খালেদা জিয়ার জামিন মেলেনি
জিয়া
অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির চেয়ারপারসন
খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশ স্থগিতই থাকছে। একই সঙ্গে তার
জামিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষ আপিলের অনুমতি
পেয়েছে। আদালত উভয়পক্ষের আইনজীবীদের আপিলের সার সংক্ষেপ জমা দেয়ার সময়সীমা
নির্ধারণ করে দিয়ে আগামী ৮ই মে আপিল শুনানির জন্য দিন ধার্য রেখেছেন।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত চার সদস্যের আপিল বিভাগ
গতকাল সকালে এ আদেশ দেন। আদেশের দুই সপ্তাহের মধ্যে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে
এবং এর পরবর্তী দুই সপ্তাহের মধ্যে আসামিপক্ষকে সার সংক্ষেপ জমা দিতে বলা
হয়েছে। সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা বলছেন, পরবর্তী শুনানির ধার্য তারিখ (৮ই মে)
পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত থাকছে। এর ফলে আপাতত তার কারামুক্তির আর
কোন সুযোগ নেই। এদিকে আপিল বিভাগের গতকালের আদেশকে অনভিপ্রেত ও নজিরবিহীন
বলে উল্লেখ করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল
ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়াকে জামিন না দিয়ে কফিনে শেষ পেরেকটি মারা
হয়েছে। অন্যদিকে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে তারা
রাজনীতিকরণের চেষ্টা করছে।
কারাগারে থাকা খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের করা পৃথক লিভ টু আপিলের শুনানি রোববার শেষ হয়। এর আগে বুধবার (১৪ই মার্চ) এক আদেশে খালেদা জিয়ার জামিন রোববার পর্যন্ত স্থগিত করে এই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদককে লিভ টু আপিল দায়েরের নির্দেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত। পরে বৃহস্পতিবার দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা পৃথক লিভ টু আপিল করেন। গত ১২ই মার্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।
গতকাল সকালে আদেশের আগে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, এটা আমাদের সর্বসম্মত আদেশ। আদেশে খালেদা জিয়াকে দেয়া হাইকোর্টের জামিন আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদককে আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দিতে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ২২শে মে দিন ধার্য করেন। আদেশের পর আপিল বিভাগ নিয়মিত কার্যক্রমে যান। কিছুক্ষণ পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদালতের উদ্দেশে বলেন, মাই লর্ড, আপনি কী আদেশ দিয়েছেন, আমরা তা বুঝতে পারিনি।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা সর্বসম্মতভাবে এ আদেশ দিয়েছি।
জয়নুল আবেদীন বলেন, আমি এটা জানতে চাইনি। আপনারা কোন কোন গ্রাউন্ডে লিভ (লিভ টু আপিল) গ্রহণ করেছেন, সেটি জানতে চাই।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা নথি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত দিয়েছি।
জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা তো এখনো মেরিটে (মামলার মূল বিষয়বস্তু) যাইনি।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনারা আপিলে সব বলতে পারবেন।
জয়নুল আবেদীন বলেন, আপনারা সর্বোচ্চ আদালত। আপনারা যে আদেশ দেবেন তা শিরোধার্য। তবে, ২২শে মে অনেক দূর। তিনি আরো বলেন, আজকে যেভাবে লিভ গ্রহণ করলেন, এটা নজিরবিহীন। অতীতে এই ধরনের (লঘু দণ্ডের জামিন) ক্ষেত্রে লিভ গ্রহণ করা হয়নি। তাহলে তো সব (অতীতের সব মামলায়) লিভই (লিভ টু আপিল) গ্রহণ করা উচিত ছিল।
এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি সারসংক্ষেপ জমা দেয়ার বিষয়ে বেঞ্চ অফিসারকে চার সপ্তাহের জায়গায় দুই সপ্তাহ করে সময় দিতে নির্দেশ দেন।
এ পর্যায়ে জয়নুল আবেদীন বলেন, আপনি দুই সপ্তাহ করলেন। আমি ২২শে মে তারিখটা এগিয়ে আনার অনুরোধ করছি।
এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, সরকার যে উদ্দেশ্যে এটা করেছে, দুদক আর সরকার তো একাকার হয়ে গেছে। খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চায়।
জয়নুল আবেদীন আদালতের উদ্দেশ্যে বলেন, সময়টা কমিয়ে এপ্রিলে দেন।
