বিচারপতি তোমার বিচার...
প্রথম ইনিংসে ১০৮ রানের লিড নেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ২২৭। চতুর্থ ইনিংসে ৩৩৬ রান তাড়া করতে নেমে ইংল্যান্ড ২৮৭ রানে অলআউট। বাংলাদেশ ৪৮ রানে জয়ী।
এটা কী? কেন, ঢাকা টেস্টের চূড়ান্ত ফলাফলের সংক্ষিপ্তসার! দ্বিতীয় অংশটা অবশ্যই কল্পনা। স্কোরকার্ড আপনাকে জানাবে, কল্পনার রং মেশানো পুরোটাতেই। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে লিড নেবে কি, উল্টো তৃতীয় দিন শেষে ইংল্যান্ডই ২১ রানে এগিয়ে।
কল্পনা, আবার কল্পনাও নয়। রড টাকার ও টনি হিল অমন প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে না গেলে বাংলাদেশ তো শ-খানেক রানের লিড পেতই। ইয়ান বেল, ম্যাট প্রিয়র, টিম ব্রেসনান—কাল ইংল্যান্ডের যে তিন ব্যাটসম্যান রান করলেন, তিনজনেরই তো দুই আম্পায়ারকে ডিনার খাওয়ানো উচিত।
দুই অঙ্কে যাওয়ার আগেই আউট ছিলেন প্রিয়র-ব্রেসনান, ৮২ রানেই ফিরে যাওয়ার কথা বেলের। এমনিতে আম্পায়ারিং সিদ্ধান্ত, বিশেষ করে এলবিডব্লুর ক্ষেত্রে মন্তব্য করার সময় ‘হয়তো-টয়তো’ বলার নিয়ম। কিন্তু টাকার-হিলের ‘ভুল’গুলো এমনই যে, নিয়মের ব্যতিক্রম হয়ে ইয়ান বেল পর্যন্ত সংবাদ সম্মেলনে নিজের সৌভাগ্যের কথা স্বীকার করে ফেললেন।
আম্পায়ারিং নিয়ে অনেক কৌতুক চালু আছে। তার একটি কালকের টাকার-হিলের সঙ্গে খুব যায়—স্টাম্পের একেবারে সামনে ব্যাটসম্যানের প্যাডে লেগেছে বল। বোলারের তারস্বরে ‘হাউজ দ্যাট’ চিত্কারে আম্পায়ার বলছেন, ‘আমি তো কিছু দেখতে পাইনি। সামনে প্যাড এসে গেল যে!’
নিশ্চয়ই বানানো গল্প। এবার একটা সত্যি গল্প বলি। ১৯৯৩ সালে ভারতের শ্রীলঙ্কা সফর। তখনো নিরপেক্ষ আম্পায়ারের চল হয়নি এবং শ্রীলঙ্কান আম্পায়াররা পণ করেছেন স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের এলবিডব্লু দেবেন না। হোটেলের লবিতে আম্পায়ার বিসি কুরের সঙ্গে দেখা ভারতীয় ম্যানেজার অজিত ওয়াদেকারের। ওয়াদেকার বললেন, ‘মিস্টার কুরে, আমার বাবা কিছুদিন আগে মারা গেছেন। উনার নাম ছিল লক্ষ্মণ বিজয় ওয়াদেকার। আমি বুঝতে পারিনি, উনার নামের আদ্যক্ষরগুলো দিয়ে যে আউটটা হয়, মৃত্যুর সময় সেটি তিনি সঙ্গে নিয়ে গেছেন।’
টনি হিল ও রড টাকারও বোধহয় এলবিডব্লু বলে যে একটা আউট আছে, সেটি ভুলে গিয়েছিলেন। তবে নিশ্চিত থাকতে পারেন, বাংলাদেশের ইনিংসে ঠিকই তা মনে পড়বে। টাকার অবশ্য প্রতিবাদ করতে পারেন, শুধু এলবিডব্লু বলছেন কেন, ব্রেসনানের ব্যাট-প্যাড ক্যাচও তো আমি দিইনি। হু হু!
