রক্ত আর বিশ্বাসঘাতকতায় লেখা ভারতীয় গণতন্ত্রের কাহিনী by প্রতাপ ভানু মেহতা
প্রজাতন্ত্রের
ইতিহাসে অনেক সময় থাকে যখন তা নিজেই স্বৈরতন্ত্র হয়ে পড়ে। কমও নয়, বেশিও
নয়। আমরা কাশ্মিরে সেটিই দেখছি। তবে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য এখন যে
মহড়া দেয়া হচ্ছে, তা বাকি ভারতেও অনুসরণ করা হতে পারে। যে কায়দায় বিজেপি
সরকার ৩৭০ ধারায় থাকা জম্মু ও কাশ্মিরের মর্যাদা পরিবর্তন করেছে, রাজ্যটিকে
দ্বিখণ্ডিত করেছে, সেটিই বিজেপির আসল চরিত্র। তাদের কাছে পেশী শক্তিই সব।
এই অবস্থা গণতন্ত্রকে বিদ্রুপে পরিণত করবে। এটি ভয়ের প্রভাব ফেলবে। এটি
তাদের জাতীয়তাবাদী দাম্ভিকতার জন্য সাধারণ নাগরিকদেরকে হাতিয়ারে পরিণত করা
হবে।
কাশ্মির প্রশ্নে একটি চরম পদক্ষেপ গ্রহণের সমর্থনে যে বক্তব্য দেয়া হয়েছে, তা পরিচিত। ধারা ৩৫ (ক) একটি বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা, ফলে এটি বাতিল করাই উচিত। ধারা ৩৭০ একীভূতকরণের কোনো ব্যবস্থা নয়, বরং আলাদাকরণের একটি আইনগত ব্যবস্থা। অতীতে এই রাজ্যে জঘন্য সহিংসতার মুখে পড়লেও এমন কঠিন অবস্থায় কখনো পড়েনি। কাশ্মিরে চরমপন্থীদের দমন করতে হবে। আন্তর্জাতিক পরিবেশও দারুণ। চীন যা করছে (পুরো সংস্কৃতি ও সমাজকে বদলে দেয়া), আমরাও তা করতে পারি। আমরা পাকিস্তান ও তালেবানকে তাদের স্থান দেখিয়ে দিতে পারি। আমাদের পুরনো ভয় ঝেড়ে ফেলি। এখন সময় হলো সুযোগ গ্রহণ করা। চিরদিনের মতো ফয়সালা করে দেই, প্রয়োজনে পাশবিক শক্তি প্রয়োগ করে।
এসব যুদ্ধের অনেকটির মধ্যে সত্য রয়েছে। স্থিতিবস্থা ছিল দ্বিগুণ ক্ষতির বিষয়। এর ফলে কাশ্মিরিদের সমস্যার সুরাহা হয়নি। তারা দুই প্রজন্ম ধরে কার্যত সামরিক দখলদারিত্বের মধ্যে ছিল। এর ফলে কাশ্মির ও অবশিষ্ট ভারতের মধ্যে ব্যবধান আরো বেড়েছে। ফলে কিছু করা অনিবার্য ছিল। কিন্তু সত্যের নির্যাস করা হয়েছে খারাপ অস্ত্র প্রয়োগ করে। সমাধানটি করা হয়েছে ভদ্রতাকে বিদায় করে দিয়ে। যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা নতুন সাংবিধানিক সমঝোতা নয়, বরং চাপিয়ে দেয়া। এটা দমনপীড়ন, সোজা সাপ্টা। চীনের কথাই মনে করিয়ে দেয় এটি। আর তা হলো শক্তিশালী রাজ্য ও একই ধরনের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় ফেডারেলব্যবস্থাই একটি বাধা।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ভারত তার নিজের সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতির সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। কাশ্মিরের বাইরে হয়তো ভারতের অনেক অসামঞ্জস্যতাপূর্ণ ফেডারেলব্যবস্থা রয়েছে। কাশ্মিরের এই পদক্ষেপের ফলে অন্যান্য রাজ্যেও এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ করে দেবে। আমরা কিভাবে নাগাল্যান্ডের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার সুযোগ দিয়ে কাশ্মিরের জন্য প্রত্যাখ্যান করি? বর্তমান পদক্ষেপের অর্থ হলো, সরকার যেকোনো বিদ্যমান রাজ্যকে ইউনিয়ন ভূখণ্ড হিসেবে একতরফাভাবে ঘোষণা করতে পারে।
