গ্যাস নিষেধাজ্ঞা অমান্য, ৬৯১ প্রতিষ্ঠানে নতুন সংযোগ দিয়েছে তিতাস by আহমেদ দীপু ও আরিফুজ্জামান তুহিন
সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আটটি প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে 'কেঁচো খুঁড়তে সাপ' পেয়েছে পেট্রোবাংলা। প্রাথমিক তদন্তেই বেরিয়ে এসেছে, আটটি নয়, এ রকম অন্তত ৬৯১টি নতুন সংযোগ দেওয়া হয়েছে অবৈধভাবে। চাঞ্চল্যকর এ তথ্য পাওয়ার পর পেট্রোবাংলা এখন এভাবে নিষেধাজ্ঞা ভেঙে আরো কত গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে, তা বের করার জন্য কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারি নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল) ৬৯১টি প্রতিষ্ঠানে নতুন করে গ্যাসের সংযোগ দিয়েছে মূলত 'প্রতিশ্রুতি' এবং 'প্রক্রিয়াধীন' অজুহাত তুলে। নিষেধাজ্ঞা জারির পর আবেদন করেও অনেক প্রতিষ্ঠান গ্যাসের নতুন সংযোগ পেয়েছে। আবার কয়েক বছর আগে আবেদন করে সংযোগ পায়নি অথচ পরে আবেদন করে সংযোগ পাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এসব সংযোগের পেছনে রাজনৈতিক প্রভাবের পাশাপাশি শতকোটি টাকা ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, নিষেধাজ্ঞার মধ্যে নতুন সংযোগ দেওয়ায় গ্যাসের সংকট বেড়ে গেছে। কারণ, নতুন সংযোগ পাওয়া ৬৯১টি প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে। গ্যাসের জোগান না থাকায় বিদ্যমান মজুদ থেকেই নতুন সংযোগগুলোতে গ্যাস সরবরাহ করতে হয়েছে। ফলে গ্যাসের অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার ঘটনা নিয়মিত ঘটছে। তা ছাড়া সার কারখানায় গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্যাস কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এলাকাভিত্তিক গ্যাস রেশনিং করা হয়েছে। সিএনজি স্টেশনগুলোতে রেশনিং ব্যবস্থা এখনো অব্যাহত। অথচ সরকার গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন ২২০ কোটি ঘনফুটে উন্নীত না হওয়া পর্যন্ত নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখার বিষয়ে ২০০৯ সালের ২১ জুলাই সিদ্ধান্ত নেয়।
উল্লেখ্য, ওই সময় গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১৮০ কোটি ঘনফুট। চাহিদা ছিল ২৫০ কোটি ঘনফুট। চাহিদা অনুযায়ী ওই সময়ের সংযোগগুলোতে গ্যাস সরবরাহ করতে না পারায় নতুন সংযোগ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট লোকজন কৌশলে নতুন সংযোগ দেওয়া অব্যাহত রাখে।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে আটটি প্রতিষ্ঠানে নতুন সংযোগ দেওয়ার বিষয়টি তদন্ত করে পেট্রোবাংলা। এই আটটির ভেতর দুটিতে সংযোগ দেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। পাশাপাশি ৬৯১টি প্রতিষ্ঠানে নতুন সংযোগের বিষয় আবিষ্কার করেছে। বাংলাদেশ তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) তদন্তে বেরিয়ে এসেছে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, ১৩৯টি শিল্পকারখানা ১৩৪টি ক্যাপটিভ পাওয়ার, ৫২টি সিএনজি স্টেশন এবং ৩৬৫টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞা জারির আগে 'প্রতিশ্রুতি' এবং 'প্রক্রিয়াধীন' হিসেবে এগুলোতে সংযোগ দেওয়া হয়েছে বলে তিতাস তাদের ব্যাখ্যা ও মতামত দিয়েছে। কমিটির কার্যপরিধি অনুযায়ী এই ৬৯১টি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে বিস্তারিত কাজের সুযোগ না থাকায় ব্যাপকভাবে তদন্ত করা যায়নি। আগামীতে এগুলোর বিষয়ে তদন্ত হবে বলে পেট্রোবাংলার শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুর কালের কণ্ঠের কাছে স্বীকার করেন বলেছেন, নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে নিষেধাজ্ঞা জারির উদ্দেশ্য কিছুটা হলেও ব্যাহত হয়েছে। গ্যাস সংযোগে দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, 'আমাদের কাছেও অভিযোগ আসছে। এ বিষয়ে পেট্রোবাংলা অচিরেই অধিকতর তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করবে। আমরা তদন্ত করে দেখব, গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকার পরও কতগুলো সংযোগ দেওয়া হয়েছে।'
