নতুন স্নায়ুযুদ্ধ: মার্কিন সুযোগগুলো গ্রহণ করা উচিত পাকিস্তানের by জামির আকরাম
যুক্তরাষ্ট্র
ও ইরানের মধ্য চলমান সামরিক সঙ্ঘাতে ইরানিরা আমেরিকার একটি ড্রোনকে গুলি
করে ভূপাতিত করার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিমান হামলার নির্দেশ দিয়েও তা
বাতিল করেন। এটি ছিল ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট আমলে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত। অন্য
দুটি ছিল পরমাণু অস্ত্রসজ্জিত উত্তর কোরিয়ার সাথে বৈরিতা প্রতিরোধে কিম জং
উনের সাথে আলোচনা করা এবং আফগানিস্তানের ১৮ বছরের যুদ্ধ বন্ধ করতে
তালেবানের সাথে আলোচনায় বসা। বিদেশে ব্যয়বহুল যুদ্ধ এড়ানো নিয়ে ট্রাম্পের
প্রতিশ্রুতির উদাহরণ হিসেবে এগুলোর যৌক্তিকতা প্রতিপন্ন হয়। অবশ্য এ ধরনের
সতর্কতা গ্রহণের নেপথ্যে যে কারণটি রয়েছে তা হলো সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও
১৯৯০ সালে শেষ স্নায়ুযুদ্ধ অবসানের পর একক পরাশক্তির বিশ্বে একমাত্র
পরাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র যে ভূমিকায় ছিল, তা আর বহাল না থাকার
ব্যাপারে উপলব্ধি সৃষ্টি। আমেরিকার জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে প্রতিযোগী শক্তি
হিসেবে চীন ও রাশিয়ার আগমনের ফলে একটি নতুন বহুমেরুর দুনিয়ার অভ্যুদয়
ঘটেছে। এই দুই দেশ আমেরিকার বৈশ্বিক আধিপত্য মেনে নিতে আর আগ্রহী নয়। এখন
পরিষ্কার হয়ে গেছে যে আমেরিকার ভীতি প্রদর্শনের বিরুদ্ধে চীন ও রাশিয়াই
কেবল ইরানকে সমর্থন দিচ্ছে না, সেইসাথে এশিয়া-প্যাসিফিক ও ইউরোপের অনেক
দেশও তেহরানের পাশে রয়েছে। ফলে একটি নতুন স্নায়ুযুদ্ধ ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে
গেছে।
বর্তমান স্নায়ুযুদ্ধ আগেরটির চেয়ে বেশ ভিন্ন ও বেশি বিপজ্জনক। আগের স্নায়ুযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন যথাক্রমে ন্যাটো ও ওয়ারশ চুক্তির মাধ্যমে সুপরিচিত প্রতিরক্ষা জোট গড়ে তুলেছিল। কিন্তু এখন পরিবর্তিত জোট নিয়ে প্রভাব বিস্তারের জন্য তিনটি শক্তি প্রতিযোগিতা করছে। আমেরিকার বিরুদ্ধে এখন চীন ও রাশিয়া কৌশলগত অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে, অন্যদিকে আমেরিকার মিত্ররা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে অনিশ্চয়তায় ভুগছে। এখানে বিরোধী আদর্শিক শিবিরে বিভক্তকারী পরাশক্তির মধ্যে বার্লিন প্রাচীরের মতো কোনো বিভেদরেখা নেই। বরং এখানে রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থের অস্পষ্টতা রয়েছে। এসবের মধ্যে আছে চীনের বিআরআই বা মার্কিন মিত্রদের মধ্যে হুয়াওয়ের ৫-জি অ্যাপ্লিকেশনকে ঘিরে বিতর্ক। সংক্ষেপে বলা যায়, ১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্র-সোভিয়েত ইউনিয়ন স্নায়ুযুদ্ধ অবসানের পর একটি দ্বিমেরুর বিশ্ব ২০০৮ সাল পর্যন্ত একমেরুর বিশ্বে আমেরিকার প্রাধান্য ছিল। তবে তা এখন আরো জটিল ও ধাঁধাপুর্ণ বহুমেরুর বিশ্বব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর একটি সংক্ষিপ্ত সময় ছিল যখন একটি স্থিতিশীল আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সুযোগ ছিল। কিন্তু একক পরাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র পারস্পরিকভাবে কল্যাণকর ও মনোবলহারা রাশিয়া ও উদীয়মান চীনের সাথে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার এই সুযোগ নষ্ট করেছে। নব্য রক্ষণশীলদের মাধ্যমে চালিত হয়ে বুশ প্রশাসন একতরফাবাদ ও আগাম ব্যবস্থা গ্রহণের পথ গ্রহণ করে বিশ্বে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা ও সরকার পরিবর্তনের লক্ষ্যে। ৯/১১-এর পর সন্ত্রাসপ্রতিরোধের প্রতি আন্তর্জাতিক যে সমর্থন ছিল, আফগানিস্তান ও পরে ইরাকে হামলা চালিয়ে তার