সিলেট ছাত্রলীগ: নাজমুলের মুখে যে সমালোচনা

আত্মগোপনে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম। ৫ই আগস্টের পর থেকে তার দেখা মিলছে না। প্রথমদিকে নিজেকে জানান দিতে কিছুটা নিশ্চুপ থাকলেও এখন ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে সরব তিনি। করছেন নিজের দলের সমালোচনাও। কখনো কখনো করছেন আক্ষেপও। সম্প্রতি তিনি সিলেট জেলা ও নগর ছাত্রলীগের কমিটি পুর্ণাঙ্গ না হওয়ার প্রসঙ্গ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিন বছর পাড় করলো সিলেট জেলা ও নগর ছাত্রলীগ। এর মধ্যে দু’মাস হলো দেশান্তরি নেতারা। এর আগে মাঠে সক্রিয় ছিলেন নেতারা। এই দু’মাসে মাঠে থাকা দূরের কথা, কেউ প্রকাশ্যে আসতে পারেননি। শুধু ছাত্রলীগ নয়, আওয়ামী পরিবারের সবাই আত্মগোপনে। আড়ালে থাকা নাজমুল সম্প্রতি স্ট্যাটাসে সিলেট জেলা ছাত্রলীগ পূর্ণাঙ্গ না হওয়া নিয়ে নিজের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেছেন। তবে; এতে তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও সিলেট আওয়ামী লীগের নেতাদের ওপর ক্ষোভ ঝেরেছেন। বলেছেন, ‘দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে আক্ষেপ একটাই. তা হলো পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করতে না পারা। তবে আমি আমার বিবেকের কাছে সবসময় পরিষ্কার। কেন না এই ৩ বছরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে সর্বমোট চারবার পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিয়েছি। চেষ্টা তদবির হাতে ধরা পায়ে ধরা মালিশ করা মলম দেয়া এমন কিছু বাদ রাখি নাই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার জন। দিনের পর দিন ঢাকা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করাতে না পারার এই আক্ষেপ সবসময় থাকবে।’ কেন অনুমোদন হয়নি, কারা বাধা দিলেন, সমস্যা কি ছিল নিজেই এ প্রশ্ন ছুড়ে নাজমুল বলেন- ‘উত্তর একটাই দলের এখন দুর্দিন, দুঃসময়ে এইসব বলে সংগঠনের অভ্যন্তরে আর বিভক্তি তৈরি করতে চাই না। তবে মোটা দাগে যদি দায় দিতে হয় তবে অবশ্যই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে দিতে হবে। তাদের খামখেয়ালি, তাদের অবহেলা, স্বেচ্ছাচারিতা আর জবাবদিহিতা না থাকার কারণে শুধু সিলেট জেলা ও মহানগর নয় বরং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রায় সকল সুপার ইউনিট একধরনের স্থবির হয়ে গিয়েছিল। আর স্থানীয় পর্যায়ে এটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব ছিল। আমরা তাদের বলয়ের বাইরে ছিলাম এবং সেই কারণে সিলেটের আওয়ামী লীগের অনেকেই চাননি জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ পূর্ণাঙ্গ হোক। কেন না আমাদের কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়ে গেলে সফলদের কাতারে আমাদের নাম অগ্রভাগে চলে আসবে এটা অনেকেই মেনে নিতে পারেননি বা মেনে নেয়া সম্ভব ছিল না।’ সম্প্রতি আরেকটি স্ট্যাটাসে তিনি নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে দলের ক্ষতি হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। নাজমুল তার স্টাটাসে লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় শত্রু আওয়ামী লীগ নিজে। বিএনপি জামায়াত যতটুকু ক্ষতি আমাদের করেছে তার চেয়ে যোজন যোজন গুণ ক্ষতি আমরা করেছি শুধুমাত্র নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর একে অপরের প্রতি হিংসার কারণে। সেই ধারাবাহিকতা সেই কোন্দল সেই হিংসার রাজনীতি এখনো বিদ্যমান, যার কারণে আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সময় লাগবে।’ ওই স্টাটাসে তিনি উল্লেখ করেন- ‘দল ক্ষমতায় থাকতে আমাদের কেউ ভালো অবস্থানে চলে যাচ্ছে তাকে কীভাবে আটকাতে হবে সেই নিয়ে থাকতো আমাদের ব্যস্ততা। কেউ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে যাচ্ছে তাকে আটকাতে হবে। কেউ বেশি জনপ্রিয় হয়ে গেছে তাকে ধ্বংস করতে হবে। কারও কর্মী বেশি একে সন্ত্রাসী বানাতে হবে। কেউ সাহসী তারে মামলা দিয়ে পর্যুদস্ত করতে হবে। কেউ নেতার অবাধ্য হয়েছে প্রয়োজনে তাকে অস্ত্র মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে হলেও নিজেদের ক্ষমতা জাহির করতে হবে। আর এগুলো করতে করতে দলের মূলধারার নেতাকর্মীদের কোনঠাসা করে ফেলা হয়েছিল।’ তিনি উল্লেখ করেন, ৫ই আগস্টের পর থেকে শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগ নিধন। দলের এই কঠিনতম সময়েও এসে দেখতে পাচ্ছি- এক শ্রেণির আঙ্গুলবাজ তথাকথিত সুশীল মার্কা কিছু লোক, যারা নিজেদেরকে শেখ হাসিনার চেয়েও বড় আওয়ামী লীগার মনে করে এরা দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সবাইকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুৎসা রটাচ্ছে। এদের কারণে বর্তমানে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পর্যন্ত নিজেদের মতামত ব্যক্ত করতে দ্বিধা করছেন। আমি তাদেরকে বলবো, দলের ভিতর আঙ্গুলবাজী বন্ধ করেন। দলের সুসময়ে যা করেছেন এখন এই দুঃসময়ে উস্কানি দেয়া নেতাদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো বন্ধ করুন। তোমাদের এইসব উস্কানির কারণে দলের লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হচ্ছে।
mzamin

No comments

Powered by Blogger.