মাদক জগতে নারী ছন্দহারা জীবন by মরিয়ম চম্পা
সোহেলীর
জীবনে ছন্দ ছিল। চোখে ছিল স্বপ্ন। ভবিষ্যৎ ছিল পরিচ্ছন্ন। কিন্তু না। সবই
এখন দুঃস্বপ্ন। ব্যবসায়ী পিতা ও ব্যাংকার মাতার একমাত্র সন্তান হিসেবে বড়
হয়েছে সোনার চামচ মুখে নিয়ে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে শিখে সোহেলী।
লেখাপড়া করার জন্য ভর্তি করায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত নামকরা একটি
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে। ভালোই চলছিল তার জীবন। ‘ও’ লেভেলে পড়ার সময় কেমন যেন
বদলে যেতে থাকে। এক সময় দেখা যায় হারিয়ে গেছে তার জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ।
ক্লাসের নিয়মিত ছাত্রী এখন অনিয়মিত, পড়ায় মন নেই। ঠিক নেই নাওয়া-খাওয়া
কিংবা ঘুমেরও। এই বয়সে দুইবার বাড়ি ছেড়েও পালিয়েছে। একবার তো প্রায় মরতেই
বসেছিল। ফ্যানের সঙ্গে ওড়না জড়িয়ে ফাঁস নেয়ার চেষ্টা করেছিল। সোহেলীর
ব্যাংকার মা বলেন, তার এ বয়সে না পাওয়ার কোনো কষ্টই নেই। তবু তার ছোট্ট
জীবনটা এলোমেলো করে দিয়েছে সর্বনাশা মাদক। তিনি বলেন, শুরুর দিকে রাজধানীর
মোহাম্মদপুরের একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছিল। যেদিন
শুনেছি সোহেলী গাঁজা-ইয়াবা খায়, সেদিন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। সম্মানের ভয়ে
এক বছর কাউকে জানাইনি। পারিবারিকভাবে নিজেরা চেষ্টা করেছি, ফেরাতে পারিনি।
পরে গুলশানের এক নিরাময় কেন্দ্রে দুই মাস রাখলাম। লাখ লাখ টাকা গেল, কিছুই
হলো না।
আরেক মেধাবী ছাত্রী ঝর্ণা। বছরখানেক হলো মাদক গ্রহণ করছেন। প্রথমে সিগারেট দিয়ে শুরু হলেও এখন ইয়াবা তার প্রথম ও একমাত্র নেশা। ঝর্ণা জানায়, বাসায় বাবা- মায়ের সঙ্গে সমস্যা শুরু হওয়ার পর থেকে সিগারেট খাওয়া শুরু করলাম। একদিন বন্ধুরা বললো ইয়াবা নে দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে। আমি প্রথমে ভাবলাম দুই-একটা খাবো তারপর ছেড়ে দেবো। কিন্তু আমার অবস্থা এমন হলো আর ছাড়তে পারলাম না।
ঝর্ণা বলেন, বাবা-মায়ের সঙ্গে কলহ এবং তাদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সময় না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। একটা পর্যায়ে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কৌতূহলবশত মাদক নেয়া শুরু করেন। এরকম আরো হাজারও ঝর্ণার সংখ্যা যেন দিন দিন বেড়ে চলছে ব্যস্ত নগরীতে। মাদকের থাবায় বিপর্যস্ত সন্তানের কারণে রাজধানীর অনেক পরিবারই এখন দিশাহারা। আর সেই সন্তান যদি হয় মেয়ে তবে যন্ত্রণা তো তাহলে দ্বিগুণ। সামাজিক মর্যাদা, যথাযথ চিকিৎসার ঘাটতিসহ নানা কারণে অভিভাবকদের বিড়ম্বনার অন্ত থাকে না।
পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও বিপজ্জনক হারে এ মাদক জগতে প্রবেশ করছে। দিন দিন এর পরিমাণ বেড়েই চলছে। বর্তমানে নারীরা মরণ নেশা ইয়াবার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে বেশি। মাদকের সহজলভ্যতা ও ব্যাপক প্রসারতার কারণে আসক্ত নারীর সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশের মাদক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি’) পরিচালিত ২০১২ সালের এক জরিপে বলা হয়, এ দেশে মাদকাসক্তদের ৭৯ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ ও ২০ দশমিক ৬ শতাংশ নারী। মোট মাদকাসক্তের পাঁচ ভাগের এক ভাগই নারী। অন্যদিকে জাতিসংঘের এক জরিপে বলা হয়, বাংলাদেশে ৬৫ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত। সেই হিসেবে এ দেশে ১৩ লাখের বেশি নারী কোনো না কোনো মাদক সেবন করছেন। বেসরকারি জরিপের হিসাবমতে, সারা দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৬০ লাখের বেশি। এর মধ্যে নারী মাদকাসক্ত ৫ লাখ। অন্যদিকে মাদকদব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) জরিপে দেখা যায়, সারা দেশে ৪০ লাখের বেশি মাদকাসক্ত। এতে নারীর সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেয়া না থাকলেও চার লাখের কাছাকাছি বলে জানা গেছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জরিপ অনুযায়ী, নারীদের মধ্যে ৮০ শতাংশ বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে আসক্ত হয়ে পড়ে।
