মিয়ানমারে জাতি নিধন চলছেই! -ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের সম্পাদকীয়
সোমবার
বাস্তবতার কাছে নতি স্বীকার করে বাংলাদেশ সে দেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের
মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে; যা এ সপ্তাহেই আরম্ভ
হওয়ার কথা ছিল। ২০১৭ সালের আগস্টের পর থেকে সাড়ে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও গণধর্ষণ থেকে বাঁচতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে
বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে। বাংলাদেশ ওই বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রতি
প্রশংসনীয় আচরণ করেছে। তাদের দিকে দৃষ্টান্তমূলক মানবিক সহযোগিতার হাত
বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোয় তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বাংলাদেশ
গত নভেম্বরে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি দুর্বল চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে। চীনের
মধ্যস্ততায় হওয়া ওই চুক্তি অং সান সু চি’র সরকারকে সেনাবাহিনীর নৃশংসতা
থেকে অন্যত্র দৃষ্টি সরিয়ে নিতে সাহায্য করেছে।
ওই চুক্তির একটি বড় ত্রুটি হচ্ছে, এতে মিয়ানমার সরকার বলেছে, প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে। এটা কার্যত অসম্ভব। আশির দশকে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয় মিয়ানমার। বন্ধ করে দেয় মুসলিম সংখ্যালঘু সমপ্রদায়টিকে সরকারি কাগজপত্র দেয়া। আর সামপ্রতিক সহিংসতায় রোহিঙ্গারা যখন মিয়ানমার ছেড়ে পালালো, তখন তাদের অনেকের সম্বল ছিল শুধু গায়ে জড়ানো কাপড়টুকু। সেনারা তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেবার ফলে সঙ্গে নেবার মতো কোনো কিছু ছিল না অনেকেরই। এখন খুব কমসংখ্যক রোহিঙ্গাই মিয়ানমারে ফেরত যেতে ইচ্ছুক। কারণ, এখনো সেনাবাহিনী সেখানে জ্বালাও-পোড়াও অব্যাহত রেখেছে। এখনো রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে আসছে প্রতিদিন। পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মিয়ানমারে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা ।
মিয়ানমার সরকার অঙ্গীকার করেছে যে, প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গাদের প্রথমে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হলেও, পরবর্তীতে তারা নিজেদের বসতভিটায় ফিরে যেতে পারবেন। তবে সরকারি এ আশ্বাসে যুক্তিযুক্তভাবেই রোহিঙ্গারা আশাবাদী হতে পারছেন না। কারণ, ২০১২ সালেও একবার মিয়ানমার উত্তর রাখাইনে সংঘটিত সামপ্রদায়িক সহিংসতার জেরে পালানো এক লাখ বিশ হাজার রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসিত করে রাখাইনের রাজধানী সিত্তির অস্থায়ী ক্যামেপ রাখে। তখনও বলা হয়েছিলো যে, অস্থায়ী ক্যামপ থেকে রোহিঙ্গারা পরবর্তীতে নিজেদের আদি বসতভিটায় ফিরে যেতে পারবে। তবে বাস্তবে তা হয়নি। সেসব প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গারা এখনো ওই অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে মানবেতর পরিস্থিতিতে বসবাস করছেন। অপুষ্টিতে ভুগছে সেখানকার শিশুরা।
এছাড়াও, রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত সহিংসতার পর্যাপ্ত প্রমাণাদি থাকা সত্ত্বেও সুচি’র সরকার সেনাবাহিনীর অপরাধ আড়াল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বহিরাগত বা বিদেশি তদন্তকারীদের সেখানে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এ তালিকায় রয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি-ও। তাকে মিয়ানমারে প্রবেশের ভিসা দেয়া হয়নি! বিদেশি সাংবাদিকদের রোহিঙ্গাদের আবাসস্থলে প্রবেশে দিয়ে রাখা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
