সবার জন্য উন্মুক্ত এক পদ
নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান আরামবাগ ক্লাবের সভাপতি। ওই ক্লাবের সহসভাপতি তাবিউর রহমান (পালোয়ান) কুস্তি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক। তাবিউরের খুব পছন্দ শাজাহান খানকে। তিনিই নৌপরিবহনমন্ত্রীকে কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি করতে সুপারিশ রাখেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর কাছে। সুপারিশে ফল এসেছে, শাজাহান খান কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি হয়েছেন।
তাবিউর বলছিলেন, ‘মাননীয় শাজাহান খানকে একদিন অনুরোধ করলাম কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি হওয়ার জন্য। বললেন, আমি ব্যস্ত থাকি। আমাকে কেন? কিন্তু তাঁকে রাজি করালাম। মাননীয় ক্রীড়ামন্ত্রীকে অনুরোধ করলে তিনি শাজাহান খানকে সভাপতি করে দিলেন। শাজাহান খান যেদিন মন্ত্রী হলেন, সেদিনই কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি করা হয়েছে ওনাকে।’
এভাবে কেউ অনুরোধে ফেডারেশনের সভাপতি হচ্ছেন, কেউ নিজের আগ্রহে। বড় ফেডারেশনের সভাপতি পদ পেতে তদবিরও হয়। সেটা যে কেউ করতে পারেন। সভাপতি নিয়োগে সরকারের কোনো নীতিমালা না থাকায় পদটা সবার জন্যই উন্মুক্ত। এর ফলে মন্ত্রী, সাংসদ, সচিব, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ব্যাংকার, প্রকৌশলী, অভিনেতা এমনকি কণ্ঠশিল্পী পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছেন ক্রীড়া ফেডারেশন সভাপতি।
সাবেক সচিব ও ক্রীড়ালেখক আখতার হোসেন খান বলছেন, ‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বিচার করলে সরকার কর্তৃক এভাবে সভাপতি নিয়োগ সমর্থনযোগ্য নয়। নির্বাচন হলেও অবশ্য সমস্যা আছে। তখন অনেক সংগঠনের মতো এখানেও বিভাজন হতে পারে। তবে সরকার সভাপতি নিয়োগ দিলেও একটা নীতিমালা থাকা উচিত। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ক্রীড়া-সম্পৃক্ততা আছে কি না দেখতে হবে। সাবেক খেলোয়াড় বা সংগঠক হলে ভালো। আর সভাপতিকে অন্তত দুটি মেয়াদে রাখা উচিত।’
ক্রীড়াঙ্গনে প্রচারণা আছে—যখন যে সরকার আসে, তারা দলীয় সাংসদকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দিতে না পেরে কোনো একটা ফেডারেশনের সভাপতি বানিয়ে সান্ত্বনা দেয়। অনেকের কাছে ফেডারেশনের সভাপতি পদটা পুরস্কারও বটে। যদিও এটি স্বেচ্ছাশ্রম, কোনো সম্মানী নেই।
সভাপতি নিয়োগের ব্যাপারটা মূলত ক্রীড়া মন্ত্রণালয় দেখে। ফেডারেশনগুলোর তত্ত্বাবধায়ক কমিটি গঠন করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি), কিন্তু রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে ক্রীড়া ফেডারেশনের সভাপতি পদে নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব স্বাক্ষরিত নিয়োগপত্রে বলা হয়, ‘১৯৭৪ সালের জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন ও ’৭৬ সালের সংশোধিত আইনের ২০ ধারা অনুযায়ী আপনাকে...ফেডারেশনের সভাপতি পদে নিয়োগ দেওয়া হলো।’ ক্রীড়াসচিব মাহবুব আহমেদ জানাচ্ছেন, ‘এনএসসির ১৯৭৪ সালের অ্যাক্ট অনুযায়ী ফেডারেশনগুলোর সভাপতি নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা সরকারের। কাজেই এটা আইন অনুযায়ী হচ্ছে।’
