সাংবিধানিক সংকটে শ্রীলঙ্কা: বিক্রমাসিংহেকে সমর্থন দিলেন স্পিকার
গভীর
এক সাংবিধানিক সংকটে শ্রীলঙ্কা। শনিবার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা
আগামী ১৬ই নভেম্বর পর্যন্ত পার্লামেন্ট স্থগিত করেন। এর আগের দিন তিনি
বরখাস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে। পুনর্বহাল করেন চীনপন্থি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসেকে। এরপরই তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন
শ্রীলংকায় নিয়োজিত চীনের দূত চেং সুয়েয়ুন। তবে ঘটনা জট লেগেছে আরো এক
জায়গায়। দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার কারু জয়সুরিয়া রোববার রনিল
বিক্রমাসিংহেকে দেশের বৈধ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। বরখাস্ত
হওয়ার পর বিক্রমাসিংহেও সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, তিনিই দেশের
প্রধানমন্ত্রী।
তাকে বরখাস্তের যে সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা দিয়েছেন তা বেআইনি ও অসাংবিধানিক। বিক্রমাসিংহে হলেন শ্রীলঙ্কার ইউএনপি দলের নেতা। তাকে সমর্থন করে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার কাছে একটি চিঠি লিখেছেন স্পিকার জয়সুরিয়া। তাতে তিনি আগামী ১৬ই নভেম্বর পর্যন্ত পার্লামেন্ট স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।
বলেছেন, এর ফলে দেশকে মারাত্মক ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতি ভোগ করতে হবে। পাশাপাশি তিনি বিক্রমাসিংহেকে সরকার প্রধান বা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনর্বহালের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, স্পিকারের সঙ্গে পরামর্শক্রমেই পার্লামেন্ট স্থগিত করা উচিত। ওই চিঠিতে বরখাস্ত করা প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের নিরাপত্তা প্রত্যাহারে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্পিকার। ফলে এ অবস্থায় ক্ষমতার লড়াইটা শুধু রনিল বিক্রমাসিং ও মাহিন্দ রাজাপাকসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। তা এখন পুরো সরকার ব্যবস্থাকে দুটি ভাগে ভাগ করে ফেলেছে। একপক্ষে চলে গেছেন প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। অন্যপক্ষে স্পষ্টত অবস্থান করছেন স্পিকার কারু জয়সুরিয়া। রনিল বিক্রমাসিংহেকে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনর্বহাল করার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে শুক্রবারই নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মাহিন্দ রাজাপাকসেকে শপথ পড়িয়ে ফেলেছেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। এর ফলে প্রচণ্ড এক সাংবিধানিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।
রনিল বিক্রমাসিংহে নিজেকে এখনও দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দাবি করছেন। এমন অবস্থায় আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া, আল জাজিরা ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী রনিল ব্রিকমাসিংহেকে বরখাস্ত করেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। তার জায়গায় চীনপন্থি হিসেবে পরিচিত সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসেকে বসান তিনি। এতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে রাজাপাকসের সমর্থকরা। তবে বিক্রমাসিংহের সমর্থকরা এটিকে বিরোধীদের অভ্যুত্থান হিসেবে দেখছে। এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট আগামী ১৬ই নভেম্বর পর্যন্ত পার্লামেন্ট স্থগিত ঘোষণা করেছেন। বলা হচ্ছে, বিক্রমাসিংহে যেন পার্লামেন্টে তার দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে না পারেন সেজন্যই এ পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। উল্লেখ্য, সম্প্রতি ক্ষমতাসীন জোট থেকে নিজের দলকে সরিয়ে নেন সিরিসেনা।
