স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরঃ নিজ দপ্তরের সঙ্গে মামলায় এক-তৃতীয়াংশ কর্মকর্তা! by সেলিম জাহিদ
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মোট জনবলের এক-তৃতীয়াংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মামলা লড়ছেন। তাঁরা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২৩৬টি মামলা করেছেন। এলজিইডির মোট জনবল ১০ হাজার ৭৭৮। জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন, চাকরি নিয়মিত না করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে এলজিইডির বিরুদ্ধে ১০১টি মামলা করেছেন সহকারী প্রকৌশলীরা। এ ধরনের একটি মামলা সম্প্রতি আদালতে নিষ্পত্তি হয়েছে এবং রায় অনুযায়ী ৬০৯ জন সহকারী প্রকৌশলীর চাকরি নিয়মিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
১৯৯৬ সালের শুরুতে তৎকালীন বিএনপি সরকারের শেষ দিকে মামলা করা শুরু হয়। এ বছরও দুটি মামলা হয়েছে। বেশির ভাগ মামলায় বাদীরা উচ্চ আদালত থেকে রায় পেলে প্রতিষ্ঠানটির কর্তাব্যক্তিরা তার বিরুদ্ধে আপিল করে চলছেন।
এতে কর্মী, প্রতিষ্ঠান—দুই পক্ষই আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে কর্মস্পৃহা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন, এখতিয়ারবহির্ভূত পদোন্নতি, অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও চাকরি নিয়মিত না করার ঘটনায় এসব মামলা হয়েছে। এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী মো. ওয়াহিদুর রহমান এ তথ্য স্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, অধিকাংশ মামলাই সাবেক দুই প্রধান প্রকৌশলী কামাল আহমেদ সিদ্দিকী ও শহীদুল হাসানের সময়ে হয়েছে।
একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, যেসব অনিয়মের কারণে এতগুলো মামলার সৃষ্টি হয়েছে, তার বেশির ভাগই দাপ্তরিকভাবে সমাধানযোগ্য। অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী উদ্যোগী হলেই অধিকাংশ মামলা এড়ানো যেত। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ করেও প্রতিকার পায়নি বলে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন।
প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সওকত আলী ভূঁঞা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে সুশাসন ও জবাবদিহি বলতে কিছু নেই। তথ্য-প্রমাণসহ দুর্নীতির অভিযোগ করেও বিচার পাওয়া যায় না। উল্টো হয়রানির শিকার হতে হয়।’ সওকত আলী এলজিইডির ‘নবসৃষ্ট ও নদীভাঙনে বিলীন উপজেলাসমূহে কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পের পরিচালক।
অবশ্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে আমার কাছে কোনো অভিযোগ নেই। আপনার কাছে থাকলে লিখুন, আমরা দেখব।’
এলজিইডির বঙ্গবন্ধু কর্মচারী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এলজিইডি মানেই দুর্নীতি, আর উনার (প্রধান প্রকৌশলী) মূল শক্তি হচ্ছে অর্থ।’
জানতে চাইলে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘যাঁরা আমার সম্পর্কে দুর্নীতি ও আইনবহির্ভূত কাজ করার অভিযোগ করেন, তাঁরা পাগল। তাঁদের পাবনা পাঠাতে হবে।’
নির্বাহী প্রকৌশলী নেই: এই মুহূর্তে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৫৪ জেলায়ই এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী নেই। পদোন্নতির মাধ্যমে পদগুলো পূরণ হওয়ার কথা। কিন্তু তা কর হয়নি। সহকারী প্রকৌশলীদের ‘নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত’ বলে নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এটা করতে গিয়েই জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের অভিযোগ আর মামলার ঘটনা ঘটছে বেশি।
