আমেরিকার হাতিয়ার ইরানবিরোধী সন্ত্রাসী 'মোনাফেকিন গোষ্ঠী': পর্ব-এক
প্যারিসে ইরান বিরোধী সন্ত্রাসী মোনাফেকিন গোষ্ঠীর সম্মেলন |
ফ্রান্সের
রাজধানী প্যারিসে গত ৩০ জুন ইরান বিরোধী সন্ত্রাসী মোনাফেকিন গোষ্ঠী
'এমকেও'র বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারের বৈঠকেও পাশ্চাত্য ও
কয়েকটি আরব দেশের সাবেক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ থেকে জনসমর্থনহীন
ইরান বিরোধী এ গোষ্ঠীর প্রতি ইউরোপের কোনো কোনো মহলের সমর্থনের বিষয়টি ফুটে
উঠেছে।
ইরান বিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী 'এমকেও'র বৈঠকে অংশগ্রহণকারী পাশ্চাত্যের রাজনীতিবিদরা এই গোষ্ঠীর সহযোগিতায় ইরানের ইসলামি শাসন ব্যবস্থাকে উৎখাতের ব্যাপারে বক্তব্য দিয়েছেন। যদিও তাদের এ স্বপ্ন গত চল্লিশ বছরে পূরণ হয়নি বরং পাশ্চাত্য এবং মধ্যপ্রাচ্যে তাদের আরব মিত্র দেশগুলো ও দখলদার ইসরাইলের ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় ইরান অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিশনের সাবেক সদস্য আব্বাস আলী মানসুরি অরানি ইরান বিরোধী বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের উপস্থিতিতে ফ্রান্সে এমকেও'র বৈঠক আয়োজনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছেন, প্রতি বছর ইরান বিরোধী সন্ত্রাসী মোনাফেকিন গোষ্ঠীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং এর আগে এরা ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দামের পৃষ্ঠপোষকতা পেত। এ গোষ্ঠীটি এখনো মধ্যপ্রাচ্যে গোয়েন্দাবৃত্তির কাজ করছে এবং আমেরিকা ও ইসরাইলকে সহযোগিতা করছে।"
মাত্র কয়েক বছর আগেও আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকায় ইরান বিরোধী সন্ত্রাসী মোনাফেকিন গোষ্ঠী এমকেও'র নাম ছিল। কিন্তু পাশ্চাত্যের কর্মকর্তাদের বিপুল অংকের অর্থ ঘুষ দিয়ে এবং লবিং করে সন্ত্রাসবাদের তালিকা থেকে এমকেও'র নাম প্রত্যাহার করা হয়। এরপর থেকে এ গোষ্ঠীর সদস্যরা ইউরোপীয় দেশগুলোর রাজধানীতে অবাধ যাতায়াতের সুযোগ পায় এবং বিভিন্ন শহরে তারা ইরান বিরোধী সমাবেশ করার অনুমতি পায়। এসব সমাবেশ কিংবা সম্মেলনে পাশ্চাত্যের দ্বিতীয় সারির রাজনীতিবিদরা বিপুল অংকের ঘুষের বিনিময়ে এমকেও'র পক্ষে নানান বক্তব্য দেন। ইরান বিরোধী এ গোষ্ঠীটি প্রতি বছর এ ধরণের সমাবেশ আয়োজনের মাধ্যমে প্রমাণ করার চেষ্টা করে তাদের প্রতি অনেক ইরানির সমর্থন রয়ছে। সমাবেশে লোকসমাগমের জন্য 'এমকেও' এমন সব বিদেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসে যাদের অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। এ ছাড়া, ইউরোপে আশ্রয় নেয়া অন্য মহাদেশ থেকে আসা অভিবাসী এবং এমনকি ঘরবাড়ি হারা ছিন্নমূল মানুষকেও অর্থের বিনিময়ে সমাবেশে আসতে উৎসাহিত করা হয়।
পাশ্চাত্যের ধারণা এমকেওকে ব্যবহার করে ইরানের বিরুদ্ধে তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে। পাশ্চাত্য বিশেষ করে আমেরিকা সবসময়ই সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার ক্ষেত্রে দ্বিমুখী নীতি অনুসরণ করে আসছে। তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কথা বললেও গত তিন দশক ধরে ইরান বিরোধী এমকেওকে পৃষ্ঠপোষকতা ও সমর্থন দিয়ে আসছে। যদিও তারা জানে এমকেও একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। বর্তমানে তাদের প্রধান ঘাঁটি ফ্রান্সে যা কিনা সেদেশের পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। ইউরোপের সন্ত্রাসীর তালিকায় এক সময় ইরান বিরোধী