মাদক বিশেষজ্ঞরা বলেন, নারীরা কৌতূহলের বশে প্রথমে মাদক গ্রহণ করা থেকে তারা একসময় আসক্ত হয়ে পড়ে। এছাড়া পারিবারিক অশান্তি যেকোনো ধরনের হতাশা, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ, প্রেমঘটিত ব্যাপার, ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব, মাদকাসক্ত বন্ধুদের সঙ্গ- এসব কারণেই নারীরা এই মরণ নেশায় আসক্ত হচ্ছে। মাদকদ্রব্যের ব্যাপক বিস্তারের কারণে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে দেশের যুবসমাজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়েরাই বেশি মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক তাজুল ইসলাম জানান, ইয়াবা সেবনের পর প্রথমে মনে হয় শরীরে অনেক শক্তি এসেছে, যৌনশক্তি বেড়ে গেছে, সব ক্লান্তি কেটে গেছে। এটি একটি উত্তেজক মাদক। দীর্ঘমেয়াদে এটি পুরো স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রচণ্ড খারাপ প্রভাব ফেলে। স্নায়ুুতন্ত্রের স্বাভাবিক কাঠামো ও কার্যক্রম নষ্ট করে দেয়। এ ধরনের মাদকের প্রভাবে অনেক সময় মানুষ বদ্ধ পাগলের মতো আচরণ করে (সাইকোসিস সিনড্রম)। সেবনের পরপর অনেক ফুরফুরে লাগলেও এর প্রভাব কমে যাওয়ার পরই শরীরময় নেমে আসে রাজ্যের অবসাদ ও ক্লান্তি। ফলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের (স্ট্রোক) ঝুঁকিও তৈরি হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (চিকিৎসা ও পুনর্বাসন) মো. আবুল হোসেন বলেন, মাদকাসক্ত নারীকে সমাজ ভিন্ন চোখে দেখে। এই মানসিকতা ও লোকলজ্জায় নারী মাদকাসক্তরা চিকিৎসা সেবা নেন না বললেই চলে। আমাদের সমাজের মাদকাসক্ত নারীরা পুরুষের তুলনায় দ্রুত আক্রান্ত হয়। তাদের চিকিৎসা না দিলে ব্যক্তিজীবনেও প্রভাব পড়ে। নারী মাদকাসক্তদের প্রথম পছন্দ ইয়াবা। আক্রান্ত নারীরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সহিংস আচরণ দেখায়। আর এসব বিষয় গোপন রাখায় নারীরা দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ভোগে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে পারিবারিক সচেতনতা জোরদার করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশের মাদকবিরোধী সংস্থা মানস বলছে দেশে প্রায় ৭০ লাখ মাদকাসক্ত ব্যক্তির ১৬ শতাংশই নারী। ঢাকায় আহছানিয়া মিশনে মেয়েদের জন্য একটি আলাদা মাদক নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে। সেখানকার স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ইকবাল মাসুদ জানান, স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়েদের মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার একটা প্রধান কারণ পরিবার বা বাবা-মায়ের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক না থাকা বা বাবা-মায়ের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সময় না পাওয়া।
