দুর্গম অঞ্চলের চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছে নারী শান্তিরক্ষীরা by কাজী সোহাগ
চারদিকে
অস্ত্রের ঝনঝনানি। সতর্ক আর তটস্থ থাকতে হয় সবসময়। যেকোনো সময় হতে পারে বড়
ধরনের আক্রমণের ঘটনা। কোমরে রাখতে হয় গুলিভর্তি অস্ত্র। বাথরুমে গেলেও
সঙ্গী হিসেবে থাকে অস্ত্র। বিশ্রামে গেলেও সশস্ত্র হয়ে প্রস্তুত থাকতে হয়।
ঠিক এরকম একটি পরিবেশে মধ্য আফ্রিকার দুর্গম অঞ্চলে কাজ করছেন ১৮ জন নারী শান্তিরক্ষী। এর মধ্যে ১০ জন রয়েছে সেনাবাহিনীর, ২ জন নৌবাহিনীর আর মেডিকেল টিমের ৬ জন। প্রতিনিয়ত মৃত্যু হুমকি নিয়ে জীবনবাজি রেখে চলেছেন তারা। পরিবার পরিজন ফেলে লাল-সবুজের পতাকার জন্য কাজ করছেন বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটার দূরত্বে। শুধু তাই নয়, জাতিসংঘের অধীনে থাকা বিশ্বের ২১টি দেশের শান্তিরক্ষীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন বাংলাদেশি নারী শান্তিরক্ষীরা। বাংলাদেশ থেকে পাওয়া প্রশিক্ষণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সহায়তা করছে বলে তারা জানান। নারী শান্তিরক্ষীরা বলেন, মিশনে কাজ করা নিঃসন্দেহে দুরূহ ব্যাপার। প্রতিকূল অনেক কিছু মোকাবিলা করে এখানে থাকতে হয়। দেশের হয়ে অবদান রাখতে হয় বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায়। তারা জানান, এখানে যেসব সন্ত্রাসী সংগঠন রয়েছে তারা খুবই হিং¯্র। তাদের মোকাবিলার জন্য অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে প্রস্তুত থাকতে হয়। নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি রয়েছে ভাষাগত সমস্যা, দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা। সবচেয়ে বড় সমস্যা সাংস্কৃতিক। নারী শান্তিরক্ষীরা বলেন, তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে কখনো পিছপা হন না। দেশ আর পতাকা এই দুটো বিষয় মাথায় রেখে কাজ করি। তারা জানান, এ ধরনের মানসিকতা রেখে কাজ করার তৃপ্তিই আলাদা। মধ্য আফ্রিকার সেক্টর ওয়েস্ট হেডকোয়ার্টারে স্টাফ অফিসার হিসেবে কাজ করছেন ২ নারী শান্তিরক্ষী মেজর ইশরাত ও মেজর নুসরাত। এর মধ্যে অপারেশন বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন ইশরাত আর গোয়েন্দা বিভাগে নুসরাত। মধ্য আফ্রিকার কাগা বন্দর নামক স্থানে বাংলাদেশ মেডিকেল বা ব্যানমেড কন্টিনজেন্টে কাজ করছেন সেনাবাহিনীর ৫ নারী শান্তিরক্ষী। এর মধ্যে কন্টিনজেন্টের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কর্নেল আমিনা। আরেক কন্টিনজেন্ট বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ন বা ব্যানব্যাট-এ আছেন ৬ নারী শান্তিরক্ষী। তারা হলেনÑমেজর মোবাশ্বেরিন, মেজর তাসলীমা হক, মেজর রুবি আক্তার, ক্যাপ্টেন শামীমা, ওয়ার্ড নার্স মনিকা দাস ও লাভলী বেগম। এছাড়া বাংগুইতে ফোর্স হেডকোয়ার্টারে স্টাফ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নৌ-বাহিনীর দুই চৌকস নারী শান্তিরক্ষী হাসিনা আক্তার ও শাহিদা। মধ্য আফ্রিকায় শান্তিরক্ষী মিশনে স্টাফ অফিসার হিসেবে বাংলাদেশি নারী শান্তিরক্ষীরা প্রথম কাজ শুরু করেন গত বছর থেকে। চলতি বছরের শেষদিকে তাদের মিশনের মেয়াদ শেষ হবে। অতীতে অন্যান্য দায়িত্বে নারীরা এলেও স্টাফ অফিসার পদে এবারই প্রথম। নিজেদের কাজ সম্পর্কে বলতে গিয়ে মেজর ইশরাত মানবজমিনকে বলেন, হায়ার হেডকোয়ার্টার থেকে সব ধরনের নির্দেশনা গ্রহণ করি। পরে তা জানাই কন্টিনজেন্টে। এরপর অপারেশনের পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। তিনি জানান, এখানে অপারেশন পরিকল্পনা তৈরি করা কঠিন। নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে হয়। পরিকল্পনায় কোনো ধরনের ঘাটতি থাকলে হয়তো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। পরিকল্পনা মতো একটি পেট্রোল অপারেশনে বের হয়ে যাওয়ার পর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই সঠিক সময়ের মধ্যে অপারেশন সফল