এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক বাড়ছে by আলভিতে নিংথুজাম
গত
দুই দশকে চীন, সিঙ্গাপুর ও ভারতের মতো দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক
গড়ে তোলার পর ইসরাইল এখন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া (বিশেষ করে ভিয়েতনাম,
মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড) ও পূর্ব এশিয়ায় (জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া)
উপস্থিতি জোরদার করতে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। উভয়পক্ষকে কাছাকাছি নিয়ে
আসতে সহায়তা করেছে রিয়েলপলিটিক ও কৌশলগত স্বার্থ। এসব দেশের সঙ্গে
অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্কটিকে দীর্ঘ মেয়াদে রাজনৈতিক অংশীদারিত্বে
রূপ দেয়া ইসরাইলের লক্ষ্য।
ফিলিস্তিন প্রশ্নটি এশিয়ার অনেক দেশের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে আছে। আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক না থাকার পরও জুলাইয়ের শুরুতে একটি ইন্দোনেশিয় বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের ইসরাইল সফর এই অঞ্চলের সঙ্গে ইহুদি রাষ্ট্রটির ক্রমবর্ধমান অন্তরঙ্গ সম্পর্কের প্রমাণ। ফিলিস্তিনীদের উপর ইসরাইলের নির্যাতন নিয়ে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার মতো কয়েকটি দেশে কিছু বিক্ষোভ হলেও এশিয়ার এই অংশের অন্য দেশগুলো ছিলো তুলনামূলক নীরব। এতে এশিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক সম্প্রসারণে সাহসী হয়েছে ইসরাইল।
চলতি বছর জুলাইয়ের মাঝামাঝি ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট রিউভেন রিভলিন দক্ষিণ কোরিয়া সফরে গিয়ে বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আঞ্চলিক নিরাপত্তাসহ সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। সফরটি অর্থনৈতিক প্রকৃতির হলেও ইসরাইলী প্রেসিডেন্ট তার দেশের তৈরি ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়াকে পরিচিত করার সুযোগ ছাড়েননি।
এ ধরনের উচ্চপর্যায়ের সফরের মধ্যে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রোদ্রিগো দুতার্তের ইসরাইল সফর রয়েছে। সফরগুলো যেসব আলোচনা ও চুক্তি হয় সেগুলোর সামরিক উপাদানগুলো ব্যাপক মনযোগ আকৃষ্ট করেছে। এতে ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে এশিয়ার দেশগুলোর কাছে পছন্দসই অস্ত্রের উৎস হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে ইসরাইল।
গত কয়েক বছরে ইসরাইল ও দক্ষিণপূর্ব/পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সামরিক সম্পর্কটি খুবই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিগত ছয় বছর ধরে ইসরাইলী প্রতিরক্ষা রফতানির সবচেয়ে বড় গন্তব্য এই অঞ্চল। ২০১৮ সালে ইসরাইল যে ৭.৫ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রফতানি করে তার ৪৬% কেনে এশিয়ার দেশগুলো। ইসরাইল শুধু বিশ্বের অষ্টম বৃহৎ অস্ত্র রফতানিকারকই নয় ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তার অস্ত্রের শীর্ষ তিন আমদানিকারকের মধ্যে ভিয়েতনামের নাম রয়েছে। বাকি দুটি হলো আজারবাইজান ও ভারত। অস্ত্র গবেষণা কর্মসূচির তহবিল যোগানের জন্য ইসরাইলের অস্ত্র বিক্রি করা প্রয়োজন। তাছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা আয় তো রয়েছেই।
ইসরাইলী অস্ত্র তার নিজের ব্যবহার করার সুযোগ সীমিত। ফলে বাজার খুঁজতে গিয়ে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া লোভনীয় ক্ষেত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ইসরাইলের তৈরি আইটেমগুলোর মধ্যে এয়ারক্রাফট ও সংশ্লিষ্ট সিস্টেমগুলোর আপগ্রেড, মিসাইল ও এন্টি মিসাইল সিস্টেম, সীমান্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম, আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম, গোয়েন্দা যন্ত্রপাতি ও সামরিক এভিয়েশনের উপাদান। ২০১৮ সালে ইরাইলের প্রতিরক্ষা রফতানির মধ্যে মিসাইল ও মিসাইল প্রতিরক্ষা সিস্টেম ছিলো ২৪%, ড্রোন ও রাডার সিস্টেম ১৫%, ইলেক্ট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম ১৪% এবং যোগাযোগ ও গোয়েন্দা সরঞ্জাম ৬%।
