রঙ্গব্যঙ্গ-গোলাম আযমের কাল্পনিক সাক্ষাৎকার by মোস্তফা কামাল
একাত্তরে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের
প্রধান নকশাকার গোলাম আযমের রায় ঘোষণা করা হয়েছে ১৫ জুলাই। রায়ে বলা হয়েছে,
পাঁচটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে। অথচ তাঁকে ফাঁসি না দিয়ে ৯০ বছরের
কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বয়স ও অসুস্থতার বিষয়টি বিবেচনায়
নিয়ে তাঁকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়নি; এমনটিই বলা হয়েছে। মানবতাবিরোধী
অপরাধের বিচার করতে গিয়ে মানবতা দেখানো হয়েছে। রায় ঘোষণার দিনই দেশব্যাপী
বিক্ষোভে ফেটে পড়ে মানুষ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী
বাংলাদেশিরাও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও
প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। কিন্তু রায়ের ব্যাপারে গোলাম আযমের প্রতিক্রিয়া কী?
এ সম্পর্কে সরাসরি গোলাম আযমের সাক্ষাৎকার নেওয়া সম্ভব নয়। তাই আমরা পাঠকদের সামনে তাঁর একটি কাল্পনিক সাক্ষাৎকার হাজির করেছি :
প্রশ্ন : ঘোষিত রায় সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
গো. আ. : (সব দাঁত বের করে হাসি) আমার হাসি দেখে বুঝতে পারেন না?
প্রশ্ন : মানে আপনি খুশি; এই তো?
গো. আ. : এত চমৎকার রায়! খুশি না হয়ে পারি! আমি সঙ্গে সঙ্গে ভি চিহ্ন দেখিয়েছি। মনে মনে বিচারকদের দোয়া করেছি। আমি তো এটাই চেয়েছিলাম। আমি হাসিনাকে বলেছি, বুড়ো বয়সে আমাকে আর ফাঁসিটাসি দিও না। তাহলে এই বিপদের দিনে আমাদের সমর্থন পাইবা। আর উল্টাপাল্টা করলে কিন্তু বিপদ আছে!
প্রশ্ন : বিপদ! কিসের বিপদ?
গো. আ. : সরকার এখন বিপদে আছে না? পাঁচ পাঁচটি সিটিতে শোচনীয় পরাজয়ের পর সরকারের অবস্থা টালমাটাল। ধাক্কা দিলেই পড়ে যাবে, এমন অবস্থা। এ সময় জামায়াত মারমুখী হলে সরকার নির্ঘাত বেকায়দায় পড়বে। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, জামায়াত ইচ্ছা করলে দেশকে তামা করে দিতে পারে। সে ক্ষমতা জামায়াতের আছে। আর এটা করলে সরকার কিছুতেই সামাল দিতে পারবে না। তখন তৃতীয় শক্তি আওয়ামী লীগকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেবে। আমরা যদি সরকারের সঙ্গে থাকি তাহলে সেটা সম্ভব হবে না।
প্রশ্ন : ওহ্! তার মানে তলে তলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত!
গো. আ. : আহা! আঁতাত বলছেন কেন! এটা তো একটা রাজনৈতিক কৌশল। আমরা কৌশল অবলম্বন করছি মাত্র। (হাসি) হা হা হা!
প্রশ্ন : তাহলে আপনারা আর বিএনপির সঙ্গে নেই!
গো. আ. : আরে! থাকব না কেন! বিএনপির সঙ্গেও আছি।
প্রশ্ন : বিএনপির সঙ্গে আছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকবেন- এটা কেমন কথা হলো?
গো. আ. : আরে ভাই! রাজনীতি তো এমনই। কৌশলের খেলা। এমনিতেই তো আমাদের গায়ে স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকারের গন্ধ আছে। সেটাকে দূর করতে হলে কৌশল অবলম্বন ছাড়া উপায় কী! আপনি দেখেন, ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে থেকে আমরা ১৮টি আসন পেয়েছি। দু-দুটি মন্ত্রিত্ব পেয়েছি। এখনো বিএনপি আমাদের কথার বাইরে যায় না। আমরা যা করতে চাই, তাতে বিএনপির সমর্থন থাকে। আবার অনেক কিছুই আমরা বিএনপিকে দিয়ে বাস্তবায়ন করাই। তলে তলে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখি। রায়ে সেই যোগাযোগের প্রতিফলন ঘটেছে। বুঝতে পারছেন?