এদিকে, বিক্রমাসিংহে বরখাস্ত হওয়ার আগমুহূর্তে তিনি আরো একটি অধিবেশন ডাকার জন্য পার্লামেন্টের স্পিকারের প্রতি আহ্বান জানান। মূলত পার্লামেন্টে নিজ দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করার জন্যই তিনি এই আহ্বান জানিয়েছিলেন। শনিবার কলম্বোতে বিক্রমাসিংহে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। এ সময় বলেন, পার্লামেন্টে আমার সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। পার্লামেন্টের অধিবেশন ডেকে এ সংকটের সমাধান করুন। সংবাদ সম্মেলনে সিরিসেনার দল ছাড়া ক্ষমতাসীন জোটের সব দলই উপস্থিত ছিল।
ইতিমধ্যেই বিক্রমাসিংহেকে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল সরিয়ে নেয়ার জন্য পুলিশ প্রধানকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। অস্থায়ীভাবে একজনকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা জানান। এতে বলা হয়, নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের পাশাপাশি মন্ত্রিসভাও ভেঙে দেয়া হয়েছে। বিক্রমাসিংহেকে রোববারের মধ্যে বাসভবন ছাড়তে বলা হয়েছে। তিনি সরকারি ওই বাসভবন ছাড়বেন কিনা তা স্পষ্ট বোঝা যায় নি। বিমল বিরাওয়ানসা নামের একজন পার্লামেন্ট সদস্য বলেন, স্ব-সম্মানে বাসভবন ত্যাগ করার জন্য বিক্রমাসিংহের হাতে রোববার পর্যন্ত সময় আছে। বিরোধী দলে থেকেও আমরা একটি বড় স্টেডিয়াম মানুষে পরিপূর্ণ করেছি। চিন্তা করেন রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকলে আমরা কি করতে পারি। এমন বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি বিক্রমাসিংহেকে এক রকম হুমকিই দিয়েছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, বিক্রমাসিংহে যদি বাসভবন ত্যাগ না করেন, তাহলে বিক্ষোভকারীরা জোর করে ভবনের ভেতরে প্রবেশ করবে।
রোববার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেয়ার কথা প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার। ধারণা করা হয়, আজ সোমবার মন্ত্রিসভা গঠন করা হতে পারে। শ্রীলঙ্কার সংবিধান অনুসারে, প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে ব্যর্থ হলে প্রেসিডেন্ট নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিতে পারবেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত নতুন সরকার গঠনের জন্যই প্রেসিডেন্ট এমন ব্যবস্থা নিয়েছেন।
সংকটের কারণ: সিরিসেনা ও বিক্রমাসিংহের মধ্যকার কলহের জের ধরে এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে রাজাপাকসেকে পরাজিত করার জন্য জোট গঠন করেছিল সিরিসেনা ও বিক্রমাসিংহের দল। নির্বাচনে তাদের জোট জয়লাভ করলে সিরিসেনাকে প্রেসিডেণ্ট মনোনীত করা হয়। রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেকটাই অপরিচিত মুখ সিরিসেনা ক্ষমতায় বসে অর্থনৈতিক সংস্কারের ঘোষণা দেন। তবে সম্প্রতি বিক্রমাসিংহের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বিমত দেখা দেয়। জীবন ধারণের খরচ ও ট্যাক্স বৃদ্ধির কারণে দেশে জন-অসন্তোষ দেখা দেয়। গত ফেব্রুয়ারিতে স্থানীয় পরিষদের নির্বাচনে রাজাপাকসের দলের কাছে সিরিসেনা ও বিক্রমাসিংহের দল পরাজিত হয়। নিজ দলের বিপুল জনসমর্থন দেখে রাজাপাকসে ঘোষণা দেন, ক্ষমতাসীন জোট দেশ শাসনের ম্যান্ডেট হারিয়েছে। তিনি মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি তোলেন। কিন্তু সিরিসেনা ও বিক্রমাসিংয়ের নেতৃত্বাধীন সরকার এই দাবি প্রত্যাখান করে। এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। গণমাধ্যম ও অর্থমন্ত্রী মঙ্গলা সামারাবিরা বলেন, এটা বিশ্বাস করা কষ্ট যে, চার বছর আগে যিনি বিক্রমাসিংয়ের আমন্ত্রণে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসেছেন, তিনি এভাবে উল্টে যাবেন, যে তাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে তারই বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নেবেন। টুইটারে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন। সিরিসেনাকে অভিশংসন করার প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করে সামারাবিরা বলেন, পার্লামেন্টে আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