পদক্রম অনুযায়ী, সহকারী প্রকৌশলীর পর সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী, তারপর নির্বাহী প্রকৌশলীর পদ। সহকারী থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী হতে স্বাভাবিক নিয়মে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা লাগে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী বলেন, কনিষ্ঠ প্রকৌশলীদের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব দিয়ে এলজিইডির শত শত কোটি টাকার কাজ করানো হচ্ছে। এতে অদক্ষতার, কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করতে না পারার পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে অনিয়ম ও দুর্নীতিরও অভিযোগ উঠছে।
প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন ও দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ৩০ জনকে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি দিতে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন, পদোন্নতি ও পদায়ন: ২০১০ সালের বিভিন্ন সময়ে ১২ জন নির্বাহী প্রকৌশলীকে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দায়িত্ব দেন প্রধান প্রকৌশলী। কয়েকজনকে প্রেষণে বদলিও করেন।
সূত্রমতে, জ্যেষ্ঠতা তালিকা অনুসারে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২১ নম্বর ক্রমিক পর্যন্ত নির্বাহী প্রকৌশলীরা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দায়িত্ব পান। এরপর ২২ নম্বর ক্রমিক থেকে নিয়োগ হওয়ার কথা। কিন্তু জ্যেষ্ঠতা ভেঙে ৪৪, ৫০, ৫২ ও ৭৫ ক্রমিকের পর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে এর অনুমোদন নেওয়া হয়নি।
এক বছর পর এঁদের মধ্য থেকে মসিউর রহমান ও মো. শাহ আলমকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দায়িত্ব থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অব্যাহতি দেয়। আবার একই পদের রওশন কবির ও শরীফুজ্জামানকে চিঠি দিয়ে তত্ত্বাবধায়কের চলতি দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়। ওই ১২ জনের অন্যতম মোল্লা আজিজুল হককে দায়িত্ব দেওয়া হয় জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে। তিনি এখনো ওই পদে আছেন। ফলে ১২ নির্বাহী প্রকৌশলীর পদ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে।
সূত্র জানায়, শফিকুল ইসলাম আকন্দ (জ্যেষ্ঠতার ক্রমিক নম্বর ১৪৪) নামে একজন কনিষ্ঠ প্রকৌশলীকে সম্প্রতি প্রকল্প পরিচালক করা হয়। আর সুভাষচন্দ্র সাহা (জ্যেষ্ঠতা ক্রমিক নম্বর ৭২) নামে আরেক জ্যেষ্ঠ নির্বাহী প্রকৌশলীর বসার চেয়ার-টেবিলও নেই। তিনি দপ্তরে এসে ঘোরাঘুরি করেন। বসার জায়গার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের সচিবের নজরেও আনেন।
কিন্তু প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান দাবি করেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর গত তিন বছরে কোনো স্তরে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেনি।
বিধি লঙ্ঘন: সহকারী প্রকৌশলীদের নির্বাহী প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া প্রধান প্রকৌশলীর এখতিয়ারের বাইরে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের পদোন্নতি/পদায়নসংক্রান্ত [এস-৫/১সি-৪/৮৫/২৮৯ (৫২৬)] স্মারকের ৯ নম্বর ধারায় উল্লেখ আছে, ‘কোনো সহকারী প্রকৌশলী/থানা প্রকৌশলীকে নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্বে) পদে নিয়োগ/বদলির প্রস্তাব স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রেরণ করতে হবে।’ প্রেষণে নিয়োগ/বদলির ক্ষেত্রেও একই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সরকারি এই নির্দেশনা এড়ানোর জন্য প্রধান প্রকৌশলী ‘চলতি দায়িত্ব’ না বলে ‘নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্ব’ কথাটি লিখে অধিকাংশ কর্মকর্তাকে নিজে পদায়ন করেছেন। আর এখানেই তাঁর ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ ও স্বার্থের অভিযোগ উঠেছে।
