আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো চায় না রোহিঙ্গারা ফিরে যাক -সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী
রোহিঙ্গা
প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোকে দুষলেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বললেন, কিছু দেশ চাইলেও পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের
মিয়ানমার ফেরত নিতে চাইছে না। একই সঙ্গে আর্ন্তজাতিক কিছু দাতা সংস্থাও
চায় না রোহিঙ্গারা তাদের দেশে ফিরে যাক। গতকাল গণভবনে আয়োজিত সংবাদ
সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা ইস্যুসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে করা
প্রশ্নের জবাব দেন। জাপান, সৌদি আরব ও ফিনল্যান্ড সফরের বিষয়ে দেশবাসীকে
জানাতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী। গণমাধ্যম বিষয়ে এক প্রশ্নের
জবাবে তিনি বলেন, গণমাধ্যমে লেখার ক্ষেত্রে কাউকে বাধা দেয়া হচ্ছে না।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিভিন্ন সংস্থা আছে যারা চায় না কোনো রিফিউজি তাদের দেশে ফিরে যাক। আমরা তালিকা করলাম, তারপরে তারা আন্দোলন করলো যাবে না।
তাহলে এই আন্দোলনে উস্কানি কারা দিলো?
এই যে সংস্থাগুলো এরা চায় না কখনো তারা ফিরে যাক। এটার কারণ বিশাল একটি অংশের টাকা-পয়সা আসে। চাকরি বাকরি যা আছে তা থাকবে না। তিনি বলেন, কয়েকটি দেশ চায় রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফেরত যাক। কিন্তু মুশকিলটা হচ্ছে মিয়ানমারকে নিয়ে। তারা কোনোভাবেই রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চায় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাই চায় যে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হোক। সবাই মিলে সহযোগিতা করলে একটা ব্যবস্থা হবে। না হলে এত লোকের ব্যবস্থা করা কঠিন। শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। ইতিমধ্যে আমি নির্দেশ দিয়েছি। ওখানে ভাগ করা আছে। আমাদের বর্ডার ফোর্স একটা অঞ্চল দেখে, আমাদের পুলিশ দেখে এবং আমাদের সেনাবাহিনী। আমরা বলেছি ওটাকে ক্লাস্টার করে করে চারিদিকে একটা সিকিউরিটি বেরিকেড দেয়া। সব সময় টহলে রাখা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এদের সাহায্য করতে আসে বা ভলানটিয়ার সার্ভিস দিতে আসে তাদের সাংঘাতিক আপত্তি ভাসান চরে নেয়ার ব্যাপারে। কক্সবাজারে আরাম আয়েশে থাকে। যা পায় কিছু খায় আর কিছু রাখে। খরচা হয় না। এ জন্য তারা করতে চায় না। সেটা নিয়ে কথা হচ্ছে। এত সুন্দর ঘরবাড়ি আমরা করে দিয়েছি তারপরও পছন্দ হয় না।
গণমাধ্যম নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি সব সময় মনে করি আমার বিবেক যদি ঠিক থাকে, যে আমি সঠিক আছি, সঠিক বলছি, সঠিক করছি সেটাই আমার কাছে বড়। তাই কে কি লিখলো সেটা বিষয় না। আমি আমার দেশকে ভালোবাসি দেশের মানুষকে ভালোবাসি। আমি যা কাজ করি তা দেশের জনগণের জন্য দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। এই বিশ্বাসটা যদি আমার থাকে-তাহলে কোনটা ভালো বললো কোনটা মন্দ বললো, কি বললো-এ নিয়ে আমার তো মাথাব্যাথার কিছু নেই।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই তিন দেশ সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ঐতিহাসিক বিষয় তুলে ধরে বলেন, স্বাধীনতার সময় এবং পরে আমাদের সহায়তা করেছে জাপান। এবারের সফরে আড়াই’শ কোটি ডলারের চুক্তির কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত ইস্যুর সমাধানে আশা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, নরেন্দ্র মোদী আবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, তাকে অভিনন্দন জানাই। আমরা আশা করি আমাদের সমস্যাগুলি একে একে সমাধান হবে। শুধু তিস্তা, তিস্তা করে না। আপনারা একটা জিনিস ভুলে যাচ্ছেন, আমাদের