এখানে বিষয়টি নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। সাময়িকভাবে হলেও, ইতোমধ্যেই পর্যুদস্ত লোকজনকে আরো পর্যুদস্ত করার পরিকল্পনা নিয়ে ৩৭০ ধারা বাতিল করার পরও জম্মু-কাশ্মিরের মর্যাদা বদলিয়ে সেটিকে কেন্দ্র-শাসিত ভূখণ্ডে পরিণত করা হয়েছে। ভারতে কিভাবে একটি মুসলিম প্রধান্যপূর্ণ রাজ্য থাকতে পারে? কাশ্মিরকে এখন এমনকি রাজ্য হিসেবেও বিশ্বাস করা হচ্ছে না। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য একীভূত করা নয়, বরং পর্যুদস্ত করা। আর এর মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের অবস্থাও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
এই পদক্ষেপ যৌক্তিক হতে পারে যদি তা সমস্যাটির সমাধান করে। কিন্তু তা করবে কি? এখানে থাকবে চাপা শান্তি, সামরিকভাবে নিরাপদ। এটাকেই আমরা ভুল করে বিজয় ভাবব। দেশপ্রেমের মোড়কে থাকা সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য বিষয়টিকে আরো ক্ষতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। ভারতকে একত্রিত রাখার একমাত্র ভিত্তি হিসেবে শক্তির প্রয়োগ আরো বাড়তে পারে। আমরা যদি শক্তি প্রয়োগের কঠিন প্রয়োজনের কথাও স্বীকার করি, তবে তা করা যেতে পারে বৃহত্তর রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে। আনুগত্য আসতে পারে মুক্ত আকাঙ্ক্ষা থেকে, ভীতি থেকে নয়। এমনকি সামরিক চাপের মুখে কাশ্মির যদি তার নিয়তির কাছে আত্মসমর্পণ করে, তবুও বাকি ভারতে চরমপন্থীর আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। ইতোমধ্যেই এর লক্ষণ ফুটে ওঠেছে। রাজনৈতিক সহিংসতার মঞ্চ বদলে যাবে। উত্তর প্রদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালার সাম্প্রদায়িকতাপূর্ণ স্পর্শকাতরতার কারণে ভারত হবে আরো বেশি ভঙ্গুর।
আর মৌলিকভাবে এই পরিবর্তন ভারতীয় গণতন্ত্র যে ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে, তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ, ভোটের পাশবিক শক্তিতে পরিণত হচ্ছে। এটি আর অন্তর্ভুক্তির সেফটি ভালব হিসেবে বিরাজ করছে না। বিরোধীদের শক্তি হরণ কেবল সমস্যাটিকে জটিলই করবে। প্রতিবাদ করার আর কোনো জায়গা রইল না। দেশভিত্তিক দলগুলোকে যতটা দুর্বল মনে হয়েছিল, তার চেয়েও দুর্বল প্রতীয়মান হয়েছে তারা। কংগ্রেস কোনো অবস্থানেই দাঁড়াতে পারছে না। পার্লামেন্ট এখন আর বিতর্কের ফোরাম নয়, এটি পরিণত হয়েছে নোটিশ বোর্ডে।
সুপ্রিম কোর্ট কী করে তার জন্য অপেক্ষা করতে পারি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের কার্যক্রমে দেখা যাচ্ছে, তারা নির্বাহী বিভাগের চেয়েও বেশি নির্বাহী মনস্ক। কাশ্মির কেবল কাশ্মিরই নয়। ইউএপিএ, এনআরসি, সাম্প্রদায়িকতাবাদ, অযোধ্যা ইত্যাদিও একই সুতায় বাঁধা। এখন কেউই নিরাপদ নয়। কেবল কাশ্মিরিরা নয়, কেবল সংখ্যালঘুরা নয়, যেই সাংবিধানিক মুক্তির জন্য দাঁড়াবে, সবার সামনেই বিপদ।
