যে গল্পের শেষ নেই by সুজয় মহাজন
অনন্ত,
মানে কোনো শেষ নেই। শিল্পপতি হুমায়ুন জহীরের হাত ধরে জন্ম নেওয়া অনন্ত
গ্রুপের ব্যবসারও যেন শেষ নেই, শেষ নেই স্বপ্নেরও। সম্প্রতি এক দুপুরে
প্রতিষ্ঠানটির শুরু থেকে আজকের অবস্থানে উঠে আসা ও ভবিষ্যৎ স্বপ্নের নানা
গল্প শোনান চেয়ারম্যান কামরুন নাহার জহীর। তিনি বলেন, ‘ব্যবসা বড় হলে তাতে
অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। যত দিন সুযোগ আছে, তত দিন আমরা
দেশের মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগটি করে যেতে চাই। তা ছাড়া আমার
স্বামীর স্বপ্ন ছিল তাঁর গড়া প্রতিষ্ঠানটি একসময় দেশের সেরা প্রতিষ্ঠান হয়ে
উঠবে। আমি ও আমার ছেলেরা মিলে সেই স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছি।’
কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও ব্যবসার প্রয়োজনে একের পর এক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে অনন্ত গ্রুপ। প্রতিটি উদ্যোগই ব্যবসাসফল। ১৯৯১ সালে মাত্র ৫০০ কর্মী নিয়ে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান কর্মিসংখ্যা ২৮ হাজার। এর ২৫ হাজারই শ্রমিক। গ্রুপের লক্ষ্য, ২০২৪ সালের মধ্যে কর্মীর সংখ্যা ৮০ হাজারে উন্নীত করা। আর এককভাবে ১০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করা।
পোশাক ব্যবসার বাইরে ব্যাংক, বিমার সঙ্গেও জড়িত এ প্রতিষ্ঠান। নতুন করে শুরু করতে যাচ্ছে আবাসন ব্যবসা। ২৬ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন কামরুন নাহার জহীর। ১৯৯৩ সালে আততায়ীর হাতে স্বামী হুমায়ুন জহীর নিহত হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেছিলেন। এর আগে শিক্ষকতা করতেন। শিক্ষকতার প্রতি ঝোঁক দেখে প্রয়াত স্বামী হুমায়ুন জহীরের সঙ্গে মিলে প্রতিষ্ঠা করেন ঢাকা মহিলা কলেজ। তিনি ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা ভাইস প্রিন্সিপাল। কিন্তু স্বামীর মৃত্যু তাঁকে শিক্ষকতা পেশা থেকে ব্যবসায়ী করে তোলে। একদিকে ব্যবসা সামলেছেন, অন্যদিকে সংসার। দুই মেয়ে, দুই ছেলে তাঁর। বর্তমানে দুই ছেলেই মায়ের সঙ্গে ব্যবসার হাল ধরেছেন। তাঁদের মধ্যে বড় ছেলে শরীফ জহীর প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। আর ছোট ছেলে আসিফ জহীর উপব্যবস্থাপনা পরিচালক।
কামরুন নাহার জহীরের সঙ্গে কথা হচ্ছিল তাঁর গুলশানের বাসভবনে, এক দুপুরে। অনন্ত নামকরণের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর শ্বশুরবাড়ি নোয়াখালীর অনন্তপুর গ্রামে। আর অনন্ত অর্থ, যার কোনো শেষ নেই। নিজ গ্রামের নামের প্রথম অংশের সঙ্গে মিলিয়ে প্রয়াত স্বামী প্রতিষ্ঠানের নাম রাখেন অনন্ত গ্রুপ। তাঁর (হুমায়ুন জহীর) স্বপ্ন ছিল অনন্তের পথচলা কখনো থামবে না। সেই স্বপ্নকে ধারণ করে ক্রমশ বড় হচ্ছে অনন্তের ব্যবসা।
২০০৯ সালে কোম্পানির রপ্তানি আয় ছিল মাত্র ৫ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় ৪২৫ কোটি টাকা। কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক মিলিয়ে কাজ করতেন সাত হাজার মানুষ। ২০১৮ সাল শেষে প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানি আয় বেড়ে হয়েছে ৩০ কোটি ডলার বা ২ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। ২০১৯ সাল শেষে এ আয় ৩৫ কোটি ডলার বা ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা তাঁদের। এরই মধ্যে সেরা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারের কাছ থেকে সাতবার জাতীয় রপ্তানি পদকও পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। আর ব্যবসায় অসামান্য অবদানের জন্য এ বছর ডেইলি স্টার-ডিএইচএল অ্যাওয়ার্ডে ‘ব্যবসায় অসাধারণ নারী’ হিসেবে সম্মাননা পেয়েছেন কামরুন নাহার জহীর।
