শ্রমিক নারীদের সংগ্রামই তুলে ধরতে হবে -আন্তর্জাতিক নারী দিবস by ফরিদা আখতার
আমরা অনেক নারী সংগঠন যখন আন্তর্জাতিক নারী দিবস ঘোষণার শত বছর পূর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তখন একটি কথা বারবার আসছিল। সে কথাটি হচ্ছে, আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শত বছর পালন করতে গিয়ে কি আমরা অনেক কিছু অর্জিত হয়েছে বলে ‘উদ্যাপন’ করব, নাকি এখনো আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিক ও শ্রমজীবী যে নারীরা আছেন, তাঁদের প্রতিদিনের সংগ্রামের কথাটি আর একবার মনে করিয়ে দেব? ডিসেম্বর মাস থেকে এমন একটি নীরব বিতর্ক চলছিল। কিন্তু ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার কাছে গাজীপুরে সোয়েটার কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে যে মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গেল, তাতে বিতর্কের আর কোনো অবকাশ নেই। ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ শিকাগো শহরে পোশাক কারখানার নারীশ্রমিকেরা তাঁদের অধিকার আদায়ে রাজপথে নেমে এসেছিলেন। এই আন্দোলনকে বিবেচনায় নিয়ে শ্রমিক নারীদের সংগ্রাম ও আন্দোলনের প্রয়োজনে সে দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ঘোষণা করার জন্য নারীনেত্রী ক্লারা জেিকন যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, ১৯১০ সালে তা কার্যকর হয়েছে ঠিকই কিন্তু আজ ১০০ বছর পর আমরা যেন সেই তিমিরেই রয়ে গেছি। অর্জন দূরে থাকুক, এ শ্রমিকেরা এখন প্রতিদিন কারখানায় যায় সুস্থ অবস্থায়, ফিরবে কীভাবে তা তারা জানে না। লাশ হওয়ার আশঙ্কা সবার ক্ষেত্রেই রয়ে গেছে। এখন ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে গিয়ে শুধু মজুরির বৈষম্য, কাজের ঘণ্টা ও কাজের সুস্থ পরিবেশ নিয়ে কথা বলা মনে হয় অনেক সহজ বিষয়। প্রাণে বাঁচার নিশ্চয়তা এ শ্রমিকদের যেখানে নেই, সেখানে মজুরি তো খুব বড় কথা নয়।
আমরা এ ঘটনাগুলোকে হত্যাকাণ্ডই বলি, কারণ কারখানার কাঠামোর মধ্যেই আছে মৃত্যুর ফাঁদ। আগুন লাগতেই পারে, কিন্তু প্রাণ বাঁচানোর জন্য বের হতে পারবে না, কারণ গেট বন্ধ থাকে। তালা লাগানো থাকে। গেট কেন বন্ধ থাকে? মনে করা হয়, শ্রমিকেরা এ ধরনের দুর্ঘটনার সময়ও বের হতে গিয়ে কাপড় চুরি করে নিয়ে যেতে পারে। গরিব শ্রমিকেরা জীবিকার জন্য কাজ করতে আসে, তারা চায়, করখানা টিকে থাকুক। দু-একটি কাপড় নিয়ে তাদের পেট তো ভরবে না। তাহলে কেন এমন মনে করা হয়? গরিব বলেই কি? তাহলে এ আচরণ কি বৈষম্যমূলক নয়? শুধু তাই নয়, দুর্ঘটনা ঘটে গেলে তড়িঘড়ি করে আত্মীয়দের কাছে লাশ হস্তান্তর করা, দাফন করা এবং তদন্ত কমিটি ও লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা যেন আগুনের লেলিহান শিখার চেয়েও বেশি দগ্ধ করে। শ্রমিকেরাও জানে, লাখ টাকা পাচ্ছে শুনে অন্য সবাই আশ্বস্ত হয়ে যায়। লাখ টাকা একসঙ্গে পাওয়া কম ভাগ্যের কথা নয়। আগুন লেগে এ ধরনের গরিব পরিবারের একজন সদস্যের মৃত্যু যদি এক লাখ টাকা এনে দিতে পারে, তাহলে তার প্রতি খুব একটা সহানুভূতির প্রয়োজন নেই। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বদৌলতে যে লেলিহান শিখা মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের ড্রইং রুম ঝাঁকিয়ে দিয়েছিল, ক্ষতিপূরণের ঘোষণা তাদের আশ্বস্ত করে। বাহ! টাকা তো পেয়েই যাচ্ছে। কিন্তু গার্মেন্টস শ্রমিকেরা খুব বোঝে এবং তাদের কাছে তাদের ভাইবোন বা সহকর্মীর জীবনের দাম এক লাখ টাকা ঠিক করলেই তারা মোটেও শান্তি পায় না। প্রথম আলোর (২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১০) সাংবাদিক গাজীপুর থেকে এসে লিখেছেন, তেমনি এক শ্রমিকের কথা। ‘এক লাখ টাকা দাম দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলো আমার মায়ের। বোনের লাশের দামও এক লাখ। আর লাশ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য আরও ১৫ হাজার করে। গরিব গার্মেন্টসে কাজ করে আমার মা আর বোন এখন অনেক বড় লোক হয়ে গেছে।’ মৃত জরিনা বেগমের ছেলে ২০ বছর বয়সী জুয়েল এই বলে বিলাপ করছিলেন সেদিন। এ বিলাপ এক নির্মম প্রহসনকেই তুলে ধরেছে। আমরা এর আগে আরও অনেক আগুন লাগার ঘটনা দেখেছি, দেখেছি সাভারের বাইপাইল ভবন ধসে পড়ার ঘটনা। গত দুই দশকে ১৬৮টি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে, মারা গেছে ৩০০ জন। ক্ষতিপূরণের ঘোষণা ততবারই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কতজন আজ পর্যন্ত এই ঘোষিত টাকা পেয়েছে? পেলেও তা কোনো সময়ই পূর্ণ অঙ্ক ছিল না। তাই একজন উন্নয়নকর্মী এক লাখ টাকার কথা শুনেই বিড়বিড় করে বলে বসেছিলেন, বুঝেছি, ২৫ হাজার টাকা। অর্থাত্ যদি শেষ পর্যন্ত দেয়, তাহলে সেটা হবে চার ভাগের এক ভাগ। অন্যদিকে আজ পর্যন্ত তদন্ত কমিটি যতই প্রতিবেদন দিক না কেন, দায়ীদের শাস্তি পেতে আমরা দেখিনি। পত্রপত্রিকায় তাঁদের বিরুদ্ধে লেখালেখি ছাড়া আর কোনোভাবে তাঁরা দায়বদ্ধতায় পড়েন না। ফলে সামাজিকভাবে তাঁদের কোনো লজ্জা বা বিব্রত হওয়ার ব্যাপার থাকে না। তাঁরা রাতে মনে হয় শান্তিতেই ঘুমান!
দৈনিক ইত্তেফাক-এর একটি শিরোনাম ছিল, (২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১০) ‘গেট আটকে রেখে আর কত দিন শ্রমিক মারা হবে?’ এটাও ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি গাজীপুর থেকে ঘুরে লিখেছেন। অর্থাত্ যাঁরা সরেজমিনে সেখানে দেখে এসেছেন, তাঁদের কাছে এই মৃত্যু মেনে নেওয়ার মতো নয়। ফ্যাক্টরি নির্মাণে ত্রুটি, অগ্নিনির্বাপণে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকা এবং জরুরি দরজা বেশির ভাগ সময় তালাবদ্ধ রাখার কারণেই একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। আমি নিজেও আমার দুই সহকর্মীসহ ২৭ ফেব্রুয়ারি গরিব অ্যান্ড গরিব কারখানায় গিয়েছিলাম। আমরা কারখানার ভেতর ঢুকতে পারিনি। মালিকপক্ষ বাইরের কাউকে ঢুকতে দিতে চান না। সামনে অনেক পুলিশ, যেন একটা রণক্ষেত্র। বোঝা যায় না যে এখানে শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে কোনো উত্কণ্ঠা আছে, বরং মালিককে রক্ষা করাই যেন প্রধান কাজ। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পুলিশ দিয়ে মালিককেই সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু যে শ্রমিক মারা গেল, তাদের পক্ষে কেউ দেখতেও আসতে পারবে না। লোহার বড় গেটটি দেখেছি। এ গেট যদি সিকিউরিটি খুলে না দেয়, তাহলে শ্রমিকেরা কিছুতেই সেটা খুলে বের হতে পারবে না। গেটের ধরনও বলে দেয়, শ্রমিকের নিজের ইচ্ছায় বা প্রয়োজনে বের হওয়ার জন্য গেট বানানো হয়নি, বরং বানানো হয়েছে মালিকের কাপড় রক্ষার জন্য। হায়রে অভাগা দেশ!