এ সময় বিচারপতি ইমান আলী বলেন, তখন তো সুপ্রিম কোর্টের ভ্যাকেশন (অবকাশকালীন ছুটি) থাকবে।
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ভ্যাকেশনের আগে দেন।
বিচারপতি ইমান আলী বলেন, আফটার ভ্যাকেশন।
জয়নুল আবেদীন বলেন, আফটার ভ্যাকেশন হলে দিন নির্ধারণ না করলে তো একই থাকলো? একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি ৮ই মে পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত রেখে ওইদিন আপিল শুনানির দিন ধার্য করেন।
গতকাল আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, আব্দুর রেজাক খান, মওদুদ আহমদ, এ জে মোহাম্মদ আলী প্রমুখ। দুদকের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোমতাজ উদ্দিন ফকির, মুরাদ রেজা প্রমুখ।
সকালে আদেশের পর আপিল বিভাগের নিয়মিত কার্যক্রম বেলা ১১টা পর্যন্ত চলে। এরপর আধা ঘণ্টার বিরতিতে যান আদালত। বেলা সাড়ে ১১টায় আদালতের কার্যক্রম আবারো শুরু হয়। এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা শুনানির সময় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাতে আবারো আদালতে যান। জমিরউদ্দিন সরকার আপিল শুনানি এগিয়ে আনতে আদালতের কাছে আরজি জানান।
জমিরউদ্দিন সরকার আদালতের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের বিনীত আবেদন, সকলের পক্ষ থেকে করজোড়ে আবেদন করছি, এই মামলা শুনানির জন্য ভ্যাকেশনের (অবকাশকালীন ছুটি) আগেই দিন ধার্য করা হোক।
আদালত বলেন, আমরা তো আদেশ দিয়ে দিয়েছি। এটা তো সর্বসম্মত আদেশ। ৮ তারিখ (৮ই মে) শুনানি হবে। ওই দিন শুনবো।
এ পর্যায়ে জমিরউদ্দিন সরকার শুনানির তারিখ অবকাশকালীন ছুটির আগে নির্ধারণের জন্য আবারো অনুরোধ করেন।
এ সময় আদালত বলেন, আমরা প্রথমে যে আদেশ দিয়েছিলাম আপনাদের অনুরোধেই তা পুনর্বিবেচনা করেছি। আদেশ হয়ে গেছে। এখন আর তা পরিবর্তন সম্ভব নয়। আদালত আরো বলেন, ৮ই মে এই মামলা শুনানির জন্য তালিকায় শীর্ষে থাকবে। আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি, এই মামলায় কোনো ধরনের মুলতবি ছাড়া বিরতিহীনভাবে শুনানি করা হবে। ৮ই মে না হলেও ৯ই মে’র মধ্যে এটি নিষ্পত্তি হবে। এরপরই খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন।
আদেশ নজিরবিহীন: জয়নুল আবেদীন
আদেশের পর জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, এটি একটি অনভিপ্রেত আদেশ আজকে (গতকাল) দেশের সর্বোচ্চ আদালতে হলো। আদালত যে আদেশটি দিলেন তাতে আমরা খুব মর্মাহত, ব্যথিত হয়েছি। এটি একটি নজিরবিহীন আদেশ। তিনি বলেন, নজিরবিহীন বলতে বাধ্য হচ্ছি এ কারণে যে, অতীতে এ ধরনের কোনো আদেশ এই সর্বোচ্চ আদালত দেননি। এই সর্বোচ্চ আদালতে আমাদের প্রপার জাস্টিস পাওয়া উচিত ছিল। জয়নুল আবেদীন বলেন, বেশ কিছুদিন পর্যন্ত নিম্ন আদালতগুলোকে সরকার গ্রাস করে ফেলেছে। মনে হচ্ছে উচ্চ আদালতকেও সরকার আস্তে আস্তে গ্রাস করে ফেলছে।
খালেদা জিয়ার কারামুক্তি এখন আর সম্ভব হবে না: অ্যাটর্নি জেনারেল
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের এ আদেশের প্রেক্ষিতে বেগম খালেদা জিয়ার আর এখন মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে না। তাকে কারাভোগই করতে হবে। তিনি বলেন, এ রায়টি সম্বন্ধে কোনোরকম বিবেচনায় না নিয়ে এরকম জামিন দেয়াটা সঠিক হয়নি বলেই ওনারা (আপিল বিভাগের বিচারপতিগণ) লিভ (আপিলের অনুমতি) দিয়েছেন বলে আমি মনে করি। আপিল বিভাগের আদেশের প্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের বিভিন্ন বক্তব্যের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ ধরনের বক্তব্য নিশ্চয়ই খুব একটা ভালো উচ্চারণ নয়। বিষয়টিকে তারা (খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা) রাজনীতিকীকরণের চেষ্টা করছেন। এটিকে নিয়ে যারা রাজনীতি করতে চান, তারা সফল হবেন না। তার কারণ এখানে কোনো রাজনীতির বিষয় নেই। এখানে সাধারণ একটি অপরাধের বিষয়। আপিল বিভাগের এ আদেশের ফলে খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আমি তো জ্যোতিষী না। তিনি (খালেদা জিয়া) নির্বাচন করতে পারবেন, কি পারবেন না- এটা আমি কীভাবে বলবো? এটা নির্ভর করবে তার রায়ের ওপর, এই মামলায় তার কি রায় হয়, আপিলে কি সিদ্ধান্ত হয় তার ওপর।
