ছাত্রলীগ কি এভাবেই চলবে? চাঁদা, আরও চাঁদা



জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন একটি হলের নাম শেখ হাসিনা হল। আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে এর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু তিন দফা কাজ বন্ধ থাকায় সংগত কারণেই নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হচ্ছে না।
তিন দফা কাজ বন্ধের কারণ—ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি। ছাত্রলীগের হাত থেকে শেখ হাসিনার নামে হলেরও নিস্তার নেই! এই না হলে আর ছাত্রলীগ!
সারা দেশে তো বটেই, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের যেন কোনোভাবেই পেট ভরে না। এক পক্ষকে চাঁদা দিলে আরেক পক্ষ এসে আবার চাঁদা দাবি করে বসে। ঠিকাদারেরা নিয়মিত যে চাঁদা দেন, ঈদের আগে তা আরও বেড়ে যায়। চাঁদা না পাওয়ার প্রতিক্রিয়া হচ্ছে নির্মাণশ্রমিকদের মারধর ও কাজ বন্ধ করে দেওয়া। গত রোববার রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একই কাণ্ড ঘটিয়েছেন ছাত্রলীগের ছেলেরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে তিনটি হলসহ একটি বিজ্ঞান ও একটি প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৮০ কোটি টাকার কাজ। আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, এ ধরনের নির্মাণ বা উন্নয়নকাজ মানেই সরকারি দলের ছাত্রসংগঠনের পোয়াবারো। আর এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি-খুনোখুনি সবই চলে। অভিযোগ হচ্ছে, ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নির্মাণকাজের ২ শতাংশ চাঁদা দাবি করা হয়। ঠিকাদারদের কথা হচ্ছে, আগে একবার চাঁদা দিয়েছেন, আর চাঁদা দিতে চান না তাঁরা।
বছর বছর ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হবে, নতুন নতুন গ্রুপ ও গোষ্ঠী শক্তিশালী হয়ে উঠবে, আর তাদের সবাইকেই যদি চাঁদা দিতে হয়, তাহলে ঠিকাদারেরা কাজ করবেন কীভাবে? বাজেটের ২ শতাংশ যদি ছাত্রলীগকেই চাঁদা দিতে হয়, তবে সেই টাকা ঠিকাদারেরা তুলবেন কোথা থেকে? ভবনের মান ও নির্মাণসামগ্রীতে আপস করে! শেখ হাসিনা হল বা সুফিয়া কামাল ও রবীন্দ্রনাথের নামে যে হল তৈরি হতে যাচ্ছে, ওয়াজেদ মিয়ার নামে যে বিজ্ঞান ভবন বা যে প্রশাসনিক ভবন তৈরি হতে যাচ্ছে, সেগুলোর নির্মাণের মান নিয়ে তাই সন্দেহ দেখা দেওয়া খুবই স্বাভাবিক।
এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা খুবই হতাশাজনক। ছাত্রলীগের কর্মীদের বাঁচানোর দায়িত্বই মনে হয় তিনি সবচেয়ে বড় করে দেখছেন। যাঁরা চাঁদা চেয়েছেন, তাঁরা ছাত্রলীগের কর্মী কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন তিনি। ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে থাকা ক্যাম্পাসে বাইরের লোকজন এসে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছে—এটাও বিশ্বাস করতে হবে আমাদের!
সরকার ও সরকারি দল কি ছাত্রলীগকে এভাবেই চলতে দেবে?

No comments

Powered by Blogger.