মোদীর হিন্দুত্বের জিগিরে ভারতে মুসলিমদের পরিণতি কি?
গত ২৫ মে শনিবার
পার্লামেন্টের সেন্ট্রাল হলে নবীন এমপিদের সামনে দেয়া এক ভাষণে ভারতের
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ভারতের মুসলিম সমাজকে এতকাল 'কাল্পনিক
এক বাতাবরণ' তৈরি করিয়ে মিথ্যে ভয় দেখিয়ে আসা হয়েছে - যা এবার বন্ধ
করার সময় এসেছে।
মুসলিম অ্যাক্টিভিস্ট ও রাজনীতিবিদরা কিন্তু বলছেন, এই 'ভয়' আদৌ অমূলক নয় - আর মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি যে হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা নিয়ে চলছে তাতে আগামী পাঁচ বছরে অন্যরকম কিছু হবে বলে ভাবাও যাচ্ছে না।
সিওনিতে বিফ-হামলা, পার্লামেন্টে কাল্পনিক ভয়
ভারতে লোকসভার ভোটের ফল তখনও বেরোয়নি। ভোট গণনার আগের রাতে মধ্যপ্রদেশের সিওনি জেলায় বিফ বা গরুর গোশত বহন করা হচ্ছে, এই সন্দেহে জনতা একজন মহিলাসহ তিন ব্যক্তিকে আটকে বেদম মারধর করে - যাদের নাম দিলীপ মালভিয়া, তৌফিক ও আনজুম শামা।
খবর পেয়ে প্রথমেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্রেফতার করে আক্রান্ত ব্যক্তিদের - আর মাংসের নমুনা পাঠানো হয় হায়দ্রাবাদে পরীক্ষার জন্য। এর দুদিন বাদে পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, মুসলিমদের এতকাল মিথ্যে ভয় দেখিয়ে আসা হয়েছে।
তার কথায়, "এতদিন দেশের সংখ্যালঘুদের ভুল বুঝিয়ে আসা হয়েছে। ভাল হত যদি তাদের শিক্ষা নিয়ে চিন্তা করা হত, যদি সমাজজীবনের বিভিন্ন স্তরে ওই সমাজ থেকে নেতারা উঠে আসতেন।"
"কিন্তু তা না-করে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য তাদের সামনে একটা কাল্পনিক বাতাবরণ তৈরি করা হয়েছে - তাদের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দিয়ে দূরেও সরিয়ে দেয়া হয়েছে, দাবিয়েও রাখা হয়েছে।"
"শুধুমাত্র ভোটে তাদের কাজে লাগানোর এই ছল এবার বন্ধ হবে, এটাই ২০১৯-এ এসে আমার কামনা।"
হিন্দু রাষ্ট্রের জিগির
কিন্তু মোদীর এই বক্তব্যে কতটা ভরসা করতে পারবেন ভারতের মুসলিমরা? কারণ এই প্রধানমন্ত্রীর আমলেই গত পাঁচ বছরে দেশের নানা প্রান্তে মুসলিমরা আক্রান্ত হয়েছেন - আর তার দলের নির্বাচনী প্রচারেও বড় অংশ জুড়ে ছিল হিন্দুত্বর জিগির।
কাজেই প্রধানমন্ত্রীর কথায় কোনো আশার আলো দেখছেন না অ্যাক্টিভিস্ট ফারাহ নাকভি। তিনি বলছিলেন, "দেখুন আগামীতে কী ঘটবে সেই পূর্বাভাস করতে পারব না - তবে এটুকু বলতে পারি বিজেপির এবারের জয় আসলে হিন্দুত্বর ও হিন্দু রাষ্ট্রের চেতনার জয়, যেটা মৌলিকভাবেই সংখ্যালঘু-বিরোধী।"
"এই হিন্দু রাষ্ট্রে সংখ্যালঘুরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক ছাড়া কিছুই নয়।"
"এখন প্রশ্ন হল, প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে যে কথা বলেছেন সেটা কি সংখ্যালঘু প্রশ্নে বিদেশি গণমাধ্যমকে সন্তুষ্ট করার জন্য বললেন - না কি যে দক্ষিণপন্থী ক্যাডাররা গত পাঁচ বছর ধরে যে সহিংসতা আর গণপিটুনি চালাচ্ছে তাদের উদ্দেশে কোনও বার্তা দিতে চাইলেন?"