সমস্যা সমাধানের জন্য প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে না। বিজেপি মনে করছে, তারা কাশ্মিরকে ভারতীয়করণ করছে। কিন্তু আসলে এর বদলে আমরা দেখতে পাব যে ভারতকেই কাশ্মিরকরণ করা হচ্ছে। রক্ত আর বিশ্বাসঘাতকতায় লেখা ভারতীয় গণতন্ত্রের কাহিনী।
কাশ্মির প্রশ্নে একটি চরম পদক্ষেপ গ্রহণের সমর্থনে যে বক্তব্য দেয়া হয়েছে, তা পরিচিত। ধারা ৩৫ (ক) একটি বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা, ফলে এটি বাতিল করাই উচিত। ধারা ৩৭০ একীভূতকরণের কোনো ব্যবস্থা নয়, বরং আলাদাকরণের একটি আইনগত ব্যবস্থা। অতীতে এই রাজ্যে জঘন্য সহিংসতার মুখে পড়লেও এমন কঠিন অবস্থায় কখনো পড়েনি। কাশ্মিরে চরমপন্থীদের দমন করতে হবে। আন্তর্জাতিক পরিবেশও দারুণ। চীন যা করছে (পুরো সংস্কৃতি ও সমাজকে বদলে দেয়া), আমরাও তা করতে পারি। আমরা পাকিস্তান ও তালেবানকে তাদের স্থান দেখিয়ে দিতে পারি। আমাদের পুরনো ভয় ঝেড়ে ফেলি। এখন সময় হলো সুযোগ গ্রহণ করা। চিরদিনের মতো ফয়সালা করে দেই, প্রয়োজনে পাশবিক শক্তি প্রয়োগ করে।
এসব যুদ্ধের অনেকটির মধ্যে সত্য রয়েছে। স্থিতিবস্থা ছিল দ্বিগুণ ক্ষতির বিষয়। এর ফলে কাশ্মিরিদের সমস্যার সুরাহা হয়নি। তারা দুই প্রজন্ম ধরে কার্যত সামরিক দখলদারিত্বের মধ্যে ছিল। এর ফলে কাশ্মির ও অবশিষ্ট ভারতের মধ্যে ব্যবধান আরো বেড়েছে। ফলে কিছু করা অনিবার্য ছিল। কিন্তু সত্যের নির্যাস করা হয়েছে খারাপ অস্ত্র প্রয়োগ করে। সমাধানটি করা হয়েছে ভদ্রতাকে বিদায় করে দিয়ে। যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা নতুন সাংবিধানিক সমঝোতা নয়, বরং চাপিয়ে দেয়া। এটা দমনপীড়ন, সোজা সাপ্টা। চীনের কথাই মনে করিয়ে দেয় এটি। আর তা হলো শক্তিশালী রাজ্য ও একই ধরনের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় ফেডারেলব্যবস্থাই একটি বাধা।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ভারত তার নিজের সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতির সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। কাশ্মিরের বাইরে হয়তো ভারতের অনেক অসামঞ্জস্যতাপূর্ণ ফেডারেলব্যবস্থা রয়েছে। কাশ্মিরের এই পদক্ষেপের ফলে অন্যান্য রাজ্যেও এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ করে দেবে। আমরা কিভাবে নাগাল্যান্ডের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার সুযোগ দিয়ে কাশ্মিরের জন্য প্রত্যাখ্যান করি? বর্তমান পদক্ষেপের অর্থ হলো, সরকার যেকোনো বিদ্যমান রাজ্যকে ইউনিয়ন ভূখণ্ড হিসেবে একতরফাভাবে ঘোষণা করতে পারে।