খেলোয়াড়েরা যেমন ভুল করেন, তেমনি আম্পায়াররাও করেন—এই জ্ঞানের কথাও বাংলাদেশের দুঃখে বিন্দুমাত্র প্রলেপ হতে পারছে না। আম্পায়ারের ভুলগুলো যে বাংলাদেশের বিপক্ষেই বেশি হয়! ‘বাংলাদেশের’ জায়গায় অবশ্য ‘দুর্বলতর’ দল পড়তে পারেন। বাংলাদেশকে এমন আম্পায়ারিং অবিচারের শিকার হতে দেখে সাবেক ইংল্যান্ড-অধিনায়ক মাইকেল আথারটনের যেমন মনে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কথা। কাউন্টি দলগুলোর বিপক্ষে ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলার সময় আম্পায়ারদের ভুলগুলো নাকি শুধু কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষেই হতো।
জেমি সিডন্সও এটি খুব ভালো টের পাচ্ছেন। আগে ছিলেন অস্ট্রেলিয়া দলের সঙ্গে। তখন আম্পায়ারদের বড় দলপ্রীতি খুব ভালো লেগেছে। এখন বুঝতে পারছেন দুর্বলের যন্ত্রণা। ড্রেসিংরুমের সামনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় সারা দিনই বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁর মনোভাব। সোজাসাপটা লোক, পরে স্কাই স্পোর্টসকে সরাসরি বলেও দিয়েছেন মনের কথা।
কাজী নজরুল ইসলামের ক্রিকেটপ্রীতি ছিল বলে কখনো শুনিনি। তার পরও তাঁর কবিতার একটা লাইন দিব্যি বাংলাদেশ দলকে নিয়ে লেখা বলে চালিয়ে দেওয়া যায়—এমন করিয়া জগত্ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল? তবে ঢাকা টেস্টে যা হচ্ছে, তাতে ‘দুর্বল’-এরও দায় আছে। এই টেস্টে রেফারেল সিস্টেম থাকলেই তো ইংল্যান্ডের ইনিংস ৩০০ রানে শেষ হয়ে যায়। নেই কেন? কারণ বাড়তি কিছু খরচ হবে বলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সেই ব্যবস্থা রাখেনি। রেফারেল না থাকায় সাকিবের আক্ষেপ শুনে এক সাংবাদিক জিজ্ঞেসই করে বসলেন, আইসিসি প্রেসিডেন্ট ডেভিড মরগানকে খুশি করতে এত ব্যানার-ফুলের পেছনে টাকা খরচ না করে রেফারেলের পেছনে করাটাই বেশি জরুরি ছিল কি না! মনের কথা বলে ফেলায় সাকিবও সিডন্সের অনুসারী। সরাসরি বলে দিলেন, ‘হ্যাঁ, ছিল।’
বিতর্কের ভয়ে জড়োসড়ো ক্রিকেটারদের বিরক্তিকর সংবাদ সম্মেলনের ভিড়ে সাকিব আল হাসান যেন এক ঝলক তাজা বাতাস!
এটা কী? কেন, ঢাকা টেস্টের চূড়ান্ত ফলাফলের সংক্ষিপ্তসার! দ্বিতীয় অংশটা অবশ্যই কল্পনা। স্কোরকার্ড আপনাকে জানাবে, কল্পনার রং মেশানো পুরোটাতেই। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে লিড নেবে কি, উল্টো তৃতীয় দিন শেষে ইংল্যান্ডই ২১ রানে এগিয়ে।
কল্পনা, আবার কল্পনাও নয়। রড টাকার ও টনি হিল অমন প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে না গেলে বাংলাদেশ তো শ-খানেক রানের লিড পেতই। ইয়ান বেল, ম্যাট প্রিয়র, টিম ব্রেসনান—কাল ইংল্যান্ডের যে তিন ব্যাটসম্যান রান করলেন, তিনজনেরই তো দুই আম্পায়ারকে ডিনার খাওয়ানো উচিত।
দুই অঙ্কে যাওয়ার আগেই আউট ছিলেন প্রিয়র-ব্রেসনান, ৮২ রানেই ফিরে যাওয়ার কথা বেলের। এমনিতে আম্পায়ারিং সিদ্ধান্ত, বিশেষ করে এলবিডব্লুর ক্ষেত্রে মন্তব্য করার সময় ‘হয়তো-টয়তো’ বলার নিয়ম। কিন্তু টাকার-হিলের ‘ভুল’গুলো এমনই যে, নিয়মের ব্যতিক্রম হয়ে ইয়ান বেল পর্যন্ত সংবাদ সম্মেলনে নিজের সৌভাগ্যের কথা স্বীকার করে ফেললেন।
আম্পায়ারিং নিয়ে অনেক কৌতুক চালু আছে। তার একটি কালকের টাকার-হিলের সঙ্গে খুব যায়—স্টাম্পের একেবারে সামনে ব্যাটসম্যানের প্যাডে লেগেছে বল। বোলারের তারস্বরে ‘হাউজ দ্যাট’ চিত্কারে আম্পায়ার বলছেন, ‘আমি তো কিছু দেখতে পাইনি। সামনে প্যাড এসে গেল যে!’