মেরিটাইম বাউন্ডারির মতো কঠিন একটা সমস্যা আমরা সমাধান করেছি। আমরা আমাদের যে ছিটমহল বিনিময় করা। পৃথিবীর বহু দেশে যুদ্ধ বেধে যাচ্ছে এই ছিটমহল বিনিময় নিয়ে। আমরা একটা উৎসব মুখর পরিবেশে ছিটমহল বিনিময় করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা অনেক কঠিন সমস্যা সমাধান করেছি। তিনি বলেন, কারো কাছে পানির জন্য মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। কারণ আমাদের এটা হচ্ছে ডেল্টা প্রকল্প। হিমালয় থেকে নদীগুলি যা আসছে বাংলাদেশের উপর দিয়ে যেতেই হবে। পানিটা আমরা কতটা ধরে রাখতে পারবো সেই ব্যবস্থা যদি আমরা করি তাহলে পানি পানি করে আমাদের চাইতে হবে না। আমরা নিজেরাই ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে পারবো। আমরা তাই করবো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেশি পানি হলে তারা কী করবে? এটা নিয়ে বেশি চিন্তা করার দরকার নাই। আর যিনি পানি দেন নাই। চাইলাম পানি দিলো বিদ্যুৎ। তো বিদ্যুৎ নিচ্ছি। পানি তো পাওয়াই যায় বৃষ্টি হলে। প্রায় ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমরা ভারত থেকে আমদানি করছি। আরো কিছু আনার জন্য আলোচনা চলছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে একজন বাংলাদেশী সম্পাদকের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে সম্পাদক এরকম কথা বলছেন, যদি সত্যিই এরকম হতো তাহলে উনি কি এই কথাটুকু বলার সাহস রাখেন? যে উনি লিখতে পারেন না। যদি তার ওপর সত্যি কোন চাপ থাকতো তাহলে এই কথাটাই বলার সাহস পেতো কি না আমার প্রশ্ন সেখানেই। কেউ তো চাপ দেয়নি। তবে হ্যাঁ আপনি যখন বলছেন কোন একজন সম্পাদক-গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশ থাকলে তাদের খুব একটা ভালো লাগে না। তাদের ভালো লাগে যদি কোন অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থাকে। যেমন-ইমার্জেন্সি সরকার হোক বা মিলিটারি সরকার হোক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরকম কিছু হলে তখন তারা ফরমায়েশি লেখা লিখতে পারে। তার এই কথা থেকে আমার মনে হয়, যে ভদ্রলোকের কথা বলছেন আমি বুঝতে পারছি তিনি কে। আপনাদের মনে আছে তিনি একবার টেলিভিশনের কোন এক টক শো’তে বলেছিলো-কোন একটা মিথ্যা নিউজ দেয়া হয়েছিলো বলে তাকে ধরছিলো কেউ।
তখন তিনি বলেছিলেন, আমি কি করবো ডিজিএফআই আমাকে যেটা সাপ্লাই দিয়েছে আমি সেটাই ছাপিয়ে দিয়েছিলাম। লিখে দিয়েছিলাম। মনে পড়ে, সবার খেয়াল আছে? কোনটা আমার ঠিক মনে নাই। তার মানে দাঁড়াচ্ছেটা কি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনি যদি ওই কথাটার সঙ্গে এই কথাটার লিংক করেন-তাহলে এখন ডিজিএফআই তাকে কোন লেখা দিচ্ছে না। কাজেই উনি লিখতে পারছেন না। আমি তো এটাই বুঝবো। কারণ উনি তো বলছেন, উনি ফরমায়েশিটা লিখতে পারেন। উনার ওই বক্তব্যটা যদি আপনি স্বরণ করেন উনি বলছেন যে ডিজিএফআই উনাকে যে তথ্য দিয়েছেন সেটা উনি লিখেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তো ডিজিএফআই দিয়ে কোন তথ্য দেয়াচ্ছি না।
বা ডিজিএফআই এর ওই সমস্ত সমস্যা নেই। কাকে কি বলতে হবে কাকে লিখতে হবে এটা তারা করবে না। তো এখন উনি নিজেই লিখতে পারছেন না। তার মানে কোন ফরশায়েশি লেখা না পেলে উনি লিখতে পারেন না। এটাই তো দাঁড়াচ্ছে। আমি তো এটাই বুঝতে পারছি। এর বাইরে আর কিছু বুঝতে পারছি না। উনি লেখুক না। উনার যা খুশি তাই লিখুক। লিখে তো যাচ্ছেই। তিনি বলেন, আমি কি বলতে পারবো আমি কোনদিন এইসব পত্রিকার কোন সহযোগিতা পেয়েছি। জীবনেও না। আর বাংলাদেশে আসার পর থেকে কয়টা পত্রিকা ছিলো আমাদের পক্ষে? পারলে সবাই বিরুদ্ধেই লিখেছে। এ ধরনের আঘাতে আমরা অভ্যস্ত। এতে আমার কিছু আসে-যায় না।