অপব্যবহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে ন্যাটোকে সম্প্রসারণ ও আমেরিকার ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন করে রুশ নিরাপত্তা উদ্বেগকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। চীন তার শান্তিপূর্ণ উত্থান ও সম্প্রীতিপূর্ণ সম্পর্কের প্রস্তাবের জবাবে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে সামরিক জোট জোরদার করা হয়, ভারত ও ভিয়েতনামের সাথে নতুন কৌশলগত অংশীদারিত্ব সৃষ্টি করা হয়। ওবামা প্রশাসন সেই ‘বুশ লাইন’ নীতিই অব্যাহত রেখে লিবিয়া, সিরিয়া, জর্জিয়া ও ইউক্রেনে সরকার পরিবর্তন ঘটান, রাশিয়া ও চীন উভয়কে ঘিরে ফেলার জন্য বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থন যোগার করার প্রয়াস চালান।
এটি অনিবার্য যে আমেরিকার এ ধরনের বাড়াবাড়ি রকমের সাম্রাজ্যবাদী আত্মবিশ্বসের ফলে রাশিয়া ও চীনের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে। আমেরিকা তার শক্তির সীমা অতিক্রম করে যাওয়ার কারণেই এমনটা হচ্ছে। রাশিয়া এর জবাব দিয়েছে সরাসরি জর্জিয়া, ইউক্রেন ও সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপ করে। চীন জবাব দিয়েছে এশিয়া-প্যাসিফিক, বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগরে প্রতিরক্ষা শক্তি বাড়িয়ে। তারা আমেরিকার সামুদ্রিক বৃত্তাবদ্ধ করার প্রয়াসের বিরুদ্ধে বিআরআই বাস্তবায়নে নেমেছে। উভয় শক্তিই তাদের প্রচলিত ও কৌশলগত শক্তি বাড়াচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কৌশলগত অংশীদারিত্বে প্রবেশ করেছে।
আমেরিকাকে আবারো সেরা বানানোর ট্রাম্পের নির্বাচনী স্লোগানের আড়ালে রয়েছে এই স্বীকৃতি যে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে তার প্রাধান্য খুইয়ে ফেলেছে। এই বাস্তবতা স্বীকার করে ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য রাশিয়া ও চীনের সাথে কাজ করার বদলে সঙ্ঘাতের পথকে বেছে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবেই চীন ও রাশিয়াকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছে। রাশিয়ার ওপর অবরোধ আরোপ করা হয়েছে, চীনের সাথে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করা হয়েছে। এদিকে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার সাথে এবং প্যাসিফিকে চীনের সাথে আমেরিকান বাহিনী সঙ্ঘাতে মেতে ওঠেছে। এই ফলে সামরিক উত্তেজনা অপরিহার্য হিসেবে দেখা দিয়েছে।
এই নতুন স্নায়ুযুদ্ধ ইতোমধ্যেই পাকিস্তানের জন্য বিপুল চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করেছে। দ্বিপক্ষীয়ভাবে পাকিস্তানের ওপর অবরোধ আরোপ করেছে ওয়াশিংটন, কোয়ালিশন সাপোর্ট ফান্ড স্থগিত করেছে, সন্ত্রাসবাদের প্রতি সমর্থন দেয়ার অভিযোগ এনেছে, পাকিস্তানের কৌশলগত সামর্থ্য স্থগিত করার দাবি জানিয়েছে। চীনের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্কেরও বিরোধিতা করছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে সিপিইসির বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে সে অবস্থান গ্রহণ করেছে।
অন্য দিকে চীনের সাথে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য ভারতের প্রচলিত ও কৌশলগত সামরিক মিত্রতা গড়ে তুলছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি পাকিস্তানের জন্য অস্তিত্বগত সঙ্কটের সৃষ্টি করেছে। ভারতের আঞ্চলিক আধিপত্যমূলক উচ্চাভিলাষও অনুমোদন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের বিকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে চীনের সাথে বৃহত্তর রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা কামনা করা এবং সেইসাথে রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক বাড়িয়ে নেয়া। আবার যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক রাখার সুবিধা গ্রহণ করে পাকিস্তানের প্রয়োজন ক্ষতি যতটা সম্ভব কম করার জন্য ওয়াশিংটনের আফগান অভিযানের প্রতি লজিস্টিক ও গোয়েন্দা সমর্থন এবং আমেরিকান-তালেবান আলোচনার ব্যবস্থা করা। তবে নতুন স্নায়ুযুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্ব অদূর ভবিষ্যতে সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না। ভারতের প্রতি আমেরিকার অনিয়ন্ত্রিত সমর্থনের ফলে ভারতের সাথে সম্পর্কও স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমরা সর্বোত্তম যা করতে পারি তা হলো সঙ্ঘাত প্রতিরোধ। এ জন্য আমাদের অবশ্যই ভারতীয় সমরসজ্জার প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বাসযোগ্য শক্তি সঞ্চয় নিশ্চিত করতে হবে।
>>>লেখক: পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত
বর্তমান স্নায়ুযুদ্ধ আগেরটির চেয়ে বেশ ভিন্ন ও বেশি বিপজ্জনক। আগের স্নায়ুযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন যথাক্রমে ন্যাটো ও ওয়ারশ চুক্তির মাধ্যমে সুপরিচিত প্রতিরক্ষা জোট গড়ে তুলেছিল। কিন্তু এখন পরিবর্তিত জোট নিয়ে প্রভাব বিস্তারের জন্য তিনটি শক্তি প্রতিযোগিতা করছে। আমেরিকার বিরুদ্ধে এখন চীন ও রাশিয়া কৌশলগত অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে, অন্যদিকে আমেরিকার মিত্ররা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে অনিশ্চয়তায় ভুগছে। এখানে বিরোধী আদর্শিক শিবিরে বিভক্তকারী পরাশক্তির মধ্যে বার্লিন প্রাচীরের মতো কোনো বিভেদরেখা নেই। বরং এখানে রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থের অস্পষ্টতা রয়েছে। এসবের মধ্যে আছে চীনের বিআরআই বা মার্কিন মিত্রদের মধ্যে হুয়াওয়ের ৫-জি অ্যাপ্লিকেশনকে ঘিরে বিতর্ক। সংক্ষেপে বলা যায়, ১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্র-সোভিয়েত ইউনিয়ন স্নায়ুযুদ্ধ অবসানের পর একটি দ্বিমেরুর বিশ্ব ২০০৮ সাল পর্যন্ত একমেরুর বিশ্বে আমেরিকার প্রাধান্য ছিল। তবে তা এখন আরো জটিল ও ধাঁধাপুর্ণ বহুমেরুর বিশ্বব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর একটি সংক্ষিপ্ত সময় ছিল যখন একটি স্থিতিশীল আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সুযোগ ছিল। কিন্তু একক পরাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র পারস্পরিকভাবে কল্যাণকর ও মনোবলহারা রাশিয়া ও উদীয়মান চীনের সাথে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার এই সুযোগ নষ্ট করেছে। নব্য রক্ষণশীলদের মাধ্যমে চালিত হয়ে বুশ প্রশাসন একতরফাবাদ ও আগাম ব্যবস্থা গ্রহণের পথ গ্রহণ করে বিশ্বে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা ও সরকার পরিবর্তনের লক্ষ্যে। ৯/১১-এর পর সন্ত্রাসপ্রতিরোধের প্রতি আন্তর্জাতিক যে সমর্থন ছিল, আফগানিস্তান ও পরে ইরাকে হামলা চালিয়ে তার অপব্যবহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে ন্যাটোকে সম্প্রসারণ ও আমেরিকার ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন করে রুশ নিরাপত্তা উদ্বেগকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। চীন তার শান্তিপূর্ণ উত্থান ও সম্প্রীতিপূর্ণ সম্পর্কের প্রস্তাবের জবাবে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে সামরিক জোট জোরদার করা হয়, ভারত ও ভিয়েতনামের সাথে নতুন কৌশলগত অংশীদারিত্ব সৃষ্টি করা হয়। ওবামা প্রশাসন সেই ‘বুশ লাইন’ নীতিই অব্যাহত রেখে লিবিয়া, সিরিয়া, জর্জিয়া ও ইউক্রেনে সরকার পরিবর্তন ঘটান, রাশিয়া ও চীন উভয়কে ঘিরে ফেলার জন্য বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থন যোগার করার প্রয়াস চালান।