এখানে বিষয়টি নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। সাময়িকভাবে হলেও, ইতোমধ্যেই পর্যুদস্ত লোকজনকে আরো পর্যুদস্ত করার পরিকল্পনা নিয়ে ৩৭০ ধারা বাতিল করার পরও জম্মু-কাশ্মিরের মর্যাদা বদলিয়ে সেটিকে কেন্দ্র-শাসিত ভূখণ্ডে পরিণত করা হয়েছে। ভারতে কিভাবে একটি মুসলিম প্রধান্যপূর্ণ রাজ্য থাকতে পারে? কাশ্মিরকে এখন এমনকি রাজ্য হিসেবেও বিশ্বাস করা হচ্ছে না। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য একীভূত করা নয়, বরং পর্যুদস্ত করা। আর এর মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের অবস্থাও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
এই পদক্ষেপ যৌক্তিক হতে পারে যদি তা সমস্যাটির সমাধান করে। কিন্তু তা করবে কি? এখানে থাকবে চাপা শান্তি, সামরিকভাবে নিরাপদ। এটাকেই আমরা ভুল করে বিজয় ভাবব। দেশপ্রেমের মোড়কে থাকা সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য বিষয়টিকে আরো ক্ষতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। ভারতকে একত্রিত রাখার একমাত্র ভিত্তি হিসেবে শক্তির প্রয়োগ আরো বাড়তে পারে। আমরা যদি শক্তি প্রয়োগের কঠিন প্রয়োজনের কথাও স্বীকার করি, তবে তা করা যেতে পারে বৃহত্তর রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে। আনুগত্য আসতে পারে মুক্ত আকাঙ্ক্ষা থেকে, ভীতি থেকে নয়। এমনকি সামরিক চাপের মুখে কাশ্মির যদি তার নিয়তির কাছে আত্মসমর্পণ করে, তবুও বাকি ভারতে চরমপন্থীর আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। ইতোমধ্যেই এর লক্ষণ ফুটে ওঠেছে। রাজনৈতিক সহিংসতার মঞ্চ বদলে যাবে। উত্তর প্রদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালার সাম্প্রদায়িকতাপূর্ণ স্পর্শকাতরতার কারণে ভারত হবে আরো বেশি ভঙ্গুর।
আর মৌলিকভাবে এই পরিবর্তন ভারতীয় গণতন্ত্র যে ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে, তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ, ভোটের পাশবিক শক্তিতে পরিণত হচ্ছে। এটি আর অন্তর্ভুক্তির সেফটি ভালব হিসেবে বিরাজ করছে না। বিরোধীদের শক্তি হরণ কেবল সমস্যাটিকে জটিলই করবে। প্রতিবাদ করার আর কোনো জায়গা রইল না। দেশভিত্তিক দলগুলোকে যতটা দুর্বল মনে হয়েছিল, তার চেয়েও দুর্বল প্রতীয়মান হয়েছে তারা। কংগ্রেস কোনো অবস্থানেই দাঁড়াতে পারছে না। পার্লামেন্ট এখন আর বিতর্কের ফোরাম নয়, এটি পরিণত হয়েছে নোটিশ বোর্ডে।
সুপ্রিম কোর্ট কী করে তার জন্য অপেক্ষা করতে পারি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের কার্যক্রমে দেখা যাচ্ছে, তারা নির্বাহী বিভাগের চেয়েও বেশি নির্বাহী মনস্ক। কাশ্মির কেবল কাশ্মিরই নয়। ইউএপিএ, এনআরসি, সাম্প্রদায়িকতাবাদ, অযোধ্যা ইত্যাদিও একই সুতায় বাঁধা। এখন কেউই নিরাপদ নয়। কেবল কাশ্মিরিরা নয়, কেবল সংখ্যালঘুরা নয়, যেই সাংবিধানিক মুক্তির জন্য দাঁড়াবে, সবার সামনেই বিপদ।
সমস্যা সমাধানের জন্য প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে না। বিজেপি মনে করছে, তারা কাশ্মিরকে ভারতীয়করণ করছে। কিন্তু আসলে এর বদলে আমরা দেখতে পাব যে ভারতকেই কাশ্মিরকরণ করা হচ্ছে। রক্ত আর বিশ্বাসঘাতকতায় লেখা ভারতীয় গণতন্ত্রের কাহিনী।
No comments