এবার ঈদ জামাতের সময় জঙ্গি হামলার হুমকি ছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আন্তরিক চেষ্টায় কোনো অঘটন ছাড়াই সব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে ২০১৬ সালের জঙ্গি হামলার পর থেকেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ও পুলিশ কড়া নজরদারি শুরু করে। কোথাও কোনো ধরনের তথ্য পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। আপনারা জানেন যে নানা নামে নানাভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নানা ধরনের থ্রেট কিন্তু দিতেই থাকে। সারাক্ষণ কিন্তু এগুলো আসছে। সবটা আমি বলে মানুষকে ভীত করতে চাই না। কিন্তু যতদূর পারি, এগুলোর পেছনে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তদন্ত করে এবং তাদের বিরুদ্ধে যা যা ব্যবস্থা নেয়ার, তা আমরা নিয়ে থাকি। এবার ঈদের আগেও তেমন হুমকি ছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঈদের জামাতের সময় আমি সত্যিই খুব চিন্তিত ছিলাম। কারণ এমন এমন ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, তা যেন কোনোমতে না ঘটে। সরকার প্রধান বলেন, তিনি দেশে বা দেশের বাইরে যেখানেই থাকুন না কেন, দেশে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সব সময় তার যোগাযোগ থাকে। এবারও বিভিন্ন ঈদ জামাত সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার কাছে ‘মেসেজ’ চলে গেছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা, আমাদের পুলিশ বাহিনী, আমাদের র্যাব থেকে শুরু করে সকলেই খুব আন্তরিকতার সঙ্গে তারা কাজ করেছে। সেজন্য খুব সুষ্ঠুভাবে ঈদের জামাতগুলো সম্পন্ন হয়েছে। এবার কিন্তু কেউ কিছু করতে পারেনি। জঙ্গিবাদ দমনে জনগণের সচেতনতাকে বাংলাদেশের ‘সবচেয়ে বড় শক্তি’ হিসেবে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন,জনগণ কিন্তু যথেষ্ট সচেতন। আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করেই এ ধরনের হুমকি মোকাবিলা করতে চাই। সেজন্য জনগণের কাছে সব সময় আমার আবেদন থাকবে, তারা যেন এ বাপারে সজাগ থাকেন, সচেতন থাকেন। কারণ এসব ঘটনা আমাদের উন্নয়নের গতিধারাটা ব্যহত করবে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, কোথাও কোনো তথ্য পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
আজ হোক, কাল হোক তার শাস্তি কার্যকর হবে
লন্ডনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নাম নিতেও ঘৃণা লাগে। ওই একুশে আগস্টের হামলায় আইভি রহমানসহ ২৮ জন মানুষ নিহত হন। শতাধিক মানুষ আহত হন। শুধু একুশে আগস্ট নয়, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের সঙ্গেও যুক্ত সে। শেখ হাসিনা বলেন, এসব ব্যক্তির জন্য অনেকের মায়াকান্না দেখছি। আমরা যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছি। তবে ওরা অনেক টাকার মালিক। সব সময় চেষ্টা করে ঝামেলা সৃষ্টি করার। আমি সেখানে গেলেও ঝামেলা সৃষ্টি করতে চায়। তবে যাই হোক, আজ হোক, কাল হোক তার শাস্তি কার্যকর হবে।
ইমিগ্রেশনে খুব কড়াকড়ি করতে বলেছি
পাসপোর্ট ছাড়াই প্রধানমন্ত্রীকে আনতে যাওয়া বিমান পাইলটের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটা বিষয় লক্ষণীয়, যখনই বিমানে উঠি তখনই একটা ঘটনা ঘটে। একটা নিউজ হয়, নিউজটা কেন হয় আমি জানি না। হয়তো পাসপোর্ট ভুলে যেতে পারে। পাসপোর্ট ভোলা কোনো ব্যাপার না। কিন্তু এখানে ইমিগ্রেশনে যারা ছিল, তাদের তো এই নজরটা থাকতে হবে। আমার কাছে খবর যাওয়ার সাথে সাথে আমি বলেছি, ইমিডিয়েটলি ব্যবস্থা নিতে। ইমিগ্রেশনে কারা ছিল? কেন চেক করে নাই? কেন দেখে নাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কিন্তু এখন ইমিগ্রেশনে খুব কড়াকড়ি করতে বলেছি। আমাদের তো এখন সবাই ভিআইপি। তারপর আবার ভিভিআইপি। এরপর বোধহয় আরো ভি লাগবে। যত ভি লাগুক এরপর আর কাউকে ছাড়া হবে না। প্রত্যেকের একদম পাসপোর্ট সিল মারা আছে কী না, তারপর তাদের চেকটা ভালোভাবে হচ্ছে কী না। এমন কী ভিআইপি এবং ভিভিআইপি এনক্লেভগুলোতে তাদের লাগেজ ঠিকভাবে চেক করার ব্যবস্থা। তিনি বলেন, এত দিন পরিশ্রম করে, প্লেন কিনে বিমানের অবস্থানটা যখন একটা জায়গায় চলে আসছে। যখন আমি চেষ্টা করছি আমরা আরো কয়েকটা নতুন রুটে যাব। মোটামুটি একটা ব্যবস্থা করে ফেলেছি। ঠিক তখনই একেকটা কারণ এ রকম আসে। শেখ হাসিনা বলেন, এটার কারণ আমার যেটা মনে হয়। এর আগে যারা ক্ষমতায় ছিল, আপনারা অনেকেই জানেন তারা এটাকে কীভাবে ব্যবহার করেছে। ছিলই তো না। সেগুলো আমরা যেহেতু একটু ভালোভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