কিন্তু প্রধান প্রকৌশলীর দাবি, তাঁর এই আদেশে আইনের লঙ্ঘন হয়নি।
জানতে চাইলে সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান বলেন, ‘তাঁকে (প্রধান প্রকৌশলী) পাওয়ার ডেলিগেট (ক্ষমতা প্রদান) করা হয়েছে।’ এই ক্ষমতা কখন কীভাবে দেওয়া হয়েছে বা এর জন্য কি সরকারি বিধি সংশোধন করা হয়েছে—জানতে চাইলে তিনি কিছু বলেননি।
তবে একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, কেবল সমপদধারীকে অতিরিক্ত দায়িত্ব এবং নিম্নপদধারীকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া যায়।
অভিযোগ করায় ক্ষুব্ধ প্রধান প্রকৌশলী: প্রধান প্রকৌশলীর ক্ষমতাবহির্ভূত কর্মকাণ্ড ও অনিয়মের উল্লেখ করে গত বছরের ১৫ জুলাই অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ লোকমান হাকিম ও নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব মনজুর হোসেন বরাবর অভিযোগ করেন। তাতে বলা হয়, ‘অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি/অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বেআইনি, ক্ষমতাবহির্ভূত এবং অন্যায় কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত।’
সূত্র জানায়, এতে প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান ক্ষুব্ধ হয়ে মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা দায়ের করতে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠান।
ছয়বার পদোন্নতিবঞ্চিত: অন্তত ছয়বার পদোন্নতিবঞ্চিত হন প্রকৌশলী সওকত আলী ভূঁঞা। ১৯৯০ সালের জ্যেষ্ঠতা তালিকায় তাঁর ক্রমিক ছিল ৩১। ’৯৫ সালের তালিকায় তিনি ৩৪ এবং ২০০১ সালে ১১৪ নম্বর ক্রমিকে চলে যান। তিনি এর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করে ১৪ নম্বর ক্রমিকে ফিরে আসেন।
গত ১৫ বছরে জ্যেষ্ঠতা ক্রমিকে সওকত আলীর আগে থাকা ১৩ প্রকৌশলীর বেশির ভাগ অবসরে ও কয়েকজন মারা যান। ফলে তিনি জ্যেষ্ঠতা ক্রমিকে দ্বিতীয় স্থানে চলে আসেন। কিন্তু অধিদপ্তর এই ক্রম স্বীকার করে না। তারা প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধ আপিল করেছে।
জানতে চাইলে ওয়াহিদুর রহমান বলেন, ‘সওকত আলীর বিষয়টি অনেক জটিল। ১৫ বছর ধরে মামলা চলছে। মামলা থাকায় তাঁর পদোন্নতি হয়নি। তাঁর জন্য একটি পদ খালি রাখা হয়েছে।’
তবে এলজিইডি সূত্র জানায়, বিচারাধীন মামলা থাকা সত্ত্বেও মাহবুবুর রহমান ও মো. আবদুস শহীদ নামের দুই নির্বাহী প্রকৌশলীকে গত মাসে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
প্রধান প্রকৌশলীর দাবি, ‘মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে সওকত আলীর মামলার পার্থক্য আছে।’
সূত্র জানায়, মাহবুবুর রহমান ও আবদুস শহীদ নামের দুজন নির্বাহী প্রকৌশলী উচ্চ আদালতে তাঁদের চাকরির বৈধতা নিয়ে মামলা করেন। মামলা দুটির এখনো মীমাংসা হয়নি। এরই মধ্যে দুজনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। কিন্তু সওকত আলীকে জ্যেষ্ঠতার মামলায় আপিলের অজুহাত দেখিয়ে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি।
সওকত আলী বলেন, ‘আমার জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের মামলায় ৯৯ জন প্রতিপক্ষ ছিলেন। আদালত আমাকে জ্যেষ্ঠ বলে রায় দেওয়ার পর তাঁরা মেনেও নিয়েছেন। তার পরও মন্ত্রণালয়ের সচিব ও প্রধান প্রকৌশলী আদালতে লিভ টু আপিল করলেন! এঁরা তো আমার প্রতিপক্ষ না। তবু তাঁরা কেন এটা করলেন, সেটাই প্রশ্ন।’