এ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নাম থাকলেও বর্তমানে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এদেরকে সমাবেশ করার লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এদের মানবতা বিরোধী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত থাকা সত্বেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ইরাকের সাদ্দাম এক সময় ইরান বিরোধী এ গোষ্ঠীকে সমর্থন দিত। এরপর আমেরিকাও ইরানের পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধে গোয়েন্দাবৃত্তি কাজে এদের ব্যবহার করে। এই সন্ত্রাসীদের দেয়া মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই আমেরিকা ও ইসরাইল ইরানের পরমাণু কর্মসূচীর বিরুদ্ধে তৎপরতা শুরু করে।
ইরান বিরোধী সন্ত্রাসী মোনাফেকিন গোষ্ঠী এমকেও ১৯৬০ এর দশকে সংগঠিত হলেও এদের সদস্য-সংখ্যা খুবই কম। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পরপরই তখনকার গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতির সুযোগ নেয় এ গোষ্ঠীটি এবং অনেকেই এ গোষ্ঠীতে যোগ দেয়। এরপর ১৯৮১ সালের পর থেকে এমকেও ইরানের ইসলামি শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংঘাতে লিপ্ত হয় এবং দেশটির কর্মকর্তাসহ হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে তারা শহীদ করে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১৯৮০'র দশকে এবং এর পরেও এমকেও'র হামলায় ১৭ হাজারের বেশি ইরানি শহীদ হয়েছে। এরপর ইরানে টিকতে না পেরে এ গোষ্ঠীটি ইরাকে আশ্রয় নিয়েছিল এবং সাদ্দামের ছায়াতলে থেকে তারা ইরাকের জনগণের বিরুদ্ধে দমন অভিযান এবং ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় ব্যাপক তৎপরতা চালিয়েছিল। সাদ্দামের সহযোগিতায় এ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি ইরান ও ইরাকের হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। এ প্রসঙ্গে ১৯৯১ সালে দক্ষিণ ইরাকে শিয়া মুসলমানদের বিরুদ্ধে এবং উত্তর ইরাকের কুর্দিদের বিরুদ্ধে দমন অভিযানের সময় সাদ্দামকে এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সহযোগিতার কথা উল্লেখ করা যায়।
শেষ পর্যন্ত ইরান বিরোধী এই সন্ত্রাসী মোনাফেকিন গোষ্ঠীকে ইরাকের স্বৈরশাসক সাদ্দামের স্পেশাল বাহিনী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সন্ত্রাসবাদ দমন বিষয়ক সমন্বয়কারী ড্যানিয়েল বেঞ্জামিন ২০০৯ ও ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ের দিকে পলিটিকো সাময়িকীতে প্রকাশিত এক নিবন্ধে ইরান বিরোধী মোনাফেকিন গোষ্ঠীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, "ইরানের প্রখ্যাত আলেম আয়াতুল্লাহ বেহেশতির মতো দেশটির বহু কর্মকর্তা এবং হাজার হাজার সাধারণ মানুষ সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন। এ কারণেই এই গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।"
সাদ্দামের পতনের পর ইরান ও ইরাকের জনগণের বিরুদ্ধে মোনাফেকিন গোষ্ঠীর নৃশংসতা ও অপরাধযজ্ঞের বহু ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর আমেরিকা ও ইউরোপ এদেরকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। কিন্তু ইসরাইল ইরানের পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধে গোয়েন্দাবৃত্তি এবং মধ্যপ্রাচ্যে লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য এই গোষ্ঠীটিকে ব্যবহার করে। এরপর আমেরিকাও ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য মোনাফেকিন গোষ্ঠীর প্রতি রাজনৈতিক