কানে মোবাইল নয় বছরে রেল লাইনে ৫৩৫ মৃত্যু by শুভ্র দেব
কানে
হেডফোন দিয়ে মোবাইলে কথা বলতে বলতে রেললাইনে হাঁটছিলেন ২২ বছর বয়সী শুভা
আক্তার। কথা বলায় মগ্ন শুভার কানে পৌঁছায়নি পেছন থেকে ধেয়ে আসা ট্রেনের
উচ্চ শব্দের হুইসেল। ট্রেন চালক একের পর এক হুইশেল দিলেও শুভাকে আর সরানো
যায়নি রেললাইন থেকে। তার কয়েক সেকেন্ড পরেই শুভার উপর দিয়ে চলে যায় ভৈরব
থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী একটি ট্রেন। খন্ড-বিখন্ড শুভার দেহ পড়ে থাকে
রেললাইনের পাশে। শুভা নরসিংদী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ছিলেন।
তার বাড়ি নরসিংদীর ভেলানগর এলাকায়। গত বছরের আগস্ট মাসে এই ঘটনাটি ঘটেছে।
শুধু শুভা আক্তারই নন এভাবে অসতর্ক হয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে রেললাইন ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় ট্রেনে কাটা পড়ে নয় বছরে মারা গেছেন ৫৩৫ জন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অসচেতনার অভাবে এ ধরণের ঘটনা ঘটছে। সচেতনতা তৈরিতে রেলপথ মন্ত্রালয়, রেলওয়ে পুলিশের পাশপাশি রেললাইন দিয়ে চলাচলকারীদেরও সচেতন হতে হবে।
ঢাকা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়াছিন ফারুক মজুমদার বলেন, ট্রেনে কাটা পড়ে অনাকাঙ্খিত মৃত্যু অসচেতনতার অভাবে হচ্ছে। রেললাইনে চলাচলের সময় অনেকেই অসচেতন থাকেন। আবার অনেকেই মোবাইল ফোনে কথা বলে বা কানে হেডফোন দিয়ে চলাচল করেন। কখন ট্রেন আসছে সেদিকে তাদের খেয়াল থাকে না। অনেক সময় দেখা যায় ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে উঠে যাত্রীরা ভ্রমণ করেন। ছাদ থেকে পড়েও কেউ কেউ মারা যাচ্ছেন। তিনি বলেন, জনসচেতনতা রোধে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
ঢাকা রেলওয়ে থানার দেয়া তথ্যানুযায়ী রেললাইনে কানে হেডফোন দিয়ে চলাচলের জন্য গত ৯ বছরে শুধুমাত্র ঢাকা অঞ্চলেই ৫৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২০১০ সালে মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের। ২০১১ সালে ২১ জন। ২০১২ সালে ৫২জন। ২০১৩ সালে ৬৭ জন। ২০১৪ সালে ১০৯ জন। ২০১৫ সালে ১০৩ জন। ২০১৬ সালে ৩২ জন। ২০১৭ সালে ৫৪ জন। ২০১৮ সালে ৫৮ ও ২০১৯ সালের মে মাস পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে রেললাইনের ওপর বসা ও চলাচলের সময় ৭২৬ জন, রেলওয়ে ক্রসিং ও পারাপারের চেষ্টাকালে ১ হাজার ২৬৮ জন ও ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে ১৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
রেলওয়ে পুলিশ সদরদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত সাড়ে ছয় বছরে সারাদেশে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৯১৯ জনের। এর মধ্যে ২০১৩ সালে মৃত্যু হয়েছে ৯০২ জনের। ২০১৪ সালে ৮৯৮ জন। ২০১৫ সালে ৮২১ জন। ২০১৬ সালে ৯৭১ জন। ২০১৭ সালে ১ হাজার ২২ জন। ২০১৮ সালে ৯০০ ও ২০১৯ সালের মে মাস পর্যন্ত আরও ৪০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। রেলওয়ে সুত্র জানায়, রেললাইনে দুর্ঘটনার জন্য বেশ কিছু কারণ তারা শনাক্ত করেছে। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে, অসচেতনভাবে রেললাইন দিয়ে হাঁটা-চলা ও পারাপার। মোবাইল ফোনে কথা বলা বা কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনে শুনে রেললাইন দিয়ে হাঁটা। ঘনবসতি এলাকা দিয়ে ট্রেন চলাচলের সময় ট্রেনের হুইশেল শুনতে না পাওয়া। আঁকা-বাঁকা পথে ট্রেন দেখতে না পাওয়া। ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করা। নেশাগ্রস্ত হয়ে রেললাইনে চলাচল। রেলওয়ে সূত্র আরও বলছে, পথচারীদের সতর্ক করতে দূর্ঘটনা প্রবণ এলাকায় মাইকিং, লিফলেট বিলি করা হচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে বৈঠক করা হয়। রেললাইনের পাশে অবৈধস্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
রেলওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোরশেদ আলম বলেন, মানুষকে সচেতন হতে হবে। তা না হলে আমাদের একার পক্ষে সব মানুষকে বদলানো সম্ভব হবে না। আমরা আমাদের সাধ্যমত কাজ করে যাচ্ছি। ব্যানার, ফেস্টুন, স্টেশনগুলোতে সচেতনতামূলক মিটিং করছি। তিনি বলেন, মানুষের মধ্য আইন মানার প্রবণতা সৃষ্টি হতে হবে। এছাড়া কানে হেডফোন লাগিয়ে কম বয়সী ছেলে মেয়েরা রেললাইন দিয়ে চলাচল করে। তারা যদি নিজে থেকে সচেতন না হয় তবে সভা মিটিং আর ব্যানার ফেস্টুন লাগিয়ে লাভ হবে না। আর এই সচেতনতা পরিবার, সমাজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আসতে হবে।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. মিয়া জাহান মানবজমিনকে বলেন, আমরা বিভিন্ন স্টেশনগুলোতে বলে রাখি যাতে কেউ ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনে ভ্রমণ না করে। রেল সপ্তাহে জনসচেতনতামূলক কাজ করি। ফেসবুক, পোস্টারিং, মাইকিং ও বৈঠক করা হয়। তবে মানুষকে কোনভাবেই সচেতন করা যাচ্ছে না। মানুষ ট্রেন লাইনের উপর দিয়ে অসচেতনভাবে চলাচল করে। ট্রেন আসছে দেখেও লাফ দেয়, রাস্তা পারাপার হয়। তিনি বলেন, এসব দুর্ঘটনা রোধে আমরা রেললাইনের পাশে অবৈধ স্থাপনা, ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করি। কিন্তু কিছুদিন পরে আবার তারা সেগুলো দখলে নেয়।
শুধু শুভা আক্তারই নন এভাবে অসতর্ক হয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে রেললাইন ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় ট্রেনে কাটা পড়ে নয় বছরে মারা গেছেন ৫৩৫ জন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অসচেতনার অভাবে এ ধরণের ঘটনা ঘটছে। সচেতনতা তৈরিতে রেলপথ মন্ত্রালয়, রেলওয়ে পুলিশের পাশপাশি রেললাইন দিয়ে চলাচলকারীদেরও সচেতন হতে হবে।
ঢাকা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়াছিন ফারুক মজুমদার বলেন, ট্রেনে কাটা পড়ে অনাকাঙ্খিত মৃত্যু অসচেতনতার অভাবে হচ্ছে। রেললাইনে চলাচলের সময় অনেকেই অসচেতন থাকেন। আবার অনেকেই মোবাইল ফোনে কথা বলে বা কানে হেডফোন দিয়ে চলাচল করেন। কখন ট্রেন আসছে সেদিকে তাদের খেয়াল থাকে না। অনেক সময় দেখা যায় ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে উঠে যাত্রীরা ভ্রমণ করেন। ছাদ থেকে পড়েও কেউ কেউ মারা যাচ্ছেন। তিনি বলেন, জনসচেতনতা রোধে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