এ বিষয়ে তিতাসের নির্বাহী পরিচালক আবদুল আজিজ খানের সঙ্গে কথা হলে তিনি নতুন সংযোগের কথা স্বীকার করলেও ঘুষের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
পেট্রোবাংলার ঊর্ধ্বতন মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. ফারুকের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যদের তদন্ত কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, এফএফ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে ২০১০ সালের ৮ মার্চ। ২০০৯ সালের ১৩ অক্টোবর তিতাস গ্যাসের পরিচালকমণ্ডলীর ৫৮৯তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের আলোকেই এই সংযোগ দেওয়া হয় বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।
ময়মনসিংহের ভালুকায় টিএম টেঙ্টাইল অ্যান্ড গার্মেন্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠানেও নিষেধাজ্ঞা জারির পর সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, গ্রাহক সংযোগের জন্য প্রতিষ্ঠানটি ২০০৯ সালের ১১ আগস্ট আবেদন করে। ২০১০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তিতাসের পরিচালনা পর্ষদের সভায় লোড অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১০ সালের ৭ এপ্রিল গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হয়।
যে আটটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করে, তার মধ্যে উক্ত দুটি প্রতিষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা জারির পর সংযোগ দেওয়ার বিষয়ে সত্যতা মেলে। বাকি চারটি প্রতিষ্ঠানে সংযোগ দেওয়া না হলেও প্রয়োজনীয় কাজগুলো সম্পন্ন করে রাখা হয়েছে। আর দুটি প্রতিষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা জারির আগেই সংযোগ দেওয়া হয়েছে বলে তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
জানা গেছে, সাভারের ধামরাইয়ে এফটুএফ সিএনজি ফিলিং স্টেশন ২০০৭ সালে তিতাসের অনাপত্তিপত্র পায়। এরপর তিতাসের কাছ থেকে মঞ্জুরিপত্র পায় ২০০৯ সালের ৩ জুলাই। ডিমান্ড নোট প্রদান, তিতাসের নির্দিষ্ট ছকে আবেদন করাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতিও পেয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে। সিএনজি স্টেশনটির পাইপলাইনে হাওয়া পরীক্ষাও শেষ হয়। তবে পাইপলাইনে গ্যাস প্রদানের এক সপ্তাহ আগেই জানিয়ে দেওয়া হয় 'নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়। এ কারণে এ মুহূর্তে তাদের গ্যাস সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।' তিতাস কর্তৃপক্ষ এই প্রতিষ্ঠানটিকে তাদের প্রতিশ্রুতি বা প্রক্রিয়াধীন হিসেবে বিবেচনায় নেয়নি।
এফটুএফ সিএনজি ফিলিং স্টেশনকে গ্যাস সংযোগ না দিলেও অন্য আরেকটি এফএফ নামের সিএনজি প্রতিষ্ঠানকে গ্যাস সংযোগ দিয়েছে তিতাস। এফএফ সিএনজি স্টেশনটি গাজীপুর শিল্প এলাকায় অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটি গ্যাস সংযোগের জন্য এফটুএফ সিএনজি ফিলিং স্টেশনেরও দুই বছর পর ২০০৯ সালের দিকে আবেদন করে। এফএফ সিএনজি স্টেশনের জন্য ২২ জুলাই ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত তিতাস গ্যাসের ০৪/২০০৯তম সমীক্ষণ কমিটির সভায় লোড অনুমোদন করা হয়। ১৩ অক্টোবর ২০০৯ সালে তিতাসের পরিচালকমণ্ডলীর ৫৮৯তম বোর্ড সভায় গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়। বর্তমানে সিএনজি স্টেশনটি বাণিজ্যিকভাবে চালু রয়েছে।
এ ব্যাপারে তিতাসের নির্বাহী পরিচালক আবদুল আজিজ খানের কাছে জানতে চাইলে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, 'আমরা তাদেরই সংযোগ দিয়েছি, যারা ২০০৯ সালের ২১ এপ্রিলের আগে আবেদন করেছে। গ্যাস সংযোগ বন্ধের আদেশের আগে যারা আবেদন করেছে, তাদেরই আমরা সংযোগ দিয়েছি।'