প্রধানমন্ত্রী সংখ্যালঘুদের যে ভয়কে অমূলক বলছেন, সেটাও একেবারেই মানতে রাজি নন ফারাহ নাকভি।
"হামলার ঘটনাগুলো তো সত্যি সত্যি ঘটেছে, আমাদের অভিজ্ঞতায় সেটা আছে - কাজেই ভয়টা কেন কাল্পনিক হবে? বরং তারা তাদের কাজে প্রমাণ দিন যে সত্যিই মুসলিমদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই।"
"বিজেপি নেতারা সবাই ভোটের শেষ কয়েক সপ্তাহে লাগামছাড়া হিন্দুত্বের প্রচার করেছেন, সন্ত্রাসে অভিযুক্ত একজন হিন্দু সাধ্বীকে জিতিয়ে পার্লামেন্টে পাঠিয়েছেন।"
"গান্ধীর হত্যাকারীকে দেশপ্রেমী বলে তারিফ করা সেই প্রজ্ঞা ঠাকুরকে বিজেপি সাসপেন্ড করে দেখাক - তবে না দেশের মুসলিম বা দলিতরা বুঝবে আগামী পাঁচ বছর তাদের জন্য একটু নিরাপদ হতে পারে!", বলছিলেন নকভি।
'মোদীকেও মাটিতে ফেলতে পারে মানুষ'
হায়দ্রাবাদের এমপি ও ভারতের মুসলিম সমাজের প্রথম সারির নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি আবার বিশ্বাস করেন, হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডার আড়ালে লুকিয়ে নরেন্দ্র মোদী এবার কিন্তু আর পার পাবেন না।
ওয়াইসি বলছিলেন, "গত টার্মের তুলনায় এবারে ফারাক একটাই হবে বলে আমার ধারণা - হিন্দুত্ববাদী প্রচারণা দিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা আর অকর্মণ্যতা বিজেপি আর ঢাকতে পারবে না।"
"কাজেই হিন্দুত্বর অ্যাজেন্ডা তাদের কিছুটা চাপা দিতেই হবে। নইলে যে হিন্দুস্তানের জনতা মোদীকে আকাশে তুলেছে, তারাই আবার একদিন জমিতে ফেলবে - ইন্দিরা গান্ধীর কথা নিশ্চয় সকলেরই মনে আছে।"
কিন্তু নরেন্দ্র মোদী তার দ্বিতীয় দফায় শেষ পর্যন্ত কোন রাস্তাটা বেছে নেবেন, সেটা শেষ পর্যন্ত তার ওপরই নির্ভর করছে বলে মনে করেন মুসলিম দার্শনিক ও অধ্যাপক ড. মীরাতুন নাহার।
ড. নাহারের কথায়, "ভারতবর্ষের মতো একটা বহুজাতিক দেশে যদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি নিজের একটা নাম রেখে যেতে চান তাহলে যে নীতিগুলো তিনি এতদিন অনুসরণ করে এসেছেন তা এবার তাকে বিসর্জন দিতেই হবে।"
"কিন্তু আমি বিশ্বাস করি না এ ব্যাপারে তার নিজের কোনও স্বাধীনতা আছে - আর স্বাধীনতা নেই বলেই বিজেপি-আরএসএসের অনুসৃত এই বিভাজনের রাজনীতিতে তিনি প্রশ্রয় দিয়ে গেছেন।"
"নতুন মেয়াদেও স্বাধীনতা-বিহীন অবস্থায় সেই একই নীতি তিনি জারি রাখবেন বলেই আমার আশঙ্কা", বলছিলেন মীরাতুন নাহার।
অর্থাৎ যে ধর্মীয় বিচারধারার ভিত্তিতে নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী সাফল্য এসেছে, দেশের শাসক হিসেবে তিনি তা থেকে উত্তীর্ণ হতে পারবেন কি না এই সংশয় ভারতের মুসলিম সমাজের ভেতর কিন্তু রয়েই যাচ্ছে। সূত্র : বিবিসি।
