রাজনৈতিক আলোচনা- পতিত স্বৈরাচারের আস্ফালন ও আওয়ামী লীগের নীরবতা by সোহরাব হাসান

৯৯০ সালে গণ-আন্দোলন তথা গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এরশাদ নামের যে স্বৈরশাসক ও অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর পতন ঘটেছিল, ইদানীং সেই ব্যক্তি নিজেকে অপাপবিদ্ধ যিশু বলে প্রমাণ করতে চাইছেন। তবে দেশের মানুষ এতটা নির্বোধ নন যে তাঁর কথায় বিভ্রান্ত হবেন। ১৯৯০ সাল থেকে প্রতিবছর ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার পতন দিবস পালন করে আসছে রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু স্বৈরাচারীরা তা মানেন না। তাঁরা এটিকে পালন করেন গণতন্ত্র রক্ষা দিবস হিসেবে।
গণতন্ত্র রক্ষা দিবস পালন না করে এরশাদের উচিত গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করা। সেটিই তাঁর জন্য মানানসই। কেননা তিনি গণতন্ত্র রক্ষায় কোনো ভূমিকা রাখেননি, গণতন্ত্র হত্যায় ভূমিকা রেখেছেন।
তথাকথিত গণতন্ত্র রক্ষা দিবসে সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদ দেশবাসীর কাছে দুটি নতুন বয়ান নিয়ে এসেছেন। ক্ষমতায় থাকতে তাঁর বয়ান শুনতে শুনতে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। তিনি স্বপ্ন দেখে প্রতি শুক্রবার মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে যেতেন। জনসভা ডেকে পুত্রসন্তান লাভের ঘোষণা দিতেন। রাজনীতিতে তিনি ভালো খেলুড়ে ছিলেন। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপিকে এবং বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগকে খেলাতেন। এভাবে সাড়ে আট বছর পার করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। তাঁর কীর্তির ফিরিস্তি দিতে গেলে কয়েক খণ্ড মহাভারত লেখা যাবে। বিদিশাসহ লিখেছেনও কেউ কেউ।
আমরা সে বিষয়ে যাব না। শুধু ৬ ডিসেম্বরে তাঁর দেওয়া বক্তব্য সম্পর্কে দেশের বিবেকবান ও গণতন্ত্রমনা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। যে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ এরশাদের জীবন রক্ষা করেছেন, এবার তিনিই তাঁকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। তাঁর বিচার চেয়েছেন। বলেছেন, তাঁকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বঞ্চিত করেছেন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন। ডাহা মিথ্যা কথা।
সেই গণ-অভ্যুত্থানের যাঁরা সহযাত্রী, যাঁরা প্রত্যক্ষদর্শী, তাঁরা জানেন, বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ সেদিন জনরোষ থেকে এরশাদকে রক্ষা করেছিলেন। সে সময় হাজার ছাত্র-তরুণ ও সাধারণ মানুষ তাঁর বিচারের দাবিতে সেনানিবাস ঘেরাও করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। অনেকে বিমানবন্দরে গিয়ে জমায়েত হয়েছিলেন, যাতে এরশাদ দেশ থেকে পালাতে না পারেন। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন সাব-জেলে তাঁকে বন্দী না রাখলে বিক্ষুব্ধ মানুষ তাঁকে সেনানিবাস থেকে বের করে এনে প্রকাশ্য বিচার করতেন।
যে লোকটি আমাদের রাজনীতিকে কলুষিত করেছেন,রাজনীতিকদের দুর্নীতিগ্রস্ত করেছেন, দুর্নীতির অভিযোগে জেলে ঢুকিয়েছেন, আবার জেল থেকে বের করে মন্ত্রী করেছেন, একটার পর একটা পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছেন, বাঙালি সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে চেয়েছেন (লক্ষ করুন, ১৯৮৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি বলেছিলেন, শহীদ মিনারে আল্পনা আঁকা ও ফুল দেওয়ার মতো বেদাতি কাজ করা যাবে না), সেই লোক কিনা এখন গণতন্ত্রের সবক দেন।
