বঞ্চিত শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে 'পথ স্কুল' by এমরানা আহমেদ
শিশুদের যে বয়সে লেখাপড়া করার কথা, খেলাধুলা করার কথা, সে বয়সে পথ শিশুদের কাজ করতে হয়। অধিকাংশ সময়ই কঠিন পরিশ্রমের কাজ করতে হয়। প্রায় সবক্ষেত্রেই দারিদ্র্য তাদের ঠেলে দেয় অকালে কর্মময় জীবনে। নিজেদের জীবিকা তারা নিজেরাই নির্বাহ করে। কখনও কখনও পরিবারের ব্যয়ভারও তাদেরই বহন করতে হয়। দিনরাত কাজ করে তারা। সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুর অধিকার আদায়ের জন্য কোনো ট্রেড ইউনিয়ন নেই। তারা সংগঠিত নয়, তাদের বেতনভাতা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই।
যে যেভাবে পারে তাদের খাটিয়ে নেয়। তাদের সুবিচার করার মানসিকতা খুব কম মানুষেরই রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। ট্রাকের হেলপার পথশিশু সজীব কাজ শেষে পড়াশোনা করে এনজিও অপরাজেয় বাংলাদেশ পরিচালিত 'পথ স্কুলে'। পড়াশোনা করতে ভালো লাগে তার। অন্তত নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে পারছে, সমবয়সীদেরও সচেতন করতে পারছে। পথশিশুদের দৈনন্দিন জীবন চলার পথে এসব স্কুল অনেক বড় ভূমিকা রেখে চলেছে বলেও জানায় সজীব। আট বছর বয়সী শান্তনা। কারওয়ানবাজার এলাকার একটি বাসায় কাজ করে। এই বাড়ির গৃহকর্ত্রী শায়লাা ছোট্ট শান্তনাকে পড়াশোনার সুযোগ করে দিয়েছে। বাড়ির কাজ শেষ করে কারওয়ানবাজারের ১১০/২ পূর্ব তেজতুরি বাজার 'ড্রপ-ইন সেন্টারে' সকাল ১০টায় পড়াশোনার জন্য আসে শান্তনা। সেখানেই কথা হয় তার সঙ্গে। পথশিশু শান্তনা ও সজীবের মতো মনির, মিন্টু, রাজু জানায়, এরা প্রত্যেকেই এনজিও পরিচালিত 'পথস্কুলে' পড়াশোনা করছে। এসব স্কুলে প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করার সুযোগ পাচ্ছে এসব শিশু। পথশিশু এবং বাসাবাড়িতে কাজ করা ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য রয়েছে 'অপরাজেয় বাংলাদেশ'-এর ৬টি 'পথ স্কুল'। এগুলো হলো কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, গাবতলী বাস টার্মিনাল, হাইকোর্ট মাজার, বক্সি ষ্টেডিয়াম, সংসদ ভবন এলাকায়। এছাড়াও পথশিশুদের খাওয়া, গোসল এবং বিশ্রাম নেয়ার জন্য অপরাজেয় বাংলাদেশের রয়েছে ড্রপ-ইন সেন্টারও। এটি কারওয়ানবাজারে ১১০/২ পূর্ব তেজতুরি বাজার, তেজগাঁওয়ে অবস্থিত। কারওয়ানবাজার প্লান বাংলাদেশ পরিচালিত স্কুলে বাসাবাড়িতে কাজ করা ছেলেমেয়ে ও পথশিশুরা এখানে পড়াশোনা করে। প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ জন ছেলেমেয়ে সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত লেখাপড়া করে এখানে। ২৪ ঘণ্টা আশ্রয়কেন্দ্র, আরামবাগ, ২৮/সি টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল, মিরপুর, ২০, মাজার রোড, শামসুন ভবন, মিরপুর-১। এখানে পথশিশুদের জন্য তৃতীয় শ্রেণীমান পর্যন্ত উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা আছে, যা এ ধরনের শিশুর উপযোগী সংস্থার নিজস্ব কারিকুলামের অন্তর্গত। এছাড়া শিশুদের মেধা সেন্টারে আছে নানারকম ব্যবস্থা, যেমন-ক্যারম, লুডু, দাবা খেলা, ফুটবল, ক্রিকেট, ছবি, অাঁকা, শিক্ষা সফর, পিকনিক ও বিভিন্ন দিবসে নাচ, গান, নাটকের ব্যবস্থা রাখার হয়। এসব স্কুলে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১২০ জন পথশিশু সকাল ১০টা থেকে ১১টা ৩০ পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পারছে। পথশিশুরা এসব স্কুলে পড়াশোনা খুব আগ্রহের সঙ্গেই করে থাকে। রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশ-এর সহায়তায় পরিচালিত একটি কর্মগবেষণার ফলে গড়ে উঠেছে বনানীর কাজলী শিশু শিক্ষা বিকাশ মডেল। এই ধরনের প্রতিটি স্কুলে ২৬ জন করে শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিনা খরচে অথবা সবচেয়ে কম খরচে কাজলী শিক্ষা মডেলের কোনো বিকল্প নেই। এক বছরব্যাপী এই শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজের অবহেলিত শ্রেণীর শিশুদের শৈশব আনন্দময় হয়ে ওঠে।
No comments