সচিব আবু আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় মানতে আমরা বাধ্য নই। আপিল বিভাগ রায় দিলে তখন দেখব।’ মাহবুবুর রহমানের পদোন্নতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওই মামলায় কী ছিল, তা না পড়ে কিছু বলতে পারব না।’
সূত্র জানায়, সওকত আলীর মামলায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন। এই অজুহাতে সওকত আলীকে বাদ দিয়ে ১৩ জন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও তিনজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
সওকত আলী বলছেন, আদালতের লিখিত আদেশ না পাওয়ায় জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিকারও চাইতে পারছেন না তিনি।
দ্বিমুখী নীতি: জ্যেষ্ঠতা রক্ষা ও চাকরি নিয়মিত করার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় ও এলজিইডির বিরুদ্ধে দ্বিমুখী নীতি গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি ১৩২ জন সহকারী প্রকৌশলীর চাকরি নিয়মিত করা হয়। প্রধান প্রকৌশলীর উদ্যোগে সুপ্রিম কোর্টের আপিল প্রত্যাহার করে সমঝোতার মাধ্যমে চাকরি নিয়মিত করে মন্ত্রণালয়। একই ধরনের মামলা করে ৮৭০ জন উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও অধিদপ্তরের তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণীর ৭৮৩ জন কর্মচারী উচ্চ আদালত থেকে রায় পান। কিন্তু তাঁদের চাকরি নিয়মিত না করে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে এলজিইডি।
আবু আলম মো. শহিদ খান সহকারী প্রকৌশলীদের বিষয়ে সমঝোতার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে সহকারী প্রকৌশলীদের কনসিডার (ছাড় দেওয়া) করা হয়েছে। সবাইকে করতে গেলে তদবির, দুর্নীতিসহ নানা রকম কথা হয়।’
একটি সূত্র জানায়, উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের আপিল মামলাটি সমঝোতার মাধ্যমে প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া চলছে। এর জন্য জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা ‘খরচা’ নেওয়া হচ্ছে।
অবশ্য সচিব দাবি করেন, ‘এ কাজে এখানে (স্থানীয় সরকার বিভাগে) দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে টেলিফোনে গত তিন মাসে বহুবার চেষ্টা করা হয়। একাধিকবার মোবাইলে সংক্ষিপ্ত বার্তায় (এসএমএস) পরিচয় জানিয়েও কথা বলতে চাওয়া হয়। তিনি সাড়া দেননি। ফলে এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এতে কর্মী, প্রতিষ্ঠান—দুই পক্ষই আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে কর্মস্পৃহা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন, এখতিয়ারবহির্ভূত পদোন্নতি, অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও চাকরি নিয়মিত না করার ঘটনায় এসব মামলা হয়েছে। এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী মো. ওয়াহিদুর রহমান এ তথ্য স্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, অধিকাংশ মামলাই সাবেক দুই প্রধান প্রকৌশলী কামাল আহমেদ সিদ্দিকী ও শহীদুল হাসানের সময়ে হয়েছে।
একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, যেসব অনিয়মের কারণে এতগুলো মামলার সৃষ্টি হয়েছে, তার বেশির ভাগই দাপ্তরিকভাবে সমাধানযোগ্য। অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী উদ্যোগী হলেই অধিকাংশ মামলা এড়ানো যেত। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ করেও প্রতিকার পায়নি বলে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন।
প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সওকত আলী ভূঁঞা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে সুশাসন ও জবাবদিহি বলতে কিছু নেই। তথ্য-প্রমাণসহ দুর্নীতির অভিযোগ করেও বিচার পাওয়া যায় না। উল্টো হয়রানির শিকার হতে হয়।’ সওকত আলী এলজিইডির ‘নবসৃষ্ট ও নদীভাঙনে বিলীন উপজেলাসমূহে কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পের পরিচালক।