অনেক কারণে এরশাদের বিচার হওয়া উচিত। নব্বইয়ের অক্টোবরে তিনি নিজের গদি রক্ষার জন্য সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়েছিলেন, নভেম্বরে জরুরি অবস্থা জারি করে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধ করেছিলেন, নেতা-নেত্রীদের কারাগারে নিক্ষেপ করেছিলেন অথবা অন্তরীণ রেখেছিলেন। ২৭ নভেম্বর টিএসসির সামনে ডা. শামসুজ্জামান মিলনকে হত্যা করেছিল তাঁরই লেলিয়ে দেওয়া বাহিনী। গণ-আন্দোলন দ্রুত অগ্নস্ফুিলিঙ্গে রূপ নেয়, সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আত্মরক্ষার সব অপকৌশলই পরাস্ত হয়েছিল জনতার ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের কাছে।
এরশাদ আজ তাঁকে কারাগারে নিক্ষেপের জন্য বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে অভিযুক্ত করেছেন। কিন্তু বিচারপতি সাহাবুদ্দীন দায়িত্ব নেওয়ার আগে কেন তিনি ৫ ডিসেম্বর রাতে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন, সে কথা বলেন না। সেদিন পদত্যাগের ঘোষণা না দিলে জনতা তাঁর চামড়া তুলে নিত। এই মানুষটির প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। তাঁর সঙ্গে সেদিন কেউ ছিল না—না পুলিশ, না সেনাবাহিনী।
বিচারপতি সাহাবুদ্দীন এরশাদের মতো ক্ষমতালিপ্সু নন। আন্দোলনরত তিন জোট যখন তাঁকে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল, তখন তিনি একটি শর্ত দিয়ে বলেছিলেন, তাঁকে ফের স্বপদে ফিরে আসার সুযোগ দিতে হবে। এ জন্য ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদে আইনও পাস করতে হয়েছিল, যা একাদশ সংশোধনী নামে পরিচিত। সাত্তার বা আহসানউদ্দিন নন বলেই বিচারপতি সাহাবুদ্দীন সামরিক শাসকদের হুকুমবরদার হিসেবে কাজ করেননি। নিজের বিচারবুদ্ধি ও বিবেক অনুযায়ী যা সত্য মনে করেছেন, সেভাবেই কাজ করেছেন।
অবৈধ ক্ষমতা দখলসহ হাজারো অপকর্মের দায়ে যাঁর বিচার হওয়া উচিত, সেই লোকটিই কিনা আজ বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের বিচার দাবি করছেন! এটি দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। অথচ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দেলনের সিপাহসালারেরা আজ নিশ্চুপ। তাদের মুখে কোনো কথা নেই। এরশাদ বিচারপতির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছেন, তা প্রমাণ করতে পারবেন না। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এসেছে, তা প্রমাণিত ও আদালত দ্বারা স্বীকৃত। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তিনি একটি নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে বন্দুকের জোরে ক্ষমতা দখল করেছেন। সংসদ ভেঙে দিয়েছেন, সংবিধান স্থগিত করেছেন। এসব কর্মকাণ্ড কেবল বেআইনি নয়, রাষ্ট্রদ্রোহও। সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে তাঁর দায়িত্ব ছিল সংবিধান সমুন্নত রাখা, শপথ ভেঙে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করা নয়।
২০১০ সালের ২৫ আগস্ট হাইকোর্টে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও বিচারপতি শেখ মোহাম্মদ জাফর হোসেনের বেঞ্চ এরশাদের ক্ষমতা দখল ও সপ্তম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। অর্থাৎ তিনি ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ৯ নভেম্বর পর্যন্ত যা যা করেছেন, সবই অবৈধ ও বেআইনি। এই সময়ে তাঁর গঠিত জাতীয় পার্টিও বেআইনি। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি, ১৯৮৬ সালের ৭ মের নির্বাচনী ফল কীভাবে এই স্বৈরশাসক মিডিয়া ক্যুর মাধ্যমে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। নির্বাচনে এরশাদ বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করেছিলেন। আবার আওয়ামী লীগের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে তাঁর বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর খুনি চক্রকে দাঁড় করাতেও দ্বিধা করেননি। ১৯৮৬ সালের অক্টোবরে ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে এরশাদ নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। সেই নির্বাচন সম্পর্কে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, কোথাও কোথাও তিন শতাংশ ভোট পড়েছে। জবাবে এরশাদ বলেছিলেন, ‘তিন শতাংশ ভোট পড়লেও তো তাঁরা তাঁকে নির্বাচিত করেছেন।’ এ কথা মেনে নিলে তিন শতাংশের নির্বাচিত এবং ৯৭ শতাংশের প্রত্যাখ্যাত রাষ্ট্রপতি ছিলেন এরশাদ।
কেবল তা-ই নয়, বঙ্গবন্ধুর খুনি রশীদ-ফারুক চক্রের ফ্রিডম পার্টি গঠনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা জুগিয়েছিলেন এরশাদ। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এরশাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কে? বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুকুর রহমান। সেই নির্বাচনে কর্নেল ফারুক ‘শেখ মুজিবুর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি’ করেছিলেন। রাষ্ট্রীয় বেতার-টিভিতে সেই দাবি প্রচারের সুযোগও করে দিয়েছিলেন এরশাদ। এই হলো আজকের মহাজোটের শরিক এরশাদের চরিত্র, ফুলের মতো পবিত্র।
মনে আছে, গত আওয়ামী লীগ আমলে (১৯৯৬-২০০১) বিএনপি এরশাদকে নিয়ে জোট করলে শেখ হাসিনা প্রকাশ্য জনসভায় বলেছিলেন, ‘সব চোর এক হয়েছে।’ এখন শেখ হাসিনার ভাষায় সেই সব চোরের একজন চোর তাঁরও জোটভুক্ত হয়েছে।
আমরা নিজামউদ্দিন আউলিয়ার গল্প জানি। ডাকাত-সর্দার আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে বুজুর্গ হয়ে গিয়েছিলেন। এরশাদের চরিত্র এমন যে তা সংশোধনেরও অযোগ্য। বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের নেতাদের রাগ থাকতে পারে, তাই বলে পতিত ও অবৈধ স্বৈরশাসকের এই আস্ফাালন সহ্য করবেন তাঁরা? এরশাদের কথা মেনে নিলে নয় বছরের গণ-আন্দোলন মিথ্যা হয়ে যায়। ময়েজউদ্দিন, নূর হোসেন, তাজুল, বসুনিয়া, সেলিম, দেলোয়ার, মিলনদের আত্মত্যাগের কোনো মূল্য থাকে না।
শেখ হাসিনার নিশ্চয়ই মনে আছে, কীভাবে তিনি বিচারপতি সাহাবুদ্দীনকে রাষ্ট্রপতি হতে রাজি করিয়েছিলেন। বলেছিলেন, রাজি না হলে তাঁর বাড়ির সামনে গিয়ে অনশন করবেন। শেখ হাসিনাকে অনশন করতে হয়নি। এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের এটাও নিশ্চয়ই জানা আছে, বর্তমান ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি কোনো নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারেন না। প্রধান উপদেষ্টা পারেন। রাষ্ট্রপতিই যদি নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারতেন, তাহলে বিএনপি মনোনীত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমদ আওয়ামী লীগের ক্ষমতারোহণ ঠেকাতেন। নিজের ব্যর্থতা ও দুর্বলতার দায় অন্যের ঘাড়ে চাপানো বা দোষারোপ করার মধ্যে কৃতিত্ব নেই।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অপর অভিযোগটি আরও ভয়ংকর। তিনি ’৮৭-এর গণ-আন্দোলনের নায়ক শহীদ নূর হোসেনের আত্মত্যাগ নিয়ে প্রশ্ন করছেন। বলতে চাইছেন, নূর হোসেন তাঁর পুলিশের গুলিতে নিহত হননি। নিহত হয়েছেন অন্য কারও হাতে। এ কথার মাধ্যমে কি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগকে অপমান করেননি তিনি? অপমান করেননি সেই দলের নেত্রী শেখ হাসিনাকে? নূর হোসেন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন যুবলীগের কর্মী। তাঁর বাবা ছিলেন একজন গরিব বেবিট্যাক্সির চালক। যে নূর হোসেন সংসারের কথা না ভেবে গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিলেন, সেই নূর হোসেনকে নিয়ে এখন স্বৈরশাসক মশকরা করছেন। এটি কীভাবে সয্য করা যায়?