গতমাসে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দুই স্থানীয় সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে। তারা রাখাইনে রোহিঙ্গা সংকটের তথ্য সংগ্রহ করছিলেন। পুলিশ প্রথমে তাদের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানায়। কথিত আছে, এরপর তাদের কাছে কিছু গোপন নথিপত্র দেয়। তারপর সরকারি গোপনীয়তা আইনের ধারায় তাদের গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে তারা বিচারাধীন রয়েছেন। তাদের ১৪ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।
যদিও প্রত্যাবাসন চুক্তি সমপাদিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সু চির ওপরে চাপ কিছুটা কমে গেছে। তিনি খানিকটা স্বস্তির নিশ্বাস নিতে পারছেন। কিন্তু তার সামনে সুযোগ ছিল চুক্তিটি কাজে লাগিয়ে সেনাবাহিনীর সহিংসতা বন্ধ রাখতে চাপ দেয়ার। তিনি তেমনটি করেননি। নোবেলজয়ী এই ব্যক্তিত্ব উল্টো সেনাবাহিনীর চালানো নৃশংসতার মাত্রা ও ভয়াবহতা ঢাকার চেষ্টা করছেন।
সার্বিক এই পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলোকে একটি কঠিন অবস্থার মুখে দাঁড় করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের নির্যাতন এবং হত্যাযজ্ঞকে ‘জাতি নিধন’ বলে উল্লেখ করলেও, কোনো ধরনের অবরোধ আরোপ করা হলে তা মিয়ানমারের গণতন্ত্রায়ন ব্যাহত করবে- এই অজুহাতে মিয়ানমারের ওপর কোনো অবরোধ আরোপ করেননি। দেশটির রাজস্ব বিভাগ অবশ্য মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এক জেনারেলকে ‘ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ দায়ে আর্থিক কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের ওপরও শাস্তিমূলক পদক্ষেপের কথা ভাবা হচ্ছে।
তবে এ ধরনের পরিমিত পদক্ষেপ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সহিংসতা থামানো এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফেরানোর ক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত। মিয়ানমারে অবস্থানরত লাখ লাখ রোহিঙ্গার জীবন এখনো নিরাপদ নয়। তাই প্রত্যাবাসনের মিথ্যে আশা বাদ দিয়ে জাতিসংঘ ও সাহায্যকারী সংস্থাগুলোর আগে রাখাইনে যেতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দেখতে হবে। শক্ত পদক্ষেপ নেয়া ছাড়া রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান হবে না।
(ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত সম্পাদকীয় এর অনুবাদ করেছেন নাজমুস সাদাত পারভেজ)
ওই চুক্তির একটি বড় ত্রুটি হচ্ছে, এতে মিয়ানমার সরকার বলেছে, প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে। এটা কার্যত অসম্ভব। আশির দশকে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয় মিয়ানমার। বন্ধ করে দেয় মুসলিম সংখ্যালঘু সমপ্রদায়টিকে সরকারি কাগজপত্র দেয়া। আর সামপ্রতিক সহিংসতায় রোহিঙ্গারা যখন মিয়ানমার ছেড়ে পালালো, তখন তাদের অনেকের সম্বল ছিল শুধু গায়ে জড়ানো কাপড়টুকু। সেনারা তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেবার ফলে সঙ্গে নেবার মতো কোনো কিছু ছিল না অনেকেরই। এখন খুব কমসংখ্যক রোহিঙ্গাই মিয়ানমারে ফেরত যেতে ইচ্ছুক। কারণ, এখনো সেনাবাহিনী সেখানে জ্বালাও-পোড়াও অব্যাহত রেখেছে। এখনো রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে আসছে প্রতিদিন। পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মিয়ানমারে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা ।