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন ও দেশীয়করণ কর্মসূচি, ভূখণ্ডগত বিরোধ, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থীদের উত্থান, ইত্যাদি ইসরাইলের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামকে ওই অঞ্চলে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে। তাছাড়া এসব দেশের সামরিক সরঞ্জাম পুরনো হয়ে যাওয়ায় তারা বিকল্প ও উন্নত ব্যবস্থা খুঁজছে। ফলে ইসরাইলী প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলোর সামর্থ্য বিশেষ করে ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা পরিকল্পনাকারীদের মনযোগ কেড়ে নিয়েছে।
ইসরাইলের অস্ত্র রফতানি নীতির সঙ্গে কোন শর্ত জুড়ে দেয়া হয় না। তাই উপরে উল্লেখিত দেশগুলোর কয়েকটি প্রকাশ্যেই ইসরাইলী অস্ত্রের ব্যাপারে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ১৯৫০’র দশকের শুরু থেকেই ইসরাইল এই নীতি অনুসরণ করে আসছে। দেশটি তার পররাষ্ট্রনীতির লক্ষ্য অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে অস্ত্র রফতানি ও সামরিক সহায়তা কর্মসূচিকে কাজে লাগাচ্ছে। ফলে যেসব দেশে মানবাধিকার নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ রয়েছে সেখানেও অস্ত্র রফতানিতে পিছ পা হয় না ইসরাইল। এক্ষেত্রে মিয়ানমার ও ফিলিপাইনের উদাহরণ দেয়া যায়।
দুতার্তে সফরের সময় তার সেনাবাহিনীকে গোয়েন্দা সরঞ্জামসহ প্রতিরক্ষা আইটেমগুলো শুধু ইসরাইলের কাছ থেকে কেনার নির্দেশ দেন। মিয়ানমারের সঙ্গেও ইসরাইল গোপনে অস্ত্র ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে সন্দেহ করা হয়। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং লাইং ইসরাইল সফর করেন। অতি সম্প্রতি, গত জুনে মিয়ানমারের সেনা প্রতিনিধি দলকে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতে অংশ গ্রহণ করতে দেখা গেছে। যদিও দেশটির কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ রাখার দাবি করে আসছে তেল আবিব। ইসরাইল অতীতে যেভাবে গোপনে অস্ত্র ব্যবসা করেছে তার আলোকে মিয়ানমারের সঙ্গেও তারা একই ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
অস্ত্র ব্যবসার বাইরে সন্ত্রাস দমন সহযোগিতা ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে ইসরাইল। চলতি বছরের জুলাইয়ে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রথমবারের মতো ফিলিপাইনের সেনাদলকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। সন্ত্রাসদমন নিয়ে দুই দেশের একই মনোভাব থাকায় ভবিষ্যতে এই সহযোগিতা বাড়তে থাকবে।
পূর্ব এশিয়ার ক্ষেত্রে, জাপানের সঙ্গে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা কিভাবে এগোয় তা দেখার বিষয়। ২০১৪ সালের মে মাসে ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর টোকিও সফরের সময় দ্বিপক্ষিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়। যদিও এখন পর্যন্ত এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়নি কিন্তু নিকট ভবিষ্যতে জাপান যদি ইসরাইলের বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয় তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। নিয়মিত অস্ত্রবাণিজ্য ও যৌথভাবে সমরাস্ত্র উন্নয়নের কাজটি শুরু করতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষেত্রে এমনটি হবে না। দেশটি এরই মধ্যে ইসরাইলের সঙ্গে সামরিক নিরাপত্তা সহযোগিতা সম্পর্ক জোরদার করেছে। তবে গত জুনের শেষ দিকে জাপানি প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান জেনারেল কোজি ইয়ামাজাকির ইসরাইল সফর দুই সেনাবাহিনীর মধ্যে অংশীদারিত্ব সৃষ্টির প্রাথমিক পদক্ষেপ হতে পারে।
এসব এশিয় রাষ্ট্র ও ইসরাইলের মধ্যে সামরিক সম্পর্কে অগ্রগতি হওয়ার বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। উদীয়মান নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ, উন্নত প্রযুক্তির প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম অনুসন্ধান, এবং দক্ষিণপূর্ব/পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর কিছু চাহিদা পূরণে ইসরাইলের ইচ্ছার কারণে তাদের মধ্যে সহযোগিতা বিস্তৃত হবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রয়োজনে প্রতিরক্ষা যোগাযোগকে উৎসাহিত করে যাবে ইসরাইল সরকার। এতে এক সময় দেশগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠাও সহজ হবে।
