কাশ্মীর সঙ্কট কেন কেবল ভারত ও পাকিস্তানের নয়, বরং পুরো বিশ্বের by আদিল নজম
পনের
সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ১৬ আগস্ট শুক্রবার অনীহভাবে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে
মিলিত হয়েছিল এমন একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে যেটাকে তারা সরিয়ে রাখতেই
পছন্দ করে, কিন্তু বিশ্বের জন্য তা অগ্রাহ্য করাও সম্ভব নয়। তা হলো
কাশ্মীর।
জাতিসংঘ সাধারণত যা করে, এবারো তাই করেছে। ফলে পাকিস্তান ও ভারত উভয়েই দাবি করেছে এই বৈঠকে তাদের জয় হয়েছে এবং তাদের ঘরোয়া শ্রোতাদের আত্মতুষ্টিতে থাকতে দিয়েছেন। এদিকে কাশ্মীরের জনগণকে তাদের দেয়ার মতো কিছুই নয়, এমনকি সান্ত্বনার বাণীও নয়।
এগুলো কেবল এই অঞ্চলের নয়, বরং বিশ্বের সমস্যা এবং সম্ভবত এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বের সর্বোত্তম স্বার্থে কাজ করার।
এই সঙ্কট শুরু ৫ আগস্ট। ওই দিন ভারত একতরফাভাবে বিরোধপূর্ণ কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা বাতিল করে দেয়। অথচ ভারতের সাথে সাময়িকভাবে একীভূত হওয়ার আইনগত ভিত্তি ও মূল শর্তই ছিল ওই মর্যাদা। ১১ দিন পর যখন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এর সভা সমাপ্ত করে, তখনো ভারত-অধ্যুষিত কাশ্মীর সম্পূর্ণ স্থবির ছিল: পুরোপুরি নীরব ও বিধ্বস্ত ছিল, বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম সেনাসমাবেশ ছিল সেখানে। এর রাজধানী শ্রীনগর ব্যারিকেড দেয়া গ্যারিসন, বিশ্বের বৃহত্তম কারাগারে পরিণত হয়।
প্রখ্যাত ভারতীয় ঔপন্যাসিক অরুন্ধতী রায় ও অন্য অনেক শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবী কাশ্মীরের একতরফা দখলকে ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রতি আঘাত হিসেবে অভিহিত করেছেন। অরুন্ধতী একে এক ধরনের উপনিবেশবাদ হিসেবে অভিহিত করেছেন। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপ করার ফলে এবং কাশ্মীরের ধর্মীয় জনসংখ্যা পরিবর্তনের সম্ভাব্য পরিকল্পনাটি কাশ্মীরের সাথে ভারতের অপরিবর্তনীয় সম্পর্কটি বদলে গেছে।
আরেকটি বিষয় স্মরণ করিয়ে দেয়া উচিত। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের প্রাক্কালে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং পরমাণু যুদ্ধের শঙ্কা উত্থাপন করে বলেছেন, তার দেশ এখন পরমাণু অস্ত্র-সংক্রান্ত ‘প্রথমে ব্যবহার নয়’ নীতি পরিত্যাগ করতে পারে। পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে থাকা কাশ্মীর অংশটুকু আবার জয় করা নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বক্তব্য প্রদান করার প্রেক্ষাপটে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেছেন।
ভারতের এই মনোভাব পাকিস্তানে প্রত্যাশিত ক্রোধের সৃষ্টি করেছে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান হিটলারের নাৎসি দলের মতো কাজ করার জন্য ভারত সরকারকে অভিযুক্ত করেছেন, কাশ্মীরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিকাকে জাতিগত শুদ্ধি অভিযানের সাথে তুলনা করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে হুঁশিয়ার করেছেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় বোর্ড মন্তব্য করেছে ৫ আগস্ট মোদির এই বিপর্যয়কর কাজের ফলে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান কাশ্মীর আরো বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। এই কাজের মাধ্যমে তিনি কাশ্মীর প্রশ্নটি এতটাই ‘আন্তর্জাতিক’ করে ফেলেছেন যা গত অর্ধ শত বছরেরও হয়নি। এখানে কারণ বলা হলো:
জাতিসংঘ সাধারণত যা করে, এবারো তাই করেছে। ফলে পাকিস্তান ও ভারত উভয়েই দাবি করেছে এই বৈঠকে তাদের জয় হয়েছে এবং তাদের ঘরোয়া শ্রোতাদের আত্মতুষ্টিতে থাকতে দিয়েছেন। এদিকে কাশ্মীরের জনগণকে তাদের দেয়ার মতো কিছুই নয়, এমনকি সান্ত্বনার বাণীও নয়।
এগুলো কেবল এই অঞ্চলের নয়, বরং বিশ্বের সমস্যা এবং সম্ভবত এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বের সর্বোত্তম স্বার্থে কাজ করার।
এই সঙ্কট শুরু ৫ আগস্ট। ওই দিন ভারত একতরফাভাবে বিরোধপূর্ণ কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা বাতিল করে দেয়। অথচ ভারতের সাথে সাময়িকভাবে একীভূত হওয়ার আইনগত ভিত্তি ও মূল শর্তই ছিল ওই মর্যাদা। ১১ দিন পর যখন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এর সভা সমাপ্ত করে, তখনো ভারত-অধ্যুষিত কাশ্মীর সম্পূর্ণ স্থবির ছিল: পুরোপুরি নীরব ও বিধ্বস্ত ছিল, বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম সেনাসমাবেশ ছিল সেখানে। এর রাজধানী শ্রীনগর ব্যারিকেড দেয়া গ্যারিসন, বিশ্বের বৃহত্তম কারাগারে পরিণত হয়।
প্রখ্যাত ভারতীয় ঔপন্যাসিক অরুন্ধতী রায় ও অন্য অনেক শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবী কাশ্মীরের একতরফা দখলকে ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রতি আঘাত হিসেবে অভিহিত করেছেন। অরুন্ধতী একে এক ধরনের উপনিবেশবাদ হিসেবে অভিহিত করেছেন। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপ করার ফলে এবং কাশ্মীরের ধর্মীয় জনসংখ্যা পরিবর্তনের সম্ভাব্য পরিকল্পনাটি কাশ্মীরের সাথে ভারতের অপরিবর্তনীয় সম্পর্কটি বদলে গেছে।
আরেকটি বিষয় স্মরণ করিয়ে দেয়া উচিত। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের প্রাক্কালে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং পরমাণু যুদ্ধের শঙ্কা উত্থাপন করে বলেছেন, তার দেশ এখন পরমাণু অস্ত্র-সংক্রান্ত ‘প্রথমে ব্যবহার নয়’ নীতি পরিত্যাগ করতে পারে। পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে থাকা কাশ্মীর অংশটুকু আবার জয় করা নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বক্তব্য প্রদান করার প্রেক্ষাপটে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেছেন।
ভারতের এই মনোভাব পাকিস্তানে প্রত্যাশিত ক্রোধের সৃষ্টি করেছে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান হিটলারের নাৎসি দলের মতো কাজ করার জন্য ভারত সরকারকে অভিযুক্ত করেছেন, কাশ্মীরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিকাকে জাতিগত শুদ্ধি অভিযানের সাথে তুলনা করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে হুঁশিয়ার করেছেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় বোর্ড মন্তব্য করেছে ৫ আগস্ট মোদির এই বিপর্যয়কর কাজের ফলে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান কাশ্মীর আরো বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। এই কাজের মাধ্যমে তিনি কাশ্মীর প্রশ্নটি এতটাই ‘আন্তর্জাতিক’ করে ফেলেছেন যা গত অর্ধ শত বছরেরও হয়নি। এখানে কারণ বলা হলো:
- আন্তর্জাতিকভাবে বিরোধপূর্ণ এলাকার মর্যাদা একতরফাভাবে পরিবর্তনের ফলে কাশ্মীর প্রশ্নে সব ধরনের আন্তর্জাতিক স্থিতিবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে ভারতের সাথে থাকা চীন ও পাকিস্তানের মধ্যকার তথাকথিত নিয়ন্ত্রণ রেখার মূল প্রকৃতিই নষ্ট হয়ে যাওয়া।