করা সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ। ২০১৫ সালে আইভরিকোস্টের মিশনে ছিলেন মেজর ইশরাত। বাংলাদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মধ্য আফ্রিকার মতো দুর্গম অঞ্চলে কীভাবে কাজ করছেন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখানে আসার আগে ২ বছর পার্বত্য চট্টগ্রামে কাজ করেছি। সেখানকার কিছু অভিজ্ঞতা এখানে কাজে লাগছে। তবে এখানকার চ্যালেঞ্জ পার্বত্য জেলাগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী যে কয়টি অপারেশন পরিচালনা করা হয়েছে তার বেশিরভাগই সফল হয়েছে। দেশে রেখে আসা পরিবার পরিজন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৮ বছর বয়সী মেয়ে তাজরীবা তৌহিদ ইয়াশানাকে খুব মিস করি। ফোন করলে বলেÑমা আসো, মা আসো। মেয়ের এই ডাক উপেক্ষা করতে হয়। স্বামী সেনা কর্মকর্তা। তিনিও কাজ করছেন পার্বত্য চট্টগ্রামে। তিনি জানান, এসবের মধ্যেও সবচেয়ে বড় তৃপ্তি দেশের জন্য কাজ করতে পারছি। দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলে ভূমিকা রাখতে পারছি। বোয়ারে অবস্থিত ব্যানব্যাট-এ কর্মরত মেজর মোবাশ্বেরিন ও মেজর তাসলীমা হক মানবজমিনকে বলেন, এখানে কাজ করা ছয় মাস হয়ে গেছে। প্রথমদিকে অনেক বিষয়কে সমস্যা মনে হলেও এখন মানিয়ে নিয়েছি। তারা বলেন, দেশের জন্য কাজ করতে পারাটাই আমাদের জন্য আনন্দের। তাই যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। মধ্য আফ্রিকার দুর্গম অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আধুনিক মারণাস্ত্র নিয়ে সক্রিয় রয়েছে প্রায় ১০টি দুর্ধর্ষ বাহিনী। সংখ্যায় তারা প্রায় ৯ হাজার। এদের মধ্যে এন্টি বালাকা আর এক্স সেলেকা সবচেয়ে বেশি দুর্ধর্ষ। এসব সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে রয়েছে এম-১৬, আরপিজি, এইচএমজি ও কানাশনিকভের মতো অত্যাধুনিক অস্ত্র। প্রতিনিয়ত এদের সঙ্গে লড়েই মধ্য আফ্রিকায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষীরা। বিশ্বের ২১টি দেশের ২৭টি কন্টিনজেন্ট কাজ করছে মধ্য আফ্রিকায়। ৩টি কন্টিনজেন্ট নিয়ে শান্তি রক্ষায় অবদান রাখছে বাংলাদেশ।
ঠিক এরকম একটি পরিবেশে মধ্য আফ্রিকার দুর্গম অঞ্চলে কাজ করছেন ১৮ জন নারী শান্তিরক্ষী। এর মধ্যে ১০ জন রয়েছে সেনাবাহিনীর, ২ জন নৌবাহিনীর আর মেডিকেল টিমের ৬ জন। প্রতিনিয়ত মৃত্যু হুমকি নিয়ে জীবনবাজি রেখে চলেছেন তারা। পরিবার পরিজন ফেলে লাল-সবুজের পতাকার জন্য কাজ করছেন বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটার দূরত্বে। শুধু তাই নয়, জাতিসংঘের অধীনে থাকা বিশ্বের ২১টি দেশের শান্তিরক্ষীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন বাংলাদেশি নারী শান্তিরক্ষীরা। বাংলাদেশ থেকে পাওয়া প্রশিক্ষণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সহায়তা করছে বলে তারা জানান। নারী শান্তিরক্ষীরা বলেন, মিশনে কাজ করা নিঃসন্দেহে দুরূহ ব্যাপার। প্রতিকূল অনেক কিছু মোকাবিলা করে এখানে থাকতে হয়। দেশের হয়ে অবদান রাখতে হয় বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায়। তারা জানান, এখানে যেসব সন্ত্রাসী সংগঠন রয়েছে তারা খুবই হিং¯্র। তাদের মোকাবিলার জন্য অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে প্রস্তুত থাকতে হয়। নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি রয়েছে ভাষাগত সমস্যা, দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা। সবচেয়ে বড় সমস্যা সাংস্কৃতিক। নারী শান্তিরক্ষীরা বলেন, তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে কখনো পিছপা হন না। দেশ আর পতাকা এই দুটো বিষয় মাথায় রেখে কাজ করি। তারা জানান, এ ধরনের মানসিকতা রেখে কাজ করার তৃপ্তিই আলাদা। মধ্য আফ্রিকার সেক্টর ওয়েস্ট হেডকোয়ার্টারে স্টাফ অফিসার হিসেবে কাজ করছেন ২ নারী শান্তিরক্ষী মেজর ইশরাত ও মেজর নুসরাত। এর মধ্যে অপারেশন বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন ইশরাত আর গোয়েন্দা বিভাগে নুসরাত। মধ্য আফ্রিকার কাগা বন্দর নামক স্থানে বাংলাদেশ মেডিকেল বা ব্যানমেড কন্টিনজেন্টে কাজ করছেন সেনাবাহিনীর ৫ নারী শান্তিরক্ষী। এর মধ্যে কন্টিনজেন্টের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কর্নেল আমিনা। আরেক কন্টিনজেন্ট বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ন বা ব্যানব্যাট-এ আছেন ৬ নারী শান্তিরক্ষী। তারা হলেনÑমেজর মোবাশ্বেরিন, মেজর তাসলীমা হক, মেজর রুবি আক্তার, ক্যাপ্টেন শামীমা, ওয়ার্ড নার্স মনিকা দাস ও লাভলী বেগম। এছাড়া বাংগুইতে ফোর্স হেডকোয়ার্টারে স্টাফ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নৌ-বাহিনীর দুই চৌকস নারী শান্তিরক্ষী হাসিনা আক্তার ও শাহিদা। মধ্য আফ্রিকায় শান্তিরক্ষী মিশনে স্টাফ অফিসার হিসেবে বাংলাদেশি নারী শান্তিরক্ষীরা প্রথম কাজ শুরু করেন গত বছর থেকে। চলতি বছরের শেষদিকে তাদের মিশনের মেয়াদ শেষ হবে। অতীতে অন্যান্য দায়িত্বে নারীরা এলেও স্টাফ অফিসার পদে এবারই প্রথম। নিজেদের কাজ সম্পর্কে বলতে গিয়ে মেজর ইশরাত মানবজমিনকে বলেন, হায়ার হেডকোয়ার্টার থেকে সব ধরনের নির্দেশনা গ্রহণ করি। পরে তা জানাই কন্টিনজেন্টে। এরপর অপারেশনের পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। তিনি জানান, এখানে অপারেশন পরিকল্পনা তৈরি করা কঠিন। নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে হয়। পরিকল্পনায় কোনো ধরনের ঘাটতি থাকলে হয়তো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। পরিকল্পনা মতো একটি পেট্রোল অপারেশনে বের হয়ে যাওয়ার পর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই সঠিক সময়ের মধ্যে অপারেশন সফল করা সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ। ২০১৫ সালে আইভরিকোস্টের মিশনে ছিলেন মেজর ইশরাত। বাংলাদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মধ্য আফ্রিকার মতো দুর্গম অঞ্চলে কীভাবে কাজ করছেন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখানে আসার আগে ২ বছর পার্বত্য চট্টগ্রামে কাজ করেছি। সেখানকার কিছু অভিজ্ঞতা এখানে কাজে লাগছে। তবে এখানকার চ্যালেঞ্জ পার্বত্য জেলাগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী যে কয়টি অপারেশন পরিচালনা করা হয়েছে তার বেশিরভাগই সফল হয়েছে। দেশে রেখে আসা পরিবার পরিজন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৮ বছর বয়সী মেয়ে তাজরীবা তৌহিদ ইয়াশানাকে খুব মিস করি। ফোন করলে বলেÑমা আসো, মা আসো। মেয়ের এই ডাক উপেক্ষা করতে হয়। স্বামী সেনা কর্মকর্তা। তিনিও কাজ করছেন পার্বত্য চট্টগ্রামে। তিনি জানান, এসবের মধ্যেও সবচেয়ে বড় তৃপ্তি দেশের জন্য কাজ করতে পারছি। দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলে ভূমিকা রাখতে পারছি। বোয়ারে অবস্থিত ব্যানব্যাট-এ কর্মরত মেজর মোবাশ্বেরিন ও মেজর তাসলীমা হক মানবজমিনকে বলেন, এখানে কাজ করা ছয় মাস হয়ে গেছে। প্রথমদিকে অনেক বিষয়কে সমস্যা মনে হলেও এখন মানিয়ে নিয়েছি। তারা বলেন, দেশের জন্য কাজ করতে পারাটাই আমাদের জন্য আনন্দের। তাই যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। মধ্য আফ্রিকার দুর্গম অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আধুনিক মারণাস্ত্র নিয়ে সক্রিয় রয়েছে প্রায় ১০টি দুর্ধর্ষ বাহিনী। সংখ্যায় তারা প্রায় ৯ হাজার। এদের মধ্যে এন্টি বালাকা আর এক্স সেলেকা সবচেয়ে বেশি দুর্ধর্ষ। এসব সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে রয়েছে এম-১৬, আরপিজি, এইচএমজি ও কানাশনিকভের মতো অত্যাধুনিক অস্ত্র। প্রতিনিয়ত এদের সঙ্গে লড়েই মধ্য আফ্রিকায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষীরা। বিশ্বের ২১টি দেশের ২৭টি কন্টিনজেন্ট কাজ করছে মধ্য আফ্রিকায়। ৩টি কন্টিনজেন্ট নিয়ে শান্তি রক্ষায় অবদান রাখছে বাংলাদেশ।
No comments