অনেকের পছন্দ হবে না, এটা আমি জানি। কারণ আগে যেগুলি খুব সহজে করতে পারতো সেগুলি বন্ধ করার জন্য আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। এই সিকিউরিটির উপরে একবার ব্রিটিশ আমাদের এমবার্গো দিল, একবার অস্ট্রেলিয়া দিল। সেটাও আমরা মিটআপ করেছি।
তিনি বলেন, এ জন্য যখনই আমি যাই তখনই একটা ঘটনা। আমার কাছে শত শত মেইল যাচ্ছে। আপনি আইসেন না, বিমানে আসবেন না। আমি বললাম, বিমানে আসবো না মানে? বলে না এটা হয়েছে। আমি বললাম, যা হয় হোক। মরলে নিজের দেশের প্লেনেই তো মরবো। নিজের প্লেনে মরলে মনে করবো নিজের মাটিতেই মরলাম। আমি আমার বিমানেই যাব। আমি অন্য কোনো এয়ারলাইন্সে যাব না। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ-চীনের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সবাই সম্মান করেন। যদিও বাংলাদেশ থেকে বহুবার বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু ইতিহাস থেকে তো আর মুছতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় যারা ছাত্র ছিলেন, যুবক ছিলেন, আজ তাদের অনেকেই রাষ্ট্র ক্ষমতায়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তাদের একটা আগ্রহ আছে। কাজেই সেদিক থেকে আমাদের একটি ভালো সম্পর্ক আছে। তাড়াতাড়ি চীনে যাওয়ার একটা কর্মসূচি আছে। তিনি আরও বলেন, দাওয়াত তো এত বেশি যে, সব জায়গায় যেতে হলে দেশে থাকবো কখন? সব দেশ থেকে আমাকে চায়। এখন তো বয়স হয়েছে, সব জায়গায় যাওয়া সম্ভব হয় না। তবে চীনে যাবো এবার। জুলাইতে চীনে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওআইসি সম্মেলনে আমার লিখিত বক্তব্যে অনেক কিছু ছিল না। আমি লিখিত বক্তব্যের বাইরেও অনেক কথা বলেছি। আমি বলেছি, ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে যদি কোনও দ্বন্ধ থাকে, কেন আমরা আলোচনা করে এসবের সমাধান করতে পারছি না? ওআইসির এ ব্যাপারে আরও উদ্যোগ নেয়া দরকার। আমাদের সমস্যাগুলো যদি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারি, তাহলে আত্মঘাতী সংঘাত আর রক্তপাত হয় না। শেখ হাসিনা বলেন,আমাদের দেশেও মানুষ খুন করে খুনিরা বলে, এই তো আমরা বেহেশতের কাছে পৌঁছালাম। বেহেশতে কে পৌঁছাতে পেরেছে? যারা মানুষ খুন করেছে, তারা একজনও বেহেশতে পৌঁছাতে পেরেছে? এখন সোস্যাল মিডিয়ায় তো বহু মেসেজ দেয়, কেউ কি পাঠিয়েছে যে, আমি মানুষ খুন করে এখন বেহেশতে বসে আঙুর ফল খাচ্ছি?’ দেখা যাচ্ছে, মুসলমানই মুসলমানদের হত্যা করছে। মুসলিম দেশেই খুনোখুনি হচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এতে লাভবান কে হচ্ছে? যারা অস্ত্র বানাচ্ছে, তারা। যারা অস্ত্র দিচ্ছে, তারা। ওআইসিকে বলেছি, মুসলমান মুসলমানের রক্ত নিচ্ছে। এটা ওআইসিকে বন্ধ করতে হবে। আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে আমার বাবাও মাথানত করেননি, আমিও করবো না। যা সত্য তা-ই বলে যাবো।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ২৮শে মে থেকে ৭ জুন জাপান, সৌদি আরব ও ফিনল্যান্ড সফর শেষে শনিবার সকালে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিভিন্ন সংস্থা আছে যারা চায় না কোনো রিফিউজি তাদের দেশে ফিরে যাক। আমরা তালিকা করলাম, তারপরে তারা আন্দোলন করলো যাবে না।
তাহলে এই আন্দোলনে উস্কানি কারা দিলো?