প্রশ্ন : বুঝতে পারছি। কিন্তু কাজটা কি ঠিক? এটা তো উভয় দলের সঙ্গেই প্রতারণা!
গো. আ. : আরে রাখেন ভাই! টিকে থাকার জন্য সবই করা যায়। আমরা বিপদে আছি। বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য যা যা করা দরকার, তা তো করবই। কখনো বিএনপির সঙ্গে, আবার কখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে। এটা করেই তো এত দূর এসেছি। তা না হলে এ দেশে রাজনীতি করতে পারতাম!
প্রশ্ন : সরকার কত ভালো দেখছেন? বুড়ো বয়সে পরিবারের বোঝা হয়ে ছিলেন। আপনার পরিবার বেঁচে গেল! আপনার খাওয়াদাওয়া, চিকিৎসা ও আরো কিছু ঝামেলার (বুড়ো হলে যা হয়) দায়িত্ব সরকার নিয়ে নিল!
গো. আ. : হা হা হা! তাহলে বোঝেন! শেষ পর্যন্ত কে জিতল? আমি, নাকি সরকার?
প্রশ্ন : আপনিই তো জিতলেন!
গো. আ. : এর নামই হচ্ছে কৌশল, বুঝলেন? কৌশল না করলে জিততে পারতাম!
প্রশ্ন : কিন্তু সারা দেশ যে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে!
গো. আ. : ওসব নিয়ে আমরা চিন্তিত না। বাঙালিকে আমার চেনা আছে। ওসব ক্ষোভ-বিক্ষোভ দুদিনের। তারপর দেখবেন সব চুপসে গেছে।
প্রশ্ন : এবার আরেকটি প্রশ্ন করি। মনে কিছু করবেন না। আপনাকে যদি বলা হয়, একাত্তরে যে অপরাধ করেছেন তার বিচার আপনি নিজেই করুন। তাহলে কী করবেন?
গো. আ. : বড় কঠিন প্রশ্ন। আপনাকে মিথ্যা বলব না। আমি বিচারক হলে ফাঁসির আদেশই দিতাম। যাঁরা মানবতা দেখিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমি খুশি।
প্রশ্ন : আপনি যত দিন বাঁচবেন, তত দিন তো কারাগারেই কাটাবেন হবে, তাই না?
গো. আ. : আরে কিসের কারাগার! আমি হাসপাতালে থাকব। সেবিকাদের সেবায় শেষ জীবনটা কাটাব। আহা! কী আনন্দ! কী আনন্দ!
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
এ সম্পর্কে সরাসরি গোলাম আযমের সাক্ষাৎকার নেওয়া সম্ভব নয়। তাই আমরা পাঠকদের সামনে তাঁর একটি কাল্পনিক সাক্ষাৎকার হাজির করেছি :
প্রশ্ন : ঘোষিত রায় সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
গো. আ. : (সব দাঁত বের করে হাসি) আমার হাসি দেখে বুঝতে পারেন না?
প্রশ্ন : মানে আপনি খুশি; এই তো?
গো. আ. : এত চমৎকার রায়! খুশি না হয়ে পারি! আমি সঙ্গে সঙ্গে ভি চিহ্ন দেখিয়েছি। মনে মনে বিচারকদের দোয়া করেছি। আমি তো এটাই চেয়েছিলাম। আমি হাসিনাকে বলেছি, বুড়ো বয়সে আমাকে আর ফাঁসিটাসি দিও না। তাহলে এই বিপদের দিনে আমাদের সমর্থন পাইবা। আর উল্টাপাল্টা করলে কিন্তু বিপদ আছে!
প্রশ্ন : বিপদ! কিসের বিপদ?
গো. আ. : সরকার এখন বিপদে আছে না? পাঁচ পাঁচটি সিটিতে শোচনীয় পরাজয়ের পর সরকারের অবস্থা টালমাটাল। ধাক্কা দিলেই পড়ে যাবে, এমন অবস্থা। এ সময় জামায়াত মারমুখী হলে সরকার নির্ঘাত বেকায়দায় পড়বে। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, জামায়াত ইচ্ছা করলে দেশকে তামা করে দিতে পারে। সে ক্ষমতা জামায়াতের আছে। আর এটা করলে সরকার কিছুতেই সামাল দিতে পারবে না। তখন তৃতীয় শক্তি আওয়ামী লীগকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেবে। আমরা যদি সরকারের সঙ্গে থাকি তাহলে সেটা সম্ভব হবে না।
প্রশ্ন : ওহ্! তার মানে তলে তলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত!