তিতাসের দাবি, সরকারের জ্বালানি মন্ত্রণালয় ২০০৯ সালের ২১ জুলাই থেকে নতুন করে সব ধরনের গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখার কারণে সাভারের ধামরাইয়ে এফটুএফ সিএনজি ফিলিং স্টেশনকে গ্যাস সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞার আগে আবেদন করে সংযোগ না পেলেও নিষেধাজ্ঞা চলাবস্থায় আবেদন করে নতুন সংযোগ পেয়েছে একাধিক প্রতিষ্ঠান।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, নিষেধাজ্ঞার মধ্যে নতুন সংযোগ দেওয়ায় গ্যাসের সংকট বেড়ে গেছে। কারণ, নতুন সংযোগ পাওয়া ৬৯১টি প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে। গ্যাসের জোগান না থাকায় বিদ্যমান মজুদ থেকেই নতুন সংযোগগুলোতে গ্যাস সরবরাহ করতে হয়েছে। ফলে গ্যাসের অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার ঘটনা নিয়মিত ঘটছে। তা ছাড়া সার কারখানায় গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্যাস কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এলাকাভিত্তিক গ্যাস রেশনিং করা হয়েছে। সিএনজি স্টেশনগুলোতে রেশনিং ব্যবস্থা এখনো অব্যাহত। অথচ সরকার গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন ২২০ কোটি ঘনফুটে উন্নীত না হওয়া পর্যন্ত নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখার বিষয়ে ২০০৯ সালের ২১ জুলাই সিদ্ধান্ত নেয়।
উল্লেখ্য, ওই সময় গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১৮০ কোটি ঘনফুট। চাহিদা ছিল ২৫০ কোটি ঘনফুট। চাহিদা অনুযায়ী ওই সময়ের সংযোগগুলোতে গ্যাস সরবরাহ করতে না পারায় নতুন সংযোগ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট লোকজন কৌশলে নতুন সংযোগ দেওয়া অব্যাহত রাখে।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে আটটি প্রতিষ্ঠানে নতুন সংযোগ দেওয়ার বিষয়টি তদন্ত করে পেট্রোবাংলা। এই আটটির ভেতর দুটিতে সংযোগ দেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। পাশাপাশি ৬৯১টি প্রতিষ্ঠানে নতুন সংযোগের বিষয় আবিষ্কার করেছে। বাংলাদেশ তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) তদন্তে বেরিয়ে এসেছে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, ১৩৯টি শিল্পকারখানা ১৩৪টি ক্যাপটিভ পাওয়ার, ৫২টি সিএনজি স্টেশন এবং ৩৬৫টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞা জারির আগে 'প্রতিশ্রুতি' এবং 'প্রক্রিয়াধীন' হিসেবে এগুলোতে সংযোগ দেওয়া হয়েছে বলে তিতাস তাদের ব্যাখ্যা ও মতামত দিয়েছে। কমিটির কার্যপরিধি অনুযায়ী এই ৬৯১টি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে বিস্তারিত কাজের সুযোগ না থাকায় ব্যাপকভাবে তদন্ত করা যায়নি। আগামীতে এগুলোর বিষয়ে তদন্ত হবে বলে পেট্রোবাংলার শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুর কালের কণ্ঠের কাছে স্বীকার করেন বলেছেন, নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে নিষেধাজ্ঞা জারির উদ্দেশ্য কিছুটা হলেও ব্যাহত হয়েছে। গ্যাস সংযোগে দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, 'আমাদের কাছেও অভিযোগ আসছে। এ বিষয়ে পেট্রোবাংলা অচিরেই অধিকতর তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করবে। আমরা তদন্ত করে দেখব, গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকার পরও কতগুলো সংযোগ দেওয়া হয়েছে।'
এ বিষয়ে তিতাসের নির্বাহী পরিচালক আবদুল আজিজ খানের সঙ্গে কথা হলে তিনি নতুন সংযোগের কথা স্বীকার করলেও ঘুষের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