শনিবার কলোম্বো একই সঙ্গে উদযাপন ও বিক্ষোভের সাক্ষী হয়েছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসের সমর্থকরা আতশবাজি ফুটিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন। অন্যদিকে বিক্রমাসিংহের হাজার হাজার সমর্থক তার সরকারি বাসভবনের বাইরে জড়ো হয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখিয়েছে। তারা স্লোগান দিতে থাকেন, সিরিসেনা বিশ্বাসঘাতক। আমরা তাকে ক্ষমতায় বসানোর পরেও তিনি আমাদেরই নেতাকে সরিয়ে দিয়েছেন। গণমাধ্যম ও অর্থমন্ত্রী মঙ্গলা সামারাবিরা প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করার ঘটনাকে গণতন্ত্রবিরোধী অভ্যুত্থান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বিক্রমাসিংয়ের দল কলম্বোতে সোমবার সর্বাত্মক বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। শুক্রবার সিরিসেনা যখন নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাজাপাকসেকে শপথ পড়াচ্ছিলেন, তখন বিক্রমাসিংহে দেশের দক্ষিণাঞ্চল সফর করছিলেন। শ্রীলঙ্কার সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্ট পরিচালনা করলেও প্রেসিডেন্টকে নির্বাহী ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ: বাসভবন ত্যাগ করার জন্য বিক্রমাসিংহেকে যে আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেন নি সিরিসেনা ও রাজাপাকসে। এমন অনিশ্চয়তার মুখে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত পুলিশ সদস্যদের সকল ধরনের ছুটি বাতিল করেছেন আইজিপি পুজিত জয়সুন্দরা। কলম্বোর রাজপথে অতিরিক্ত টহল পুলিশ মোতায়েন করেছেন তিনি। এদিকে, শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অভহিত করে নাগরিকদের প্রতি ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে কয়েকটি দেশ। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানিসহ কয়েকটি ইউরোপিয়ান দেশ শ্রীলঙ্কার সকল দলের প্রতি সংবিধান মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে সহিংসতা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছে। এদিকে, নতুন প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসেকে অভিনন্দন জানিয়েছেন দেশটিতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত। তিনি বরখাস্তকৃত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন।
তাকে বরখাস্তের যে সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা দিয়েছেন তা বেআইনি ও অসাংবিধানিক। বিক্রমাসিংহে হলেন শ্রীলঙ্কার ইউএনপি দলের নেতা। তাকে সমর্থন করে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার কাছে একটি চিঠি লিখেছেন স্পিকার জয়সুরিয়া। তাতে তিনি আগামী ১৬ই নভেম্বর পর্যন্ত পার্লামেন্ট স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।
বলেছেন, এর ফলে দেশকে মারাত্মক ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতি ভোগ করতে হবে। পাশাপাশি তিনি বিক্রমাসিংহেকে সরকার প্রধান বা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনর্বহালের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, স্পিকারের সঙ্গে পরামর্শক্রমেই পার্লামেন্ট স্থগিত করা উচিত। ওই চিঠিতে বরখাস্ত করা প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের নিরাপত্তা প্রত্যাহারে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্পিকার। ফলে এ অবস্থায় ক্ষমতার লড়াইটা শুধু রনিল বিক্রমাসিং ও মাহিন্দ রাজাপাকসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। তা এখন পুরো সরকার ব্যবস্থাকে দুটি ভাগে ভাগ করে ফেলেছে। একপক্ষে চলে গেছেন প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। অন্যপক্ষে স্পষ্টত অবস্থান করছেন স্পিকার কারু জয়সুরিয়া। রনিল বিক্রমাসিংহেকে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনর্বহাল করার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে শুক্রবারই নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মাহিন্দ রাজাপাকসেকে শপথ পড়িয়ে ফেলেছেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। এর ফলে প্রচণ্ড এক সাংবিধানিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।