গো. আ. : আহা! আঁতাত বলছেন কেন! এটা তো একটা রাজনৈতিক কৌশল। আমরা কৌশল অবলম্বন করছি মাত্র। (হাসি) হা হা হা!
প্রশ্ন : তাহলে আপনারা আর বিএনপির সঙ্গে নেই!
গো. আ. : আরে! থাকব না কেন! বিএনপির সঙ্গেও আছি।
প্রশ্ন : বিএনপির সঙ্গে আছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকবেন- এটা কেমন কথা হলো?
গো. আ. : আরে ভাই! রাজনীতি তো এমনই। কৌশলের খেলা। এমনিতেই তো আমাদের গায়ে স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকারের গন্ধ আছে। সেটাকে দূর করতে হলে কৌশল অবলম্বন ছাড়া উপায় কী! আপনি দেখেন, ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে থেকে আমরা ১৮টি আসন পেয়েছি। দু-দুটি মন্ত্রিত্ব পেয়েছি। এখনো বিএনপি আমাদের কথার বাইরে যায় না। আমরা যা করতে চাই, তাতে বিএনপির সমর্থন থাকে। আবার অনেক কিছুই আমরা বিএনপিকে দিয়ে বাস্তবায়ন করাই। তলে তলে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখি। রায়ে সেই যোগাযোগের প্রতিফলন ঘটেছে। বুঝতে পারছেন?
প্রশ্ন : বুঝতে পারছি। কিন্তু কাজটা কি ঠিক? এটা তো উভয় দলের সঙ্গেই প্রতারণা!
গো. আ. : আরে রাখেন ভাই! টিকে থাকার জন্য সবই করা যায়। আমরা বিপদে আছি। বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য যা যা করা দরকার, তা তো করবই। কখনো বিএনপির সঙ্গে, আবার কখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে। এটা করেই তো এত দূর এসেছি। তা না হলে এ দেশে রাজনীতি করতে পারতাম!
প্রশ্ন : সরকার কত ভালো দেখছেন? বুড়ো বয়সে পরিবারের বোঝা হয়ে ছিলেন। আপনার পরিবার বেঁচে গেল! আপনার খাওয়াদাওয়া, চিকিৎসা ও আরো কিছু ঝামেলার (বুড়ো হলে যা হয়) দায়িত্ব সরকার নিয়ে নিল!
গো. আ. : হা হা হা! তাহলে বোঝেন! শেষ পর্যন্ত কে জিতল? আমি, নাকি সরকার?
প্রশ্ন : আপনিই তো জিতলেন!
গো. আ. : এর নামই হচ্ছে কৌশল, বুঝলেন? কৌশল না করলে জিততে পারতাম!
প্রশ্ন : কিন্তু সারা দেশ যে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে!
গো. আ. : ওসব নিয়ে আমরা চিন্তিত না। বাঙালিকে আমার চেনা আছে। ওসব ক্ষোভ-বিক্ষোভ দুদিনের। তারপর দেখবেন সব চুপসে গেছে।
প্রশ্ন : এবার আরেকটি প্রশ্ন করি। মনে কিছু করবেন না। আপনাকে যদি বলা হয়, একাত্তরে যে অপরাধ করেছেন তার বিচার আপনি নিজেই করুন। তাহলে কী করবেন?
গো. আ. : বড় কঠিন প্রশ্ন। আপনাকে মিথ্যা বলব না। আমি বিচারক হলে ফাঁসির আদেশই দিতাম। যাঁরা মানবতা দেখিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমি খুশি।
প্রশ্ন : আপনি যত দিন বাঁচবেন, তত দিন তো কারাগারেই কাটাবেন হবে, তাই না?
গো. আ. : আরে কিসের কারাগার! আমি হাসপাতালে থাকব। সেবিকাদের সেবায় শেষ জীবনটা কাটাব। আহা! কী আনন্দ! কী আনন্দ!
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
No comments