অবশ্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে আমার কাছে কোনো অভিযোগ নেই। আপনার কাছে থাকলে লিখুন, আমরা দেখব।’
এলজিইডির বঙ্গবন্ধু কর্মচারী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এলজিইডি মানেই দুর্নীতি, আর উনার (প্রধান প্রকৌশলী) মূল শক্তি হচ্ছে অর্থ।’
জানতে চাইলে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘যাঁরা আমার সম্পর্কে দুর্নীতি ও আইনবহির্ভূত কাজ করার অভিযোগ করেন, তাঁরা পাগল। তাঁদের পাবনা পাঠাতে হবে।’
নির্বাহী প্রকৌশলী নেই: এই মুহূর্তে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৫৪ জেলায়ই এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী নেই। পদোন্নতির মাধ্যমে পদগুলো পূরণ হওয়ার কথা। কিন্তু তা কর হয়নি। সহকারী প্রকৌশলীদের ‘নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত’ বলে নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এটা করতে গিয়েই জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের অভিযোগ আর মামলার ঘটনা ঘটছে বেশি।
পদক্রম অনুযায়ী, সহকারী প্রকৌশলীর পর সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী, তারপর নির্বাহী প্রকৌশলীর পদ। সহকারী থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী হতে স্বাভাবিক নিয়মে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা লাগে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী বলেন, কনিষ্ঠ প্রকৌশলীদের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব দিয়ে এলজিইডির শত শত কোটি টাকার কাজ করানো হচ্ছে। এতে অদক্ষতার, কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করতে না পারার পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে অনিয়ম ও দুর্নীতিরও অভিযোগ উঠছে।
প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন ও দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ৩০ জনকে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি দিতে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন, পদোন্নতি ও পদায়ন: ২০১০ সালের বিভিন্ন সময়ে ১২ জন নির্বাহী প্রকৌশলীকে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দায়িত্ব দেন প্রধান প্রকৌশলী। কয়েকজনকে প্রেষণে বদলিও করেন।
সূত্রমতে, জ্যেষ্ঠতা তালিকা অনুসারে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২১ নম্বর ক্রমিক পর্যন্ত নির্বাহী প্রকৌশলীরা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দায়িত্ব পান। এরপর ২২ নম্বর ক্রমিক থেকে নিয়োগ হওয়ার কথা। কিন্তু জ্যেষ্ঠতা ভেঙে ৪৪, ৫০, ৫২ ও ৭৫ ক্রমিকের পর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে এর অনুমোদন নেওয়া হয়নি।
এক বছর পর এঁদের মধ্য থেকে মসিউর রহমান ও মো. শাহ আলমকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দায়িত্ব থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অব্যাহতি দেয়। আবার একই পদের রওশন কবির ও শরীফুজ্জামানকে চিঠি দিয়ে তত্ত্বাবধায়কের চলতি দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়। ওই ১২ জনের অন্যতম মোল্লা আজিজুল হককে দায়িত্ব দেওয়া হয় জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে। তিনি এখনো ওই পদে আছেন। ফলে ১২ নির্বাহী প্রকৌশলীর পদ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে।