অনন্ত গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পাঁচ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি শীর্ষ পাঁচ রপ্তানিকারকের একটি। আর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় স্যুট তৈরির কারখানাটি তাদের। আদমজী ইপিজেডে রয়েছে স্যুট তৈরির আলাদা দুটি কারখানা।।
কামরুন নাহার জহীর জানান, ১৯৯১ সালে এলিফ্যান্ট রোডের নিজস্ব ভবনে যাত্রা শুরু হয়েছিল অনন্ত অ্যাপারেলসের। বর্তমানে সেটি স্থানান্তর করা হয়েছে আদমজী ইপিজেডে। এর বাইরে গাজীপুর, কাঁচপুর ও চট্টগ্রাম ইপিজেডে কারখানা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। তৈরি পোশাকের মধ্যে সাধারণ পোশাকের পাশাপাশি স্যুট, জিনস, সোয়েটার,নারীর অন্তর্বাস তৈরি ও রপ্তানি করে প্রতিষ্ঠানটি।
শুরুতে অনন্ত টয় ও অনন্ত পেপার মিল নামে প্রতিষ্ঠানটির দুটি আলাদা কারখানা থাকলেও পরবর্তী সময়ে সেগুলো বিক্রি করে দেওয়া হয়। কামরুন নাহার বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর একদিকে সন্তানদের দায়িত্ব, অন্যদিকে ব্যবসা—দুটোই তিনি শক্ত হাতে সামলেছেন। যে বছর স্বামী মারা যান, তখন সবার বড় মেয়ের বয়স ছিল ২০ বছর, দ্বিতীয় মেয়ের ১৯, এরপরই ছেলে, বয়স ১৬। আর সবচেয়ে ছোট ছেলের বয়স ছিল ৯ বছর। সে সময় ব্যবসার হাল ধরার পাশাপাশি সন্তানদের পড়ালেখা করানো ছিল প্রধান লক্ষ্য। সব সময় পাশে থেকেছেন বাবা-ভাই। এ কারণে বড় ধরনের কোনো প্রতিকূল অবস্থায় কখনো পড়তে হয়নি। কামরুন নাহার জানান, ব্যবসার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কখনো এক দিনের জন্যও ব্যাংকের ঋণখেলাপি হয়নি তাঁর প্রতিষ্ঠান।
দুই ছেলেই ব্যবসার হাল ধরেছেন। তবে ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন মায়ের পরামর্শে। কামরুন নাহারের কাছে প্রশ্ন ছিল, এখন তো সন্তানেরা হাল ধরেছেন। অবসর কাটানোর পরিকল্পনা করেছেন কী? জবাবে তিনি বলেন, ‘অনন্তের যাত্রার শেষ বলে কিছু নেই, সেখানে আমার অবসরের ইচ্ছাও নেই।’ প্রতিষ্ঠানটিকে আরও অনেক বড় করতে চান তিনি। সত্যিই তো, অনন্তের পথেই হাঁটছে অনন্ত গ্রুপ।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও ব্যবসার প্রয়োজনে একের পর এক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে অনন্ত গ্রুপ। প্রতিটি উদ্যোগই ব্যবসাসফল। ১৯৯১ সালে মাত্র ৫০০ কর্মী নিয়ে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান কর্মিসংখ্যা ২৮ হাজার। এর ২৫ হাজারই শ্রমিক। গ্রুপের লক্ষ্য, ২০২৪ সালের মধ্যে কর্মীর সংখ্যা ৮০ হাজারে উন্নীত করা। আর এককভাবে ১০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করা।
পোশাক ব্যবসার বাইরে ব্যাংক, বিমার সঙ্গেও জড়িত এ প্রতিষ্ঠান। নতুন করে শুরু করতে যাচ্ছে আবাসন ব্যবসা। ২৬ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন কামরুন নাহার জহীর। ১৯৯৩ সালে আততায়ীর হাতে স্বামী হুমায়ুন জহীর নিহত হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেছিলেন। এর আগে শিক্ষকতা করতেন। শিক্ষকতার প্রতি ঝোঁক দেখে প্রয়াত স্বামী হুমায়ুন জহীরের সঙ্গে মিলে প্রতিষ্ঠা করেন ঢাকা মহিলা কলেজ। তিনি ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা ভাইস প্রিন্সিপাল। কিন্তু স্বামীর মৃত্যু তাঁকে শিক্ষকতা পেশা থেকে ব্যবসায়ী করে তোলে। একদিকে ব্যবসা সামলেছেন, অন্যদিকে সংসার। দুই মেয়ে, দুই ছেলে তাঁর। বর্তমানে দুই ছেলেই মায়ের সঙ্গে ব্যবসার হাল ধরেছেন। তাঁদের মধ্যে বড় ছেলে শরীফ জহীর প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। আর ছোট ছেলে আসিফ জহীর উপব্যবস্থাপনা পরিচালক।