নিশ্চয়ই বানানো গল্প। এবার একটা সত্যি গল্প বলি। ১৯৯৩ সালে ভারতের শ্রীলঙ্কা সফর। তখনো নিরপেক্ষ আম্পায়ারের চল হয়নি এবং শ্রীলঙ্কান আম্পায়াররা পণ করেছেন স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের এলবিডব্লু দেবেন না। হোটেলের লবিতে আম্পায়ার বিসি কুরের সঙ্গে দেখা ভারতীয় ম্যানেজার অজিত ওয়াদেকারের। ওয়াদেকার বললেন, ‘মিস্টার কুরে, আমার বাবা কিছুদিন আগে মারা গেছেন। উনার নাম ছিল লক্ষ্মণ বিজয় ওয়াদেকার। আমি বুঝতে পারিনি, উনার নামের আদ্যক্ষরগুলো দিয়ে যে আউটটা হয়, মৃত্যুর সময় সেটি তিনি সঙ্গে নিয়ে গেছেন।’
টনি হিল ও রড টাকারও বোধহয় এলবিডব্লু বলে যে একটা আউট আছে, সেটি ভুলে গিয়েছিলেন। তবে নিশ্চিত থাকতে পারেন, বাংলাদেশের ইনিংসে ঠিকই তা মনে পড়বে। টাকার অবশ্য প্রতিবাদ করতে পারেন, শুধু এলবিডব্লু বলছেন কেন, ব্রেসনানের ব্যাট-প্যাড ক্যাচও তো আমি দিইনি। হু হু!
খেলোয়াড়েরা যেমন ভুল করেন, তেমনি আম্পায়াররাও করেন—এই জ্ঞানের কথাও বাংলাদেশের দুঃখে বিন্দুমাত্র প্রলেপ হতে পারছে না। আম্পায়ারের ভুলগুলো যে বাংলাদেশের বিপক্ষেই বেশি হয়! ‘বাংলাদেশের’ জায়গায় অবশ্য ‘দুর্বলতর’ দল পড়তে পারেন। বাংলাদেশকে এমন আম্পায়ারিং অবিচারের শিকার হতে দেখে সাবেক ইংল্যান্ড-অধিনায়ক মাইকেল আথারটনের যেমন মনে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কথা। কাউন্টি দলগুলোর বিপক্ষে ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলার সময় আম্পায়ারদের ভুলগুলো নাকি শুধু কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষেই হতো।
জেমি সিডন্সও এটি খুব ভালো টের পাচ্ছেন। আগে ছিলেন অস্ট্রেলিয়া দলের সঙ্গে। তখন আম্পায়ারদের বড় দলপ্রীতি খুব ভালো লেগেছে। এখন বুঝতে পারছেন দুর্বলের যন্ত্রণা। ড্রেসিংরুমের সামনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় সারা দিনই বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁর মনোভাব। সোজাসাপটা লোক, পরে স্কাই স্পোর্টসকে সরাসরি বলেও দিয়েছেন মনের কথা।
কাজী নজরুল ইসলামের ক্রিকেটপ্রীতি ছিল বলে কখনো শুনিনি। তার পরও তাঁর কবিতার একটা লাইন দিব্যি বাংলাদেশ দলকে নিয়ে লেখা বলে চালিয়ে দেওয়া যায়—এমন করিয়া জগত্ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল? তবে ঢাকা টেস্টে যা হচ্ছে, তাতে ‘দুর্বল’-এরও দায় আছে। এই টেস্টে রেফারেল সিস্টেম থাকলেই তো ইংল্যান্ডের ইনিংস ৩০০ রানে শেষ হয়ে যায়। নেই কেন? কারণ বাড়তি কিছু খরচ হবে বলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সেই ব্যবস্থা রাখেনি। রেফারেল না থাকায় সাকিবের আক্ষেপ শুনে এক সাংবাদিক জিজ্ঞেসই করে বসলেন, আইসিসি প্রেসিডেন্ট ডেভিড মরগানকে খুশি করতে এত ব্যানার-ফুলের পেছনে টাকা খরচ না করে রেফারেলের পেছনে করাটাই বেশি জরুরি ছিল কি না! মনের কথা বলে ফেলায় সাকিবও সিডন্সের অনুসারী। সরাসরি বলে দিলেন, ‘হ্যাঁ, ছিল।’
বিতর্কের ভয়ে জড়োসড়ো ক্রিকেটারদের বিরক্তিকর সংবাদ সম্মেলনের ভিড়ে সাকিব আল হাসান যেন এক ঝলক তাজা বাতাস!
No comments