প্রতিরক্ষা বিষয়ক চীনের শ্বেতপত্র: ভারতের ব্যাপারে নমনীয়, তিব্বতের প্রশ্নে কঠোর
ছয়
বছর পর চীন গত সপ্তাহে প্রতিরক্ষা বিষয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে,
যেখানে তাদের হুমকির ধারণা ফুটে উঠেছে। সামরিক বাহিনীর ভেতরে এবং
বহির্বিশ্বে কিভাবে তারা এই ইস্যুটির মুখোমুখি হচ্ছে এবং কিভাবে তারা এই
চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে চায়, তার চিত্র উঠে এসেছে এই শ্বেতপত্রে।
অবাক করা ব্যাপার হলো চীনের শ্বেতপত্রে ভারতকে হুমকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি, তবে তিব্বত ও জিনজিয়াংকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারেও তাদের উল্লেখ সামান্য। তবে যে দেশের উপর সরাসরি হামলা করা হয়েছে, সেটা হলো তাইওয়ান।
তাইওয়ান ইস্যুতে শ্বেতপত্রে বহু শব্দ ব্যয় করা হয়েছে, তবে ভারতের সাথে বহু দশকের পুরনো সীমান্ত ইস্যুর বিষয়টি অল্প কথায় শেষ করা হয়েছে এবং সেখানেও সঙ্ঘাতমূলক কোন ভঙ্গি নেই।
হোয়াইট পেপারে বলা হয়েছে যে, সিনো-ভারত সীমান্ত প্রশ্নে বেইজিংয়ের নীতি হলো “চীন ও ভারতের নেতাদের মধ্যে ঐক্যমতের ভিত্তিতে গৃহীত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করা”।
আরও আগ বাড়িয়ে এতে বলা হয়েছে: “দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সফর হয়েছে এবং তারা সীমান্ত প্রতিরক্ষা সহযোগিতার জন্য হটলাইন স্থাপনের কথা উল্লেখ করেছে এবং সীমান্ত ব্যবস্থা এবং সীমান্ত প্রতিরক্ষা বিনিময়ের জন্য মেকানিজম স্থাপনের কথা বলেছেন”।
তিব্বত, জিনজিয়াং এবং তাইওয়ান
তিব্বত ও জিনজিয়াংয়ের ব্যাপারে শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে: “তিব্বতের স্বাধীনতার জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি গঠন এবং ‘ইস্ট তুর্কিস্তান’ গঠনের মাধ্যমে ঘন ঘন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, যেগুলো চীনের জাতীয় নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে”।
স্বাধীন দেশ হিসেবে তাইওয়ানের অস্তিত্ব বেইজিংয়ের ‘এক চীন’ নীতির প্রতি একটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, যেটা চীনের জন্য বড় ধরনের মাথাব্যথার কারণ।
“বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই আরও তীব্র হয়ে উঠছে। ডেমোক্র্যাটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির (ডিপিপি) নেতৃত্বাধীন তাইওয়ানের কর্তৃপক্ষ তাইওয়ানের স্বাধীনতার ব্যাপারে অনড় অবস্থান নিয়েছে এবং তারা ১৯৯২ সালের ঐক্যমতের বিষয়টি স্বীকার করতে গোয়ার্তুমি করছে। ধীরে ধীরে স্বাধীনতা অর্জনের পথে তারা আরও এগিয়ে গেছে এবং মূল ভূখণ্ডের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে, যেটা সঙ্ঘাত ও সংঘর্ষকে তীব্র করছে এবং এ জন্য তাদের বিদেশি শক্তিকে ভাড়া করছে”।
“তাইওয়ানের স্বাধীনতাবাদী বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনী এবং তাদের কর্মকাণ্ড এখন পর্যন্ত তাইওয়ান প্রণালির শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে আছে এবং দেশের শান্তিপূর্ণ একত্রীকরণের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে”।
শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, “তাইওয়ানের চারপাশে জাহাজ টহল এবং বিমানের মহড়ার মধ্য দিয়ে সশস্ত্র বাহিনী তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির প্রতি কড়া সতর্কবার্তা দিচ্ছে”।
পশ্চিমের সাথে দূরত্ব ঘোঁচানো
শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে যে, দেশের সামরিক বাহিনী “চীনা চরিত্র বজায় রেখে সামরিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে অসামান্য অগ্রগতি অর্জন করেছে”। তবে, এতে স্বীকার করা হয়েছে যে, পিপলস লিবারেশান আর্মি (পিএলএ) এখন পর্যন্ত অত্যাধুনিক দেশগুলোর সামরিক বাহিনীর পর্যায়ে যেতে পারেনি।
শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, “চীনের সামরিক নিরাপত্তার সামনে প্রযুক্তিগত বিস্ময় এবং প্রযুক্তিগত প্রজন্মের পার্থক্যের বিষয়টি ঝুঁকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। জাতীয় নিরাপত্তা চাহিদা পূরণের জন্য সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নের জন্য আরও প্রচেষ্টা চালাতে হবে। পিএলএ এখনও বিশ্বের নেতৃস্থানীয় সামরিক বাহিনীগুলোর তুলনায় বহু পিছিয়ে আছে”।
এই প্রেক্ষাপটে চীন তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য কতগুলো টার্গেট এবং সেগুলো অর্জনের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করেছে।
শ্বেতপত্র অনুযায়ী, দেশের কৌশলগত লক্ষ্যগুলো হলো: (১) ২০২০ সালের মধ্যে যান্ত্রিকীকরণ (তথ্যের সমাহার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়ানো এবং কৌশলগত সক্ষমতার উন্নতি সাধন); (২) দেশের আধুনিকায়নের সাথে তাল রেখে ২০৩৫ সালের মধ্যে জাতীয় প্রতিরক্ষা ও সামরিক বাহিনীর পূর্ণাঙ্গ আধুনিকায়ন সম্পন্ন করা, অর্থাৎ সামরিক তত্ত্ব, সাংগঠনিক কাঠামো, সামরিক সদস্য, এবং অস্ত্র ও সরঞ্জামাদির আধুনিকায়ন সম্পূর্ণ করা; (৩) একবিংশ শতকের মাঝামাঝি নাগাদ জনগণের সশস্ত্র বাহিনীকে বিশ্বমানের বাহিনীতে পরিণত করা।
সীমিত ও অধ্যবসায়ী
পশ্চিমা সামরিক বাহিনীগুলোর মতো চীনা সশস্ত্র বাহিনী হবে মিতব্যায়ী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। শ্বেতপত্রে ঘোষণা দেয়া হয়েছে যে, এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।
“সামরিক বাহিনীর সক্রিয় সদস্য সংখ্যা দুই মিলিয়নের মধ্যে সীমিত রাখার জন্য তিন লাখ জনবল ছাটাই করা হয়েছে। এভাবে রেজিমেন্ট পর্যায়ের উর্ধ্বে নেতৃত্বাস্থানীয় শাখাগুলো থেকে জনবল প্রায় ২৫% কাটছাট করা হয়েছে, আর অ-যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোর আকার কমিয়ে আনা হয়েছে ৫০%”।
পুরনো সরঞ্জামগুলো সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। নতুন ও উচ্চ-প্রযুক্তির অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি বাহিনীতে যুক্ত করা হচ্ছে। বাহিনীতে টাইপ ১৫ ট্যাঙ্ক, টাইপ ০৫২ডি ডেস্ট্রয়ার, জে-২০ জঙ্গিবিমান, এবং ডিএফ-২৬ মাঝারি ও দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল যুক্ত করা হয়েছে।
বাহিনীর আধুনিকায়ন ও জাতীয় আর্থিক সীমাবদ্ধতার কথা মাথায় রেখে প্রতিরক্ষা ব্যয়কে একটা সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য মাত্রার মধ্যে রাখা হয়েছে।