ঢাকা রেলওয়ে থানার দেয়া তথ্যানুযায়ী রেললাইনে কানে হেডফোন দিয়ে চলাচলের জন্য গত ৯ বছরে শুধুমাত্র ঢাকা অঞ্চলেই ৫৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২০১০ সালে মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের। ২০১১ সালে ২১ জন। ২০১২ সালে ৫২জন। ২০১৩ সালে ৬৭ জন। ২০১৪ সালে ১০৯ জন। ২০১৫ সালে ১০৩ জন। ২০১৬ সালে ৩২ জন। ২০১৭ সালে ৫৪ জন। ২০১৮ সালে ৫৮ ও ২০১৯ সালের মে মাস পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে রেললাইনের ওপর বসা ও চলাচলের সময় ৭২৬ জন, রেলওয়ে ক্রসিং ও পারাপারের চেষ্টাকালে ১ হাজার ২৬৮ জন ও ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে ১৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
রেলওয়ে পুলিশ সদরদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত সাড়ে ছয় বছরে সারাদেশে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৯১৯ জনের। এর মধ্যে ২০১৩ সালে মৃত্যু হয়েছে ৯০২ জনের। ২০১৪ সালে ৮৯৮ জন। ২০১৫ সালে ৮২১ জন। ২০১৬ সালে ৯৭১ জন। ২০১৭ সালে ১ হাজার ২২ জন। ২০১৮ সালে ৯০০ ও ২০১৯ সালের মে মাস পর্যন্ত আরও ৪০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। রেলওয়ে সুত্র জানায়, রেললাইনে দুর্ঘটনার জন্য বেশ কিছু কারণ তারা শনাক্ত করেছে। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে, অসচেতনভাবে রেললাইন দিয়ে হাঁটা-চলা ও পারাপার। মোবাইল ফোনে কথা বলা বা কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনে শুনে রেললাইন দিয়ে হাঁটা। ঘনবসতি এলাকা দিয়ে ট্রেন চলাচলের সময় ট্রেনের হুইশেল শুনতে না পাওয়া। আঁকা-বাঁকা পথে ট্রেন দেখতে না পাওয়া। ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করা। নেশাগ্রস্ত হয়ে রেললাইনে চলাচল। রেলওয়ে সূত্র আরও বলছে, পথচারীদের সতর্ক করতে দূর্ঘটনা প্রবণ এলাকায় মাইকিং, লিফলেট বিলি করা হচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে বৈঠক করা হয়। রেললাইনের পাশে অবৈধস্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
রেলওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোরশেদ আলম বলেন, মানুষকে সচেতন হতে হবে। তা না হলে আমাদের একার পক্ষে সব মানুষকে বদলানো সম্ভব হবে না। আমরা আমাদের সাধ্যমত কাজ করে যাচ্ছি। ব্যানার, ফেস্টুন, স্টেশনগুলোতে সচেতনতামূলক মিটিং করছি। তিনি বলেন, মানুষের মধ্য আইন মানার প্রবণতা সৃষ্টি হতে হবে। এছাড়া কানে হেডফোন লাগিয়ে কম বয়সী ছেলে মেয়েরা রেললাইন দিয়ে চলাচল করে। তারা যদি নিজে থেকে সচেতন না হয় তবে সভা মিটিং আর ব্যানার ফেস্টুন লাগিয়ে লাভ হবে না। আর এই সচেতনতা পরিবার, সমাজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আসতে হবে।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. মিয়া জাহান মানবজমিনকে বলেন, আমরা বিভিন্ন স্টেশনগুলোতে বলে রাখি যাতে কেউ ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনে ভ্রমণ না করে। রেল সপ্তাহে জনসচেতনতামূলক কাজ করি। ফেসবুক, পোস্টারিং, মাইকিং ও বৈঠক করা হয়। তবে মানুষকে কোনভাবেই সচেতন করা যাচ্ছে না। মানুষ ট্রেন লাইনের উপর দিয়ে অসচেতনভাবে চলাচল করে। ট্রেন আসছে দেখেও লাফ দেয়, রাস্তা পারাপার হয়। তিনি বলেন, এসব দুর্ঘটনা রোধে আমরা রেললাইনের পাশে অবৈধ স্থাপনা, ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করি। কিন্তু কিছুদিন পরে আবার তারা সেগুলো দখলে নেয়।
No comments