পেট্রোবাংলার ঊর্ধ্বতন মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. ফারুকের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যদের তদন্ত কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, এফএফ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে ২০১০ সালের ৮ মার্চ। ২০০৯ সালের ১৩ অক্টোবর তিতাস গ্যাসের পরিচালকমণ্ডলীর ৫৮৯তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের আলোকেই এই সংযোগ দেওয়া হয় বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।
ময়মনসিংহের ভালুকায় টিএম টেঙ্টাইল অ্যান্ড গার্মেন্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠানেও নিষেধাজ্ঞা জারির পর সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, গ্রাহক সংযোগের জন্য প্রতিষ্ঠানটি ২০০৯ সালের ১১ আগস্ট আবেদন করে। ২০১০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তিতাসের পরিচালনা পর্ষদের সভায় লোড অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১০ সালের ৭ এপ্রিল গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হয়।
যে আটটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করে, তার মধ্যে উক্ত দুটি প্রতিষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা জারির পর সংযোগ দেওয়ার বিষয়ে সত্যতা মেলে। বাকি চারটি প্রতিষ্ঠানে সংযোগ দেওয়া না হলেও প্রয়োজনীয় কাজগুলো সম্পন্ন করে রাখা হয়েছে। আর দুটি প্রতিষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা জারির আগেই সংযোগ দেওয়া হয়েছে বলে তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
জানা গেছে, সাভারের ধামরাইয়ে এফটুএফ সিএনজি ফিলিং স্টেশন ২০০৭ সালে তিতাসের অনাপত্তিপত্র পায়। এরপর তিতাসের কাছ থেকে মঞ্জুরিপত্র পায় ২০০৯ সালের ৩ জুলাই। ডিমান্ড নোট প্রদান, তিতাসের নির্দিষ্ট ছকে আবেদন করাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতিও পেয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে। সিএনজি স্টেশনটির পাইপলাইনে হাওয়া পরীক্ষাও শেষ হয়। তবে পাইপলাইনে গ্যাস প্রদানের এক সপ্তাহ আগেই জানিয়ে দেওয়া হয় 'নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়। এ কারণে এ মুহূর্তে তাদের গ্যাস সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।' তিতাস কর্তৃপক্ষ এই প্রতিষ্ঠানটিকে তাদের প্রতিশ্রুতি বা প্রক্রিয়াধীন হিসেবে বিবেচনায় নেয়নি।
এফটুএফ সিএনজি ফিলিং স্টেশনকে গ্যাস সংযোগ না দিলেও অন্য আরেকটি এফএফ নামের সিএনজি প্রতিষ্ঠানকে গ্যাস সংযোগ দিয়েছে তিতাস। এফএফ সিএনজি স্টেশনটি গাজীপুর শিল্প এলাকায় অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটি গ্যাস সংযোগের জন্য এফটুএফ সিএনজি ফিলিং স্টেশনেরও দুই বছর পর ২০০৯ সালের দিকে আবেদন করে। এফএফ সিএনজি স্টেশনের জন্য ২২ জুলাই ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত তিতাস গ্যাসের ০৪/২০০৯তম সমীক্ষণ কমিটির সভায় লোড অনুমোদন করা হয়। ১৩ অক্টোবর ২০০৯ সালে তিতাসের পরিচালকমণ্ডলীর ৫৮৯তম বোর্ড সভায় গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়। বর্তমানে সিএনজি স্টেশনটি বাণিজ্যিকভাবে চালু রয়েছে।
এ ব্যাপারে তিতাসের নির্বাহী পরিচালক আবদুল আজিজ খানের কাছে জানতে চাইলে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, 'আমরা তাদেরই সংযোগ দিয়েছি, যারা ২০০৯ সালের ২১ এপ্রিলের আগে আবেদন করেছে। গ্যাস সংযোগ বন্ধের আদেশের আগে যারা আবেদন করেছে, তাদেরই আমরা সংযোগ দিয়েছি।'
তিতাসের দাবি, সরকারের জ্বালানি মন্ত্রণালয় ২০০৯ সালের ২১ জুলাই থেকে নতুন করে সব ধরনের গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখার কারণে সাভারের ধামরাইয়ে এফটুএফ সিএনজি ফিলিং স্টেশনকে গ্যাস সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞার আগে আবেদন করে সংযোগ না পেলেও নিষেধাজ্ঞা চলাবস্থায় আবেদন করে নতুন সংযোগ পেয়েছে একাধিক প্রতিষ্ঠান।
No comments