“সার্বিকভাবে, জাতীয় অর্থনীতি ও সরকারের ব্যয় বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রতিরক্ষা ব্যয়ও পরিবর্তিত হয়েছে। জিডিপির শতকরা হিসাবে ১৯৭৯ সালে প্রতিরক্ষা ব্যয় ছিল ৫.৪৩ শতাংশ, যেটা ২০১৭ সালে হয়েছে ১.২৬ শতাংশ। বিগত তিন দশক ধরে এই হার জিডিপির ২ শতাংশের মধ্যেই রয়েছে”।
“সরকারী ব্যয়ের হিসেবে ১৯৭৯ সালে প্রতিরক্ষা ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১৭.৩৭ শতাংশ এবং ২০১৭ সালে ছিল ৫.১৪ শতাংশ। এই পরিমাণ ১২ শতাংশেরও বেশি কমেছে। যেটা ব্যয়ের নিম্নগতির ইঙ্গিত দিচ্ছে”।
শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চীনের প্রতিরক্ষা ব্যয় ৬৬৯.১৯২ বিলিয়ন আরএমবি থেকে বেড়ে ১,০৪৩.২৩৭ বিলিয়ন আরএমবি হয়েছে। একই সময়ে চীনের জিডিপি এবং সরকারের ব্যয় যথাক্রমে ৯.০৪% এবং ১০.৪৩% হারে বেড়েছে। এই সময়টাতে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যয় বেড়েছে গড়ে প্রায় ৯.৪২%।
ব্যবসা থেকে সরে দাঁড়ানো
শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে যে, চীনা বাহিনী সামরিক কর্মকাণ্ড, আধুনিকায়ন, প্রশিক্ষণ ও যৌথ মহড়ার প্রতি সমন্বিত প্রক্রিয়ায় মনোযোগ দেবে এবং অর্থ ব্যয়, জ্বালানি এবং ব্যবসা পরিচালনায় সময় দেয়া নিয়ে ভাববে না।
শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে যে, ২০১৮ সালের জুন মাস নাগাদ, নেতৃস্থানীয় শাখা, অপারেশনাল ইউনিট এবং সামরিক-সংশ্লিষ্ট সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সকল পর্যায়ে অর্থের বিনিময়ে যেসব সেবা দিয়ে আসছিল, সেগুলো সব বন্ধ করা হয়েছে। রিয়েল স্টেট লিজ, কৃষি এবং সহযোগী পণ্য, এবং আতিথেয়তার খাতে ১৫টি সেক্টর এর আগে কাজ করছিল। এ ধরনের এক লক্ষাধিক প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, যেটা পুরো সংখ্যার প্রায় ৯৪%।
শ্বেতপত্রে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, “ব্যবসা পরিচালনা থেকে সরে আসার লক্ষ্য অর্জন করেছে সশস্ত্র বাহিনী”।
অবাক করা ব্যাপার হলো চীনের শ্বেতপত্রে ভারতকে হুমকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি, তবে তিব্বত ও জিনজিয়াংকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারেও তাদের উল্লেখ সামান্য। তবে যে দেশের উপর সরাসরি হামলা করা হয়েছে, সেটা হলো তাইওয়ান।
তাইওয়ান ইস্যুতে শ্বেতপত্রে বহু শব্দ ব্যয় করা হয়েছে, তবে ভারতের সাথে বহু দশকের পুরনো সীমান্ত ইস্যুর বিষয়টি অল্প কথায় শেষ করা হয়েছে এবং সেখানেও সঙ্ঘাতমূলক কোন ভঙ্গি নেই।
হোয়াইট পেপারে বলা হয়েছে যে, সিনো-ভারত সীমান্ত প্রশ্নে বেইজিংয়ের নীতি হলো “চীন ও ভারতের নেতাদের মধ্যে ঐক্যমতের ভিত্তিতে গৃহীত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করা”।
আরও আগ বাড়িয়ে এতে বলা হয়েছে: “দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সফর হয়েছে এবং তারা সীমান্ত প্রতিরক্ষা সহযোগিতার জন্য হটলাইন স্থাপনের কথা উল্লেখ করেছে এবং সীমান্ত ব্যবস্থা এবং সীমান্ত প্রতিরক্ষা বিনিময়ের জন্য মেকানিজম স্থাপনের কথা বলেছেন”।
তিব্বত, জিনজিয়াং এবং তাইওয়ান
তিব্বত ও জিনজিয়াংয়ের ব্যাপারে শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে: “তিব্বতের স্বাধীনতার জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি গঠন এবং ‘ইস্ট তুর্কিস্তান’ গঠনের মাধ্যমে ঘন ঘন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, যেগুলো চীনের জাতীয় নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে”।