সমর্থন দেয়া শুরু করে। মার্কিন কর্মকর্তাদের ধারণা এ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে পুনরায় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যের ব্যাপারে তাদের লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়ন করতে পারবে। এ কারণে আমেরিকা ২০১২ সালে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকা থেকে মোনাফেকিন গোষ্ঠীকে বাদ দেয়। সন্ত্রাসীদের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার জন্য মোনাফেকিন গোষ্ঠীর নেতারা মার্কিন কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়েছিল এ কথা উল্লেখ করে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সন্ত্রাসবাদ দমন বিষয়ক সমন্বয়কারী ড্যানিয়েল বেঞ্জামিন বলেন, ওয়াশিংটন অর্থের বিনিময়ে সন্ত্রাসীদের সব অপরাধযজ্ঞ চেপে যাচ্ছে।
ইরানবিরোধী সন্ত্রাসী মোনাফেকিন গোষ্ঠীর নৃশংস কর্মকাণ্ডের প্রতি ইরাকের জনগণ এতোটাই ক্ষুব্ধ ছিল যে সাদ্দামের পতনের পরপরই ওই দেশে টিকে থাকা সন্ত্রাসীদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তখন সন্ত্রাসীদের রক্ষায় আমেরিকা এগিয়ে আসে এবং তাদেরকে আলবেনিয়ায় স্থানান্তরের কাজ শুরু করে। সাবেক মার্কিন সিনেটর রবার্ট তুরিচলি সে সময় বলেছিলেন, "ইউরোপের দেশ আলবেনিয়ার সঙ্গে আমেরিকার সুসম্পর্ক বজায় থাকায় সন্ত্রাসীদেরকে ইরাক থেকে ওই দেশে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।"
যাইহোক, এখনো পর্যায়ক্রমে সন্ত্রাসীদেরকে আলবেনিয়ায় পাঠানোর কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে । ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ পর্যন্ত প্রায় ৩২৫০ জন সন্ত্রাসীকে আলবেনিয়ায় স্থানান্তর করা হয়েছে। ইরান বিরোধী এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নেতারা অবাধে আমেরিকায়ও সফর করছে এবং পেন্টাগনের অতিথি হিসেবে সেখান অবস্থান করছে। আমেরিকার তার লক্ষ্য পূরণের জন্য এদেরকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
ইরান বিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী 'এমকেও'র বৈঠকে অংশগ্রহণকারী পাশ্চাত্যের রাজনীতিবিদরা এই গোষ্ঠীর সহযোগিতায় ইরানের ইসলামি শাসন ব্যবস্থাকে উৎখাতের ব্যাপারে বক্তব্য দিয়েছেন। যদিও তাদের এ স্বপ্ন গত চল্লিশ বছরে পূরণ হয়নি বরং পাশ্চাত্য এবং মধ্যপ্রাচ্যে তাদের আরব মিত্র দেশগুলো ও দখলদার ইসরাইলের ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় ইরান অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিশনের সাবেক সদস্য আব্বাস আলী মানসুরি অরানি ইরান বিরোধী বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের উপস্থিতিতে ফ্রান্সে এমকেও'র বৈঠক আয়োজনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছেন, প্রতি বছর ইরান বিরোধী সন্ত্রাসী মোনাফেকিন গোষ্ঠীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং এর আগে এরা ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দামের পৃষ্ঠপোষকতা পেত। এ গোষ্ঠীটি এখনো মধ্যপ্রাচ্যে গোয়েন্দাবৃত্তির কাজ করছে এবং আমেরিকা ও ইসরাইলকে সহযোগিতা করছে।"