সূত্র জানায়, শফিকুল ইসলাম আকন্দ (জ্যেষ্ঠতার ক্রমিক নম্বর ১৪৪) নামে একজন কনিষ্ঠ প্রকৌশলীকে সম্প্রতি প্রকল্প পরিচালক করা হয়। আর সুভাষচন্দ্র সাহা (জ্যেষ্ঠতা ক্রমিক নম্বর ৭২) নামে আরেক জ্যেষ্ঠ নির্বাহী প্রকৌশলীর বসার চেয়ার-টেবিলও নেই। তিনি দপ্তরে এসে ঘোরাঘুরি করেন। বসার জায়গার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের সচিবের নজরেও আনেন।
কিন্তু প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান দাবি করেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর গত তিন বছরে কোনো স্তরে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেনি।
বিধি লঙ্ঘন: সহকারী প্রকৌশলীদের নির্বাহী প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া প্রধান প্রকৌশলীর এখতিয়ারের বাইরে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের পদোন্নতি/পদায়নসংক্রান্ত [এস-৫/১সি-৪/৮৫/২৮৯ (৫২৬)] স্মারকের ৯ নম্বর ধারায় উল্লেখ আছে, ‘কোনো সহকারী প্রকৌশলী/থানা প্রকৌশলীকে নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্বে) পদে নিয়োগ/বদলির প্রস্তাব স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রেরণ করতে হবে।’ প্রেষণে নিয়োগ/বদলির ক্ষেত্রেও একই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সরকারি এই নির্দেশনা এড়ানোর জন্য প্রধান প্রকৌশলী ‘চলতি দায়িত্ব’ না বলে ‘নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্ব’ কথাটি লিখে অধিকাংশ কর্মকর্তাকে নিজে পদায়ন করেছেন। আর এখানেই তাঁর ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ ও স্বার্থের অভিযোগ উঠেছে।
কিন্তু প্রধান প্রকৌশলীর দাবি, তাঁর এই আদেশে আইনের লঙ্ঘন হয়নি।
জানতে চাইলে সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান বলেন, ‘তাঁকে (প্রধান প্রকৌশলী) পাওয়ার ডেলিগেট (ক্ষমতা প্রদান) করা হয়েছে।’ এই ক্ষমতা কখন কীভাবে দেওয়া হয়েছে বা এর জন্য কি সরকারি বিধি সংশোধন করা হয়েছে—জানতে চাইলে তিনি কিছু বলেননি।
তবে একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, কেবল সমপদধারীকে অতিরিক্ত দায়িত্ব এবং নিম্নপদধারীকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া যায়।
অভিযোগ করায় ক্ষুব্ধ প্রধান প্রকৌশলী: প্রধান প্রকৌশলীর ক্ষমতাবহির্ভূত কর্মকাণ্ড ও অনিয়মের উল্লেখ করে গত বছরের ১৫ জুলাই অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ লোকমান হাকিম ও নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব মনজুর হোসেন বরাবর অভিযোগ করেন। তাতে বলা হয়, ‘অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি/অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বেআইনি, ক্ষমতাবহির্ভূত এবং অন্যায় কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত।’
সূত্র জানায়, এতে প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান ক্ষুব্ধ হয়ে মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা দায়ের করতে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠান।
ছয়বার পদোন্নতিবঞ্চিত: অন্তত ছয়বার পদোন্নতিবঞ্চিত হন প্রকৌশলী সওকত আলী ভূঁঞা। ১৯৯০ সালের জ্যেষ্ঠতা তালিকায় তাঁর ক্রমিক ছিল ৩১। ’৯৫ সালের তালিকায় তিনি ৩৪ এবং ২০০১ সালে ১১৪ নম্বর ক্রমিকে চলে যান। তিনি এর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করে ১৪ নম্বর ক্রমিকে ফিরে আসেন।
গত ১৫ বছরে জ্যেষ্ঠতা ক্রমিকে সওকত আলীর আগে থাকা ১৩ প্রকৌশলীর বেশির ভাগ অবসরে ও কয়েকজন মারা যান। ফলে তিনি জ্যেষ্ঠতা ক্রমিকে দ্বিতীয় স্থানে চলে আসেন। কিন্তু অধিদপ্তর এই ক্রম স্বীকার করে না। তারা প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধ আপিল করেছে।