মুসলিম অ্যাক্টিভিস্ট ও রাজনীতিবিদরা কিন্তু বলছেন, এই 'ভয়' আদৌ অমূলক নয় - আর মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি যে হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা নিয়ে চলছে তাতে আগামী পাঁচ বছরে অন্যরকম কিছু হবে বলে ভাবাও যাচ্ছে না।
সিওনিতে বিফ-হামলা, পার্লামেন্টে কাল্পনিক ভয়
ভারতে লোকসভার ভোটের ফল তখনও বেরোয়নি। ভোট গণনার আগের রাতে মধ্যপ্রদেশের সিওনি জেলায় বিফ বা গরুর গোশত বহন করা হচ্ছে, এই সন্দেহে জনতা একজন মহিলাসহ তিন ব্যক্তিকে আটকে বেদম মারধর করে - যাদের নাম দিলীপ মালভিয়া, তৌফিক ও আনজুম শামা।
খবর পেয়ে প্রথমেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্রেফতার করে আক্রান্ত ব্যক্তিদের - আর মাংসের নমুনা পাঠানো হয় হায়দ্রাবাদে পরীক্ষার জন্য। এর দুদিন বাদে পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, মুসলিমদের এতকাল মিথ্যে ভয় দেখিয়ে আসা হয়েছে।
তার কথায়, "এতদিন দেশের সংখ্যালঘুদের ভুল বুঝিয়ে আসা হয়েছে। ভাল হত যদি তাদের শিক্ষা নিয়ে চিন্তা করা হত, যদি সমাজজীবনের বিভিন্ন স্তরে ওই সমাজ থেকে নেতারা উঠে আসতেন।"
"কিন্তু তা না-করে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য তাদের সামনে একটা কাল্পনিক বাতাবরণ তৈরি করা হয়েছে - তাদের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দিয়ে দূরেও সরিয়ে দেয়া হয়েছে, দাবিয়েও রাখা হয়েছে।"
"শুধুমাত্র ভোটে তাদের কাজে লাগানোর এই ছল এবার বন্ধ হবে, এটাই ২০১৯-এ এসে আমার কামনা।"
হিন্দু রাষ্ট্রের জিগির
কিন্তু মোদীর এই বক্তব্যে কতটা ভরসা করতে পারবেন ভারতের মুসলিমরা? কারণ এই প্রধানমন্ত্রীর আমলেই গত পাঁচ বছরে দেশের নানা প্রান্তে মুসলিমরা আক্রান্ত হয়েছেন - আর তার দলের নির্বাচনী প্রচারেও বড় অংশ জুড়ে ছিল হিন্দুত্বর জিগির।
কাজেই প্রধানমন্ত্রীর কথায় কোনো আশার আলো দেখছেন না অ্যাক্টিভিস্ট ফারাহ নাকভি। তিনি বলছিলেন, "দেখুন আগামীতে কী ঘটবে সেই পূর্বাভাস করতে পারব না - তবে এটুকু বলতে পারি বিজেপির এবারের জয় আসলে হিন্দুত্বর ও হিন্দু রাষ্ট্রের চেতনার জয়, যেটা মৌলিকভাবেই সংখ্যালঘু-বিরোধী।"
"এই হিন্দু রাষ্ট্রে সংখ্যালঘুরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক ছাড়া কিছুই নয়।"
"এখন প্রশ্ন হল, প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে যে কথা বলেছেন সেটা কি সংখ্যালঘু প্রশ্নে বিদেশি গণমাধ্যমকে সন্তুষ্ট করার জন্য বললেন - না কি যে দক্ষিণপন্থী ক্যাডাররা গত পাঁচ বছর ধরে যে সহিংসতা আর গণপিটুনি চালাচ্ছে তাদের উদ্দেশে কোনও বার্তা দিতে চাইলেন?"