রনিল বিক্রমাসিংহে নিজেকে এখনও দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দাবি করছেন। এমন অবস্থায় আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া, আল জাজিরা ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী রনিল ব্রিকমাসিংহেকে বরখাস্ত করেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। তার জায়গায় চীনপন্থি হিসেবে পরিচিত সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসেকে বসান তিনি। এতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে রাজাপাকসের সমর্থকরা। তবে বিক্রমাসিংহের সমর্থকরা এটিকে বিরোধীদের অভ্যুত্থান হিসেবে দেখছে। এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট আগামী ১৬ই নভেম্বর পর্যন্ত পার্লামেন্ট স্থগিত ঘোষণা করেছেন। বলা হচ্ছে, বিক্রমাসিংহে যেন পার্লামেন্টে তার দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে না পারেন সেজন্যই এ পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। উল্লেখ্য, সম্প্রতি ক্ষমতাসীন জোট থেকে নিজের দলকে সরিয়ে নেন সিরিসেনা।
এদিকে, বিক্রমাসিংহে বরখাস্ত হওয়ার আগমুহূর্তে তিনি আরো একটি অধিবেশন ডাকার জন্য পার্লামেন্টের স্পিকারের প্রতি আহ্বান জানান। মূলত পার্লামেন্টে নিজ দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করার জন্যই তিনি এই আহ্বান জানিয়েছিলেন। শনিবার কলম্বোতে বিক্রমাসিংহে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। এ সময় বলেন, পার্লামেন্টে আমার সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। পার্লামেন্টের অধিবেশন ডেকে এ সংকটের সমাধান করুন। সংবাদ সম্মেলনে সিরিসেনার দল ছাড়া ক্ষমতাসীন জোটের সব দলই উপস্থিত ছিল।
ইতিমধ্যেই বিক্রমাসিংহেকে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল সরিয়ে নেয়ার জন্য পুলিশ প্রধানকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। অস্থায়ীভাবে একজনকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা জানান। এতে বলা হয়, নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের পাশাপাশি মন্ত্রিসভাও ভেঙে দেয়া হয়েছে। বিক্রমাসিংহেকে রোববারের মধ্যে বাসভবন ছাড়তে বলা হয়েছে। তিনি সরকারি ওই বাসভবন ছাড়বেন কিনা তা স্পষ্ট বোঝা যায় নি। বিমল বিরাওয়ানসা নামের একজন পার্লামেন্ট সদস্য বলেন, স্ব-সম্মানে বাসভবন ত্যাগ করার জন্য বিক্রমাসিংহের হাতে রোববার পর্যন্ত সময় আছে। বিরোধী দলে থেকেও আমরা একটি বড় স্টেডিয়াম মানুষে পরিপূর্ণ করেছি। চিন্তা করেন রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকলে আমরা কি করতে পারি। এমন বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি বিক্রমাসিংহেকে এক রকম হুমকিই দিয়েছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, বিক্রমাসিংহে যদি বাসভবন ত্যাগ না করেন, তাহলে বিক্ষোভকারীরা জোর করে ভবনের ভেতরে প্রবেশ করবে।
রোববার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেয়ার কথা প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার। ধারণা করা হয়, আজ সোমবার মন্ত্রিসভা গঠন করা হতে পারে। শ্রীলঙ্কার সংবিধান অনুসারে, প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে ব্যর্থ হলে প্রেসিডেন্ট নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিতে পারবেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত নতুন সরকার গঠনের জন্যই প্রেসিডেন্ট এমন ব্যবস্থা নিয়েছেন।