স্বাধীন দেশ হিসেবে তাইওয়ানের অস্তিত্ব বেইজিংয়ের ‘এক চীন’ নীতির প্রতি একটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, যেটা চীনের জন্য বড় ধরনের মাথাব্যথার কারণ।
“বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই আরও তীব্র হয়ে উঠছে। ডেমোক্র্যাটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির (ডিপিপি) নেতৃত্বাধীন তাইওয়ানের কর্তৃপক্ষ তাইওয়ানের স্বাধীনতার ব্যাপারে অনড় অবস্থান নিয়েছে এবং তারা ১৯৯২ সালের ঐক্যমতের বিষয়টি স্বীকার করতে গোয়ার্তুমি করছে। ধীরে ধীরে স্বাধীনতা অর্জনের পথে তারা আরও এগিয়ে গেছে এবং মূল ভূখণ্ডের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে, যেটা সঙ্ঘাত ও সংঘর্ষকে তীব্র করছে এবং এ জন্য তাদের বিদেশি শক্তিকে ভাড়া করছে”।
“তাইওয়ানের স্বাধীনতাবাদী বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনী এবং তাদের কর্মকাণ্ড এখন পর্যন্ত তাইওয়ান প্রণালির শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে আছে এবং দেশের শান্তিপূর্ণ একত্রীকরণের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে”।
শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, “তাইওয়ানের চারপাশে জাহাজ টহল এবং বিমানের মহড়ার মধ্য দিয়ে সশস্ত্র বাহিনী তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির প্রতি কড়া সতর্কবার্তা দিচ্ছে”।
পশ্চিমের সাথে দূরত্ব ঘোঁচানো
শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে যে, দেশের সামরিক বাহিনী “চীনা চরিত্র বজায় রেখে সামরিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে অসামান্য অগ্রগতি অর্জন করেছে”। তবে, এতে স্বীকার করা হয়েছে যে, পিপলস লিবারেশান আর্মি (পিএলএ) এখন পর্যন্ত অত্যাধুনিক দেশগুলোর সামরিক বাহিনীর পর্যায়ে যেতে পারেনি।
শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, “চীনের সামরিক নিরাপত্তার সামনে প্রযুক্তিগত বিস্ময় এবং প্রযুক্তিগত প্রজন্মের পার্থক্যের বিষয়টি ঝুঁকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। জাতীয় নিরাপত্তা চাহিদা পূরণের জন্য সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নের জন্য আরও প্রচেষ্টা চালাতে হবে। পিএলএ এখনও বিশ্বের নেতৃস্থানীয় সামরিক বাহিনীগুলোর তুলনায় বহু পিছিয়ে আছে”।
এই প্রেক্ষাপটে চীন তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য কতগুলো টার্গেট এবং সেগুলো অর্জনের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করেছে।
শ্বেতপত্র অনুযায়ী, দেশের কৌশলগত লক্ষ্যগুলো হলো: (১) ২০২০ সালের মধ্যে যান্ত্রিকীকরণ (তথ্যের সমাহার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়ানো এবং কৌশলগত সক্ষমতার উন্নতি সাধন); (২) দেশের আধুনিকায়নের সাথে তাল রেখে ২০৩৫ সালের মধ্যে জাতীয় প্রতিরক্ষা ও সামরিক বাহিনীর পূর্ণাঙ্গ আধুনিকায়ন সম্পন্ন করা, অর্থাৎ সামরিক তত্ত্ব, সাংগঠনিক কাঠামো, সামরিক সদস্য, এবং অস্ত্র ও সরঞ্জামাদির আধুনিকায়ন সম্পূর্ণ করা; (৩) একবিংশ শতকের মাঝামাঝি নাগাদ জনগণের সশস্ত্র বাহিনীকে বিশ্বমানের বাহিনীতে পরিণত করা।