মাত্র কয়েক বছর আগেও আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকায় ইরান বিরোধী সন্ত্রাসী মোনাফেকিন গোষ্ঠী এমকেও'র নাম ছিল। কিন্তু পাশ্চাত্যের কর্মকর্তাদের বিপুল অংকের অর্থ ঘুষ দিয়ে এবং লবিং করে সন্ত্রাসবাদের তালিকা থেকে এমকেও'র নাম প্রত্যাহার করা হয়। এরপর থেকে এ গোষ্ঠীর সদস্যরা ইউরোপীয় দেশগুলোর রাজধানীতে অবাধ যাতায়াতের সুযোগ পায় এবং বিভিন্ন শহরে তারা ইরান বিরোধী সমাবেশ করার অনুমতি পায়। এসব সমাবেশ কিংবা সম্মেলনে পাশ্চাত্যের দ্বিতীয় সারির রাজনীতিবিদরা বিপুল অংকের ঘুষের বিনিময়ে এমকেও'র পক্ষে নানান বক্তব্য দেন। ইরান বিরোধী এ গোষ্ঠীটি প্রতি বছর এ ধরণের সমাবেশ আয়োজনের মাধ্যমে প্রমাণ করার চেষ্টা করে তাদের প্রতি অনেক ইরানির সমর্থন রয়ছে। সমাবেশে লোকসমাগমের জন্য 'এমকেও' এমন সব বিদেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসে যাদের অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। এ ছাড়া, ইউরোপে আশ্রয় নেয়া অন্য মহাদেশ থেকে আসা অভিবাসী এবং এমনকি ঘরবাড়ি হারা ছিন্নমূল মানুষকেও অর্থের বিনিময়ে সমাবেশে আসতে উৎসাহিত করা হয়।
পাশ্চাত্যের ধারণা এমকেওকে ব্যবহার করে ইরানের বিরুদ্ধে তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে। পাশ্চাত্য বিশেষ করে আমেরিকা সবসময়ই সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার ক্ষেত্রে দ্বিমুখী নীতি অনুসরণ করে আসছে। তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কথা বললেও গত তিন দশক ধরে ইরান বিরোধী এমকেওকে পৃষ্ঠপোষকতা ও সমর্থন দিয়ে আসছে। যদিও তারা জানে এমকেও একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। বর্তমানে তাদের প্রধান ঘাঁটি ফ্রান্সে যা কিনা সেদেশের পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। ইউরোপের সন্ত্রাসীর তালিকায় এক সময় ইরান বিরোধী এ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নাম থাকলেও বর্তমানে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এদেরকে সমাবেশ করার লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এদের মানবতা বিরোধী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত থাকা সত্বেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ইরাকের সাদ্দাম এক সময় ইরান বিরোধী এ গোষ্ঠীকে সমর্থন দিত। এরপর আমেরিকাও ইরানের পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধে গোয়েন্দাবৃত্তি কাজে এদের ব্যবহার করে। এই সন্ত্রাসীদের দেয়া মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই আমেরিকা ও ইসরাইল ইরানের পরমাণু কর্মসূচীর বিরুদ্ধে তৎপরতা শুরু করে।
ইরান বিরোধী সন্ত্রাসী মোনাফেকিন গোষ্ঠী এমকেও ১৯৬০ এর দশকে সংগঠিত হলেও এদের সদস্য-সংখ্যা খুবই কম। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পরপরই তখনকার গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতির সুযোগ নেয় এ গোষ্ঠীটি এবং অনেকেই এ গোষ্ঠীতে যোগ দেয়। এরপর ১৯৮১ সালের পর থেকে এমকেও ইরানের ইসলামি শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংঘাতে লিপ্ত হয় এবং দেশটির কর্মকর্তাসহ হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে তারা শহীদ করে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১৯৮০'র দশকে এবং এর পরেও এমকেও'র হামলায় ১৭ হাজারের বেশি ইরানি শহীদ হয়েছে। এরপর ইরানে টিকতে না পেরে এ গোষ্ঠীটি ইরাকে আশ্রয় নিয়েছিল এবং সাদ্দামের ছায়াতলে থেকে তারা ইরাকের জনগণের বিরুদ্ধে দমন অভিযান এবং ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় ব্যাপক তৎপরতা চালিয়েছিল। সাদ্দামের সহযোগিতায় এ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি ইরান ও ইরাকের হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। এ প্রসঙ্গে ১৯৯১ সালে দক্ষিণ ইরাকে শিয়া মুসলমানদের বিরুদ্ধে এবং উত্তর ইরাকের কুর্দিদের বিরুদ্ধে দমন অভিযানের সময় সাদ্দামকে এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সহযোগিতার কথা উল্লেখ করা যায়।
