চূড়ান্ত বিজয় নিয়ে ফিরতে হবে ঘরে by শামছুজ্জামান সেলিম
গত বুধবার এ কলামে লিখেছিলাম কাদের মোল্লার 'রায়' নিয়ে। লিখেছিলাম অত্যন্ত
দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে। আবেদন ছিল তরুণ প্রজন্মের বাঙালিদের কাছে।
তাতে
ছিল জামায়াত-শিবিরের অপতৎপরতা রুখে দেয়ার আকুলতা। এ আকুলতা ছিল একজন
মুক্তিযোদ্ধার হৃদয়ে রক্তক্ষরণের যন্ত্রণার প্রকাশ।
লিখেছিলাম,...'জামায়াতের এ 'অপতৎপরতা' রুখে দেয়ার এখনই সময়, বাঙালির মতো
বীর জাতিকে এ চ্যালেঞ্জ '৭১-এর মতো করে গ্রহণ করা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প
নেই। তরুণ বাঙালিদের উঠে দাঁড়াতে হবে, যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-শিবিরের
বিরুদ্ধে পাল্টা আগুনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে হবে। ওদের বিষদাঁত চিরদিনের
জন্য উপড়ে দিতে হবে।...বাঙালিকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য নতুন
প্রজন্মকে সাহস নিয়ে জেগে ওঠার কোন বিকল্প নেই। সব রকম বেইমানি শঠতার
বিরুদ্ধে সচেতন রাজনৈতিক উত্থানই একমাত্র ভরসার স্থান।'
তরুণ বাঙালিরা যে শুষ্ক বারুদের মতো হয়ে আছে তা ক্ষণিকের জন্যও ভাবতে পারিনি। বাঙালি জাতির তরুণ প্রজন্ম আজ জেগে উঠেছে। আর 'জেগে ওঠা' যে এত দ্রুত হবে তাও ভাবতে পারিনি। বছরের পর বছর ধরে এ কলামে লিখেছি বাঙালি জাতির মূল জাতীয় সমস্যার সমাধান করতে হবে। এর জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যারা ধারণ করেন তাদের 'কমন পয়েন্টে' ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের 'পক্ষ-বিপক্ষের' মধ্যে আদর্শ দিয়ে বিভাজন রেখা টানতে হবে। 'মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেই কেউ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা' থাকবেন, তার কোন নিশ্চয়তা থাকতে পারে না। এটা যেমন ব্যক্তির প্রশ্নে সত্য, ঠিক তেমনই কোন দলের জন্য একইভাবে সত্য। এ প্রশ্নে 'ইলিউশন' বাঙালি জাতির জন্য বিপর্যয়ের কারণ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ১৯৭৫ সালের পর থেকে গায়ের জোরে কর্তৃত্ব করছে। এ 'পরাজিত শক্তিকে' বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে উচ্ছেদ করতে হবে।
বাংলাদেশের 'মুক্তিযুদ্ধ' অর্থ, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সেক্যুলার গণতন্ত্র_ যেখানে থাকবে না 'মানুষের ওপর মানুষের শোষণ', থাকবে না কোন ধরনের বৈষম্য। বলা হয়েছে, 'দেশের মালিক' জনগণ। এ 'ধারণার' স্বীকৃতি রয়েছে বাংলাদেশের সংবিধানে। বাংলাদেশের রাজনীতির কেন্দ্রে অবস্থিত 'মূল দ্বন্দ্ব' মুক্তিযুদ্ধের 'পক্ষ-বিপক্ষের' মধ্যে মূলত এ 'ধারণারই' স্বীকৃতি রয়েছে। এ 'দ্বন্দ্বের' বহির্প্রকাশ আবারও ঘটল শাহবাগে অবস্থিত 'প্রজন্ম চত্বরে'।
'কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই', 'রাজাকারের ফাঁসি চাই'- তরুণ কণ্ঠের এ শ্লোগান শুধুমাত্র একটি শ্লোগান নয়। 'প্রজন্ম চত্বরের' এ শ্লোগান বাঙালি জাতিকে ১৯৭১ নিয়ে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। জামায়াত হরতালের ঘোষণা দিয়েও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথায়ও মাঠে নামতে পারেনি। প্রকৃত অর্থে সাহস করেনি। বিএনপি নেতৃত্ব উল্টোপাল্টা বকছে! বিএনপি নেতা খোকা সাহেব 'প্রজন্ম চত্বরের' তরুণদের প্রতি সম্মান জানিয়ে সংহতি প্রকাশ করছেন, আবার একই সঙ্গে 'ফ্যাসিস্ট(!)' আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার অনুরোধ করছেন! খোকা সাহেব নিজের দলের পেটের মধ্যে পুষে রাখা মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী ফ্যাসিস্ট রাজাকারদের আড়াল করে আওয়ামী লীগকে বলছেন 'ফ্যাসিস্ট(!)'। ফখরুল সাহেব তরুণদের এ মহাউত্থানকে বলছেন, 'গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম(!)'। একথা তো ঐতিহাসিকভাবে সত্য, যে জিয়াউর রহমান জামায়াত-শিবিরকে বাংলার মাটিতে পুনর্বাসিত করেছেন সামরিক ফরমান জারি করে। ইতিহাসই বলছে, জিয়া মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। এ অর্থে জিয়া একজন বেইমান। ইতিহাসের এ রায় আজ যখন প্রতিষ্ঠিত সত্য হিসেবে ঘোষিত হচ্ছে 'প্রজন্ম চত্বর' থেকে, তখন নবীন-প্রবীণ বিএনপি নেতারা যন্ত্রণায় চিৎকার-চেঁচামেচি করছেন। বিএনপি নেতা হান্নান শাহ তরুণদের উত্থানকে 'নাটক' বলে কটাক্ষ করার ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন। হান্নান শাহকে এ ঔদ্ধত্য দেখানোর জবাব ইতিহাস অবশ্যই দেবে। হান্নান শাহকে বুঝতে হবে, আইএসই-এর দালালি করার স্থান বাংলার মাটিতে ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে আসছে। তরুণ প্রজন্মের উত্থানে ফখরুল, খোকা, মওদুদ, হান্নান শাহরা আজ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
'প্রজন্ম চত্বরের' উত্থান শুধু শাহবাগে সীমাবদ্ধ নেই। ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশের সর্বত্র। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলবদর, রাজাকার, জামায়াত-শিবিরের প্রকৃত রক্ষাকারী বিএনপি। এ সত্য আবারও দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তরুণ প্রজন্মের উত্থান প্রতি সেকেন্ডে ঘোষণা করছে রাজাকারদের নিশ্চিহ্ন কর। বিক্ষোভের এ আগুনে শপথের উত্তাপ বিএনপির শরীরে প্রতিমহূর্তে অসংখ্য ফোস্কা তৈরি করছে। এ উত্তাপের জ্বালায় এ মুহূর্তে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি ছটফট করছে। এ যেন 'ঠাকুর মার ঝুলির' গল্পের ডাইনি বুড়ির জ্বলে পুড়ে মরার দশার মতোই দৃশ্য!