এরশাদ তো কোনো দিন আন্দোলন করেননি, মিছিলে যাননি। বরং মিছিলকারীদের গুলি করতে অভ্যস্ত ছিলেন, মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে ছাত্রদের ওপর ট্রাক উঠিয়ে দিতেও কসুর করেননি এই পতিত শাসক। সেদিন নূর হোসেন বুকে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’ এবং পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ স্লোগান লিখে রাস্তায় নেমে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে সঙ্গিনধারী পুলিশের সঙ্গে সম্মুখসমরে লিপ্ত হয়েছিলেন। আন্দোলনকারী মানুষ দেখেছে, জিরো পয়েন্টের কাছে পুলিশ চারদিক দিয়ে মিছিলকারীদের ঘিরে ফেলেছিল এবং এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়েছিল। যে গুলিতে আরেক সহযোগীসহ নূর হোসেন নিহত হয়েছিলেন। এরশাদের পুলিশ সেই সহযোগীর লাশ গুম করলেও নূর হোসেনের লাশ গুম করতে পারেনি। যে নূর হোসেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বুকের রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়েছেন, সেই নূর হোসেনের আত্মত্যাগ নিয়ে সাবেক স্বৈরাচারী অপমানজনক কথা বলছেন। এই ঔদ্ধত্য কোথায় পেলেন তিনি? নূর হোসেনের আত্মাহুতির পরও এরশাদ দুই বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তখন কিন্তু এ ধরনের বেয়াদবি করার সাহস পাননি। গণতান্ত্রিক সরকারের শরিক হওয়ার জোরে তিনি যা খুশি করবেন আর যা খুশি বলে বেড়াবেন, তা হতে পারে না। এ দেশের মানুষ তা হতে দেবে না। আওয়ামী লীগ বা ১৪ দলের নেতারা তাঁর মিত্র হতে পারেন, ১৬ কোটি মানুষ তাঁকে বরাবর গণতন্ত্রের শত্রু হিসেবেই জানবে।
১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি কী ঘটেছিল, তাও নিশ্চয়ই শেখ হাসিনা ভুলে যাননি। সেদিন চট্টগ্রামে তাঁর জনসভাস্থলে ২৪ জন নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছিল এরশাদের পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন রকিবুল হুদা। সেই রকিবুল হুদা অবসরে গেলেও তাঁর হুকুমদাতা অবসরে যাননি। তিনি এখন মহাজোটেরই শরিক। যে স্বৈরাচারী এরশাদ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বহু নেতা-কর্মীকে খুন করেছেন, যে স্বৈরাচারী এরশাদ শহীদ ময়েজউদ্দিনের খুনিকে পুত্র বলে আলিঙ্গন করেছেন, যেই স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে একাধিকবার গৃহবন্দী করে রেখেছেন, মহাজোটের শরিক হওয়ার কারণে এখন তার সব পাপ মাফ হয়ে যাবে?
