মশার উপদ্রব : চাঙা মশারির ব্যবসায় by সুমনা শারমিন
কাওরানবাজার
২ নম্বর সুপার মার্কেটের দোকানদার বিল্লাল হোসেন গত মাসে দৈনিক
চার-পাঁচটার বেশি মশারি বানানোর কাজ পাননি। মার্চের প্রায় মধ্য ভাগে এসে
তার এক মুহূর্ত অবসর নেই। কোনো কোনো দিন ২০টির মতো মশারি বানানোর কাজ
করছেন। তিনি বলেন, অনেকে পছন্দের কাপড় ও মাপ দিয়ে মশারি বানিয়ে নিচ্ছেন।
তাই ব্যস্ততা বেড়েছে মশারি তৈরির কারিগরদের। একইভাবে গত দুই-তিন সপ্তাহে
প্রস্তুতকৃত মশারি বিক্রির পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ার কথা জানিয়েছেন
রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। এর পাশাপাশি মশক নিধন ও
নিয়ন্ত্রণের উপকরণ কয়েল, অ্যারোসল এবং ব্যাটের চাহিদাও বেড়েছে। মশক
নিয়ন্ত্রণের জন্য নানা আধুনিক ব্যবস্থা থাকলেও এখনো বেশির ভাগের ভরসা
মশারিতে। মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরের ফুটপাথ, নীলক্ষেত, গুলিস্তানের
ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট এবং কাওরান বাজারের দোকানিরা বলছেন, গত বছরের
এপ্রিল-মে মাসে চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার পর মশারিসহ মশক
নিয়ন্ত্রণের আনুষঙ্গিক পণ্যগুলোর বিক্রি ব্যাপক হারে বেড়েছিল। এ বছর মশার
উপদ্রব আগে থেকেই শুরু হয়েছে। তাই গরমের মৌসুম শুরুতেই মশারির চাহিদা
বেড়েছে। বিভিন্ন এলাকার দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সুতা ও নকশার ওপর ভিত্তি
করে বিভিন্ন ধরনের মশারির দাম ১২০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। বিক্রেতারা
বলছেন, রাজধানীতে মশারির পাইকারি বাজারের একটি ২ নম্বর গাউছিয়া মার্কেট।
অন্যটি ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেটে। মূলত এই দুটি স্থান থেকেই রাজধানীর
বিভিন্ন এলাকার দোকানিরা মশারি বা মশারি তৈরির কাপড় কেনেন।গতকাল দুপুরে
সিটি সুপার মার্কেটে গিয়ে দেখা গেছে, বহুতলবিশিষ্ট মার্কেটটির নিচতলায়
মশারির পাইকারি বা জার। এখানে ১৫-১৬টি দোকানে শুধুই মশারি ও মশারি তৈরির
কাপড় বিক্রি হয়। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে দোকানপ্রতি দৈনিক গড়ে ৩০
হাজার টাকার মশারি ও মশারির কাপড় বিক্রি হয়। দুই সপ্তাহ আগেও দৈনিক বিক্রি
পাঁচ-সাত হাজার টাকার বেশি ছিল না। ঢাকার ব্যবসায়ীদের বাইরে দেশের বিভিন্ন
জেলা থেকেও ব্যবসায়ীরা এখান থেকে মশারি ও মশারির কাপড় কিনে থাকেন।
মার্কেটের এক দোকানের কর্মচারী মাহবুব বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেও
তাদের দোকানে দৈনিক ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার বেশি বিক্রি ছিল না। মার্চের এ
কয়েক দিনে বিক্রি গড়ে ৪০ হাজার টাকায় পৌঁছেছে।
সাধারণত এপ্রিল থেকে শুরু হয়
ব্যবসার মূল মৌসুম। এবার মশার উৎপাত আগেই শুরু হয়েছে, ব্যবসাও আগে থেকে
চাঙা। ম্যাজিক মশারির চাহিদাই সবচেয়ে বেশি ক্রেতাদের মধ্যে। এগুলোর ভেতরে
বাতাস সহজে ঢোকে। কিন্তু তেমন টেকসই না। তাই অনেক ক্ষেত্রে বছর না ঘুরতেই
এটা পরিবর্তন করতে হয়। কাওরান বাজারের ব্যবসায়ী মোবারক আলী ফুটপাথে মশারির
বাইরেও নানা ধরনের বিছানার চাদর বিক্রি করেন। তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে
দিনে ৮ থেকে ১০ পিসের বেশি মশারি বিক্রি হয় না। এখন প্রায় প্রতিদিন ১৫
পিসের বেশি বিক্রি হচ্ছে। কাওরানবাজার ২ নম্বর সুপার মার্কেটে মশারি বানাতে
এসেছিলেন নাখালপাড়ার বাসিন্দা আতিকুল ইসলাম। সাত ফুট বাই ছয় ফুট আকারের
একটি মশারি বানাতে তার খরচ পড়ছে সাড়ে ৭০০ টাকা। তিনি বলেন, গত বছর বাজার
থেকে দুটি রেডিমেড মশারি কিনেছিলাম। দ্রুত সেগুলো ছিঁড়ে যাওয়ায় এবার কাপড়
পছন্দ করে বানিয়ে নিচ্ছি। মশারির পাশাপাশি বেড়েছে কয়েল, অ্যারোসল ও
বৈদ্যুতিক ব্যাটের ব্যবহার। শহরের বিভিন্ন এলাকার দোকান ও পাইকারি
মার্কেটের ব্যবসায়ী এবং উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিরা বলছেন, নিম্ন
আয়ের মানুষের কাছে কয়েলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। অন্যরা অ্যারোসল ও বৈদ্যুতিক
কয়েলে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। গুলিস্তানের সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত কয়েক বছরে দেশের মশা মারার বৈদ্যুতিক ব্যাটের
জনপ্রিয়তা বেড়েছে। চীন থেকে আমদানি করা এসব ব্যাটের দাম ২৫০-৪০০ টাকার
মধ্যে।
No comments