সংসদ সদস্যরা নিজ এলাকায় রীতিমতো জমিদার

সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ পর্যায়ে ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন ঘটেছে। সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ এলাকায় রীতিমতো জমিদার হয়ে যান। ফলে স্থানীয় সরকার অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। সেইসঙ্গে গত তিনটি নির্বাচন ছিল ত্রুটিপূর্ণ। সেই নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা আবার কেবল রাবার স্ট্যাম্পের মতো কাজ করতেন। ফলে অবসরে তারা ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কাজে সময় ব্যয় করেছেন বলে মন্তব্য করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান।

গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) উদ্যোগে আয়োজিত এবিসিডি সম্মেলনে অংশ নিয়ে রেহমান সোবহান এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন।
রেহমান সোবহান বলেন, বিগত সরকারের প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান ও গুণগত মান নিয়ে অনেক বিতর্ক থাকলেও সেই সময় দেশে দারিদ্র্য বিমোচনের গতি ভালো ছিল। দারিদ্র্যের বহুমুখী সূচকেও বাংলাদেশ ভালো করেছে। মানব উন্নয়নেও ভালো করেছে। শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রতিবেদনেও দারিদ্র্য বিমোচনের বিষয়টি নিয়ে কেউ চ্যালেঞ্জ করেনি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন উল্লেখযোগ্য। দারিদ্র্যের হার ৫৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে নিয়ে আসা যেসব বিচারে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করি। পুষ্টিমান, শিশু মৃত্যু, পড়াশোনার সময়, পানের পানির প্রাপ্যতা, আবাসন- এসব ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ অর্জন।

তিনি আরও বলেন, গবেষকদের কাজ হবে বাংলাদেশ প্যারাডক্সের নতুন রূপের সন্ধান করা। এতদিন সুশাসনের অভাবের মধ্যে কীভাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা নিয়ে ছিল বিস্ময়। এখন দেখতে হবে, এ ধরনের অসম সমাজ ও অপশাসনের মধ্যে কীভাবে দারিদ্র্য বিমোচন ও মানবসম্পদ উন্নয়নে এতটা ভালো করল বাংলাদেশ। আমার বিশ্বাস, এ গবেষণা করতে গিয়ে অর্থনীতিবিদরা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন। দেশে বৈষম্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে কাঠামোগত সমস্যা আছে। যেভাবে ঋণখেলাপিরা সুবিধা পেয়েছেন, সরকারের এু জাতীয় নীতি দেশে অসমতা বৃদ্ধি করেছে।

অর্থনীতিবিদদের সমালোচনা করে রেহমান সোবহান বলেন, অসমতা পরিমাপের ক্ষেত্রে শুধু খানা আয়-ব্যয় জরিপের পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হচ্ছে; এর বাইরে কেউ যাচ্ছে না। তার মত, এক্ষেত্রে আয়করের বিবরণী গুরুত্বপূর্ণ। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘খানা আয়-ব্যয় জরিপে শীর্ষ আয়ের মানুষের যে মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে, তা হলো- ১০ লাখ টাকার সম্পদ ও মাসিক ৩০ হাজার টাকা আয়। এ সম্পদ এবং আয় গুলশান ও বারিধারার বেশির ভাগ গাড়িচালকেরই আছে। তার মত, এ মানদণ্ড বিচার করা হলে আমাদের মতো অনেক মানুষই পরিসংখ্যান থেকে হারিয়ে যাবে।’ ফলে গবেষকরা যা করছেন, তা মূলত আলংকারিক ও ব্যক্তিগত পর্যায়ের বলে মনে করেন তিনি।

রেহমান সোবহান আরও বলেন, সমাজে বৈষম্য বাড়ছে। কিন্তু সেই বৈষম্যের চরিত্র যথাযথভাবে চিত্রিত করা হচ্ছে না। কোথায় কোথায় কোন খাতে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে, তা নিরূপণ করা গেলে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব।

mzamin


No comments

Powered by Blogger.