জাতীয় ঐক্যের ডাক সশস্ত্রবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তাদের
গতকাল রাজধানীর মহাখালীস্থ রাওয়া কমপ্লেক্সের সামনে সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যবৃন্দের আয়োজনে ‘ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের’ আহ্বান শীর্ষক প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আহ্বায়কের বক্তব্যে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মোহাম্মদ আহসানুল্লাহ বলেন, আমরা সরকারকে আহ্বান করতে চাই- আর কোনো নতজানু পররাষ্ট্রনীতি নয়, সাম্যতার ভিত্তিতে পররাষ্ট্রনীতি। ভারতের জনগণকে আমরা বলতে চাই, আপনাদের সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। আপনারা আমাদের বাংলাদেশের জনগণের বন্ধু। কিন্তু ভারতের গেরুয়া পোশাকধারী হিন্দু আধিপত্যবাদকে আমরা কোনোভাবেই এদেশে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতে রাজি নই।
তিনি বলেন, আজকে এখানে আমরা এক হয়েছি ভারতীয় আগ্রাসন ও আধিপত্যের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ জানাতে। বাংলাদেশ ১২ আউলিয়ার ভূমি। হযরত শাহ্ জালাল, হযরত শাহ্ মকদুম, অতিশ দীপঙ্কর, শ্রী চৈতন্য, অনুকূল ঠাকুর, লোকনাথ ব্রহ্মচারী প্রমুখের আবাস ভূমি এই বাংলাদেশ। আমরা যুগ যুগ ধরে আমাদের এই শ্যামল ভূমি বাংলাদেশে সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছি। কিন্তু আমরা অতি উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি সম্প্রতি বাংলাদেশের লেডি ফেরাউন পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে ভারতের হিন্দু বিদ্বেষী নেতৃত্বের শ্যেন দৃষ্টি পড়েছে আমাদের দিকে। তাদের সাম্প্রতিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে। তাদের সর্বশেষ উদ্যোগ ছিল আগরতলা ও কলকাতার দূতাবাসে আক্রমণ চালানো এবং আমাদের দেশের পতাকাকে অবমাননা করা। আমরা এসব ঘটনাগুলোকে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর হুমকি হিসেবে মনে করছি। এ ছাড়া ভারতের কিছু মিডিয়া, রাজনৈতিক নেতারা বাংলাদেশকে নিয়ে সার্বক্ষণিক বিষোদ্গার করে চলেছে। ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী যেকোনো দূতাবাসে হামলা সে দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর হামলা। দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে যখন আমাদের সার্বভৌমত্বের ওপর হামলা হয়, আমাদের পতাকা পদদলিত হয়, আমাদের দূতাবাসে আক্রমণ হয় তখন আমরা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা চুপ করে থাকতে পারি না। আমরা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার শপথ নিয়েছিলাম। এখনো আমরা সেই শপথ থেকে বিচ্যুত হয়নি। দেশের এই ক্রান্তি লগ্নে জাতিকে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করতে চাই। আসুন সব ধরনের রাজনৈতিক বিভাজন ভুলে ধর্ম-মত ও দলের ঊর্ধ্বে উঠে আমরা আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করি। এক্ষেত্রে আমাদের দেশের তরুণ ছাত্র এবং শ্রমিক-জনতাকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি বলেন, যেখানেই আমরা দেখবো আমাদের দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কিছু হচ্ছে আমরা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা আপনাদের সঙ্গে নিয়ে সেটা প্রতিরোধ করবো। তিনি বলেন, আমাদের এবং আপনাদের মধ্যে অনেক বিভাজন হয়ে গেছে। আমাদের সামরিক বাহিনী ও বেসরকারি বাহিনীর মধ্যে যেই সম্পর্ক থাকার কথা গত সরকারের আমলে এটা আরও অবনতি হয়েছে। আমরা এই দেশেরই সন্তান। আপনাদের সবাইকে এক থাকতে হবে।
সেনাবাহিনীর এই সাবেক কর্মকর্তা বলেন, আমরা যেই আজকে ঐক্যবদ্ধতার ডাক দিয়েছি আমাদের এই প্রচেষ্টা এখানেই শেষ নয়। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ-আন্তর্জাতিক যেকোনো ধরনের ষড়যন্ত্র হলে আমরা এদেশের সকলকে নিয়ে সেই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে চাই। আমরা সশস্ত্র বাহিনীর লাখ লাখ প্রশিক্ষিত সৈনিক, হাজার হাজার প্রশিক্ষিত অফিসার সব সময় এদেশের জনগণের পাশে ছিলাম, থাকবো। আমরা যেকোনো প্রয়োজনে দেশের জন্য জীবন বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত।
প্রতিবাদ সমাবেশে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনীষ দেওয়ান বলেন, ৫ই আগস্টে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের পর আমরা আবারো এখানে জমায়েত হয়েছি, এক হয়েছি শুধু জনগণের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করার জন্য। ভারতের বিরুদ্ধে, ভারতের আধিপত্যের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম জারি রাখার জন্য। আজকে আমি একটা বার্তা দিতে চাই। মোদি জি, অমিত জি এবং রাজনাথ সিং জি আপনারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যেটা দেখেছেন ’৭২ সালের সেই সেনাবাহিনী আর এখন নাই। আমরা যেকোনো শত্রু মোকাবিলায় প্রস্তুত। আপনারা আর আস্ফালন তুলবেন না। শুধু আমরা সশস্ত্র বাহিনী নই এই দেশের ১৭ কোটি জনগণ আপনাদের সীমান্তেই রুখে দিতে পারে।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালনার দায়িত্বে থাকা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল লুৎফুল হক বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের সকল জাতীয় চুক্তিগুলো তুলে ধরুন। যেসব ভারতীয় বাংলাদেশে আছে, সেগুলো পুনর্বিবেচনা করে প্রয়োজন না থাকলে তাদের ফেরত পাঠানো হোক। যেসব ভারতীয় মিডিয়া সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছে দেশে সেগুলো বাতিল করা হোক। প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে বিভিন্ন বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের অংশগ্রহণে রাওয়া ক্লাবের সামনে থেকে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচ থেকে শুরু হয়ে তেজগাঁও বিমান বন্দরের সামনে হয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সংলগ্ন সড়কের ইউটার্ন দিয়ে ঘুরে আবারো রাওয়া ক্লাবের নিচে গিয়ে শেষ হয়।
No comments