ব্রেইন অ্যান্ড লাইফ হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. ফখরুল হোসেন বলেন, প্রায় ১৫ বছর ধরে মাদকাসক্তি এবং মানসিক বিষয় নিয়ে কাজ করছি। মাদক জগতে নারীদের সম্পৃক্ততা মূলত ওভার স্মার্টনেসের কারণে হয়ে থাকে। অধিকাংশ আসক্ত মেয়েরা অতি আধুনিকতা প্রদর্শন করতে গিয়ে মাদকের জালে জড়িয়ে পড়ে। এই অতি আধুনিক হতে গিয়ে দেখা যায় একজন নারীর ছেলে সঙ্গী চাই। বন্ধু হোক, ভাই হোক তাদের সঙ্গে আমরা কোথাও যেতে চাই তাদের সঙ্গে আমরা ঘুরতে চাই। এই ধরনের একটি সম্পৃক্ততার কারণে দেখা যায় যে সঙ্গের ছেলে বন্ধু যখন সিগারেট খাচ্ছেন তখন সেও বলছে এই তুই সিগারেট খাচ্ছিস আমিও খেতে চাই। তখন ছেলে বন্ধুদের অনেকেই বলে থাকে যে, তুই মেয়ে মানুষ সিগারেট খাবি! উত্তরে নারী সঙ্গী জানায় মেয়ে মানুষ হয়েছি বলে কি সিগারেট খাওয়া যাবে না। মেয়েরা এখন সব কিছু করছে। এটার থেকেই কিন্তু নেশার জগতে পা রাখা শুরু হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুধীর রঞ্জন দেব বলেন, মদপান করার কারণে নারীদের হৃদরোগের সমস্যা বেড়ে যায়। হার্টে তাদের বেশি পরিমাণের রক্ত জমাট বাঁধে। এতে হার্ট অ্যাটাক হয়ে অনেক নারী অকালে মারা যান। এছাড়া মদপানে কর্মশক্তি ও স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায়।
আরেক মেধাবী ছাত্রী ঝর্ণা। বছরখানেক হলো মাদক গ্রহণ করছেন। প্রথমে সিগারেট দিয়ে শুরু হলেও এখন ইয়াবা তার প্রথম ও একমাত্র নেশা। ঝর্ণা জানায়, বাসায় বাবা- মায়ের সঙ্গে সমস্যা শুরু হওয়ার পর থেকে সিগারেট খাওয়া শুরু করলাম। একদিন বন্ধুরা বললো ইয়াবা নে দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে। আমি প্রথমে ভাবলাম দুই-একটা খাবো তারপর ছেড়ে দেবো। কিন্তু আমার অবস্থা এমন হলো আর ছাড়তে পারলাম না।
ঝর্ণা বলেন, বাবা-মায়ের সঙ্গে কলহ এবং তাদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সময় না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। একটা পর্যায়ে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কৌতূহলবশত মাদক নেয়া শুরু করেন। এরকম আরো হাজারও ঝর্ণার সংখ্যা যেন দিন দিন বেড়ে চলছে ব্যস্ত নগরীতে। মাদকের থাবায় বিপর্যস্ত সন্তানের কারণে রাজধানীর অনেক পরিবারই এখন দিশাহারা। আর সেই সন্তান যদি হয় মেয়ে তবে যন্ত্রণা তো তাহলে দ্বিগুণ। সামাজিক মর্যাদা, যথাযথ চিকিৎসার ঘাটতিসহ নানা কারণে অভিভাবকদের বিড়ম্বনার অন্ত থাকে না।
পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও বিপজ্জনক হারে এ মাদক জগতে প্রবেশ করছে। দিন দিন এর পরিমাণ বেড়েই চলছে। বর্তমানে নারীরা মরণ নেশা ইয়াবার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে বেশি। মাদকের সহজলভ্যতা ও ব্যাপক প্রসারতার কারণে আসক্ত নারীর সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশের মাদক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি’) পরিচালিত ২০১২ সালের এক জরিপে বলা হয়, এ দেশে মাদকাসক্তদের ৭৯ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ ও ২০ দশমিক ৬ শতাংশ নারী। মোট মাদকাসক্তের পাঁচ ভাগের এক ভাগই নারী। অন্যদিকে জাতিসংঘের এক জরিপে বলা হয়, বাংলাদেশে ৬৫ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত। সেই হিসেবে এ দেশে ১৩ লাখের বেশি নারী কোনো না কোনো মাদক সেবন করছেন। বেসরকারি জরিপের হিসাবমতে, সারা দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৬০ লাখের বেশি। এর মধ্যে নারী মাদকাসক্ত ৫ লাখ। অন্যদিকে মাদকদব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) জরিপে দেখা যায়, সারা দেশে ৪০ লাখের বেশি মাদকাসক্ত। এতে নারীর সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেয়া না থাকলেও চার লাখের কাছাকাছি বলে জানা গেছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জরিপ অনুযায়ী, নারীদের মধ্যে ৮০ শতাংশ বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে আসক্ত হয়ে পড়ে।