এই যে সংস্থাগুলো এরা চায় না কখনো তারা ফিরে যাক। এটার কারণ বিশাল একটি অংশের টাকা-পয়সা আসে। চাকরি বাকরি যা আছে তা থাকবে না। তিনি বলেন, কয়েকটি দেশ চায় রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফেরত যাক। কিন্তু মুশকিলটা হচ্ছে মিয়ানমারকে নিয়ে। তারা কোনোভাবেই রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চায় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাই চায় যে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হোক। সবাই মিলে সহযোগিতা করলে একটা ব্যবস্থা হবে। না হলে এত লোকের ব্যবস্থা করা কঠিন। শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। ইতিমধ্যে আমি নির্দেশ দিয়েছি। ওখানে ভাগ করা আছে। আমাদের বর্ডার ফোর্স একটা অঞ্চল দেখে, আমাদের পুলিশ দেখে এবং আমাদের সেনাবাহিনী। আমরা বলেছি ওটাকে ক্লাস্টার করে করে চারিদিকে একটা সিকিউরিটি বেরিকেড দেয়া। সব সময় টহলে রাখা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এদের সাহায্য করতে আসে বা ভলানটিয়ার সার্ভিস দিতে আসে তাদের সাংঘাতিক আপত্তি ভাসান চরে নেয়ার ব্যাপারে। কক্সবাজারে আরাম আয়েশে থাকে। যা পায় কিছু খায় আর কিছু রাখে। খরচা হয় না। এ জন্য তারা করতে চায় না। সেটা নিয়ে কথা হচ্ছে। এত সুন্দর ঘরবাড়ি আমরা করে দিয়েছি তারপরও পছন্দ হয় না।
গণমাধ্যম নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি সব সময় মনে করি আমার বিবেক যদি ঠিক থাকে, যে আমি সঠিক আছি, সঠিক বলছি, সঠিক করছি সেটাই আমার কাছে বড়। তাই কে কি লিখলো সেটা বিষয় না। আমি আমার দেশকে ভালোবাসি দেশের মানুষকে ভালোবাসি। আমি যা কাজ করি তা দেশের জনগণের জন্য দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। এই বিশ্বাসটা যদি আমার থাকে-তাহলে কোনটা ভালো বললো কোনটা মন্দ বললো, কি বললো-এ নিয়ে আমার তো মাথাব্যাথার কিছু নেই।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই তিন দেশ সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ঐতিহাসিক বিষয় তুলে ধরে বলেন, স্বাধীনতার সময় এবং পরে আমাদের সহায়তা করেছে জাপান। এবারের সফরে আড়াই’শ কোটি ডলারের চুক্তির কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত ইস্যুর সমাধানে আশা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, নরেন্দ্র মোদী আবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, তাকে অভিনন্দন জানাই। আমরা আশা করি আমাদের সমস্যাগুলি একে একে সমাধান হবে। শুধু তিস্তা, তিস্তা করে না। আপনারা একটা জিনিস ভুলে যাচ্ছেন, আমাদের মেরিটাইম বাউন্ডারির মতো কঠিন একটা সমস্যা আমরা সমাধান করেছি। আমরা আমাদের যে ছিটমহল বিনিময় করা। পৃথিবীর বহু দেশে যুদ্ধ বেধে যাচ্ছে এই ছিটমহল বিনিময় নিয়ে। আমরা একটা উৎসব মুখর পরিবেশে ছিটমহল বিনিময় করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা অনেক কঠিন সমস্যা সমাধান করেছি। তিনি বলেন, কারো কাছে পানির জন্য মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। কারণ আমাদের এটা হচ্ছে ডেল্টা প্রকল্প। হিমালয় থেকে নদীগুলি যা আসছে বাংলাদেশের উপর দিয়ে যেতেই হবে। পানিটা আমরা কতটা ধরে রাখতে পারবো সেই ব্যবস্থা যদি আমরা করি তাহলে পানি পানি করে আমাদের চাইতে হবে না। আমরা নিজেরাই ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে পারবো। আমরা তাই করবো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেশি পানি হলে তারা কী