শ্রম আইন সংশোধন- শিল্পে আসুক স্বস্তি
শিল্প-কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের বিধান
রেখে সোমবার জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধন) বিল-২০১৩ পাস হয়েছে।
যে কোনো দেশে শ্রম আইনের সংশোধন স্বাভাবিক ঘটনা।
অর্থনীতিতে শিল্প খাতের গুরুত্ব এবং শ্রমিক সংখ্যা অব্যাহতভাবে বেড়ে চলার
প্রেক্ষাপটে এ ধরনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে
বিদ্যমান আইনের সংশোধনীর জন্য যে বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় রাখতে হয়েছে, তা
হচ্ছে_ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থগিত করা জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়ার
অপরিহার্য শর্ত পূরণ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কানাডার মতো বাংলাদেশের পোশাক
ক্রেতারাও সম্প্রতি বাংলাদেশে শ্রম-পরিবেশ উন্নত করার ইস্যুটি সামনে নিয়ে
এসেছে। বলা যায়, বিদ্যমান শ্রম আইনের সংশোধনের ক্ষেত্রে শ্রমিকদের ট্রেড
ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করার চাইতেও তৈরি পোশাক শিল্পের ক্রেতা বিভিন্ন দেশ
এবং দেশ-বিদেশের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের চাপ তুলনামূলক বেশি কার্যকর ছিল।
গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে শিল্প খাত যথেষ্ট এগিয়েছে। সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি
ঘটেছে পোশাকশিল্পে। প্রধানত উন্নত বাজারের ওপর নির্ভরশীল এ শিল্পে কাজ করছে
প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক। তাদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার প্রদানে মালিকপক্ষের
অনীহা প্রকাশ্য। সরকার পক্ষও তাতে সম্মতি দিয়ে এসেছে। এ ক্ষেত্রে কিছু
সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়নের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টির
তিক্ত অভিজ্ঞতার নজির টানা হয়। শ্রমিকরা ধর্মঘটের অধিকার পেলে নির্দিষ্ট
সময়ে শিপমেন্ট সময়সূচি বজায় রাখাও কঠিন হতে পারে, এমন মত রয়েছে এবং তা বেশ
জোরালো। এর বিপরীতে ট্রেড ইউনিয়ন কর্মকাণ্ডের পক্ষের মতও প্রবল। আইনের
সংশোধনে তারই স্বীকৃত মিলল। সংশোধিত আইনের বলে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে শ্রমিকদের
মালিকের অনুমোদন গ্রহণের প্রয়োজন হবে না। তারা স্বীকৃতির জন্য সরাসরি শ্রম
অধিদফতরে আবেদন করবে। নতুন আইনে গুরুত্বপূর্ণ বিধানগুলোর মধ্যে রয়েছে_ এক
কারখানায় বর্তমানে বিদ্যমান দুটির পরিবর্তে পাঁচটি পর্যন্ত ট্রেড ইউনিয়ন
গঠন, শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের একই মালিকের অন্য
কারখানায় বদলি না করা, শতকরা ১০০ ভাগ রফতানিমুখী শিল্পে শ্রমিকদের
জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য সরকার, ক্রেতা ও মালিকদের সমন্বয়ে শ্রমিক
কল্যাণ তহবিল গঠন, প্রভিডেন্ট ও কল্যাণ তহবিলে বার্ষিক মুনাফার ৫ শতাংশ
সঞ্চিত রাখা প্রভৃতি। পাস হওয়া বিলটি জাহাজ নির্মাণ, জাহাজভাঙা, ওয়েল্ডিং,
মোবাইল অপারেটর কোম্পানি, বেসরকারি রেডিও-টেলিভিশন, হাসপাতালসহ কৃষি
শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। বিল অনুযায়ী মালিক এক বছরের বেশি সময়
ধরে কর্মরত কোনো শ্রমিককে বরখাস্ত করলে তাকে প্রতি বছরের জন্য ১৫ দিনের
সমপরিমাণ বেতন ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রদান করবে। কিন্তু চুরি, অগি্নসংযোগ,
ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের মতো 'অসদাচরণে' লিপ্ত থাকার কারণে ব্যবস্থা গ্রহণ
করা হলে এ বিধান প্রযোজ্য হবে না। ট্রেড ইউনিয়নের কাজে সক্রিয় থাকা
শ্রমিককে হয়রানি করার জন্য মালিকপক্ষ এ বিধানের অপপ্রয়োগ করতে পারে_ এমন
শঙ্কা কিন্তু থেকেই যায়। অন্যদিকে ট্রেড ইউনিয়ন সুবিধার অপব্যবহার করে
তুচ্ছ কারণেও শ্রম অসন্তোষ সৃষ্টির চেষ্টা হতে পারে, মালিকপক্ষের এমন
উদ্বেগও উপেক্ষার উপায় নেই। শ্রম আইনের সংশোধন অপরিহার্য ছিল এবং এটা নিয়ে
বিতর্ক করা চলে না। একইভাবে আমাদের প্রত্যাশা, দায়িত্বশীল ট্রেড ইউনিয়ন
সংগঠন ও আন্দোলন। মনে রাখা চাই, শিল্পের স্বার্থ সবার ওপরে এবং এ ব্যাপারে
শ্রমিক, মালিক ও সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব রয়েছে। শ্রম আইনের সংশোধন
দেশকে দায়িত্বশীল ট্রেড ইউনিয়নের যুগে নিয়ে যাবে_ এটাই কাম্য।
No comments