ইসরাইল এ পর্যন্ত যা অর্জন করেছে তাতে বলতে হয় যে, নেতানিয়াহুর ‘পিভোট টু এশিয়া’ নীতি কিছু ফল দিতে শুরু করেছে। ইসরাইল নৈপূন্যের সঙ্গে এই অঞ্চলে তার পররাষ্ট্রনীতি এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে যাবে।
ফিলিস্তিন প্রশ্নটি এশিয়ার অনেক দেশের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে আছে। আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক না থাকার পরও জুলাইয়ের শুরুতে একটি ইন্দোনেশিয় বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের ইসরাইল সফর এই অঞ্চলের সঙ্গে ইহুদি রাষ্ট্রটির ক্রমবর্ধমান অন্তরঙ্গ সম্পর্কের প্রমাণ। ফিলিস্তিনীদের উপর ইসরাইলের নির্যাতন নিয়ে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার মতো কয়েকটি দেশে কিছু বিক্ষোভ হলেও এশিয়ার এই অংশের অন্য দেশগুলো ছিলো তুলনামূলক নীরব। এতে এশিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক সম্প্রসারণে সাহসী হয়েছে ইসরাইল।
চলতি বছর জুলাইয়ের মাঝামাঝি ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট রিউভেন রিভলিন দক্ষিণ কোরিয়া সফরে গিয়ে বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আঞ্চলিক নিরাপত্তাসহ সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। সফরটি অর্থনৈতিক প্রকৃতির হলেও ইসরাইলী প্রেসিডেন্ট তার দেশের তৈরি ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়াকে পরিচিত করার সুযোগ ছাড়েননি।
এ ধরনের উচ্চপর্যায়ের সফরের মধ্যে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রোদ্রিগো দুতার্তের ইসরাইল সফর রয়েছে। সফরগুলো যেসব আলোচনা ও চুক্তি হয় সেগুলোর সামরিক উপাদানগুলো ব্যাপক মনযোগ আকৃষ্ট করেছে। এতে ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে এশিয়ার দেশগুলোর কাছে পছন্দসই অস্ত্রের উৎস হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে ইসরাইল।
গত কয়েক বছরে ইসরাইল ও দক্ষিণপূর্ব/পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সামরিক সম্পর্কটি খুবই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিগত ছয় বছর ধরে ইসরাইলী প্রতিরক্ষা রফতানির সবচেয়ে বড় গন্তব্য এই অঞ্চল। ২০১৮ সালে ইসরাইল যে ৭.৫ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রফতানি করে তার ৪৬% কেনে এশিয়ার দেশগুলো। ইসরাইল শুধু বিশ্বের অষ্টম বৃহৎ অস্ত্র রফতানিকারকই নয় ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তার অস্ত্রের শীর্ষ তিন আমদানিকারকের মধ্যে ভিয়েতনামের নাম রয়েছে। বাকি দুটি হলো আজারবাইজান ও ভারত। অস্ত্র গবেষণা কর্মসূচির তহবিল যোগানের জন্য ইসরাইলের অস্ত্র বিক্রি করা প্রয়োজন। তাছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা আয় তো রয়েছেই।
ইসরাইলী অস্ত্র তার নিজের ব্যবহার করার সুযোগ সীমিত। ফলে বাজার খুঁজতে গিয়ে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া লোভনীয় ক্ষেত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ইসরাইলের তৈরি আইটেমগুলোর মধ্যে এয়ারক্রাফট ও সংশ্লিষ্ট সিস্টেমগুলোর আপগ্রেড, মিসাইল ও এন্টি মিসাইল সিস্টেম, সীমান্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম, আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম, গোয়েন্দা যন্ত্রপাতি ও সামরিক এভিয়েশনের উপাদান। ২০১৮ সালে ইরাইলের প্রতিরক্ষা রফতানির মধ্যে মিসাইল ও মিসাইল প্রতিরক্ষা সিস্টেম ছিলো ২৪%, ড্রোন ও রাডার সিস্টেম ১৫%, ইলেক্ট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম ১৪% এবং যোগাযোগ ও গোয়েন্দা সরঞ্জাম ৬%।
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন ও দেশীয়করণ কর্মসূচি, ভূখণ্ডগত বিরোধ, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থীদের উত্থান, ইত্যাদি ইসরাইলের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামকে ওই অঞ্চলে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে। তাছাড়া এসব দেশের সামরিক সরঞ্জাম পুরনো হয়ে যাওয়ায় তারা বিকল্প ও উন্নত ব্যবস্থা খুঁজছে। ফলে ইসরাইলী প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলোর সামর্থ্য বিশেষ করে ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা পরিকল্পনাকারীদের মনযোগ কেড়ে নিয়েছে।