উচ্চ আদালতের রায়ে জিয়া প্রবর্তিত পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হলে আওয়ামী লীগের নেতারা উল্লসিত হন, জিয়াউর রহমানের নিন্দায় মুখে ফেনা তোলেন, কিন্তু তাঁরা সপ্তম সংশোধনী বাতিলের পর একটা কথাও বলেন না। জিয়াউর রহমানের আমলে সামরিক আইনের বিচার যদি অবৈধ হয়, এরশাদের আমলের বিচারও বৈধ হতে পারে না। এক দেশে দুই আইন চলতে পারে না।
গণতন্ত্রের সাচ্চা সিপাহসালার আওয়ামী লীগের সঙ্গে পতিত স্বৈরাচারের সখ্য আমাদের শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন করে। পৃথিবীতে কোনো স্বৈরাচারই শেষ বিচারে গণতন্ত্রী হতে পারে না। তার প্রমাণ পাকিস্তানে আইয়ুব খান থেকে পারভেজ মোশাররফ। বাংলাদেশে জিয়াউর রহমান থেকে এরশাদ। এরশাদের সঙ্গে ভোট ভাগাভাগির ঐক্য করে আওয়ামী লীগ যে দেশ ও গণতন্ত্রের সর্বনাশ করছে, তাতে সন্দেহ নেই। ক্ষমতার জন্য পতিত স্বৈরাচারের সব আস্ফাালন ও অন্যায় আবদার মুখ বুজে মেনে নিলে শহীদ ময়েজউদ্দিন, নূর হোসেনদের আত্মা আপনাদের ক্ষমা করবে না।
=========================
৪০ বছর পড়ে থাকা লাশটার সৎকার করতে চাই  এই কি আমাদের মানবাধিকার?  ঐতিহ্যের মধ্যে সমকাল  কেমন দেখতে চাইঃ ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলা  দ্রীপ প্রতিভার দ্যুতিময় স্মারক  গল্প- বৃষ্টি  শহীদুল্লা কায়সারঃ রাজনৈতিক সৃষ্টিশীলতা  আনোয়ার পাশাঃ জাতিরাষ্ট্রের অংশ ও প্রেরণা  মুনীর চৌধুরীঃ তাঁর নাটক  জেগে ওঠার গল্প  এখন শুনবেন বিশ্ব-সংবাদ  বাঘ  বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০১০  তাঁরা সমালোচিত, আমরা বিব্রত  মুজিবকে নিয়ে সিরাজের একমাত্র লেখা  ঢাকা সিটি করপোরেশন বিভক্তির উদ্যোগ  মহাস্থানগড়ের ধ্বংস-পরিস্থিতিঃ পর্যবেক্ষণ  ওয়ান-ইলেভেনের চেয়ে ভয়াবহ দুর্যোগ আসছে!  ডিসেম্বরঃ গৌরব ও গর্বের মাস  উইকিলিকস বনাম যুক্তরাষ্ট্র  দুর্নীতি বেড়েছে দুনিয়াজুড়ে  উইকিলিকসঃ বাঘের ঘরে ঘোগ  আইন অপূর্ণাঙ্গঃ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার কঠিন  ১০০ কোটি ডলারে ঋণঃ ভারতের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত  ট্রেন দুর্ঘটনাঃ চালকের ভুল নাশকতারও গন্ধ!  ‘যুদ্ধ’ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা উইকিলিকস সমর্থকদের  কানকুনঃ মুমূর্ষু পৃথিবীর নিষ্ঠুর মানুষ  নারীর হার-নারীর জিত, বেগম রোকেয়া প্রাসঙ্গিক  সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে দুর্নীতির বীজ লুক্কায়িত  বরুণ রায়—কিংবদন্তিতুল্য এক ব্যক্তিত্ব  মুক্তির গান  এক-এগারোর জুজুটাকে হিমাগারে পাঠান  জব্দকৃত অর্থ ফিরিয়ে দিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে জাগরণ সৃষ্টি করুন  সংসদীয় গণতন্ত্রের গল্পসল্প  রাষ্ট্রীয় সমাজে চিন্তা করার স্বাধীনতার প্রয়োজন


দৈনিক প্রথম আলো এর সৌজন্যে
লেখকঃ সোহরাব হাসান
কবি, সাংবাদিক।


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.