সীমিত ও অধ্যবসায়ী
পশ্চিমা সামরিক বাহিনীগুলোর মতো চীনা সশস্ত্র বাহিনী হবে মিতব্যায়ী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। শ্বেতপত্রে ঘোষণা দেয়া হয়েছে যে, এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।
“সামরিক বাহিনীর সক্রিয় সদস্য সংখ্যা দুই মিলিয়নের মধ্যে সীমিত রাখার জন্য তিন লাখ জনবল ছাটাই করা হয়েছে। এভাবে রেজিমেন্ট পর্যায়ের উর্ধ্বে নেতৃত্বাস্থানীয় শাখাগুলো থেকে জনবল প্রায় ২৫% কাটছাট করা হয়েছে, আর অ-যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোর আকার কমিয়ে আনা হয়েছে ৫০%”।
পুরনো সরঞ্জামগুলো সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। নতুন ও উচ্চ-প্রযুক্তির অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি বাহিনীতে যুক্ত করা হচ্ছে। বাহিনীতে টাইপ ১৫ ট্যাঙ্ক, টাইপ ০৫২ডি ডেস্ট্রয়ার, জে-২০ জঙ্গিবিমান, এবং ডিএফ-২৬ মাঝারি ও দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল যুক্ত করা হয়েছে।
বাহিনীর আধুনিকায়ন ও জাতীয় আর্থিক সীমাবদ্ধতার কথা মাথায় রেখে প্রতিরক্ষা ব্যয়কে একটা সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য মাত্রার মধ্যে রাখা হয়েছে।
“সার্বিকভাবে, জাতীয় অর্থনীতি ও সরকারের ব্যয় বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রতিরক্ষা ব্যয়ও পরিবর্তিত হয়েছে। জিডিপির শতকরা হিসাবে ১৯৭৯ সালে প্রতিরক্ষা ব্যয় ছিল ৫.৪৩ শতাংশ, যেটা ২০১৭ সালে হয়েছে ১.২৬ শতাংশ। বিগত তিন দশক ধরে এই হার জিডিপির ২ শতাংশের মধ্যেই রয়েছে”।
“সরকারী ব্যয়ের হিসেবে ১৯৭৯ সালে প্রতিরক্ষা ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১৭.৩৭ শতাংশ এবং ২০১৭ সালে ছিল ৫.১৪ শতাংশ। এই পরিমাণ ১২ শতাংশেরও বেশি কমেছে। যেটা ব্যয়ের নিম্নগতির ইঙ্গিত দিচ্ছে”।
শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চীনের প্রতিরক্ষা ব্যয় ৬৬৯.১৯২ বিলিয়ন আরএমবি থেকে বেড়ে ১,০৪৩.২৩৭ বিলিয়ন আরএমবি হয়েছে। একই সময়ে চীনের জিডিপি এবং সরকারের ব্যয় যথাক্রমে ৯.০৪% এবং ১০.৪৩% হারে বেড়েছে। এই সময়টাতে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যয় বেড়েছে গড়ে প্রায় ৯.৪২%।
ব্যবসা থেকে সরে দাঁড়ানো
শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে যে, চীনা বাহিনী সামরিক কর্মকাণ্ড, আধুনিকায়ন, প্রশিক্ষণ ও যৌথ মহড়ার প্রতি সমন্বিত প্রক্রিয়ায় মনোযোগ দেবে এবং অর্থ ব্যয়, জ্বালানি এবং ব্যবসা পরিচালনায় সময় দেয়া নিয়ে ভাববে না।
শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে যে, ২০১৮ সালের জুন মাস নাগাদ, নেতৃস্থানীয় শাখা, অপারেশনাল ইউনিট এবং সামরিক-সংশ্লিষ্ট সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সকল পর্যায়ে অর্থের বিনিময়ে যেসব সেবা দিয়ে আসছিল, সেগুলো সব বন্ধ করা হয়েছে। রিয়েল স্টেট লিজ, কৃষি এবং সহযোগী পণ্য, এবং আতিথেয়তার খাতে ১৫টি সেক্টর এর আগে কাজ করছিল। এ ধরনের এক লক্ষাধিক প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, যেটা পুরো সংখ্যার প্রায় ৯৪%।
শ্বেতপত্রে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, “ব্যবসা পরিচালনা থেকে সরে আসার লক্ষ্য অর্জন করেছে সশস্ত্র বাহিনী”।
No comments