যারা এ দেশে একই সঙ্গে বিএনপির গালে এবং আওয়ামী লীগের গালে চুমু খেয়ে রাজনীতির নতুন রাস্তার সন্ধান দিচ্ছিলেন, তাদের দেউলিয়াপনা বড়ই করুণ হয়ে প্রকাশ হয়ে পড়ছে। আবার যারা মুক্তিযুদ্ধকে আওয়ামী লীগের 'সম্পত্তি' ঘোষণা দিয়ে বিপ্লবীপনা জাহির করতেন তারাও আজ ঘরে উঠে গেছেন। এ উভয় ধারার মধ্যে একদল সচেতন রাজনৈতিক বদমায়েশ রয়েছে- যাদের কারণে বিএনপি এবং জামায়াত-শিবির রাজনীতিতে লাভবান হয়েছে। লাখো তরুণের কণ্ঠে যখন গর্জে ওঠে 'জয় বাংলা'-তখন 'জয় বাংলা' আসল ঠিকানায় ফিরে আসে। 'জয় বাংলা' আওয়ামী লীগের সম্পত্তি নয়- জয় বাংলা '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের 'রণহুঙ্কার'। লাখো বাঙালির 'জয় বাংলা' হুঙ্কার শুনে '৭১ সালে পাকিস্তানি সৈন্যরা আতঙ্কে দিগবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ত, শূন্যে গুলি ছুড়ত। আজকের এ 'জয় বাংলা' শুনে আওয়ামী লীগও প্রমাদ গুনছে। মুক্তিযুদ্ধের 'এই পতাকা' দুই দশক পূর্বে আওয়ামী লীগ তার হাত থেকে ফেলে দিয়েছে। 'সংবিধানের' পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে 'বেইমানি' চূড়ান্তভাবে করে। 'বেইমানি' যে করেছে, সেই উপলব্ধি যথার্থভাবে আওয়ামী লীগ করছে কিনা, তাতে সন্দেহপোষণ করা অন্যায় হবে না। 'প্রজন্ম চত্বরের' প্রতি মুহূর্তের হুঙ্কার 'রাজাকার, আলবদর, জামায়াত-শিবিরকে' এদেশ থেকে তাড়িয়ে দাও- নিষিদ্ধ কর। শেখ হাসিনার সরকার এখন পর্যন্ত ঘোষণা দেননি, জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হবে। এ প্রশ্নে আওয়ামী লীগও তোতলানোর মধ্যেই রয়েছে।
তরুণ প্রজন্মের এ উত্থানের প্রতি লোক দেখানো সমর্থন দিলে চলবে না। 'প্রজন্ম চত্বরের' দাবির প্রতি বাস্তব বা প্রকৃত সমর্থন দিতে হবে মহাজোট সরকারকে। 'সংবিধান' সংশোধন করে 'আপিলের' সমান সুযোগের আইন করার প্রয়োজন অবশ্যই আছে কিন্তু একই সঙ্গে 'সংবিধানের' ৪৯ অনুচ্ছেদের সংশোধনী আনাও জরুরি হয়ে পড়েছে। '৪৯ অনুচ্ছেদ' রাষ্ট্রপতিকে যে ব্যাপক ক্ষমতা দিয়েছে তাতে তিনি যে কোন অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীর দ- মওকুফ করতে পারেন। এ অনুচ্ছেদের শেষে একটি লাইন যুক্ত করতে হবে, যেখানে উল্লেখ থাকবে, মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের সাজা মওকুফ করা যাবে না। সরকারকে এখনই ঘোষণা দিতে হবে, জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হবে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মজিনাকে সাবধান করে দিয়ে বলতে হবে তিনি যেন কূটনীতিকসুলভ আচরণ করেন। বর্তমানে মজিনা একজন রাজনীতিবিদের মতো তৎপরতা দেখাচ্ছেন বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে। জামায়াতের পক্ষ নিয়ে কথা বলা এবং সরকারকে জামায়াত নিষিদ্ধ না করার জন্য চাপ দেয়া বন্ধ করতে হবে মজিনাকে। মজিনা অকূটনীতিকসুলভ আচরণ করলে তাকে বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কার করতে হবে। শেখ হাসিনার সরকারকে মার্কিনিদের চাপের কাছে আত্মসমর্পণ করা বন্ধ করতে হবে। এ শর্তগুলো পূরণ হলেই নতুন প্রজন্মের এই উত্থান একটি যৌক্তিক পরিণতি পেতে পারে।