খালেদার সাজা বাড়াতে হাইকোর্টে আপিল করবে দুদক
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দণ্ড আরো বাড়াতে হাইকোর্টে আপিল করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সন্ধ্যায় দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান মানবজমিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আজ (গতকাল) বিকালে দুদকের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্তটি আমাকে জানানো হয়েছে। সাজা বাড়ানোর আবেদন করার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। শিগগির খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানো চেয়ে আপিল আবেদন করা হবে।
কারাগারে থাকা খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের করা পৃথক লিভ টু আপিলের শুনানি রোববার শেষ হয়। এর আগে বুধবার (১৪ই মার্চ) এক আদেশে খালেদা জিয়ার জামিন রোববার পর্যন্ত স্থগিত করে এই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদককে লিভ টু আপিল দায়েরের নির্দেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত। পরে বৃহস্পতিবার দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা পৃথক লিভ টু আপিল করেন। গত ১২ই মার্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।
গতকাল সকালে আদেশের আগে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, এটা আমাদের সর্বসম্মত আদেশ। আদেশে খালেদা জিয়াকে দেয়া হাইকোর্টের জামিন আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদককে আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দিতে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ২২শে মে দিন ধার্য করেন। আদেশের পর আপিল বিভাগ নিয়মিত কার্যক্রমে যান। কিছুক্ষণ পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদালতের উদ্দেশে বলেন, মাই লর্ড, আপনি কী আদেশ দিয়েছেন, আমরা তা বুঝতে পারিনি।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা সর্বসম্মতভাবে এ আদেশ দিয়েছি।
জয়নুল আবেদীন বলেন, আমি এটা জানতে চাইনি। আপনারা কোন কোন গ্রাউন্ডে লিভ (লিভ টু আপিল) গ্রহণ করেছেন, সেটি জানতে চাই।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা নথি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত দিয়েছি।
জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা তো এখনো মেরিটে (মামলার মূল বিষয়বস্তু) যাইনি।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনারা আপিলে সব বলতে পারবেন।
জয়নুল আবেদীন বলেন, আপনারা সর্বোচ্চ আদালত। আপনারা যে আদেশ দেবেন তা শিরোধার্য। তবে, ২২শে মে অনেক দূর। তিনি আরো বলেন, আজকে যেভাবে লিভ গ্রহণ করলেন, এটা নজিরবিহীন। অতীতে এই ধরনের (লঘু দণ্ডের জামিন) ক্ষেত্রে লিভ গ্রহণ করা হয়নি। তাহলে তো সব (অতীতের সব মামলায়) লিভই (লিভ টু আপিল) গ্রহণ করা উচিত ছিল।
এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি সারসংক্ষেপ জমা দেয়ার বিষয়ে বেঞ্চ অফিসারকে চার সপ্তাহের জায়গায় দুই সপ্তাহ করে সময় দিতে নির্দেশ দেন।
এ পর্যায়ে জয়নুল আবেদীন বলেন, আপনি দুই সপ্তাহ করলেন। আমি ২২শে মে তারিখটা এগিয়ে আনার অনুরোধ করছি।
এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, সরকার যে উদ্দেশ্যে এটা করেছে, দুদক আর সরকার তো একাকার হয়ে গেছে। খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চায়।
জয়নুল আবেদীন আদালতের উদ্দেশ্যে বলেন, সময়টা কমিয়ে এপ্রিলে দেন।
এ সময় বিচারপতি ইমান আলী বলেন, তখন তো সুপ্রিম কোর্টের ভ্যাকেশন (অবকাশকালীন ছুটি) থাকবে।
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ভ্যাকেশনের আগে দেন।
বিচারপতি ইমান আলী বলেন, আফটার ভ্যাকেশন।
জয়নুল আবেদীন বলেন, আফটার ভ্যাকেশন হলে দিন নির্ধারণ না করলে তো একই থাকলো? একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি ৮ই মে পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত রেখে ওইদিন আপিল শুনানির দিন ধার্য করেন।
গতকাল আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, আব্দুর রেজাক খান, মওদুদ আহমদ, এ জে মোহাম্মদ আলী প্রমুখ। দুদকের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোমতাজ উদ্দিন ফকির, মুরাদ রেজা প্রমুখ।