ইসরাইলের অস্ত্র রফতানি নীতির সঙ্গে কোন শর্ত জুড়ে দেয়া হয় না। তাই উপরে উল্লেখিত দেশগুলোর কয়েকটি প্রকাশ্যেই ইসরাইলী অস্ত্রের ব্যাপারে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ১৯৫০’র দশকের শুরু থেকেই ইসরাইল এই নীতি অনুসরণ করে আসছে। দেশটি তার পররাষ্ট্রনীতির লক্ষ্য অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে অস্ত্র রফতানি ও সামরিক সহায়তা কর্মসূচিকে কাজে লাগাচ্ছে। ফলে যেসব দেশে মানবাধিকার নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ রয়েছে সেখানেও অস্ত্র রফতানিতে পিছ পা হয় না ইসরাইল। এক্ষেত্রে মিয়ানমার ও ফিলিপাইনের উদাহরণ দেয়া যায়।
দুতার্তে সফরের সময় তার সেনাবাহিনীকে গোয়েন্দা সরঞ্জামসহ প্রতিরক্ষা আইটেমগুলো শুধু ইসরাইলের কাছ থেকে কেনার নির্দেশ দেন। মিয়ানমারের সঙ্গেও ইসরাইল গোপনে অস্ত্র ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে সন্দেহ করা হয়। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং লাইং ইসরাইল সফর করেন। অতি সম্প্রতি, গত জুনে মিয়ানমারের সেনা প্রতিনিধি দলকে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতে অংশ গ্রহণ করতে দেখা গেছে। যদিও দেশটির কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ রাখার দাবি করে আসছে তেল আবিব। ইসরাইল অতীতে যেভাবে গোপনে অস্ত্র ব্যবসা করেছে তার আলোকে মিয়ানমারের সঙ্গেও তারা একই ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
অস্ত্র ব্যবসার বাইরে সন্ত্রাস দমন সহযোগিতা ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে ইসরাইল। চলতি বছরের জুলাইয়ে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রথমবারের মতো ফিলিপাইনের সেনাদলকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। সন্ত্রাসদমন নিয়ে দুই দেশের একই মনোভাব থাকায় ভবিষ্যতে এই সহযোগিতা বাড়তে থাকবে।
পূর্ব এশিয়ার ক্ষেত্রে, জাপানের সঙ্গে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা কিভাবে এগোয় তা দেখার বিষয়। ২০১৪ সালের মে মাসে ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর টোকিও সফরের সময় দ্বিপক্ষিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়। যদিও এখন পর্যন্ত এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়নি কিন্তু নিকট ভবিষ্যতে জাপান যদি ইসরাইলের বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয় তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। নিয়মিত অস্ত্রবাণিজ্য ও যৌথভাবে সমরাস্ত্র উন্নয়নের কাজটি শুরু করতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষেত্রে এমনটি হবে না। দেশটি এরই মধ্যে ইসরাইলের সঙ্গে সামরিক নিরাপত্তা সহযোগিতা সম্পর্ক জোরদার করেছে। তবে গত জুনের শেষ দিকে জাপানি প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান জেনারেল কোজি ইয়ামাজাকির ইসরাইল সফর দুই সেনাবাহিনীর মধ্যে অংশীদারিত্ব সৃষ্টির প্রাথমিক পদক্ষেপ হতে পারে।
এসব এশিয় রাষ্ট্র ও ইসরাইলের মধ্যে সামরিক সম্পর্কে অগ্রগতি হওয়ার বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। উদীয়মান নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ, উন্নত প্রযুক্তির প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম অনুসন্ধান, এবং দক্ষিণপূর্ব/পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর কিছু চাহিদা পূরণে ইসরাইলের ইচ্ছার কারণে তাদের মধ্যে সহযোগিতা বিস্তৃত হবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রয়োজনে প্রতিরক্ষা যোগাযোগকে উৎসাহিত করে যাবে ইসরাইল সরকার। এতে এক সময় দেশগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠাও সহজ হবে।
ইসরাইল এ পর্যন্ত যা অর্জন করেছে তাতে বলতে হয় যে, নেতানিয়াহুর ‘পিভোট টু এশিয়া’ নীতি কিছু ফল দিতে শুরু করেছে। ইসরাইল নৈপূন্যের সঙ্গে এই অঞ্চলে তার পররাষ্ট্রনীতি এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে যাবে।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ইসরাইল সফরকালে প্রেসিডেন্ট রিউভেন রিভলিনের সঙ্গে সাক্ষাত করেন মিয়ানমারের সেনা প্রধান মিন অং লাইং |
No comments