জানতে চাইলে ওয়াহিদুর রহমান বলেন, ‘সওকত আলীর বিষয়টি অনেক জটিল। ১৫ বছর ধরে মামলা চলছে। মামলা থাকায় তাঁর পদোন্নতি হয়নি। তাঁর জন্য একটি পদ খালি রাখা হয়েছে।’
তবে এলজিইডি সূত্র জানায়, বিচারাধীন মামলা থাকা সত্ত্বেও মাহবুবুর রহমান ও মো. আবদুস শহীদ নামের দুই নির্বাহী প্রকৌশলীকে গত মাসে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
প্রধান প্রকৌশলীর দাবি, ‘মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে সওকত আলীর মামলার পার্থক্য আছে।’
সূত্র জানায়, মাহবুবুর রহমান ও আবদুস শহীদ নামের দুজন নির্বাহী প্রকৌশলী উচ্চ আদালতে তাঁদের চাকরির বৈধতা নিয়ে মামলা করেন। মামলা দুটির এখনো মীমাংসা হয়নি। এরই মধ্যে দুজনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। কিন্তু সওকত আলীকে জ্যেষ্ঠতার মামলায় আপিলের অজুহাত দেখিয়ে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি।
সওকত আলী বলেন, ‘আমার জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের মামলায় ৯৯ জন প্রতিপক্ষ ছিলেন। আদালত আমাকে জ্যেষ্ঠ বলে রায় দেওয়ার পর তাঁরা মেনেও নিয়েছেন। তার পরও মন্ত্রণালয়ের সচিব ও প্রধান প্রকৌশলী আদালতে লিভ টু আপিল করলেন! এঁরা তো আমার প্রতিপক্ষ না। তবু তাঁরা কেন এটা করলেন, সেটাই প্রশ্ন।’
সচিব আবু আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় মানতে আমরা বাধ্য নই। আপিল বিভাগ রায় দিলে তখন দেখব।’ মাহবুবুর রহমানের পদোন্নতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওই মামলায় কী ছিল, তা না পড়ে কিছু বলতে পারব না।’
সূত্র জানায়, সওকত আলীর মামলায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন। এই অজুহাতে সওকত আলীকে বাদ দিয়ে ১৩ জন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও তিনজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
সওকত আলী বলছেন, আদালতের লিখিত আদেশ না পাওয়ায় জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিকারও চাইতে পারছেন না তিনি।
দ্বিমুখী নীতি: জ্যেষ্ঠতা রক্ষা ও চাকরি নিয়মিত করার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় ও এলজিইডির বিরুদ্ধে দ্বিমুখী নীতি গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি ১৩২ জন সহকারী প্রকৌশলীর চাকরি নিয়মিত করা হয়। প্রধান প্রকৌশলীর উদ্যোগে সুপ্রিম কোর্টের আপিল প্রত্যাহার করে সমঝোতার মাধ্যমে চাকরি নিয়মিত করে মন্ত্রণালয়। একই ধরনের মামলা করে ৮৭০ জন উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও অধিদপ্তরের তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণীর ৭৮৩ জন কর্মচারী উচ্চ আদালত থেকে রায় পান। কিন্তু তাঁদের চাকরি নিয়মিত না করে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে এলজিইডি।
আবু আলম মো. শহিদ খান সহকারী প্রকৌশলীদের বিষয়ে সমঝোতার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে সহকারী প্রকৌশলীদের কনসিডার (ছাড় দেওয়া) করা হয়েছে। সবাইকে করতে গেলে তদবির, দুর্নীতিসহ নানা রকম কথা হয়।’
একটি সূত্র জানায়, উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের আপিল মামলাটি সমঝোতার মাধ্যমে প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া চলছে। এর জন্য জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা ‘খরচা’ নেওয়া হচ্ছে।
অবশ্য সচিব দাবি করেন, ‘এ কাজে এখানে (স্থানীয় সরকার বিভাগে) দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে টেলিফোনে গত তিন মাসে বহুবার চেষ্টা করা হয়। একাধিকবার মোবাইলে সংক্ষিপ্ত বার্তায় (এসএমএস) পরিচয় জানিয়েও কথা বলতে চাওয়া হয়। তিনি সাড়া দেননি। ফলে এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
No comments