সংকটের কারণ: সিরিসেনা ও বিক্রমাসিংহের মধ্যকার কলহের জের ধরে এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে রাজাপাকসেকে পরাজিত করার জন্য জোট গঠন করেছিল সিরিসেনা ও বিক্রমাসিংহের দল। নির্বাচনে তাদের জোট জয়লাভ করলে সিরিসেনাকে প্রেসিডেণ্ট মনোনীত করা হয়। রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেকটাই অপরিচিত মুখ সিরিসেনা ক্ষমতায় বসে অর্থনৈতিক সংস্কারের ঘোষণা দেন। তবে সম্প্রতি বিক্রমাসিংহের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বিমত দেখা দেয়। জীবন ধারণের খরচ ও ট্যাক্স বৃদ্ধির কারণে দেশে জন-অসন্তোষ দেখা দেয়। গত ফেব্রুয়ারিতে স্থানীয় পরিষদের নির্বাচনে রাজাপাকসের দলের কাছে সিরিসেনা ও বিক্রমাসিংহের দল পরাজিত হয়। নিজ দলের বিপুল জনসমর্থন দেখে রাজাপাকসে ঘোষণা দেন, ক্ষমতাসীন জোট দেশ শাসনের ম্যান্ডেট হারিয়েছে। তিনি মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি তোলেন। কিন্তু সিরিসেনা ও বিক্রমাসিংয়ের নেতৃত্বাধীন সরকার এই দাবি প্রত্যাখান করে। এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। গণমাধ্যম ও অর্থমন্ত্রী মঙ্গলা সামারাবিরা বলেন, এটা বিশ্বাস করা কষ্ট যে, চার বছর আগে যিনি বিক্রমাসিংয়ের আমন্ত্রণে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসেছেন, তিনি এভাবে উল্টে যাবেন, যে তাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে তারই বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নেবেন। টুইটারে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন। সিরিসেনাকে অভিশংসন করার প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করে সামারাবিরা বলেন, পার্লামেন্টে আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
শনিবার কলোম্বো একই সঙ্গে উদযাপন ও বিক্ষোভের সাক্ষী হয়েছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসের সমর্থকরা আতশবাজি ফুটিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন। অন্যদিকে বিক্রমাসিংহের হাজার হাজার সমর্থক তার সরকারি বাসভবনের বাইরে জড়ো হয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখিয়েছে। তারা স্লোগান দিতে থাকেন, সিরিসেনা বিশ্বাসঘাতক। আমরা তাকে ক্ষমতায় বসানোর পরেও তিনি আমাদেরই নেতাকে সরিয়ে দিয়েছেন। গণমাধ্যম ও অর্থমন্ত্রী মঙ্গলা সামারাবিরা প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করার ঘটনাকে গণতন্ত্রবিরোধী অভ্যুত্থান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বিক্রমাসিংয়ের দল কলম্বোতে সোমবার সর্বাত্মক বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। শুক্রবার সিরিসেনা যখন নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাজাপাকসেকে শপথ পড়াচ্ছিলেন, তখন বিক্রমাসিংহে দেশের দক্ষিণাঞ্চল সফর করছিলেন। শ্রীলঙ্কার সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্ট পরিচালনা করলেও প্রেসিডেন্টকে নির্বাহী ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ: বাসভবন ত্যাগ করার জন্য বিক্রমাসিংহেকে যে আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেন নি সিরিসেনা ও রাজাপাকসে। এমন অনিশ্চয়তার মুখে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত পুলিশ সদস্যদের সকল ধরনের ছুটি বাতিল করেছেন আইজিপি পুজিত জয়সুন্দরা। কলম্বোর রাজপথে অতিরিক্ত টহল পুলিশ মোতায়েন করেছেন তিনি। এদিকে, শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অভহিত করে নাগরিকদের প্রতি ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে কয়েকটি দেশ। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানিসহ কয়েকটি ইউরোপিয়ান দেশ শ্রীলঙ্কার সকল দলের প্রতি সংবিধান মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে সহিংসতা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছে। এদিকে, নতুন প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসেকে অভিনন্দন জানিয়েছেন দেশটিতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত। তিনি বরখাস্তকৃত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন।
No comments