল সম্পর্কে মানুষের এই সন্দেহ থেকে ক্ষমতাসীনদের হুঁশিয়ার হতে হবে। তাদের বুঝতে হবে, মানুষ তাদের ওপর থেকে আস্থা হারাচ্ছে। এটা স্বীকার করতেই হবে, এ সরকারের শাসনামলে টুজি স্পেকট্রাম ও কয়লাখনি বণ্টনব্যবস্থা নিয়ে যে কেলেঙ্কারি হয়েছে, তা কংগ্রেস সরকারের গ্রহণযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
কংগ্রেসের এ অবস্থাটা একটা রেফারেন্স হিসেবে নিলে ক্ষমতায় থাকা যেকোনো দলের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের জন্যই জনগণের আস্থা হারানোটা দুঃখজনক।
সেই সঙ্গে সরকারের বিরুদ্ধে যেকোনো প্রতিবেদন বা অব্যবস্থাপনা নিয়েই জনমনে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। এমনকি বিচারব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এমন নয় যে, এটা জনগণের সমস্যা, এটা হলো সেই সত্তরের দশক থেকে যে প্রক্রিয়ায় শাসকেরা দেশ চালাচ্ছেন, তার সমস্যা।
ইশরাত জাহান নামের মেয়েটিকে হত্যার ঘটনাটিই ধরা যাক। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং রাজ্য সরকারের দাবি, বন্দুকযুদ্ধে নিহত ইশরাত ও তার তিন সঙ্গী ছিল জঙ্গি। তারা গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছিল। এদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (সিবিআই) বলছে, এটা ছিল একেবারেই ঠান্ডা মাথার খুন। গোয়েন্দা সংস্থা (আইবি) এই দলের সঙ্গে পাকিস্তান ও জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবার যোগসূত্র পেলেও সিবিআই এর কোনো প্রমাণ পায়নি।
জনগণ তাহলে কাকে বিশ্বাস করবে? সিবিআই, আইবি দুটিই সরকারের সংস্থা! জনগণ আরেক দিক দিয়েও দ্বিধান্বিত। কারণ, সিবিআই দাবি করেছে, ইশরাত ও তার সঙ্গীদের প্রত্যেককে ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে পুলিশ তুলে নিয়ে গুলি করেছে। তাদের কাছে যে অগ্নেয়াস্ত্র ছিল, তা-ও পুলিশের এবং বেশ কিছুদিন যাবৎ সেগুলো ব্যবহূতই হয়নি।
ধরে নিলাম, ইশরাত ও তার সঙ্গীরা জঙ্গিই ছিল। কিন্তু তার পরও কি আদালতে তা প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ তাদের হত্যা করতে পারে? এই যদি আইন হয়, তবে ইন্দিরা ও রাজীব গান্ধীর হত্যাকারীদেরও সুপ্রিম কোর্টে বিচারের বদলে বন্দুকযুদ্ধে মেরে ফেলাই উচিত। মুম্বাই হামলায় জড়িত মোহাম্মদ কাসাবের বিচারের নামে আমাদের কোটি কোটি রুপি ব্যয় করা উচিত হয়নি!
সরকারের খাদ্যনিরাপত্তা বিলটি নিয়েও জনমনে সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে। এই বিলে ৬৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে খাদ্যে ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সরকার চলতি পার্লামেন্টের অধিবেশন শেষ হওয়ার মাত্র তিন সপ্তাহ আগে অধ্যাদেশ আকারে প্রস্তাবটি তুলতে পারে (চলতি অধিবেশন আগস্টের মাঝামাঝিতেই শেষ হবে)। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বিলটির পক্ষে থাকলেও ওই সময়ের মধ্যে তারা এটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ পাবে না। ফলে কেন সরকার এর আগেই বিস্তারিত আলোচনার স্বার্থে বিলটি অধ্যাদেশ আকারে পার্লামেন্টে তুলছে না?