ঘরে ফিরতে হবে 'উত্থানের নায়কদের' একটা বিজয় নিয়ে। কিন্তু এ বিজয় নিশ্চিত করতে হলে এখনও কঠিন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। '৭১-এর পরাজিত শক্তির অস্তিত্বের ওপর যে আঘাত পড়েছে তাতে তারা আবার '৭১ সালের মতো মরিয়া হয়ে ওঠেছে। বিএনপি আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় তথাকথিত 'উদ্বেগ' প্রকাশ করেছে। জামায়াত এখনও বিষাক্ত নিঃশ্বাস ফেলছে। বাঙালির চিরশত্রু মুুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা নতুন করে ষড়যন্ত্র অাঁটতে শুরু করেছে। এ দুশমনদের সফলভাবে মোকাবিলা করতে হলে আন্দোলনের ঐক্য অটুট রাখতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে শপথ নিতে হবে 'হয় জয়- নয় মৃত্যু'। এবার বাঙালি '৭১-এর বিজয়' ফিরে পাবে নিশ্চয়।
তরুণ বাঙালিরা যে শুষ্ক বারুদের মতো হয়ে আছে তা ক্ষণিকের জন্যও ভাবতে পারিনি। বাঙালি জাতির তরুণ প্রজন্ম আজ জেগে উঠেছে। আর 'জেগে ওঠা' যে এত দ্রুত হবে তাও ভাবতে পারিনি। বছরের পর বছর ধরে এ কলামে লিখেছি বাঙালি জাতির মূল জাতীয় সমস্যার সমাধান করতে হবে। এর জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যারা ধারণ করেন তাদের 'কমন পয়েন্টে' ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের 'পক্ষ-বিপক্ষের' মধ্যে আদর্শ দিয়ে বিভাজন রেখা টানতে হবে। 'মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেই কেউ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা' থাকবেন, তার কোন নিশ্চয়তা থাকতে পারে না। এটা যেমন ব্যক্তির প্রশ্নে সত্য, ঠিক তেমনই কোন দলের জন্য একইভাবে সত্য। এ প্রশ্নে 'ইলিউশন' বাঙালি জাতির জন্য বিপর্যয়ের কারণ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ১৯৭৫ সালের পর থেকে গায়ের জোরে কর্তৃত্ব করছে। এ 'পরাজিত শক্তিকে' বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে উচ্ছেদ করতে হবে।
বাংলাদেশের 'মুক্তিযুদ্ধ' অর্থ, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সেক্যুলার গণতন্ত্র_ যেখানে থাকবে না 'মানুষের ওপর মানুষের শোষণ', থাকবে না কোন ধরনের বৈষম্য। বলা হয়েছে, 'দেশের মালিক' জনগণ। এ 'ধারণার' স্বীকৃতি রয়েছে বাংলাদেশের সংবিধানে। বাংলাদেশের রাজনীতির কেন্দ্রে অবস্থিত 'মূল দ্বন্দ্ব' মুক্তিযুদ্ধের 'পক্ষ-বিপক্ষের' মধ্যে মূলত এ 'ধারণারই' স্বীকৃতি রয়েছে। এ 'দ্বন্দ্বের' বহির্প্রকাশ আবারও ঘটল শাহবাগে অবস্থিত 'প্রজন্ম চত্বরে'।
'কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই', 'রাজাকারের ফাঁসি চাই'- তরুণ কণ্ঠের এ শ্লোগান শুধুমাত্র একটি শ্লোগান নয়। 'প্রজন্ম চত্বরের' এ শ্লোগান বাঙালি জাতিকে ১৯৭১ নিয়ে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। জামায়াত হরতালের ঘোষণা দিয়েও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথায়ও মাঠে নামতে পারেনি। প্রকৃত অর্থে সাহস করেনি। বিএনপি নেতৃত্ব উল্টোপাল্টা বকছে! বিএনপি নেতা খোকা সাহেব 'প্রজন্ম চত্বরের' তরুণদের প্রতি সম্মান জানিয়ে সংহতি প্রকাশ করছেন, আবার একই সঙ্গে 'ফ্যাসিস্ট(!)' আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার অনুরোধ করছেন! খোকা সাহেব নিজের দলের পেটের মধ্যে পুষে রাখা মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী ফ্যাসিস্ট রাজাকারদের আড়াল করে আওয়ামী লীগকে বলছেন 'ফ্যাসিস্ট(!)'