কামরুন নাহার জহীরের সঙ্গে কথা হচ্ছিল তাঁর গুলশানের বাসভবনে, এক দুপুরে। অনন্ত নামকরণের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর শ্বশুরবাড়ি নোয়াখালীর অনন্তপুর গ্রামে। আর অনন্ত অর্থ, যার কোনো শেষ নেই। নিজ গ্রামের নামের প্রথম অংশের সঙ্গে মিলিয়ে প্রয়াত স্বামী প্রতিষ্ঠানের নাম রাখেন অনন্ত গ্রুপ। তাঁর (হুমায়ুন জহীর) স্বপ্ন ছিল অনন্তের পথচলা কখনো থামবে না। সেই স্বপ্নকে ধারণ করে ক্রমশ বড় হচ্ছে অনন্তের ব্যবসা।
২০০৯ সালে কোম্পানির রপ্তানি আয় ছিল মাত্র ৫ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় ৪২৫ কোটি টাকা। কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক মিলিয়ে কাজ করতেন সাত হাজার মানুষ। ২০১৮ সাল শেষে প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানি আয় বেড়ে হয়েছে ৩০ কোটি ডলার বা ২ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। ২০১৯ সাল শেষে এ আয় ৩৫ কোটি ডলার বা ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা তাঁদের। এরই মধ্যে সেরা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারের কাছ থেকে সাতবার জাতীয় রপ্তানি পদকও পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। আর ব্যবসায় অসামান্য অবদানের জন্য এ বছর ডেইলি স্টার-ডিএইচএল অ্যাওয়ার্ডে ‘ব্যবসায় অসাধারণ নারী’ হিসেবে সম্মাননা পেয়েছেন কামরুন নাহার জহীর।
অনন্ত গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পাঁচ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি শীর্ষ পাঁচ রপ্তানিকারকের একটি। আর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় স্যুট তৈরির কারখানাটি তাদের। আদমজী ইপিজেডে রয়েছে স্যুট তৈরির আলাদা দুটি কারখানা।।
কামরুন নাহার জহীর জানান, ১৯৯১ সালে এলিফ্যান্ট রোডের নিজস্ব ভবনে যাত্রা শুরু হয়েছিল অনন্ত অ্যাপারেলসের। বর্তমানে সেটি স্থানান্তর করা হয়েছে আদমজী ইপিজেডে। এর বাইরে গাজীপুর, কাঁচপুর ও চট্টগ্রাম ইপিজেডে কারখানা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। তৈরি পোশাকের মধ্যে সাধারণ পোশাকের পাশাপাশি স্যুট, জিনস, সোয়েটার,নারীর অন্তর্বাস তৈরি ও রপ্তানি করে প্রতিষ্ঠানটি।
শুরুতে অনন্ত টয় ও অনন্ত পেপার মিল নামে প্রতিষ্ঠানটির দুটি আলাদা কারখানা থাকলেও পরবর্তী সময়ে সেগুলো বিক্রি করে দেওয়া হয়। কামরুন নাহার বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর একদিকে সন্তানদের দায়িত্ব, অন্যদিকে ব্যবসা—দুটোই তিনি শক্ত হাতে সামলেছেন। যে বছর স্বামী মারা যান, তখন সবার বড় মেয়ের বয়স ছিল ২০ বছর, দ্বিতীয় মেয়ের ১৯, এরপরই ছেলে, বয়স ১৬। আর সবচেয়ে ছোট ছেলের বয়স ছিল ৯ বছর। সে সময় ব্যবসার হাল ধরার পাশাপাশি সন্তানদের পড়ালেখা করানো ছিল প্রধান লক্ষ্য। সব সময় পাশে থেকেছেন বাবা-ভাই। এ কারণে বড় ধরনের কোনো প্রতিকূল অবস্থায় কখনো পড়তে হয়নি। কামরুন নাহার জানান, ব্যবসার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কখনো এক দিনের জন্যও ব্যাংকের ঋণখেলাপি হয়নি তাঁর প্রতিষ্ঠান।
দুই ছেলেই ব্যবসার হাল ধরেছেন। তবে ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন মায়ের পরামর্শে। কামরুন নাহারের কাছে প্রশ্ন ছিল, এখন তো সন্তানেরা হাল ধরেছেন। অবসর কাটানোর পরিকল্পনা করেছেন কী? জবাবে তিনি বলেন, ‘অনন্তের যাত্রার শেষ বলে কিছু নেই, সেখানে আমার অবসরের ইচ্ছাও নেই।’ প্রতিষ্ঠানটিকে আরও অনেক বড় করতে চান তিনি। সত্যিই তো, অনন্তের পথেই হাঁটছে অনন্ত গ্রুপ।
নিজের কার্যালয়ে কাজ করছেন অনন্ত গ্রুপের চেয়ারম্যান কামরুন নাহার জহীর। ছবি: এবং বাণিজ্য |
No comments