অভিযোগ আছে, কংগ্রেসের নজর শুধু আগামী ২০১৪ সালে অনুষ্ঠেয় লোকসভা নির্বাচনের দিকে। মে মাসে এ নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু তার আগেই নভেম্বর বা ডিসেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, ওই মধ্যবর্তী নির্বাচনে বিজয়ী হলেই কংগ্রেস খাদ্যনিরাপত্তা বিলটি বাতিল করতে পারে। বিলটি পাস হলে ভারতের প্রায় ৮৫ কোটি মানুষ প্রতি কেজি চাল তিন রুপি আর গম দুই রুপি দামে পেত।
সিবিআইয়ের স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টিও ক্ষমতাসীন সরকার যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে, সেটিও সরকারের প্রতি মানুষের মনোভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। উচ্চ আদালতের অবসরপ্রাপ্ত তিন বিচারক বিষয়টি দেখছেন। কিন্তু জনগণের ধারণা, সরকার আসলে তাদের হাতের মুঠোতে থাকা বিচারকত্রয়কেই এ ক্ষেত্রে নিয়োগ দেবে। ফলে সিবিআই সরকারের আজ্ঞাবহই থেকে যাবে।
আরেক প্রধান রাজনৈতিক দল বিজেপি। হিন্দুবাদের উদ্ভব সম্পর্কে মোদির থিসিস বিক্রি করে চলা দলটির ওপরও জনগণ আর আস্থা রাখতে পারছে না। দলটি এবারও ধ্বংসপ্রাপ্ত বাবরি মসজিদের জায়গায় নতুন করে রামমন্দির গড়ে দেওয়ার ধুয়া তুলছে। কিন্তু তাদের বুঝতে হবে, ধর্মকে তাস হিসেবে ব্যবহার করে বারবার পার পাওয়া যায় না।
এবার আসা যাক বাম দলগুলোর কথায়। সপ্তাহ খানেক আগে দিল্লিতে তাদের যে সম্মেলন হলো, তাতে তারা সামাজিক ন্যায়বিচার ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ (Federalism) সংক্রান্ত তাদের এজেন্ডা তুলে ধরে। পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য সিপিআইএম ৩৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। সাচার কমিটি জানিয়েছে, তখন শিক্ষার ক্ষেত্রে রাজ্যটিতে মুসলিম সম্প্রদায় সবচেয়ে পশ্চাৎপদ ছিল (মাত্র ২ দশমিক ৭ শতাংশ)। জরুরি সময়ে দলটি ইন্দিরা গান্ধীর আমলকার কর্তৃত্ববাদী নীতি গ্রহণ করত। জনতা দল (ইউনাইটেড) তৃতীয় বিকল্প হিসেবে আশা জাগায়। কারণ, এর প্রধান শারদ যাদব বলেছেন, তাঁর দল কমিউনিস্ট বা বিজেপির মতো দলগুলোর ভিন্নমতের প্রতি অসহিষ্ণু মনোভাবের বিরুদ্ধে লড়বে।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার দেখিয়েছেন, একটি সরকার মিথ্যা নজরকাড়ার চেষ্টা না করেও কাজ করতে পারে। তিনি কোনো হস্তক্ষেপ না করে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে বুদ্ধ গয়া বোমা বিস্ফোরণের নিরপেক্ষ তদন্ত করতে দেন। নিজেদের মধ্যে আদর্শ আর আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়াই বর্তমানে ভারতীয় জনগণের মূল সমস্যা।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, কোনো রাজনৈতিক দলই কেন্দ্রীয়ভাবে তো নয়ই, রাজ্য পর্যায়েও জনগণের আস্থা রাখার মতো আদর্শিক উচ্চতায় উঠতে পারছে না। তবে আমার মতো মানুষ এখনো আশাবাদী, ভারত ইংরেজদের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভের পর নিজস্ব মূল্যবোধের যে নজির দেখিয়েছিল, শিগগিরই দেশটি আবার সে পথে ফিরে যাবে।
ইংরেজি থেকে অনূদিত
কুলদীপ নায়ার: ভারতীয় সাংবাদিক।
No comments