। ফখরুল সাহেব তরুণদের এ মহাউত্থানকে বলছেন, 'গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম(!)'। একথা তো ঐতিহাসিকভাবে সত্য, যে জিয়াউর রহমান জামায়াত-শিবিরকে বাংলার মাটিতে পুনর্বাসিত করেছেন সামরিক ফরমান জারি করে। ইতিহাসই বলছে, জিয়া মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। এ অর্থে জিয়া একজন বেইমান। ইতিহাসের এ রায় আজ যখন প্রতিষ্ঠিত সত্য হিসেবে ঘোষিত হচ্ছে 'প্রজন্ম চত্বর' থেকে, তখন নবীন-প্রবীণ বিএনপি নেতারা যন্ত্রণায় চিৎকার-চেঁচামেচি করছেন। বিএনপি নেতা হান্নান শাহ তরুণদের উত্থানকে 'নাটক' বলে কটাক্ষ করার ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন। হান্নান শাহকে এ ঔদ্ধত্য দেখানোর জবাব ইতিহাস অবশ্যই দেবে। হান্নান শাহকে বুঝতে হবে, আইএসই-এর দালালি করার স্থান বাংলার মাটিতে ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে আসছে। তরুণ প্রজন্মের উত্থানে ফখরুল, খোকা, মওদুদ, হান্নান শাহরা আজ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
'প্রজন্ম চত্বরের' উত্থান শুধু শাহবাগে সীমাবদ্ধ নেই। ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশের সর্বত্র। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলবদর, রাজাকার, জামায়াত-শিবিরের প্রকৃত রক্ষাকারী বিএনপি। এ সত্য আবারও দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তরুণ প্রজন্মের উত্থান প্রতি সেকেন্ডে ঘোষণা করছে রাজাকারদের নিশ্চিহ্ন কর। বিক্ষোভের এ আগুনে শপথের উত্তাপ বিএনপির শরীরে প্রতিমহূর্তে অসংখ্য ফোস্কা তৈরি করছে। এ উত্তাপের জ্বালায় এ মুহূর্তে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি ছটফট করছে। এ যেন 'ঠাকুর মার ঝুলির' গল্পের ডাইনি বুড়ির জ্বলে পুড়ে মরার দশার মতোই দৃশ্য!
যারা এ দেশে একই সঙ্গে বিএনপির গালে এবং আওয়ামী লীগের গালে চুমু খেয়ে রাজনীতির নতুন রাস্তার সন্ধান দিচ্ছিলেন, তাদের দেউলিয়াপনা বড়ই করুণ হয়ে প্রকাশ হয়ে পড়ছে। আবার যারা মুক্তিযুদ্ধকে আওয়ামী লীগের 'সম্পত্তি' ঘোষণা দিয়ে বিপ্লবীপনা জাহির করতেন তারাও আজ ঘরে উঠে গেছেন। এ উভয় ধারার মধ্যে একদল সচেতন রাজনৈতিক বদমায়েশ রয়েছে- যাদের কারণে বিএনপি এবং জামায়াত-শিবির রাজনীতিতে লাভবান হয়েছে। লাখো তরুণের কণ্ঠে যখন গর্জে ওঠে 'জয় বাংলা'-তখন 'জয় বাংলা' আসল ঠিকানায় ফিরে আসে। 'জয় বাংলা' আওয়ামী লীগের সম্পত্তি নয়- জয় বাংলা '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের 'রণহুঙ্কার'। লাখো বাঙালির 'জয় বাংলা' হুঙ্কার শুনে '৭১ সালে পাকিস্তানি সৈন্যরা আতঙ্কে দিগবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ত, শূন্যে গুলি ছুড়ত। আজকের এ 'জয় বাংলা' শুনে আওয়ামী লীগও প্রমাদ গুনছে। মুক্তিযুদ্ধের 'এই পতাকা' দুই দশক পূর্বে আওয়ামী লীগ তার হাত থেকে ফেলে দিয়েছে। 