মাদক বিশেষজ্ঞরা বলেন, নারীরা কৌতূহলের বশে প্রথমে মাদক গ্রহণ করা থেকে তারা একসময় আসক্ত হয়ে পড়ে। এছাড়া পারিবারিক অশান্তি যেকোনো ধরনের হতাশা, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ, প্রেমঘটিত ব্যাপার, ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব, মাদকাসক্ত বন্ধুদের সঙ্গ- এসব কারণেই নারীরা এই মরণ নেশায় আসক্ত হচ্ছে। মাদকদ্রব্যের ব্যাপক বিস্তারের কারণে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে দেশের যুবসমাজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়েরাই বেশি মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক তাজুল ইসলাম জানান, ইয়াবা সেবনের পর প্রথমে মনে হয় শরীরে অনেক শক্তি এসেছে, যৌনশক্তি বেড়ে গেছে, সব ক্লান্তি কেটে গেছে। এটি একটি উত্তেজক মাদক। দীর্ঘমেয়াদে এটি পুরো স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রচণ্ড খারাপ প্রভাব ফেলে। স্নায়ুুতন্ত্রের স্বাভাবিক কাঠামো ও কার্যক্রম নষ্ট করে দেয়। এ ধরনের মাদকের প্রভাবে অনেক সময় মানুষ বদ্ধ পাগলের মতো আচরণ করে (সাইকোসিস সিনড্রম)। সেবনের পরপর অনেক ফুরফুরে লাগলেও এর প্রভাব কমে যাওয়ার পরই শরীরময় নেমে আসে রাজ্যের অবসাদ ও ক্লান্তি। ফলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের (স্ট্রোক) ঝুঁকিও তৈরি হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (চিকিৎসা ও পুনর্বাসন) মো. আবুল হোসেন বলেন, মাদকাসক্ত নারীকে সমাজ ভিন্ন চোখে দেখে। এই মানসিকতা ও লোকলজ্জায় নারী মাদকাসক্তরা চিকিৎসা সেবা নেন না বললেই চলে। আমাদের সমাজের মাদকাসক্ত নারীরা পুরুষের তুলনায় দ্রুত আক্রান্ত হয়। তাদের চিকিৎসা না দিলে ব্যক্তিজীবনেও প্রভাব পড়ে। নারী মাদকাসক্তদের প্রথম পছন্দ ইয়াবা। আক্রান্ত নারীরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সহিংস আচরণ দেখায়। আর এসব বিষয় গোপন রাখায় নারীরা দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ভোগে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে পারিবারিক সচেতনতা জোরদার করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশের মাদকবিরোধী সংস্থা মানস বলছে দেশে প্রায় ৭০ লাখ মাদকাসক্ত ব্যক্তির ১৬ শতাংশই নারী। ঢাকায় আহছানিয়া মিশনে মেয়েদের জন্য একটি আলাদা মাদক নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে। সেখানকার স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ইকবাল মাসুদ জানান, স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়েদের মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার একটা প্রধান কারণ পরিবার বা বাবা-মায়ের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক না থাকা বা বাবা-মায়ের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সময় না পাওয়া।
ব্রেইন অ্যান্ড লাইফ হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. ফখরুল হোসেন বলেন, প্রায় ১৫ বছর ধরে মাদকাসক্তি এবং মানসিক বিষয় নিয়ে কাজ করছি। মাদক জগতে নারীদের সম্পৃক্ততা মূলত ওভার স্মার্টনেসের কারণে হয়ে থাকে। অধিকাংশ আসক্ত মেয়েরা অতি আধুনিকতা প্রদর্শন করতে গিয়ে মাদকের জালে জড়িয়ে পড়ে। এই অতি আধুনিক হতে গিয়ে দেখা যায় একজন নারীর ছেলে সঙ্গী চাই। বন্ধু হোক, ভাই হোক তাদের সঙ্গে আমরা কোথাও যেতে চাই তাদের সঙ্গে আমরা ঘুরতে চাই। এই ধরনের একটি সম্পৃক্ততার কারণে দেখা যায় যে সঙ্গের ছেলে বন্ধু যখন সিগারেট খাচ্ছেন তখন সেও বলছে এই তুই সিগারেট খাচ্ছিস আমিও খেতে চাই। তখন ছেলে বন্ধুদের অনেকেই বলে থাকে যে, তুই মেয়ে মানুষ সিগারেট খাবি! উত্তরে নারী সঙ্গী জানায় মেয়ে মানুষ হয়েছি বলে কি সিগারেট খাওয়া যাবে না। মেয়েরা এখন সব কিছু করছে। এটার থেকেই কিন্তু নেশার জগতে পা রাখা শুরু হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুধীর রঞ্জন দেব বলেন, মদপান করার কারণে নারীদের হৃদরোগের সমস্যা বেড়ে যায়। হার্টে তাদের বেশি পরিমাণের রক্ত জমাট বাঁধে। এতে হার্ট অ্যাটাক হয়ে অনেক নারী অকালে মারা যান। এছাড়া মদপানে কর্মশক্তি ও স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায়।
No comments