করবে? এটা নিয়ে বেশি চিন্তা করার দরকার নাই। আর যিনি পানি দেন নাই। চাইলাম পানি দিলো বিদ্যুৎ। তো বিদ্যুৎ নিচ্ছি। পানি তো পাওয়াই যায় বৃষ্টি হলে। প্রায় ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমরা ভারত থেকে আমদানি করছি। আরো কিছু আনার জন্য আলোচনা চলছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে একজন বাংলাদেশী সম্পাদকের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে সম্পাদক এরকম কথা বলছেন, যদি সত্যিই এরকম হতো তাহলে উনি কি এই কথাটুকু বলার সাহস রাখেন? যে উনি লিখতে পারেন না। যদি তার ওপর সত্যি কোন চাপ থাকতো তাহলে এই কথাটাই বলার সাহস পেতো কি না আমার প্রশ্ন সেখানেই। কেউ তো চাপ দেয়নি। তবে হ্যাঁ আপনি যখন বলছেন কোন একজন সম্পাদক-গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশ থাকলে তাদের খুব একটা ভালো লাগে না। তাদের ভালো লাগে যদি কোন অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থাকে। যেমন-ইমার্জেন্সি সরকার হোক বা মিলিটারি সরকার হোক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরকম কিছু হলে তখন তারা ফরমায়েশি লেখা লিখতে পারে। তার এই কথা থেকে আমার মনে হয়, যে ভদ্রলোকের কথা বলছেন আমি বুঝতে পারছি তিনি কে। আপনাদের মনে আছে তিনি একবার টেলিভিশনের কোন এক টক শো’তে বলেছিলো-কোন একটা মিথ্যা নিউজ দেয়া হয়েছিলো বলে তাকে ধরছিলো কেউ।
তখন তিনি বলেছিলেন, আমি কি করবো ডিজিএফআই আমাকে যেটা সাপ্লাই দিয়েছে আমি সেটাই ছাপিয়ে দিয়েছিলাম। লিখে দিয়েছিলাম। মনে পড়ে, সবার খেয়াল আছে? কোনটা আমার ঠিক মনে নাই। তার মানে দাঁড়াচ্ছেটা কি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনি যদি ওই কথাটার সঙ্গে এই কথাটার লিংক করেন-তাহলে এখন ডিজিএফআই তাকে কোন লেখা দিচ্ছে না। কাজেই উনি লিখতে পারছেন না। আমি তো এটাই বুঝবো। কারণ উনি তো বলছেন, উনি ফরমায়েশিটা লিখতে পারেন। উনার ওই বক্তব্যটা যদি আপনি স্বরণ করেন উনি বলছেন যে ডিজিএফআই উনাকে যে তথ্য দিয়েছেন সেটা উনি লিখেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তো ডিজিএফআই দিয়ে কোন তথ্য দেয়াচ্ছি না।
বা ডিজিএফআই এর ওই সমস্ত সমস্যা নেই। কাকে কি বলতে হবে কাকে লিখতে হবে এটা তারা করবে না। তো এখন উনি নিজেই লিখতে পারছেন না। তার মানে কোন ফরশায়েশি লেখা না পেলে উনি লিখতে পারেন না। এটাই তো দাঁড়াচ্ছে। আমি তো এটাই বুঝতে পারছি। এর বাইরে আর কিছু বুঝতে পারছি না। উনি লেখুক না। উনার যা খুশি তাই লিখুক। লিখে তো যাচ্ছেই। তিনি বলেন, আমি কি বলতে পারবো আমি কোনদিন এইসব পত্রিকার কোন সহযোগিতা পেয়েছি। জীবনেও না। আর বাংলাদেশে আসার পর থেকে কয়টা পত্রিকা ছিলো আমাদের পক্ষে? পারলে সবাই বিরুদ্ধেই লিখেছে। এ ধরনের আঘাতে আমরা অভ্যস্ত। এতে আমার কিছু আসে-যায় না।
এবার ঈদ জামাতের সময় জঙ্গি হামলার হুমকি ছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আন্তরিক চেষ্টায় কোনো অঘটন ছাড়াই সব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে ২০১৬ সালের জঙ্গি হামলার পর থেকেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ও পুলিশ কড়া নজরদারি শুরু করে। কোথাও কোনো ধরনের তথ্য পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। আপনারা জানেন যে নানা নামে নানাভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নানা ধরনের থ্রেট কিন্তু দিতেই থাকে। সারাক্ষণ কিন্তু এগুলো আসছে। সবটা আমি বলে মানুষকে ভীত করতে চাই না। কিন্তু যতদূর