প্রধানমন্ত্রী সংখ্যালঘুদের যে ভয়কে অমূলক বলছেন, সেটাও একেবারেই মানতে রাজি নন ফারাহ নাকভি।
"হামলার ঘটনাগুলো তো সত্যি সত্যি ঘটেছে, আমাদের অভিজ্ঞতায় সেটা আছে - কাজেই ভয়টা কেন কাল্পনিক হবে? বরং তারা তাদের কাজে প্রমাণ দিন যে সত্যিই মুসলিমদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই।"
"বিজেপি নেতারা সবাই ভোটের শেষ কয়েক সপ্তাহে লাগামছাড়া হিন্দুত্বের প্রচার করেছেন, সন্ত্রাসে অভিযুক্ত একজন হিন্দু সাধ্বীকে জিতিয়ে পার্লামেন্টে পাঠিয়েছেন।"
"গান্ধীর হত্যাকারীকে দেশপ্রেমী বলে তারিফ করা সেই প্রজ্ঞা ঠাকুরকে বিজেপি সাসপেন্ড করে দেখাক - তবে না দেশের মুসলিম বা দলিতরা বুঝবে আগামী পাঁচ বছর তাদের জন্য একটু নিরাপদ হতে পারে!", বলছিলেন নকভি।
'মোদীকেও মাটিতে ফেলতে পারে মানুষ'
হায়দ্রাবাদের এমপি ও ভারতের মুসলিম সমাজের প্রথম সারির নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি আবার বিশ্বাস করেন, হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডার আড়ালে লুকিয়ে নরেন্দ্র মোদী এবার কিন্তু আর পার পাবেন না।
ওয়াইসি বলছিলেন, "গত টার্মের তুলনায় এবারে ফারাক একটাই হবে বলে আমার ধারণা - হিন্দুত্ববাদী প্রচারণা দিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা আর অকর্মণ্যতা বিজেপি আর ঢাকতে পারবে না।"
"কাজেই হিন্দুত্বর অ্যাজেন্ডা তাদের কিছুটা চাপা দিতেই হবে। নইলে যে হিন্দুস্তানের জনতা মোদীকে আকাশে তুলেছে, তারাই আবার একদিন জমিতে ফেলবে - ইন্দিরা গান্ধীর কথা নিশ্চয় সকলেরই মনে আছে।"
কিন্তু নরেন্দ্র মোদী তার দ্বিতীয় দফায় শেষ পর্যন্ত কোন রাস্তাটা বেছে নেবেন, সেটা শেষ পর্যন্ত তার ওপরই নির্ভর করছে বলে মনে করেন মুসলিম দার্শনিক ও অধ্যাপক ড. মীরাতুন নাহার।
ড. নাহারের কথায়, "ভারতবর্ষের মতো একটা বহুজাতিক দেশে যদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি নিজের একটা নাম রেখে যেতে চান তাহলে যে নীতিগুলো তিনি এতদিন অনুসরণ করে এসেছেন তা এবার তাকে বিসর্জন দিতেই হবে।"
"কিন্তু আমি বিশ্বাস করি না এ ব্যাপারে তার নিজের কোনও স্বাধীনতা আছে - আর স্বাধীনতা নেই বলেই বিজেপি-আরএসএসের অনুসৃত এই বিভাজনের রাজনীতিতে তিনি প্রশ্রয় দিয়ে গেছেন।"
"নতুন মেয়াদেও স্বাধীনতা-বিহীন অবস্থায় সেই একই নীতি তিনি জারি রাখবেন বলেই আমার আশঙ্কা", বলছিলেন মীরাতুন নাহার।
অর্থাৎ যে ধর্মীয় বিচারধারার ভিত্তিতে নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী সাফল্য এসেছে, দেশের শাসক হিসেবে তিনি তা থেকে উত্তীর্ণ হতে পারবেন কি না এই সংশয় ভারতের মুসলিম সমাজের ভেতর কিন্তু রয়েই যাচ্ছে। সূত্র : বিবিসি।
No comments