যায়যায়দিন পত্রিকায় (২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১০) প্রতিবেদনে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য আছে। প্রতিবেদনে দমকলের সাবেক মহাপরিচালকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘সোয়েটার ফ্যাক্টরিগুলোতে অ্যাক্রেলিক কেমিক্যাল উপাদান থাকে প্রচুর পরিমাণ, এগুলো পুড়লে মারাত্মক টক্সিক (বিষাক্ত) ধোঁয়া উত্পন্ন হয়। কারখানাগুলোতে তাপ ও ধোঁয়া বের হওয়ার পর্যাপ্ত পথ থাকে না। এ কারখানায়ও তা-ই হয়েছে। বিষাক্ত গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়েছিল ভবনটি। এ কারণে বিষাক্ত ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে শ্রমিকদের মৃত্যু হয়েছে। আমরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির হিটলারের গ্যাস চেম্বারের কথা শুনে আঁতকে উঠি, কিন্তু এখনো আমাদের সোয়েটার কারখানায় বিষাক্ত গ্যাস শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠছে, তা দেখে ও শুনে আঁতকে উঠছি না কেন?
সম্মিলিত নারীসমাজ প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং কারখানার দোষী মালিকদের শাস্তি দাবি করেছে। তবে সব নারী সংগঠনের ঐক্যবদ্ধভাবে গার্মেন্টস ও সোয়েটার কারখানায় দুর্ঘটনার বিষয়টি আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তুলে ধরা দরকার। শ্রমিক নারীদের সংগ্রামই আমাদের তুলে ধরতে হবে।
ফরিদা আখতার: নারী আন্দোলনের নেত্রী; উন্নয়নকর্মী।
আমরা এ ঘটনাগুলোকে হত্যাকাণ্ডই বলি, কারণ কারখানার কাঠামোর মধ্যেই আছে মৃত্যুর ফাঁদ। আগুন লাগতেই পারে, কিন্তু প্রাণ বাঁচানোর জন্য বের হতে পারবে না, কারণ গেট বন্ধ থাকে। তালা লাগানো থাকে। গেট কেন বন্ধ থাকে? মনে করা হয়, শ্রমিকেরা এ ধরনের দুর্ঘটনার সময়ও বের হতে গিয়ে কাপড় চুরি করে নিয়ে যেতে পারে। গরিব শ্রমিকেরা জীবিকার জন্য কাজ করতে আসে, তারা চায়, করখানা টিকে থাকুক। দু-একটি কাপড় নিয়ে তাদের পেট তো ভরবে না। তাহলে কেন এমন মনে করা হয়? গরিব বলেই কি? তাহলে এ আচরণ কি বৈষম্যমূলক নয়? শুধু তাই নয়, দুর্ঘটনা ঘটে গেলে তড়িঘড়ি করে আত্মীয়দের কাছে লাশ হস্তান্তর করা, দাফন করা এবং তদন্ত কমিটি ও লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা যেন আগুনের লেলিহান শিখার চেয়েও বেশি দগ্ধ করে। শ্রমিকেরাও জানে, লাখ টাকা পাচ্ছে শুনে অন্য সবাই আশ্বস্ত হয়ে যায়। লাখ টাকা একসঙ্গে পাওয়া কম ভাগ্যের কথা নয়। আগুন লেগে এ ধরনের গরিব পরিবারের একজন সদস্যের মৃত্যু যদি এক লাখ টাকা এনে দিতে পারে, তাহলে তার প্রতি খুব একটা সহানুভূতির প্রয়োজন নেই। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বদৌলতে যে লেলিহান শিখা মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের ড্রইং রুম ঝাঁকিয়ে দিয়েছিল, ক্ষতিপূরণের ঘোষণা তাদের আশ্বস্ত করে। বাহ! টাকা তো পেয়েই যাচ্ছে। কিন্তু গার্মেন্টস শ্রমিকেরা খুব বোঝে এবং তাদের কাছে তাদের ভাইবোন বা সহকর্মীর জীবনের দাম এক লাখ টাকা ঠিক করলেই তারা মোটেও শান্তি পায় না। প্রথম আলোর (২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১০) সাংবাদিক গাজীপুর থেকে এসে লিখেছেন, তেমনি এক শ্রমিকের কথা। ‘এক লাখ টাকা দাম দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলো আমার মায়ের। বোনের লাশের দামও এক লাখ। আর লাশ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য আরও ১৫ হাজার করে। গরিব গার্মেন্টসে কাজ করে আমার মা আর বোন এখন অনেক বড় লোক হয়ে গেছে।’ মৃত জরিনা বেগমের ছেলে ২০ বছর বয়সী জুয়েল এই বলে বিলাপ করছিলেন সেদিন। এ বিলাপ এক নির্মম প্রহসনকেই তুলে ধরেছে। আমরা এর আগে আরও অনেক আগুন লাগার ঘটনা দেখেছি, দেখেছি সাভারের বাইপাইল ভবন ধসে পড়ার ঘটনা। গত দুই দশকে ১৬৮টি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে, মারা গেছে ৩০০ জন। ক্ষতিপূরণের ঘোষণা ততবারই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কতজন আজ পর্যন্ত এই ঘোষিত টাকা পেয়েছে? পেলেও তা কোনো সময়ই পূর্ণ অঙ্ক ছিল না। তাই একজন উন্নয়নকর্মী এক লাখ টাকার কথা শুনেই বিড়বিড় করে বলে বসেছিলেন, বুঝেছি, ২৫ হাজার টাকা। অর্থাত্ যদি শেষ পর্যন্ত দেয়, তাহলে সেটা হবে চার ভাগের এক ভাগ। অন্যদিকে আজ পর্যন্ত তদন্ত কমিটি যতই প্রতিবেদন দিক না কেন, দায়ীদের শাস্তি পেতে আমরা দেখিনি। পত্রপত্রিকায় তাঁদের বিরুদ্ধে লেখালেখি ছাড়া আর কোনোভাবে তাঁরা দায়বদ্ধতায় পড়েন না। ফলে সামাজিকভাবে তাঁদের কোনো লজ্জা বা বিব্রত হওয়ার ব্যাপার থাকে না। তাঁরা রাতে মনে হয় শান্তিতেই ঘুমান!