পারি, এগুলোর পেছনে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তদন্ত করে এবং তাদের বিরুদ্ধে যা যা ব্যবস্থা নেয়ার, তা আমরা নিয়ে থাকি। এবার ঈদের আগেও তেমন হুমকি ছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঈদের জামাতের সময় আমি সত্যিই খুব চিন্তিত ছিলাম। কারণ এমন এমন ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, তা যেন কোনোমতে না ঘটে। সরকার প্রধান বলেন, তিনি দেশে বা দেশের বাইরে যেখানেই থাকুন না কেন, দেশে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সব সময় তার যোগাযোগ থাকে। এবারও বিভিন্ন ঈদ জামাত সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার কাছে ‘মেসেজ’ চলে গেছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা, আমাদের পুলিশ বাহিনী, আমাদের র্যাব থেকে শুরু করে সকলেই খুব আন্তরিকতার সঙ্গে তারা কাজ করেছে। সেজন্য খুব সুষ্ঠুভাবে ঈদের জামাতগুলো সম্পন্ন হয়েছে। এবার কিন্তু কেউ কিছু করতে পারেনি। জঙ্গিবাদ দমনে জনগণের সচেতনতাকে বাংলাদেশের ‘সবচেয়ে বড় শক্তি’ হিসেবে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন,জনগণ কিন্তু যথেষ্ট সচেতন। আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করেই এ ধরনের হুমকি মোকাবিলা করতে চাই। সেজন্য জনগণের কাছে সব সময় আমার আবেদন থাকবে, তারা যেন এ বাপারে সজাগ থাকেন, সচেতন থাকেন। কারণ এসব ঘটনা আমাদের উন্নয়নের গতিধারাটা ব্যহত করবে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, কোথাও কোনো তথ্য পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
আজ হোক, কাল হোক তার শাস্তি কার্যকর হবে
লন্ডনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নাম নিতেও ঘৃণা লাগে। ওই একুশে আগস্টের হামলায় আইভি রহমানসহ ২৮ জন মানুষ নিহত হন। শতাধিক মানুষ আহত হন। শুধু একুশে আগস্ট নয়, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের সঙ্গেও যুক্ত সে। শেখ হাসিনা বলেন, এসব ব্যক্তির জন্য অনেকের মায়াকান্না দেখছি। আমরা যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছি। তবে ওরা অনেক টাকার মালিক। সব সময় চেষ্টা করে ঝামেলা সৃষ্টি করার। আমি সেখানে গেলেও ঝামেলা সৃষ্টি করতে চায়। তবে যাই হোক, আজ হোক, কাল হোক তার শাস্তি কার্যকর হবে।
ইমিগ্রেশনে খুব কড়াকড়ি করতে বলেছি
পাসপোর্ট ছাড়াই প্রধানমন্ত্রীকে আনতে যাওয়া বিমান পাইলটের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটা বিষয় লক্ষণীয়, যখনই বিমানে উঠি তখনই একটা ঘটনা ঘটে। একটা নিউজ হয়, নিউজটা কেন হয় আমি জানি না। হয়তো পাসপোর্ট ভুলে যেতে পারে। পাসপোর্ট ভোলা কোনো ব্যাপার না। কিন্তু এখানে ইমিগ্রেশনে যারা ছিল, তাদের তো এই নজরটা থাকতে হবে। আমার কাছে খবর যাওয়ার সাথে সাথে আমি বলেছি, ইমিডিয়েটলি ব্যবস্থা নিতে। ইমিগ্রেশনে কারা ছিল? কেন চেক করে নাই? কেন দেখে নাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কিন্তু এখন ইমিগ্রেশনে খুব কড়াকড়ি করতে বলেছি। আমাদের তো এখন সবাই ভিআইপি। তারপর আবার ভিভিআইপি। এরপর বোধহয় আরো ভি লাগবে। যত ভি লাগুক এরপর আর কাউকে ছাড়া হবে না। প্রত্যেকের একদম পাসপোর্ট সিল মারা আছে কী না, তারপর তাদের চেকটা ভালোভাবে হচ্ছে কী না। এমন কী ভিআইপি এবং ভিভিআইপি এনক্লেভগুলোতে তাদের লাগেজ ঠিকভাবে চেক করার ব্যবস্থা। তিনি বলেন, এত দিন পরিশ্রম করে, প্লেন কিনে বিমানের অবস্থানটা যখন একটা জায়গায় চলে আসছে। যখন আমি চেষ্টা করছি আমরা আরো কয়েকটা নতুন রুটে যাব। মোটামুটি একটা ব্যবস্থা করে ফেলেছি। ঠিক তখনই একেকটা কারণ এ রকম আসে। শেখ হাসিনা বলেন, এটার কারণ আমার যেটা মনে হয়। এর আগে যারা ক্ষমতায় ছিল, আপনারা অনেকেই জানেন তারা এটাকে কীভাবে ব্যবহার করেছে। ছিলই তো না। সেগুলো আমরা যেহেতু একটু ভালোভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