সকালে আদেশের পর আপিল বিভাগের নিয়মিত কার্যক্রম বেলা ১১টা পর্যন্ত চলে। এরপর আধা ঘণ্টার বিরতিতে যান আদালত। বেলা সাড়ে ১১টায় আদালতের কার্যক্রম আবারো শুরু হয়। এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা শুনানির সময় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাতে আবারো আদালতে যান। জমিরউদ্দিন সরকার আপিল শুনানি এগিয়ে আনতে আদালতের কাছে আরজি জানান।
জমিরউদ্দিন সরকার আদালতের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের বিনীত আবেদন, সকলের পক্ষ থেকে করজোড়ে আবেদন করছি, এই মামলা শুনানির জন্য ভ্যাকেশনের (অবকাশকালীন ছুটি) আগেই দিন ধার্য করা হোক।
আদালত বলেন, আমরা তো আদেশ দিয়ে দিয়েছি। এটা তো সর্বসম্মত আদেশ। ৮ তারিখ (৮ই মে) শুনানি হবে। ওই দিন শুনবো।
এ পর্যায়ে জমিরউদ্দিন সরকার শুনানির তারিখ অবকাশকালীন ছুটির আগে নির্ধারণের জন্য আবারো অনুরোধ করেন।
এ সময় আদালত বলেন, আমরা প্রথমে যে আদেশ দিয়েছিলাম আপনাদের অনুরোধেই তা পুনর্বিবেচনা করেছি। আদেশ হয়ে গেছে। এখন আর তা পরিবর্তন সম্ভব নয়। আদালত আরো বলেন, ৮ই মে এই মামলা শুনানির জন্য তালিকায় শীর্ষে থাকবে। আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি, এই মামলায় কোনো ধরনের মুলতবি ছাড়া বিরতিহীনভাবে শুনানি করা হবে। ৮ই মে না হলেও ৯ই মে’র মধ্যে এটি নিষ্পত্তি হবে। এরপরই খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন।
আদেশ নজিরবিহীন: জয়নুল আবেদীন
আদেশের পর জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, এটি একটি অনভিপ্রেত আদেশ আজকে (গতকাল) দেশের সর্বোচ্চ আদালতে হলো। আদালত যে আদেশটি দিলেন তাতে আমরা খুব মর্মাহত, ব্যথিত হয়েছি। এটি একটি নজিরবিহীন আদেশ। তিনি বলেন, নজিরবিহীন বলতে বাধ্য হচ্ছি এ কারণে যে, অতীতে এ ধরনের কোনো আদেশ এই সর্বোচ্চ আদালত দেননি। এই সর্বোচ্চ আদালতে আমাদের প্রপার জাস্টিস পাওয়া উচিত ছিল। জয়নুল আবেদীন বলেন, বেশ কিছুদিন পর্যন্ত নিম্ন আদালতগুলোকে সরকার গ্রাস করে ফেলেছে। মনে হচ্ছে উচ্চ আদালতকেও সরকার আস্তে আস্তে গ্রাস করে ফেলছে।
খালেদা জিয়ার কারামুক্তি এখন আর সম্ভব হবে না: অ্যাটর্নি জেনারেল
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের এ আদেশের প্রেক্ষিতে বেগম খালেদা জিয়ার আর এখন মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে না। তাকে কারাভোগই করতে হবে। তিনি বলেন, এ রায়টি সম্বন্ধে কোনোরকম বিবেচনায় না নিয়ে এরকম জামিন দেয়াটা সঠিক হয়নি বলেই ওনারা (আপিল বিভাগের বিচারপতিগণ) লিভ (আপিলের অনুমতি) দিয়েছেন বলে আমি মনে করি। আপিল বিভাগের আদেশের প্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের বিভিন্ন বক্তব্যের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ ধরনের বক্তব্য নিশ্চয়ই খুব একটা ভালো উচ্চারণ নয়। বিষয়টিকে তারা (খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা) রাজনীতিকীকরণের চেষ্টা করছেন। এটিকে নিয়ে যারা রাজনীতি করতে চান, তারা সফল হবেন না। তার কারণ এখানে কোনো রাজনীতির বিষয় নেই। এখানে সাধারণ একটি অপরাধের বিষয়। আপিল বিভাগের এ আদেশের ফলে খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আমি তো জ্যোতিষী না। তিনি (খালেদা জিয়া) নির্বাচন করতে পারবেন, কি পারবেন না- এটা আমি কীভাবে বলবো? এটা নির্ভর করবে তার রায়ের ওপর, এই মামলায় তার কি রায় হয়, আপিলে কি সিদ্ধান্ত হয় তার ওপর।
খালেদার সাজা বাড়াতে হাইকোর্টে আপিল করবে দুদক
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দণ্ড আরো বাড়াতে হাইকোর্টে আপিল করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সন্ধ্যায় দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান মানবজমিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আজ (গতকাল) বিকালে দুদকের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্তটি আমাকে জানানো হয়েছে। সাজা বাড়ানোর আবেদন করার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। শিগগির খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানো চেয়ে আপিল আবেদন করা হবে।
No comments