দৈনিক ইত্তেফাক-এর একটি শিরোনাম ছিল, (২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১০) ‘গেট আটকে রেখে আর কত দিন শ্রমিক মারা হবে?’ এটাও ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি গাজীপুর থেকে ঘুরে লিখেছেন। অর্থাত্ যাঁরা সরেজমিনে সেখানে দেখে এসেছেন, তাঁদের কাছে এই মৃত্যু মেনে নেওয়ার মতো নয়। ফ্যাক্টরি নির্মাণে ত্রুটি, অগ্নিনির্বাপণে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকা এবং জরুরি দরজা বেশির ভাগ সময় তালাবদ্ধ রাখার কারণেই একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। আমি নিজেও আমার দুই সহকর্মীসহ ২৭ ফেব্রুয়ারি গরিব অ্যান্ড গরিব কারখানায় গিয়েছিলাম। আমরা কারখানার ভেতর ঢুকতে পারিনি। মালিকপক্ষ বাইরের কাউকে ঢুকতে দিতে চান না। সামনে অনেক পুলিশ, যেন একটা রণক্ষেত্র। বোঝা যায় না যে এখানে শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে কোনো উত্কণ্ঠা আছে, বরং মালিককে রক্ষা করাই যেন প্রধান কাজ। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পুলিশ দিয়ে মালিককেই সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু যে শ্রমিক মারা গেল, তাদের পক্ষে কেউ দেখতেও আসতে পারবে না। লোহার বড় গেটটি দেখেছি। এ গেট যদি সিকিউরিটি খুলে না দেয়, তাহলে শ্রমিকেরা কিছুতেই সেটা খুলে বের হতে পারবে না। গেটের ধরনও বলে দেয়, শ্রমিকের নিজের ইচ্ছায় বা প্রয়োজনে বের হওয়ার জন্য গেট বানানো হয়নি, বরং বানানো হয়েছে মালিকের কাপড় রক্ষার জন্য। হায়রে অভাগা দেশ!
যায়যায়দিন পত্রিকায় (২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১০) প্রতিবেদনে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য আছে। প্রতিবেদনে দমকলের সাবেক মহাপরিচালকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘সোয়েটার ফ্যাক্টরিগুলোতে অ্যাক্রেলিক কেমিক্যাল উপাদান থাকে প্রচুর পরিমাণ, এগুলো পুড়লে মারাত্মক টক্সিক (বিষাক্ত) ধোঁয়া উত্পন্ন হয়। কারখানাগুলোতে তাপ ও ধোঁয়া বের হওয়ার পর্যাপ্ত পথ থাকে না। এ কারখানায়ও তা-ই হয়েছে। বিষাক্ত গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়েছিল ভবনটি। এ কারণে বিষাক্ত ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে শ্রমিকদের মৃত্যু হয়েছে। আমরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির হিটলারের গ্যাস চেম্বারের কথা শুনে আঁতকে উঠি, কিন্তু এখনো আমাদের সোয়েটার কারখানায় বিষাক্ত গ্যাস শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠছে, তা দেখে ও শুনে আঁতকে উঠছি না কেন?
সম্মিলিত নারীসমাজ প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং কারখানার দোষী মালিকদের শাস্তি দাবি করেছে। তবে সব নারী সংগঠনের ঐক্যবদ্ধভাবে গার্মেন্টস ও সোয়েটার কারখানায় দুর্ঘটনার বিষয়টি আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তুলে ধরা দরকার। শ্রমিক নারীদের সংগ্রামই আমাদের তুলে ধরতে হবে।
ফরিদা আখতার: নারী আন্দোলনের নেত্রী; উন্নয়নকর্মী।
No comments