'সংবিধানের' পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে 'বেইমানি' চূড়ান্তভাবে করে। 'বেইমানি' যে করেছে, সেই উপলব্ধি যথার্থভাবে আওয়ামী লীগ করছে কিনা, তাতে সন্দেহপোষণ করা অন্যায় হবে না। 'প্রজন্ম চত্বরের' প্রতি মুহূর্তের হুঙ্কার 'রাজাকার, আলবদর, জামায়াত-শিবিরকে' এদেশ থেকে তাড়িয়ে দাও- নিষিদ্ধ কর। শেখ হাসিনার সরকার এখন পর্যন্ত ঘোষণা দেননি, জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হবে। এ প্রশ্নে আওয়ামী লীগও তোতলানোর মধ্যেই রয়েছে।
তরুণ প্রজন্মের এ উত্থানের প্রতি লোক দেখানো সমর্থন দিলে চলবে না। 'প্রজন্ম চত্বরের' দাবির প্রতি বাস্তব বা প্রকৃত সমর্থন দিতে হবে মহাজোট সরকারকে। 'সংবিধান' সংশোধন করে 'আপিলের' সমান সুযোগের আইন করার প্রয়োজন অবশ্যই আছে কিন্তু একই সঙ্গে 'সংবিধানের' ৪৯ অনুচ্ছেদের সংশোধনী আনাও জরুরি হয়ে পড়েছে। '৪৯ অনুচ্ছেদ' রাষ্ট্রপতিকে যে ব্যাপক ক্ষমতা দিয়েছে তাতে তিনি যে কোন অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীর দ- মওকুফ করতে পারেন। এ অনুচ্ছেদের শেষে একটি লাইন যুক্ত করতে হবে, যেখানে উল্লেখ থাকবে, মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের সাজা মওকুফ করা যাবে না। সরকারকে এখনই ঘোষণা দিতে হবে, জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হবে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মজিনাকে সাবধান করে দিয়ে বলতে হবে তিনি যেন কূটনীতিকসুলভ আচরণ করেন। বর্তমানে মজিনা একজন রাজনীতিবিদের মতো তৎপরতা দেখাচ্ছেন বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে। জামায়াতের পক্ষ নিয়ে কথা বলা এবং সরকারকে জামায়াত নিষিদ্ধ না করার জন্য চাপ দেয়া বন্ধ করতে হবে মজিনাকে। মজিনা অকূটনীতিকসুলভ আচরণ করলে তাকে বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কার করতে হবে। শেখ হাসিনার সরকারকে মার্কিনিদের চাপের কাছে আত্মসমর্পণ করা বন্ধ করতে হবে। এ শর্তগুলো পূরণ হলেই নতুন প্রজন্মের এই উত্থান একটি যৌক্তিক পরিণতি পেতে পারে।
ঘরে ফিরতে হবে 'উত্থানের নায়কদের' একটা বিজয় নিয়ে। কিন্তু এ বিজয় নিশ্চিত করতে হলে এখনও কঠিন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। '৭১-এর পরাজিত শক্তির অস্তিত্বের ওপর যে আঘাত পড়েছে তাতে তারা আবার '৭১ সালের মতো মরিয়া হয়ে ওঠেছে। বিএনপি আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় তথাকথিত 'উদ্বেগ' প্রকাশ করেছে। জামায়াত এখনও বিষাক্ত নিঃশ্বাস ফেলছে। বাঙালির চিরশত্রু মুুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা নতুন করে ষড়যন্ত্র অাঁটতে শুরু করেছে। এ দুশমনদের সফলভাবে মোকাবিলা করতে হলে আন্দোলনের ঐক্য অটুট রাখতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে শপথ নিতে হবে 'হয় জয়- নয় মৃত্যু'। এবার বাঙালি '৭১-এর বিজয়' ফিরে পাবে নিশ্চয়।
No comments