এটি অনিবার্য যে আমেরিকার এ ধরনের বাড়াবাড়ি রকমের সাম্রাজ্যবাদী আত্মবিশ্বসের ফলে রাশিয়া ও চীনের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে। আমেরিকা তার শক্তির সীমা অতিক্রম করে যাওয়ার কারণেই এমনটা হচ্ছে। রাশিয়া এর জবাব দিয়েছে সরাসরি জর্জিয়া, ইউক্রেন ও সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপ করে। চীন জবাব দিয়েছে এশিয়া-প্যাসিফিক, বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগরে প্রতিরক্ষা শক্তি বাড়িয়ে। তারা আমেরিকার সামুদ্রিক বৃত্তাবদ্ধ করার প্রয়াসের বিরুদ্ধে বিআরআই বাস্তবায়নে নেমেছে। উভয় শক্তিই তাদের প্রচলিত ও কৌশলগত শক্তি বাড়াচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কৌশলগত অংশীদারিত্বে প্রবেশ করেছে।
আমেরিকাকে আবারো সেরা বানানোর ট্রাম্পের নির্বাচনী স্লোগানের আড়ালে রয়েছে এই স্বীকৃতি যে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে তার প্রাধান্য খুইয়ে ফেলেছে। এই বাস্তবতা স্বীকার করে ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য রাশিয়া ও চীনের সাথে কাজ করার বদলে সঙ্ঘাতের পথকে বেছে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবেই চীন ও রাশিয়াকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছে। রাশিয়ার ওপর অবরোধ আরোপ করা হয়েছে, চীনের সাথে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করা হয়েছে। এদিকে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার সাথে এবং প্যাসিফিকে চীনের সাথে আমেরিকান বাহিনী সঙ্ঘাতে মেতে ওঠেছে। এই ফলে সামরিক উত্তেজনা অপরিহার্য হিসেবে দেখা দিয়েছে।
এই নতুন স্নায়ুযুদ্ধ ইতোমধ্যেই পাকিস্তানের জন্য বিপুল চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করেছে। দ্বিপক্ষীয়ভাবে পাকিস্তানের ওপর অবরোধ আরোপ করেছে ওয়াশিংটন, কোয়ালিশন সাপোর্ট ফান্ড স্থগিত করেছে, সন্ত্রাসবাদের প্রতি সমর্থন দেয়ার অভিযোগ এনেছে, পাকিস্তানের কৌশলগত সামর্থ্য স্থগিত করার দাবি জানিয়েছে। চীনের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্কেরও বিরোধিতা করছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে সিপিইসির বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে সে অবস্থান গ্রহণ করেছে।
অন্য দিকে চীনের সাথে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য ভারতের প্রচলিত ও কৌশলগত সামরিক মিত্রতা গড়ে তুলছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি পাকিস্তানের জন্য অস্তিত্বগত সঙ্কটের সৃষ্টি করেছে। ভারতের আঞ্চলিক আধিপত্যমূলক উচ্চাভিলাষও অনুমোদন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের বিকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে চীনের সাথে বৃহত্তর রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা কামনা করা এবং সেইসাথে রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক বাড়িয়ে নেয়া। আবার যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক রাখার সুবিধা গ্রহণ করে পাকিস্তানের প্রয়োজন ক্ষতি যতটা সম্ভব কম করার জন্য ওয়াশিংটনের আফগান অভিযানের প্রতি লজিস্টিক ও গোয়েন্দা সমর্থন এবং আমেরিকান-তালেবান আলোচনার ব্যবস্থা করা। তবে নতুন স্নায়ুযুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্ব অদূর ভবিষ্যতে সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না। ভারতের প্রতি আমেরিকার অনিয়ন্ত্রিত সমর্থনের ফলে ভারতের সাথে সম্পর্কও স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমরা সর্বোত্তম যা করতে পারি তা হলো সঙ্ঘাত প্রতিরোধ। এ জন্য আমাদের অবশ্যই ভারতীয় সমরসজ্জার প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বাসযোগ্য শক্তি সঞ্চয় নিশ্চিত করতে হবে।
>>>লেখক: পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত
No comments