শেষ পর্যন্ত ইরান বিরোধী এই সন্ত্রাসী মোনাফেকিন গোষ্ঠীকে ইরাকের স্বৈরশাসক সাদ্দামের স্পেশাল বাহিনী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সন্ত্রাসবাদ দমন বিষয়ক সমন্বয়কারী ড্যানিয়েল বেঞ্জামিন ২০০৯ ও ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ের দিকে পলিটিকো সাময়িকীতে প্রকাশিত এক নিবন্ধে ইরান বিরোধী মোনাফেকিন গোষ্ঠীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, "ইরানের প্রখ্যাত আলেম আয়াতুল্লাহ বেহেশতির মতো দেশটির বহু কর্মকর্তা এবং হাজার হাজার সাধারণ মানুষ সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন। এ কারণেই এই গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।"
সাদ্দামের পতনের পর ইরান ও ইরাকের জনগণের বিরুদ্ধে মোনাফেকিন গোষ্ঠীর নৃশংসতা ও অপরাধযজ্ঞের বহু ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর আমেরিকা ও ইউরোপ এদেরকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। কিন্তু ইসরাইল ইরানের পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধে গোয়েন্দাবৃত্তি এবং মধ্যপ্রাচ্যে লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য এই গোষ্ঠীটিকে ব্যবহার করে। এরপর আমেরিকাও ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য মোনাফেকিন গোষ্ঠীর প্রতি রাজনৈতিক সমর্থন দেয়া শুরু করে। মার্কিন কর্মকর্তাদের ধারণা এ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে পুনরায় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যের ব্যাপারে তাদের লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়ন করতে পারবে। এ কারণে আমেরিকা ২০১২ সালে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকা থেকে মোনাফেকিন গোষ্ঠীকে বাদ দেয়। সন্ত্রাসীদের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার জন্য মোনাফেকিন গোষ্ঠীর নেতারা মার্কিন কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়েছিল এ কথা উল্লেখ করে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সন্ত্রাসবাদ দমন বিষয়ক সমন্বয়কারী ড্যানিয়েল বেঞ্জামিন বলেন, ওয়াশিংটন অর্থের বিনিময়ে সন্ত্রাসীদের সব অপরাধযজ্ঞ চেপে যাচ্ছে।
ইরানবিরোধী সন্ত্রাসী মোনাফেকিন গোষ্ঠীর নৃশংস কর্মকাণ্ডের প্রতি ইরাকের জনগণ এতোটাই ক্ষুব্ধ ছিল যে সাদ্দামের পতনের পরপরই ওই দেশে টিকে থাকা সন্ত্রাসীদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তখন সন্ত্রাসীদের রক্ষায় আমেরিকা এগিয়ে আসে এবং তাদেরকে আলবেনিয়ায় স্থানান্তরের কাজ শুরু করে। সাবেক মার্কিন সিনেটর রবার্ট তুরিচলি সে সময় বলেছিলেন, "ইউরোপের দেশ আলবেনিয়ার সঙ্গে আমেরিকার সুসম্পর্ক বজায় থাকায় সন্ত্রাসীদেরকে ইরাক থেকে ওই দেশে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।"
যাইহোক, এখনো পর্যায়ক্রমে সন্ত্রাসীদেরকে আলবেনিয়ায় পাঠানোর কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে । ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ পর্যন্ত প্রায় ৩২৫০ জন সন্ত্রাসীকে আলবেনিয়ায় স্থানান্তর করা হয়েছে। ইরান বিরোধী এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নেতারা অবাধে আমেরিকায়ও সফর করছে এবং পেন্টাগনের অতিথি হিসেবে সেখান অবস্থান করছে। আমেরিকার তার লক্ষ্য পূরণের জন্য এদেরকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
No comments