- ভারতের ভয়াবহ মাত্রায় একতরফা পদক্ষেপের ফলে কাশ্মীর-সম্পর্কিত সব ইস্যু পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত বলে দীর্ঘ দিন ধরে যে অবস্থান ছিল তা কার্যত পরিত্যাগ করা। এটি বড় ধরনের একটি পরিবর্তন। ভারত ধারাবাহিকভাবে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে। ভারতই ১৯৪৮ সালে বিষয়টি জাতিসংঘে নিয়ে গিয়েছিল বহুপক্ষীয় সমাধানের জন্য এবং সেখানে স্বীকার করেছিল যে গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মীর ইস্যুটির সমাধান করা হবে। কিন্তু ওই গণভোট আর কখনো হয়নি। ১৯৭২ সালে ভারত ৯০ হাজারে বেশি পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দীকে আটকে শিমলা চুক্তি আদায় করে নেয় আর কাশ্মীর সমস্যার দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে সমাধানের কথা বলে। তারপর ২০১৯ সালে তারা কাশ্মীর প্রশ্নটি একতরফাভাবে ‘সমাধান’ করার কথা ঘোষণা করল। ভারতের নতুন একতরফা নীতির ফলে শিমলা চুক্তি এখন মৃত, দ্বিপক্ষীয় সমাধানের প্রয়াসের কোনো অবকাশ থাকল না। ফলে এই বিরোধ এখন আন্তর্জাতিক বিরোধে পরিণত হয়েছে।
- শেষ কথা হলো, ভারত ও পাকিস্তান ব্যর্থ হয়েছে বলেই নয়, বরং এই ব্যর্থতার সাথে মানুষের সম্পর্ক রয়েছে বলেও এটি আন্তর্জাতিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। শ্রীনগরের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়ার পর আংশিকভাবে আবার চালু করতেই ১৫ দিন লেগেছে। কিন্তু সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে প্রত্যাশিত মাত্রায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসেনি। পরিস্থিতি কারো জন্যই ভালো নয়।
অনিচ্ছুকভাবে
হলেও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বৈঠক করায় বোঝা যাচ্ছে যে প্রধান শক্তিগুলোর
মধ্যে এই উপলব্ধির সৃষ্টি হয়েছে যে এই সঙ্ঘাতের প্রতি আন্তর্জাতিক নজরদারি
প্রয়োজন। ভারত ও পাকিস্তান এই সমস্যার সমাধান করতে পারেনি বলেই নয়, বরং
এটি জাতিসংঘের একটি অসমাপ্ত এজেন্ডা হওয়ার কারণেও এর দিকে নজর দেয়া
প্রয়োজন।
ভারত ও পাকিস্তান ৭০ বছর ধরে এই সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। ফলে তাদের হাতে এর সমাধানের দায়িত্ব অর্পণ করা ঠিক নয়।
তাছাড়া ভারতের একতরফা ব্যবস্থার ফলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সংলাপের কোনো অবকাশ আছে কি? কোথায় হবে তা? এতে কি ফলাফল আসতে পারে? সংলাপ সবসময়ই ভালো আইডিয়া, কিন্তু তা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বা কোনো পরশাক্তির মধ্যস্ততা ছাড়া হতে পারে না।
উল্লেখ্য, একটি পরাশক্তি আছে, যে কাশ্মীর প্রশ্নে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্ততা করতে আগ্রহী। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তার প্রস্তাবটি উত্থাপনের এটিই সবচেয়ে ভালো সময়।
ভারত ও পাকিস্তান ৭০ বছর ধরে এই সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। ফলে তাদের হাতে এর সমাধানের দায়িত্ব অর্পণ করা ঠিক নয়।
তাছাড়া ভারতের একতরফা ব্যবস্থার ফলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সংলাপের কোনো অবকাশ আছে কি? কোথায় হবে তা? এতে কি ফলাফল আসতে পারে? সংলাপ সবসময়ই ভালো আইডিয়া, কিন্তু তা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বা কোনো পরশাক্তির মধ্যস্ততা ছাড়া হতে পারে না।
উল্লেখ্য, একটি পরাশক্তি আছে, যে কাশ্মীর প্রশ্নে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্ততা করতে আগ্রহী। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তার প্রস্তাবটি উত্থাপনের এটিই সবচেয়ে ভালো সময়।
No comments