অনেকের পছন্দ হবে না, এটা আমি জানি। কারণ আগে যেগুলি খুব সহজে করতে পারতো সেগুলি বন্ধ করার জন্য আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। এই সিকিউরিটির উপরে একবার ব্রিটিশ আমাদের এমবার্গো দিল, একবার অস্ট্রেলিয়া দিল। সেটাও আমরা মিটআপ করেছি।
তিনি বলেন, এ জন্য যখনই আমি যাই তখনই একটা ঘটনা। আমার কাছে শত শত মেইল যাচ্ছে। আপনি আইসেন না, বিমানে আসবেন না। আমি বললাম, বিমানে আসবো না মানে? বলে না এটা হয়েছে। আমি বললাম, যা হয় হোক। মরলে নিজের দেশের প্লেনেই তো মরবো। নিজের প্লেনে মরলে মনে করবো নিজের মাটিতেই মরলাম। আমি আমার বিমানেই যাব। আমি অন্য কোনো এয়ারলাইন্সে যাব না। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ-চীনের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সবাই সম্মান করেন। যদিও বাংলাদেশ থেকে বহুবার বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু ইতিহাস থেকে তো আর মুছতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় যারা ছাত্র ছিলেন, যুবক ছিলেন, আজ তাদের অনেকেই রাষ্ট্র ক্ষমতায়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তাদের একটা আগ্রহ আছে। কাজেই সেদিক থেকে আমাদের একটি ভালো সম্পর্ক আছে। তাড়াতাড়ি চীনে যাওয়ার একটা কর্মসূচি আছে। তিনি আরও বলেন, দাওয়াত তো এত বেশি যে, সব জায়গায় যেতে হলে দেশে থাকবো কখন? সব দেশ থেকে আমাকে চায়। এখন তো বয়স হয়েছে, সব জায়গায় যাওয়া সম্ভব হয় না। তবে চীনে যাবো এবার। জুলাইতে চীনে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওআইসি সম্মেলনে আমার লিখিত বক্তব্যে অনেক কিছু ছিল না। আমি লিখিত বক্তব্যের বাইরেও অনেক কথা বলেছি। আমি বলেছি, ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে যদি কোনও দ্বন্ধ থাকে, কেন আমরা আলোচনা করে এসবের সমাধান করতে পারছি না? ওআইসির এ ব্যাপারে আরও উদ্যোগ নেয়া দরকার। আমাদের সমস্যাগুলো যদি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারি, তাহলে আত্মঘাতী সংঘাত আর রক্তপাত হয় না। শেখ হাসিনা বলেন,আমাদের দেশেও মানুষ খুন করে খুনিরা বলে, এই তো আমরা বেহেশতের কাছে পৌঁছালাম। বেহেশতে কে পৌঁছাতে পেরেছে? যারা মানুষ খুন করেছে, তারা একজনও বেহেশতে পৌঁছাতে পেরেছে? এখন সোস্যাল মিডিয়ায় তো বহু মেসেজ দেয়, কেউ কি পাঠিয়েছে যে, আমি মানুষ খুন করে এখন বেহেশতে বসে আঙুর ফল খাচ্ছি?’ দেখা যাচ্ছে, মুসলমানই মুসলমানদের হত্যা করছে। মুসলিম দেশেই খুনোখুনি হচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এতে লাভবান কে হচ্ছে? যারা অস্ত্র বানাচ্ছে, তারা। যারা অস্ত্র দিচ্ছে, তারা। ওআইসিকে বলেছি, মুসলমান মুসলমানের রক্ত নিচ্ছে। এটা ওআইসিকে বন্ধ করতে হবে। আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে আমার বাবাও মাথানত করেননি, আমিও করবো না। যা সত্য তা-ই বলে যাবো।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ২৮শে মে থেকে ৭ জুন জাপান, সৌদি আরব ও ফিনল্যান্ড সফর শেষে শনিবার সকালে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।
No comments