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লিগ সরকারের সময় ক্রীড়াঙ্গনে নির্বাচন চালু হয়েছিল। তখন সভাপতি পদে নির্বাচনের বিধান রাখা হয়নি। ২০০৩ সালে আইনের সংশোধনীতে ফেডারেশনগুলো চাইলে তাদের নিজস্ব গঠনতন্ত্রে সভাপতি পদে নির্বাচনের বিধান রাখতে পারে বলা হয়েছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট ফেডারেশনকে সাধারণ সভার অনুমোদন নিতে হবে। তা করেছে শুধু দু-তিনটি ফেডারেশন। অনেকেই অবশ্য জানে না, এমন এটা ব্যাপার আছে। ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির মতো সভাপতি পদে নির্বাচনও পরিচালনা করে এনএসসি। তবে ফুটবল ফেডারেশন বাদ দিলে হাতেগোনা বাকি যে কয়েকটি ফেডারেশনে সভাপতি পদে নির্বাচন হয়েছে, আশ্চর্যজনকভাবে সব ক্ষেত্রেই ঘটনা ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত’।
এক ফুটবলেই সভাপতি পদে জমজমাট নির্বাচন হয়েছে। এই নির্বাচন অবশ্য ফিফার চাপে। নিজস্ব গঠনতন্ত্র সংশোধন করায় ভলিবলে এখন নির্বাচিত সভাপতি। ভারোত্তোলনের সভাপতি পদে ২০০৮ সালে নির্বাচন হয়েছিল। তাতে বিডিআরের প্রয়াত মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ নির্বাচিত হন। কিন্তু মেজর জেনারেল শাকিল বিডিআর বিদ্রোহে নিহত হওয়ার পর ফেডারেশন ফিরে যায় সরকার মনোনীত সভাপতির ধারায়।
দাবা ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সুজাউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, ‘ফেডারেশনগুলো সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতাশালী ব্যক্তিকে সভাপতি হিসেবে চায়, যিনি টাকা আনতে পারবেন। এ জন্য তারা নির্বাচনে যাওয়ার চিন্তা করে না।’
সাবেক এই ক্রীড়াসচিব বলছেন, ‘সভাপতি নিয়োগে মানদণ্ড কখনোই ছিল না। যোগ্যতা না থাকলেও ফেডারেশন সভাপতি করা হচ্ছে অনেককে। এনএসসি অ্যাক্ট সংশোধন করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলাম, কিন্তু সেটা কার্যকর হয়নি। সভাপতি মনোনয়নে একটা মানদণ্ড অবশ্যই ঠিক করা দরকার।’
সাইক্লিং ফেডারেশনের সভাপতি মিজানুর রহমান (মানু) সরকারের সভাপতি নিয়োগের উদ্দেশ্যটা ব্যাখ্যা করলেন এভাবে, ‘নির্বাচিত কমিটিতে সভাপতি পদটাই শুধু সরকারের। সভাপতির মাধ্যমে সরকার তার ক্রীড়ানীতি বাস্তবায়নের চেষ্টা করে। সরকার মনে করে, ফেডারেশনে নিজেদের একজন লোক থাকা দরকার। তাই সভাপতি নিয়োগ দেয় সরকার।’
কিন্তু কিসের ভিত্তিতে সেই নিয়োগ, এটির কোনো মানদণ্ড না থাকায় সংশ্লিষ্ট খেলার সঙ্গে সম্পর্কহীন অনেকেও বসে পড়ছেন একটি জাতীয় ফেডারেশনের সর্বোচ্চ চেয়ারটিতে।
তাবিউর বলছিলেন, ‘মাননীয় শাজাহান খানকে একদিন অনুরোধ করলাম কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি হওয়ার জন্য। বললেন, আমি ব্যস্ত থাকি। আমাকে কেন? কিন্তু তাঁকে রাজি করালাম। মাননীয় ক্রীড়ামন্ত্রীকে অনুরোধ করলে তিনি শাজাহান খানকে সভাপতি করে দিলেন। শাজাহান খান যেদিন মন্ত্রী হলেন, সেদিনই কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি করা হয়েছে ওনাকে।’
এভাবে কেউ অনুরোধে ফেডারেশনের সভাপতি হচ্ছেন, কেউ নিজের আগ্রহে। বড় ফেডারেশনের সভাপতি পদ পেতে তদবিরও হয়। সেটা যে কেউ করতে পারেন। সভাপতি নিয়োগে সরকারের কোনো নীতিমালা না থাকায় পদটা সবার জন্যই উন্মুক্ত। এর ফলে মন্ত্রী, সাংসদ, সচিব, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ব্যাংকার, প্রকৌশলী, অভিনেতা এমনকি কণ্ঠশিল্পী পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছেন ক্রীড়া ফেডারেশন সভাপতি।
সাবেক সচিব ও ক্রীড়ালেখক আখতার হোসেন খান বলছেন, ‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বিচার করলে সরকার কর্তৃক এভাবে সভাপতি নিয়োগ সমর্থনযোগ্য নয়। নির্বাচন হলেও অবশ্য সমস্যা আছে। তখন অনেক সংগঠনের মতো এখানেও বিভাজন হতে পারে। তবে সরকার সভাপতি নিয়োগ দিলেও একটা নীতিমালা থাকা উচিত। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ক্রীড়া-সম্পৃক্ততা আছে কি না দেখতে হবে। সাবেক খেলোয়াড় বা সংগঠক হলে ভালো। আর সভাপতিকে অন্তত দুটি মেয়াদে রাখা উচিত।’