মিয়ানমার সরকার অঙ্গীকার করেছে যে, প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গাদের প্রথমে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হলেও, পরবর্তীতে তারা নিজেদের বসতভিটায় ফিরে যেতে পারবেন। তবে সরকারি এ আশ্বাসে যুক্তিযুক্তভাবেই রোহিঙ্গারা আশাবাদী হতে পারছেন না। কারণ, ২০১২ সালেও একবার মিয়ানমার উত্তর রাখাইনে সংঘটিত সামপ্রদায়িক সহিংসতার জেরে পালানো এক লাখ বিশ হাজার রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসিত করে রাখাইনের রাজধানী সিত্তির অস্থায়ী ক্যামেপ রাখে। তখনও বলা হয়েছিলো যে, অস্থায়ী ক্যামপ থেকে রোহিঙ্গারা পরবর্তীতে নিজেদের আদি বসতভিটায় ফিরে যেতে পারবে। তবে বাস্তবে তা হয়নি। সেসব প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গারা এখনো ওই অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে মানবেতর পরিস্থিতিতে বসবাস করছেন। অপুষ্টিতে ভুগছে সেখানকার শিশুরা।
এছাড়াও, রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত সহিংসতার পর্যাপ্ত প্রমাণাদি থাকা সত্ত্বেও সুচি’র সরকার সেনাবাহিনীর অপরাধ আড়াল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বহিরাগত বা বিদেশি তদন্তকারীদের সেখানে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এ তালিকায় রয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি-ও। তাকে মিয়ানমারে প্রবেশের ভিসা দেয়া হয়নি! বিদেশি সাংবাদিকদের রোহিঙ্গাদের আবাসস্থলে প্রবেশে দিয়ে রাখা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
গতমাসে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দুই স্থানীয় সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে। তারা রাখাইনে রোহিঙ্গা সংকটের তথ্য সংগ্রহ করছিলেন। পুলিশ প্রথমে তাদের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানায়। কথিত আছে, এরপর তাদের কাছে কিছু গোপন নথিপত্র দেয়। তারপর সরকারি গোপনীয়তা আইনের ধারায় তাদের গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে তারা বিচারাধীন রয়েছেন। তাদের ১৪ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।
যদিও প্রত্যাবাসন চুক্তি সমপাদিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সু চির ওপরে চাপ কিছুটা কমে গেছে। তিনি খানিকটা স্বস্তির নিশ্বাস নিতে পারছেন। কিন্তু তার সামনে সুযোগ ছিল চুক্তিটি কাজে লাগিয়ে সেনাবাহিনীর সহিংসতা বন্ধ রাখতে চাপ দেয়ার। তিনি তেমনটি করেননি। নোবেলজয়ী এই ব্যক্তিত্ব উল্টো সেনাবাহিনীর চালানো নৃশংসতার মাত্রা ও ভয়াবহতা ঢাকার চেষ্টা করছেন।
সার্বিক এই পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলোকে একটি কঠিন অবস্থার মুখে দাঁড় করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের নির্যাতন এবং হত্যাযজ্ঞকে ‘জাতি নিধন’ বলে উল্লেখ করলেও, কোনো ধরনের অবরোধ আরোপ করা হলে তা মিয়ানমারের গণতন্ত্রায়ন ব্যাহত করবে- এই অজুহাতে মিয়ানমারের ওপর কোনো অবরোধ আরোপ করেননি। দেশটির রাজস্ব বিভাগ অবশ্য মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এক জেনারেলকে ‘ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ দায়ে আর্থিক কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের ওপরও শাস্তিমূলক পদক্ষেপের কথা ভাবা হচ্ছে।
তবে এ ধরনের পরিমিত পদক্ষেপ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সহিংসতা থামানো এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফেরানোর ক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত। মিয়ানমারে অবস্থানরত লাখ লাখ রোহিঙ্গার জীবন এখনো নিরাপদ নয়। তাই প্রত্যাবাসনের মিথ্যে আশা বাদ দিয়ে জাতিসংঘ ও সাহায্যকারী সংস্থাগুলোর আগে রাখাইনে যেতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দেখতে হবে। শক্ত পদক্ষেপ নেয়া ছাড়া রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান হবে না।
(ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত সম্পাদকীয় এর অনুবাদ করেছেন নাজমুস সাদাত পারভেজ)
No comments