দিগ্বিজয়ী তৈমুর লং ও ডক্টর ইউনূসের ‘রিসেট বাটন’ by শায়ের খান
দিগ্বিজয়ী বীর তৈমুর লং একবার রাজ্য হারিয়ে ভিখারির ছদ্মবেশে ঘুরছেন। এক দুপুরে প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত তৈমুর এক দরজায় নক করলে দরজা খোলেন এক সুন্দরী তরুণী। ক্ষুধার্ত ভিখারিকে বলেন, ‘একটু অপেক্ষা করো, আমি তোমার জন্য খিচুড়ি রেঁধে নিয়ে আসি।’ ক্ষুধাকাতর তৈমুর রেঁধে আনা গরম খিচুড়ির থালার মাঝখানে দিলেন হাত ডুবিয়ে। হাত খেলো গরম ছ্যাঁকা। হো হো হো করে হেসে উঠলো তরুণী। বিব্রত ভিখারিকে বললো, ‘তোমার অবস্থা তো দেখি বাদশাহ তৈমুর লং-এর মতো।’ চমকে উঠে ভিখারি বাদশাহ বললেন, ‘কি রকম?’ সুন্দরী বললো, তৈমুর লোভ করে সরাসরি রাজধানী আক্রমণ করেছিল। চারদিক থেকে ঘিরে ফেলায় হেরে যায় সে। তার উচিত ছিল আশপাশের রাজ্যগুলো আগে দখল করা। খিচুড়িও খেতে হয় চারদিক থেকে আস্তে আস্তে।’ খিচুড়ি খেয়ে মহিলাকে সালাম দিয়ে বিদায় নেন ছদ্মবেশী তৈমুর। আস্তে আস্তে আবার সুসংগঠিত হয়ে মহিলার দেয়া ‘খিচুড়ি তত্ত্বে’ পুনর্দখল করেন রাজ্য।
আজ থেকে প্রায় ৬০০ বছর আগেই ‘রিসেট বাটন পুশ’ করে রাজ্য পুনরুদ্ধার করেছিলেন তৈমুর লং।
এই সেদিন আমাদের ইউনূস স্যার ভোয়া’র (ভয়েস অব আমেরিকা) আনিস আহমেদকে তরুণদের ‘রিসেট বাটন পুশ’ করা নিয়ে বললে তা লুফে নেয় ফ্যাসিস্ট দোসররা। এই গোষ্ঠী ‘রিসেট বাটন পুশ’ কি, সেটাই বোঝেনি। অথচ তা ৬০০ বছর আগেও বুঝেছিলেন তৈমুর লং।
ইংলিশে ‘রি’ কথাটা ব্যবহার হয় কোনোকিছু পুনরায় বা আবার করার অর্থে। যেমন সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনি রি- পোস্ট করেন। নতুন করে পোস্ট। যেমন রিস্টার্ট। আবার স্টার্ট করা । রিমেক। আবার মেক করা। রিশিডিউল। আবার শিডিউল করা। রিসেট। আবার সেট করা। একেবারেই সোজা।
আরেকটু সোজা করে ভাবি। ধরা যাক, এক দম্পতি সন্ধ্যায় কোনো পার্টিতে যাবে। স্ত্রী সুন্দর বেণী করে সাজুগুজু করছে। স্বামী বললো, ‘বেণী না প্লিজ, তোমার পার্টি কাঁপানো খোঁপাটা করো।’ খুশির দীর্ঘশ্বাসে বেণী খুলে খোঁপা বাঁধলো স্ত্রী। আসলে সে চুলে ‘রিসেট বাটন পুশ’ করে বেণীকে খোঁপা করে দিয়েছে । বেণী খোঁপা হয়েছে কিন্তু চুল চুলের জায়গায়ই আছে।
চুলে ‘রিসেট বাটনের’ আরেকটা উদাহরণ আমরা আনতে পারি। বিগত সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ ওরফে টাকলা মুরাদ মাতাল অবস্থায় যখন অভিনেত্রী মাহিয়া মাহীকে ‘অই ছেমরি’ বা টুটাফাটা অশ্লীল চিৎকার করছিল, তখন নাকি তার চুল ছিল পুরোই চাঁছাছোলা। ঘনিষ্ঠদের মতে, তার মাথা অরিজিনালি পুরো চাঁছা না। হালকা চুলের গ্যালারি আছে। প্রতিদিন গ্যালারি কালার করা ঝামেলা। তাই তিনি চুলের ‘রিসেট বাটন পুশ’ করে দেন। গ্যালারি হয়ে যায় চাঁছাছোলা স্মার্ট। তিনি দেখতে হয়ে যান ড্যাশিং ক্রিমিনাল। আর টুট্টা ফুট্টারা বলতে থাকে- ভাইয়াকে খুব হ্যান্ডসাম লাগতেসে।
রিসেট বাটন পুশ করা পরিবর্তনের জন্য এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আপনি জীবন চলার পথে বহুবার রিসেট বাটন পুশ করেছেন, কিন্তু বোঝেন নাই যে সেটা ছিল রিসেট বাটন।
ক্রিকেট বা ফুটবল ম্যাচে ক্ষণে ক্ষণে রিসেট বাটন পুশ করা হয়। টপাটপ কয়েকটা উইকেট পড়ে গেছে বা ধুমধাম দুটো গোল খেয়ে গেছো, দাও রিসেট বাটন পুশ করে। নতুন পরিকল্পনায় সাজাও কৌশল। অবশ্যই এই কৌশল অতীতের ভুল মাথায় রেখেও তা শুধরে।
ঢাকা ইউনিভার্সিটি দিয়ে বিষয়টা আরেকটু বোঝা যাবে।
আগের দিনে ঢাকা ইউনিভার্সিটির ভিসি বলতেই কল্পনায় উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এক অভিভাবকের মুখ ভেসে উঠতো। যে অভিভাবক ভাবেন শিক্ষা নিয়ে, সমাজ-অর্থনীতি- গ্লোবাল রাজনীতি নিয়ে। অথচ বিগত সরকারের আমলে মানুষ দেখলো এক ভিসি টিএসসিতে ১০ টাকায় চা- চপ-ছমুছা বিক্রি করছে। ফ্যাসিস্ট সমর্থক এই চাটুকার ভিসি জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে গণহত্যাকারীদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। এখানে রিসেট বাটন পুশ করে দিন। এতে ঢাকা ইউনিভার্সিটিটা থাকবে, টিএসসি থাকবে, আসবে সম্মানিত ভিসি। টিএসসিতে ছাত্ররা চা-চপ-সিঙ্গারায় সুস্থ আড্ডা দিবে। শুধু থাকবে না নীতিহীন চাটুকার ভিসি আর তার চা-চপ- ছমুছা।
আগস্ট বিপ্লবে ছাত্র-জনতার বিজয়ের আর তৈমুর লং-এর রাজ্যজয়ের রিসেট বাটনে একটু পার্থক্য আছে। বলা যায়, উল্টো। তৈমুর লং চারদিক জয় করে শেষ করেন রাজধানীতে। আর আমাদের বিজয় শুরু হয়েছে রাজধানী থেকে। এখন রিসেট বাটন পুশ করে যেতে হবে চারদিকে। বাহির থেকে দেশের ভেতর প্যারাসাইট ঢোকা বন্ধ করতে হবে প্রথমে। একইসঙ্গে ভেতরে থাকা প্যারাসাইট দমন করতে হবে।
গেল ১৬টা বছর বাহির আর ভেতরের প্যারাসাইট মিলে দেশের প্রতিটা সেক্টরকে একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়েছে।
No comments