ক্রীড়াঙ্গনে প্রচারণা আছে—যখন যে সরকার আসে, তারা দলীয় সাংসদকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দিতে না পেরে কোনো একটা ফেডারেশনের সভাপতি বানিয়ে সান্ত্বনা দেয়। অনেকের কাছে ফেডারেশনের সভাপতি পদটা পুরস্কারও বটে। যদিও এটি স্বেচ্ছাশ্রম, কোনো সম্মানী নেই।
সভাপতি নিয়োগের ব্যাপারটা মূলত ক্রীড়া মন্ত্রণালয় দেখে। ফেডারেশনগুলোর তত্ত্বাবধায়ক কমিটি গঠন করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি), কিন্তু রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে ক্রীড়া ফেডারেশনের সভাপতি পদে নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব স্বাক্ষরিত নিয়োগপত্রে বলা হয়, ‘১৯৭৪ সালের জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন ও ’৭৬ সালের সংশোধিত আইনের ২০ ধারা অনুযায়ী আপনাকে...ফেডারেশনের সভাপতি পদে নিয়োগ দেওয়া হলো।’ ক্রীড়াসচিব মাহবুব আহমেদ জানাচ্ছেন, ‘এনএসসির ১৯৭৪ সালের অ্যাক্ট অনুযায়ী ফেডারেশনগুলোর সভাপতি নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা সরকারের। কাজেই এটা আইন অনুযায়ী হচ্ছে।’
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লিগ সরকারের সময় ক্রীড়াঙ্গনে নির্বাচন চালু হয়েছিল। তখন সভাপতি পদে নির্বাচনের বিধান রাখা হয়নি। ২০০৩ সালে আইনের সংশোধনীতে ফেডারেশনগুলো চাইলে তাদের নিজস্ব গঠনতন্ত্রে সভাপতি পদে নির্বাচনের বিধান রাখতে পারে বলা হয়েছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট ফেডারেশনকে সাধারণ সভার অনুমোদন নিতে হবে। তা করেছে শুধু দু-তিনটি ফেডারেশন। অনেকেই অবশ্য জানে না, এমন এটা ব্যাপার আছে। ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির মতো সভাপতি পদে নির্বাচনও পরিচালনা করে এনএসসি। তবে ফুটবল ফেডারেশন বাদ দিলে হাতেগোনা বাকি যে কয়েকটি ফেডারেশনে সভাপতি পদে নির্বাচন হয়েছে, আশ্চর্যজনকভাবে সব ক্ষেত্রেই ঘটনা ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত’।
এক ফুটবলেই সভাপতি পদে জমজমাট নির্বাচন হয়েছে। এই নির্বাচন অবশ্য ফিফার চাপে। নিজস্ব গঠনতন্ত্র সংশোধন করায় ভলিবলে এখন নির্বাচিত সভাপতি। ভারোত্তোলনের সভাপতি পদে ২০০৮ সালে নির্বাচন হয়েছিল। তাতে বিডিআরের প্রয়াত মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ নির্বাচিত হন। কিন্তু মেজর জেনারেল শাকিল বিডিআর বিদ্রোহে নিহত হওয়ার পর ফেডারেশন ফিরে যায় সরকার মনোনীত সভাপতির ধারায়।
দাবা ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সুজাউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, ‘ফেডারেশনগুলো সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতাশালী ব্যক্তিকে সভাপতি হিসেবে চায়, যিনি টাকা আনতে পারবেন। এ জন্য তারা নির্বাচনে যাওয়ার চিন্তা করে না।’
সাবেক এই ক্রীড়াসচিব বলছেন, ‘সভাপতি নিয়োগে মানদণ্ড কখনোই ছিল না। যোগ্যতা না থাকলেও ফেডারেশন সভাপতি করা হচ্ছে অনেককে। এনএসসি অ্যাক্ট সংশোধন করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলাম, কিন্তু সেটা কার্যকর হয়নি। সভাপতি মনোনয়নে একটা মানদণ্ড অবশ্যই ঠিক করা দরকার।’
সাইক্লিং ফেডারেশনের সভাপতি মিজানুর রহমান (মানু) সরকারের সভাপতি নিয়োগের উদ্দেশ্যটা ব্যাখ্যা করলেন এভাবে, ‘নির্বাচিত কমিটিতে সভাপতি পদটাই শুধু সরকারের। সভাপতির মাধ্যমে সরকার তার ক্রীড়ানীতি বাস্তবায়নের চেষ্টা করে। সরকার মনে করে, ফেডারেশনে নিজেদের একজন লোক থাকা দরকার। তাই সভাপতি নিয়োগ দেয় সরকার।’
কিন্তু কিসের ভিত্তিতে সেই নিয়োগ, এটির কোনো মানদণ্ড না থাকায় সংশ্লিষ্ট খেলার সঙ্গে সম্পর্কহীন অনেকেও বসে পড়ছেন একটি জাতীয় ফেডারেশনের সর্বোচ্চ চেয়ারটিতে।
No comments